সূর্য এখনো নিজেকে আরাল করে রেখেছে, কলঙ্কিনী নববধূর ন্যায়। ভোরের আলো তখনো পরিপূর্ণভাবে ফোটেনি। এখানকার আবহাওয়া দেখে বোঝার উপায় নেই, শীতের আগমন হতে এখনো অনেক দেড়ি। অকালে মাঘের শীত শরীরে মাখিয়ে, গায়ে শাল জড়িয়ে, আমরা ছয় বন্ধু মিলে রওনা হলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
সকাল আট টা নাগাদ আমরা আমাদের হোটেলে উঠলাম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো সেখানে রাখার পর, সিলেট
শহরের বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট ‘পানসী’ তে সকালের নাস্তা করার জন্য চলে গেলাম। নাস্তা সেরে, সিলেট শহর থেকে লেগুনা করে রওনা হলাম পীরের বাজারের উদ্দেশ্যে।
ততক্ষণে চারিদিক অন্ধকার করে বৃষ্টিও শুরু হয়ে যায়। লেগুনাতে চাপা চাপি করে বসেও আমরা কেউ কেউ একটু আধটু ভিজেও গেলাম।
-ওই দূরে যা। আমারে দেখলে কি তোর খালি ঘেঁষাঘেঁষি করতে মনচায়?
-আরে চাপ না আরেকটু,ভিজে যাইতেসি তো।
-তো ভিজতেছোস বইলা এমন অশ্লীল আচরণ করবি? শরীরের সাথে ঘেঁইষ্যা বসা আমার মোটেও পছন্দ না, সিফাত।
-তুই দেখ তো আমারে কট্টুক যায়গা দিসোস? এইটুকু যায়গাতে পিঁপড়াও তো বইতে পারবো কিনা ডাউট আছে।
-তো কমাইয়া খাইলেই পারতি। ঘুম থেইক্কা উইঠ্যাই সাতটা পরোটা ঠুসছোস। তোর মতো হাতির লাইগ্গা পুরা লেগুনাও কম হইবো।
সিফাত, জাহিদের শীতল যুদ্ধের এক পর্যায়ে মেঘা বিরক্তি নিয়ে বললো-
– সত্যি করে বল তো? তোরা আগের জন্মে সতীন টতীন ছিলি নাকি? গ্রামের সতীন সমাজের মতোন তিল থেকে তাল হইলেই উঠানে বাইর হইয়া চুলোচুলি শুরু করস।
কিছুক্ষণ গরম চোখে তাকিয়ে পূনরায় –
-আর একটা শব্দ যেনো না শুনি। নাহয় ধাক্কা দিয়া দুইটারে লেগুনা থেকে ফালাই দিবো। গর্ধব এর দল!
মেঘার হাল্কার উপর ঝাপসা ধমকে বোধহয় কাজও হলো। মুহুর্তেই দু’জন ভেঙচি কাটার ন্যায় চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে নিল।
পীরের বাজার যাওয়ার পথে দেখা মিললো উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ চা-বাগান,মালীনীছড়ার। চা-বাগানের কোল ঘেঁষে যাওয়ার পথে মনে হতে লাগলো এ যেনো আরেক সবুজের সমারোহ। রাস্তার দুই ধারে উঁচু উঁচু পাহার, বড় বড় গাছ,আর পাহারের কোল ঘেঁষে চা-বাগানের বেড়ে উঠা।
-ওয়াও! অভ্র প্লিজ প্লিজ প্লিজ এখানে থামাতে বল না একটু, ছবি তুলবো।
মেঘার কথার কোনো তোয়াক্কাই করলোনা অভ্র। উল্টো ধমকের স্বরে বললো-
-নামতে হবে না, এখানে দেখার মতোন কিছুই নাই। গাড়ি থেকেই দেখতে থাক।
চোখের উশারায় আমাকে অভ্রকে কনভিন্স করতে বলতেই, আমিও অনুরোধের স্বরে টলমলে চোখে বললাম-
-একটু নামি না প্লিইজজ!বেশি না, দশ মিনিট।
অভ্র জবাব দিল না। ওর থেকে কাঙ্ক্ষিত জবাব না পেয়ে,মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম আমি।
কিছুক্ষণ পর।
-মামা, এখানে রাখেন দশ মিনিটের জন্য।
অভ্রের কথায় আমরা হৈহৈ করে উঠলাম। অভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একপলক তাকিয়ে মুখের গাম্ভীর্যতা ধরে রেখে বললো-
-এতো খুশি হওয়ার কিছু নাই। দশ মিনিটের বেশি যদি এক মিনিটও অতিক্রম হয়েছে? তিনটাকে এখানেই রেখে যাবো,মাথায় যেনো থাকে।
আমরা সমানতালে মাথা দুলিয়ে বোঝালাম,আমাদের মাথায় থাকবে।
-দোস্ত, আমি এতো সবুজ একসাথে কখনো দেখিনি বিশ্বাস কর! এতো প্রশান্তি লাগছে!
রুম্পার কথার জবাবে মেঘাও আনন্দিত স্বরে বললো-
-ঠিক বলেছিস। আমার তো এখানে দৌড়াতে,লাফাতে ইচ্ছে করছে খুব!
আমি ভাব নিয়ে বললাম-
-হাহ্! ক্রেডিট টা কার সেটা দেখতে হবে।
আমার কথায় রুম্পা,মেঘা একসাথে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর উত্তেজিত স্বরে বললো-
-এর জন্যই তোকে একটা চুম্মা দিতে ইচ্ছে করতেসে। তুই না বললে আমাদের অভ্র মশাই জীবনেও রাজি হইতোনা। এই খুশিতে চল একটা সেলফি তুলি।
কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে, বাধ্য মেয়েদের মতোন দশ মিনিট অতিক্রম হওয়ার আগেই আমরা লেগুনায় উঠে পরলাম।
সকাল এগারোটার মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই পীরের বাজার ট্রলার ঘাটে। সেখান থেকে সারাদিনের জন্য আমরা একটা ট্রলার ভাড়া করে নিলাম। ট্রলারে চেয়ার বসিয়ে উপরে ছাউনির ন্যায় করে বসার ব্যবস্তা করা হয়েছে। উঠার পরপরই ছেড়ে দিল ট্রলার। শুরু হলো আমাদের বিছানাকান্দির ট্রলার যাত্রা।
” ওওওওও ওওওও ওওওও ওওও
চল দোতং পাহাড় জুম ঘরে।পূর্নিমা রাত বর্ষা জুড়ে
জীবন জুয়ার আসর বসাবো!
আমি মারফা রেঁধে দেবো পাতে,
বিন্নি চালের ভাত সাথে।
দু বেলা দু মুঠো খেয়ে তৃপ্তির আলিঙ্গন।
পূবের হু হু বাতাস বইলে পরে, পাঁজর ভাঙ্গা গান ধরে,
আয়েস করেই কাটুক এ যৌবন…..
থেমে
এই ইটের শহর পোড়ায় খালি, জোড়াতালি জীবন আমার ভাল্লাগেনা রে….
কে কার রাখে খবর দম ফুরালেও একলা একা নিথর দেহ কাইন্দা মরে রে….
কে পাইলো কার কি গেলো,কার কি বা আসে যায়?
মন ঝিরির পথে হাটার লোভে কেমন করে হায়!
চল দোতং পাহার জুম ঘরে, পূর্নিমা রাত বর্ষা জুড়ে জীবন জুয়ার আসর বসাবো!”
গিটারের তালে তালে সিফাতের গাওয়া অসাধারণ গানটি উপভোগ করতে করতে কখন যে বিছানাকান্দির কাছাকাছি এসে পরলাম খেয়ালই করলামনা।
আমরা বিছানাকান্দির যত কাছাকাছি যেতে লাগলাম ততই মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহারগুলো যেনো আমাদের নিজের আরো কাছে টানতে লাগলো। এই অফুরন্ত সৌন্দর্যের দৃশ্য যেনো আমাদের চোখ ঝাঁঝিয়ে দিল! অভ্র ব্যতিত আমরা সকলের চোখে মুখেই বিস্ময় আর উত্তেজনা। একদিকে সবুজে ঘেড়া পাহাড়, অন্যদিকে সুমধুর শব্দে মেঘালয়ের স্বচ্ছ বয়ে আসা পানি। মেঘ আর পাহাড় যেনো মিলেমিশে একাকার! মেঘালয়ের পাহাড়ের সাথে শুভ্র মেঘের কী নিবিড় সম্পর্ক!
-আয়হায়! দোস্ত এ কোন স্বর্গে নিয়া আসলা!
মেঘার কথার জবাবে জাহিদ বললো-
-আরো দেখতে পাবি। তোদের বিস্মিত হওয়া তো আরো বাকি।
ট্রলার থেকে নামার পরপরই যে যার মতোন ঘুরাঘুরি শুরু করলো। লাস্ট পনেরো মিনিটে মেঘা, রুম্পা রা কম হলেও শ খানেক ছবি তুলেছে। এঁদের পাগলামি দেখে বোঝার উপায় নেই এরা বিশ এর বয়স পার করে বসে আছে। কেবল আমি দাঁড়িয়ে রইলাম স্থির হয়ে। মেঘালয় থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ পানির উপর বিছানার ন্যায় ছড়িয়ে আছে বড় বড় পাথর। সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পাহাড় বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস যেনো মুহুর্তেই শীতল করে তুললো আমার শরীর আর মন! আমি পাথরের উপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলাম সৃষ্টিকর্তার এই অপূর্ব সৃষ্টির মাধুর্য!
ঘুরাঘুরি, আর ছবি তোলা শেষে ওরা পানিতে নেমে গোসল করার সিদ্ধান্ত নিলো। নামতে পারলামনা শুধু আমি। কিছুক্ষণ পরপর করুন চোখে চেয়েও কোনো ফায়দা হলো না। বেটা কিছুতেই আমাকে পানিতে নামতে দিবেনা বলেই সিদ্ধান্ত নিলো। আরে, আমি কি বাচ্চা নাকি যে পাথর থেকে পরে পা মচকে ফেলবো? ওদের লাফালাফি দেখে আমার লোভ যেনো বাড়তেই লাগলো। আমি টলমলে চোখে অভ্রের শার্টের কোনা ধরে করুন স্বরে পূনরায় বলতে লাগলাম-
-এই অভ্র।
-অন্য কথা থাকলে বল।
-প্লিইইইজজজ!
-নো
-সত্যি বলছি সাবধানে নামবো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অভ্র বললো-
-একটা সিক্রেট ম্যাজিক দেখবি?
আমি মুখ ফুলিয়ে জবাব দিলাম-
-নাহ
-ঠিক তো? বুঝিস কিন্তু। ম্যাজিক টা কিন্তু পানিতেই নামিয়ে দেখাবো।
পানির নাম শোনামাত্রই আমি কৌতুহল নিয়ে বললাম-
-দেখবো তো! কি ম্যাজিক?
অভ্র আমার হাত ধরে এনে পানিতে নামিয়ে বললো।
-আমি যেভাবে বললো, সেভাবেই করবি। নো কুয়েশ্চন।
আমি মাথা হেলে বুঝালাম, আমি রাজি।
– এখানে শুয়ে পর।
-হোয়াট!
-আই সেইড নো কুয়েশ্চন।
আমি চুপচাপ শুয়ে পরলাম।
-এবার চোখটা বন্ধ কর।
আমি চোখ বন্ধ করলাম।
-নাউ ইমাজিন, তোর আশেপাশে কেউ নেই। এই নির্জন মেঘালয়ে তুই একা। পাহাড়,মেঘ,গাছ,বাতাস,নদীর স্রোতের শব্দ। এঁরাই তোর সঙ্গী। জাস্ট টেইক আ ডিপ ব্রেইথ এন্ড ইমাজিন!
আমি ইমাজিন করতে লাগলাম। চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় আমি শুনতে পেলাম বয়ে আসা স্বচ্ছ পানিদের ছলাৎ ছলাৎ গান। চারিদিকে পাখিদের কিচিরমিচির ডাক। আমার মনে হতে লাগলো সৃষ্টিকর্তা তার সবটুকুই ঢেলে দিয়েছেন এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার মহিমায়! এতো তৃপ্তি! এতো মাধুর্যতা! বেশ অনেকক্ষণ আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই রাখলাম। এবার অভ্র আমাকে আরো চমকিত কিছু উপলব্ধি করানোর জন্য বললো-
-এবার আস্তে আস্তে চোখটা মেল। ভুলেও এদিক সেদিক তাকাবি না।
আমি তা-ই করলাম। আস্তে আস্তে চোখটা মেলে চোখের সামনে আবিষ্কার করলাম বিশাল আকাশকে। আমাকে প্রশান্তির সাগরে ঢুবিয়ে মারতে চাইলো মেঘালয়ের জলধারার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ,পাহাড়ের গান, স্রোতধারা বেয়ে আসা মৃদু বাতাস, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, আর মেঘে ঢাকা আকাশ! মুহুর্তেই আমার সারা শরীর বেয়ে শিহরণ বয়ে গেলো! আমি হারিয়ে গেলাম এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যের প্রশান্তিময় জগতে!
দেড় ঘন্টা বিছানাকান্দি তে অতিবাহিত করার পর। আমরা একই ট্রলারে করে রওনা হলাম পান্থুমাই ঝরনার উদ্দেশ্যে।এটার অবস্থান মূলত বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত এলাকায়। বাংলাদেশ থেকে এই ঝর্নার নাম ‘পান্থুমাই’ ঝর্না। তবে মেঘালয় থেকে গেলে এই ঝর্ণার নাম হয় ‘বড়হিল’ ঝরনা।
দেড় ঘন্টার মধ্যে আমরা পৌঁছে যাই পান্থুমাই ঝরনার কাছাকাছি। নৌকা চলাচল বন্ধ থাকার কারনে আমরা ঝরনার খুব কাছাকাছি না যেতে পারলেও দূর থেকেই দাঁড়িয়েই উপভোগ করেছি এই ঝর্নার অফুরন্ত সৌন্দর্য! ঘুরাঘুরি শেষে হোটেলে ফিরতে ফিরতে আমাদের রাত হয়ে যায়। হোটেলের লিফ্টে উঠতেই অভ্র আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে শুধালো-
-তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?
আমি ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলাম –
-নাহ, ঠিক ই তো আছি।
-ওকে,ঘুমিয়ে পরিস। রাত জাগার প্রয়োজন নেই।আর কিছু লাগলে ফোন করবি(অভ্রের সংক্ষেপে জবাব)
আমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দোলালাম
রুমে ঢুকে, কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে আমরা বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
রাত তিন টায় ঘুম ভাঙলো আমার। কাঁপা কাঁপা শরীরে চোখ মেলে তাকাতেই, সামনে আবিষ্কার করলাম পাঁচ জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে। তার মধ্যে এক জোড়া চোখ একদম আমার নিকটে,তাঁর হাত আমার কপালে। কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম ওদের দিকে। অভ্র তখনো গরম চোখে তাকিয়ে আমার দিকে। আমি তখনো প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
-খারাপ লাগছে, আমাকে আগে বলা যায়নি?
অভ্রের কড়া গলায় প্রশ্ন।
আমি মলিন চোখে শুধালাম –
-কি হয়েছে?
মেঘা জবাব দিল-
-জ্বরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলি তুই। কি করবো বুঝতে না পেরে অভ্রদের ডেকে আনলাম। লাস্ট এক ঘন্টা ধরে অভ্র তোর সেবা করেছে। হাত পা মালিশ করে দিয়েছে,মাথায় পানি ঢেলেছে,ঔষধ খায়িয়ে দিয়েছে। তারপর ডাক্তার ডেকে আনলো। তোর প্রেশার এতো কম কেনো?
আমি বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইলাম। এতোকিছু হয়ে গেলো অথচ আমি টেরই পেলামনা। অভ্র এখনো গরম চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম-
-সত্যি, আমার খারাপ লাগেনি। কিভাবে বলবো আগে থেকে?
অভ্র আরো কড়া গলায় বললো-
-তুই যে দুনিয়াতে আছোস এটার হুসই তো তোর নাই। নিজের শরীরের হুস না থাকাটাও অস্বাভাবিক না।
বাকিরা কি বুঝলো কে জানে? মেঘা মৃদু কেশে বললো-
-আচ্ছা দোস্ত আমরা পাশের রুমে নাহয় কিছুক্ষণ থাকি। তোরা কথা বল।
ওর কথার জবাবে আমি ঢোক গিলে মেঘার দিকে তাকালাম। মনে মনে চাইতে লাগলাম ওরা আমাকে জমের দুয়ারে ফেলে না যাক। কিন্তু ওরা আমার মনের চাওয়া হয়তো বুঝতে পারলোনা । বিশাল সাইক্লোনের কাছে রেখেই চলে গেলো।
অভ্র বেশ অনেকক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি তখনো মাথা নিচু করে বসে। মনে হতে লাগলো, চোখাচোখি হলেই বোধহয় গিলে খাবে আমাকে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র বললো-
-তোকে এখন কিছুই বলবো না! তোকে আমার বাসায় আজীবনের জন্য নিয়ে, তারপর শিক্ষা দিব। খাবার খেতে রঙঢঙ করলে সকাল বিকাল নিয়ম করে চর লাগাবো।
কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা
পূনরায়-
-প্রেশারের এই অবস্থা কেন তোর? তুই কি বাচ্চা?
ওর কথার জবাবে আমি মৃদু হাসলাম। এবার আর আমার ওকে ভয় লাগলো না। আমি সহজ গলায় শুধালাম-
-একটু জড়িয়ে ধরবি আমায়?
অভ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাকে আলতো করে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ওর মুখে এখনো রাগের ছাপ দেখতে পেলাম আমি। এই অগ্নিমুখেই যেনো আমি পৃথিবীর যাবতীয় শীতলতা অনুভব করে নিলাম। আমাকে আমার চেয়েও বেশি একটা মানুষ জানে! তাঁকে আমার আলাদা করে বোঝাতে হয়না নিজের যন্ত্রনাগুলো! আমার ছোট্ট অসুখে কেমন ছটফট করতে থাকে সে-ই মানুষটা! আমি অনুভব করে নিলাম আমার প্রতি তার অফুরন্ত ভালোবাসা! তাঁর ভালোবাসা পরিমান আকাশের ন্যায় বিশাল! সে শুভ্র গোলাপের ন্যায় শুভ্র!
মতামত জানাতে ভুলবেন না
চলবে…..