তোমার নামে সন্ধ্যা নামুক [পর্ব-১৩]

বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে আছে সিফাত,আরুহী এসে জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই এক চিলতে রোদ এসে সিফাতের মুখশ্রীতে পড়ে।নাক মুখ কুঁ’চকে নেয় সিফাত,চোখ খুলে তাকাতেই দেখে আরুহী ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছে না ওর ফট করে বিছানা থেকে উঠে চোখ কচলে দেখে না সত্যিই আরুহী ওর সামনে আছে।

আরুহী ভীষণ ভাবে রেগে আছে,বুকে হাত গুজে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিফাত এর দিকে। সিফাত একটু ভয় পাচ্ছে কারণ সে জানে কাল রাতে যা করেছে তা ভুল করেছে।

‘ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’

আরুহী সিফাতের কথায় দু পা এগিয়ে এসে বলে।

‘ সমস্যা কী আপনার?কী চাইছেন আমি এই এলাকা স্কুল সব ছেড়ে চলে যাই?’

‘ না না এটা কেন চাইব? আমি তো চাই তোমাকে কাছে রাখতে।’

‘ এসব করে কাছে রাখতে চান?এই যে ক্লাবে গিয়ে ড্রিং করছেন এসব কী? সবাই কী ভাববে? আমার জন্য এমন করছেন আপনি?কেন বুঝতে চাইছেন না আপনি যা চান তা হওয়ার নয়,তা তো কালকেই ক্লিয়ার করে দেওয়া হয়েছে।’

এবার সিফাত বিছানা থেকে নেমে আরুহীর কাছে গিয়ে দাঁড়ায় বা হাত দিয়ে আরুহীর কোমড়ে টান দিয়ে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসে।

আরুহী রিনরিনিয়ে বলে ।

‘ কী করছেন?’

‘ করিনি এখনও কিন্তু ভবিষ্যতে সব করব। তোমাকে লাগবে আমার যদি এর আগে হাজারটা বিয়েও করে থাকো তাহলেও আমার তোমাকে লাগবে। ভালোবাসি আমার থেকে মু’ক্তি নেই,যদি মু’ক্তি চাও তাহলে মে’রে তার পর যেতে হবে।’

‘ এসব পাগলামী।’

‘ তুমি বললে অবশ্যই তাই।’

আর কিছু বলার সুযোগ দেয় নি সিফাত,আরুহীর ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়। কেঁপে উঠে আরুহীর অনন্তপুর।

এত কিছু সহ্য করার ক্ষমতা নেই তার, যদি অজান্তেই ভুল করে ফেলে?

‘ ছাড়ুন, পঁচা মানুষ একটা, ওনাকে না কী আমি বিয়ে করব।’

আরুহী মুখ বাঁ’কিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সিফাত মাথা চুলকে মুচকি হাসে।

____________

‘ তুমি এমন হয়ে গেছো কেন আরিফ?কই আগে তো এমন ছিলে না?’

আরিফ ঘুমিয়ে ছিল হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠল,নিহা

ফোন হাতে নিয়ে দেখে তিথি কল করছে।নিহা ফোন রিসিভ করতেই যাবে কিন্তু আরিফ উঠে টান দিয়ে ফোন নিয়ে নেয়।

‘ তুমি আমার ফোন ধরলে কেন?’

নিহা আশ্চর্য হয়ে কথাটা জিগ্গেস করে।

‘ কেন? আজকে তোমার ফোন ধরলাম তাতেই এভাবে রি’য়্যাক্ট করছো কেন?’

‘ এই শুনো নিহা আমি সকাল সকাল তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাই না।’

‘ তার মানে আমি সবসময় ঝগড়া করি?কেন বুঝতে চাও না আমি তোমাকে ভালোবাসি, হঠাৎ বিয়ের এত দিন পর তুমি বদলে গেছো কেন? আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ?’

‘ প্লীজ বিরক্ত করো না।’

আরিফ ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায় , বিছানায় থ হয়ে বসে যায় নিহা, না আর সহ্য করা যায় না। এখন এসব মা কে বলতেই হবে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে গিয়ে বসে চৈতি, মাথাটা প্রচন্ড রকম ব্যথা করছে।দু হাত চেপে ধরে আসিফা রহমান কে ডেকে বলে।

‘ মা মাথা খুব ব্যথা করছে কী করব?’

আসিফা রহমান রান্না ঘর থেকে এক কাপ কফি নিয়ে এসে ওর হাতে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

‘ কফি খেয়ে নে আমি মালিশ করে দিচ্ছি।’

‘ উম্মাহ্ তোমার মালিশে দেখো ছট করে গা’য়েব হয়ে যাবে মাথা ব্যথা।’

‘ পাগলী মেয়ে আমার।’

শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে সিফাত,এসেই চৈতির হাত থেকে কফি কাপ নিয়ে নিজে খাওয়া শুরু করে।সবে মাত্র কফিতে চুমুক দিতেই যাচ্ছিল চৈতি তার মধ্যে সিফাত এসে এভাবে ছু মেরে নিয়ে নিয়েছে দেখে নাক মুখ কুঁ’চকে ফেলে সে।

অভিমানী কন্ঠে বলে।

‘ মা দেখলে তোমার ছেলে আমার কফি নিয়ে নিল?’

‘ আচ্ছা তোর জন্য আমি আরেকটা নিয়ে আসছি।’

এই বলে আসিফা রহমান রান্নাঘরে প্রস্থান করেন,চৈতি সিফাত কে দেখে ভেং’চি কে’টে বলে।

‘ ফা’জিল ভাই একটা।

‘ পা গ লী একটা। আচ্ছা শুন তোর সাথে কিছু কথা আছে।’

‘ শুনতাম না, আমার কফি নিয়ে নিছ তুমি,যাও।’

এই বলে উঠে গেল চৈতি, সিফাত ওর হাতে টান দিয়ে নিজের কাছে বসায়।

‘ লক্ষী বোন আমার শুন না।’

‘ আচ্ছা বলো।’

‘ কাল তুই আরুহী কে নিয়ে শপিং এ যাবি,আর এই নে ক্রেডিট কার্ড যত ইচ্ছে খর’চ কর।’

‘ সত্যি?’

‘ হুম, কিন্তু হ্যা আরুহী কে নিয়ে যেতেই হবে?’

‘ ঠিক আছে কিন্তু ভাবী কী রাজী হবে? সে তো তোমাকে বিয়েই করবে না বলেছিল।’

‘ আচ্ছা যখন বিয়ে করবে না তাহলে ভাবী বলছিস কেন?’

‘ কারণ আমি জানি তুমি ওনাকে জোর করেই বিয়ে করবে।’

‘‌ওহো তাহলে বার বার একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে বলছিস কেন আমার মা?’

‘ মজা পাইছি তাই।’

‘ সোনা,লক্ষী বোন আমার যেটা বলছি সেটা কর না প্লীজ?’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে যাবো, কিন্তু তোমাদেরকেও আসতে হবে।’

‘ আমাদের মানে?’

‘ কেন? তুমি,তুফা,নিশা, ইশান ভাই, মাহমুদ সবাই এক সঙ্গে শপিং করব।’

‘ সবার নাম বললি আমার হিমেল ব্রো কী করল?’

‘‌ওনাকে না বললেও এমনিতেই আসবে আমার পিছু পিছু,বডি গার্ড আমার।

‘ দাঁড়া এখুনি ওকে ফোন করে সব বলছি।’

‘ আরে না ভাইয়া সরি সরি বল না ওনাকে কিছু, না হলে কিন্তু তোমার কাজ করব না।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে বলব না, তুই সময় মত পৌঁছে যাস।’

‘ ওকে,এন্ড লাভ ইউ আজকে ক্রেডিট কার্ড আমার।’

এটা বলেই চৈতি দুতলায় ছুটে যায়। সিফাত নিজের বোনের এমন দুষ্টুমি দেখে না হেসে থাকতে পারল না, সত্যি শরীর গতরে বড় হলে কী হবে মনের দিক থেকে সেই ছোট্টটিই আছে।

_____________

রাতের এই জনমানব শূন্য এলাকা দিয়ে একা হেঁটে আসছে আরুহী,বলতে গেলেও কেউই নেই।মাঝে মাঝে কুকুর শেয়ালের ডাক শুনা যাচ্ছে,যা কাঁপুনি অনুভব করাচ্ছে আরুহী কে।গা ছমছম পরিবেশ,আজ একটু দেরি হয়ে গেছে তার।স্কুল শেষ হয়েছিল চারটায় এরপর কিছু জরুরী কাজ পড়ে যাওয়াতে এখন এত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। নিস্তব্ধ এলাকা,একা হেঁটে যাচ্ছে আরুহী,একটাও গাড়ি খুঁজে পায়নি। ফলস্বরূপ হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আচমকা একটা গাড়ি এসে ওর সামনে দাঁড়ায়, জানালার কাচ নামাতেই আঁ’তকে উঠে আরুহী।বহু পরিচিত মুখ, কপাল বেয়ে ঘাম পরছে ভয়ে দৌড় লাগায় আরুহী। প্রাণপণে ছুটছে, এখন যদি না পালায় তাহলে হয়তো এখানেই জীবনের অবসান ঘ’ট’বে তার। কিন্তু বেশী দূর এগোতে পারল না, রাস্তায় পড়ে থাকা পাথরে হু’মড়ি খেয়ে পড়ে যায়।সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে লু’টিয়ে পড়ে মাটিতে,এক অবয়ব ফিসফিস করে কানের কাছে বলে।

‘ ভালোবাসি প্রচুর ভালোবাসি।’

শরীরে চাদর জড়িয়ে বসে আছে আনোয়ারা রহমান,মুখে তার পানসুপারি চি’বুচ্ছেন। আফজাল মিয়া ফোন নিয়ে এসে দাঁড়ান ওনার কাছে। আনোয়ারা রহমান ইশারা করে বলেন ফোন করার জন্য।

আফতাব রহমান এর ফোন কর্কশ শব্দে বেজে উঠল,স্ক্রিনে মায়ের নাম দেখে মুখে হাসি সাথে কিছুটা ভয় নিয়ে ফোন রিসিভ করেন আফতাব রহমান।

‘ হ্যলো আসসালামুয়ালাইকুম আম্মা। কেমন আছেন?’

আনোয়ারা রহমান থু থু ফেলে বলেন।

‘ ওয়া আলাইকুমস সালাম,হো আমি ভালাই আছি। তোরা কেমন আছোছ?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ আম্মা ভালো আছি।’

‘ তা তোর বউ কই?’

‘ দাঁড়াও আম্মা ওরে ডেকে দিতেছি,আসিফা এই আসিফা এদিকে আসো আম্মু ফোন করছে।’

আসিফা রহমান রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসেন, আফতাব রহমান আসিফার হাতে ফোন দেয়।

‘‌হ্যলো আম্মা কেমন আছেন?’

‘ আমি ভালাই আছি,যাই হোক আমার তোমার লগে কথা ছিল।’

‘ জ্বি বলেন কী বলবেন?’

‘ দেহো কয়দিন পরেই সালমান বিয়া আর আফিদা চায় তোমরা গ্রামে আসো।তাই আমি চাই সবাই রে লইয়া এক সঙ্গে আসলে ভালোই হত।’

‘‌ হ্যা আম্মা, আপনার ছেলে কে জিজ্ঞেস করেন।ওনি তো সবসময় বিজি থাকে তাই একবার কথা বলে নিলে ভালো হয়।’

‘ আচ্ছা দেও।’

‘ হ্যা আম্মা বলো।’

‘ দেখ বাবা আমি কিছু শুনতে চাই না,তোরা সবাই সালমার বিয়াতে আসবি মানে আসবি এটাই ফাইনাল।আর হো রুম্পা রে লইয়া আইছ কিন্তু রাখলাম আল্লাহ হাফেজ।’

ফোন রেখে দিলেন আনোয়ারা রহমান, কিছু বলার সুযোগ দেয়নি আফতাব রহমান কে। আনোয়ারা রহমান আফতাব রহমান এর মা যেন দা’ম্ভিকতা তেমনি ক’ঠুরতা যেটা চান সেটাই করেন। ওনার কথার উপর কেউ কথা বলতে পারে না, পরিবারের প্রায় অর্ধেক লোকজন ওনাকে ভ’য় পায়। গ্রামেই থাকেন উনি। সবাই শহরে আসার সময় উনাকে সাথে আনতে চেয়েছিল কিন্তু নিজের স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যাবেন না উনি।আফিদা ওনার সবচেয়ে ছোট মেয়ে,স্বামী মা’রা যাওয়ার পর শশুর বাড়ীতে নানা নি’র্যা’তন সহ্য করতে হয়েছে তাকে শেষমেশ না পেরে ওরে নিয়ে চলে আসেন আনোয়ারা রহমান।আফিদার দুই মেয়ে সালমা আর হিমানি, সালমার মাত্র বিয়ে ঠিক হয়েছে যার কারণে আনোয়ারা রহমান চান সবাই যাতে বিয়েতে আসে।

চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *