তোমার নামে সন্ধ্যা নামুক [পর্ব-১৪]

আকাশী রঙের ড্রেস পড়েছে চৈতি, দেখতে মনে হচ্ছে কোনো মেঘ কন্যা ভুল করেই হয়ত চলে এসেছে।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হিমেল, ভালো করে কান পেতে শুনছে হিমেল।তার হৃদয় স্পন্দন এতটাই বেড়েছে যে তা যে কেউ শুনতে পাবে।বার বার নিজের শুকানো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে এদিক ওদিক তাকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে,প্রিয় প্রয়াসী কে এত কাছ থেকে দেখেও ছুঁতে না পারার আফসোস তাকে কু’ড়ে কু’ড়ে খাচ্ছে।

হাত দুটো পকেটে ঢুকিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায় হিমেল।ওর এমন ক’রুণ অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে চৈতি।

‘‌ লোকটি সত্যি পা গ ল।’

চৈতির ভাবনার মধ্যে সিফাত এসে বলে।

‘ এই যে পা গ লী, আমার মাস্টার কই?’

‘ আরে আসবে আসবে।

‘ সত্যি আসবে?’

‘ ইয়েস, আমি বলেছি যখন অবশ্যই আসবে।’

‘ তা তুই কী এমন করেছিস?’

কাঁধে ব্যাগ চা’পিয়ে যাওয়ার পথে রওনা দেয় আরুহী হঠাৎ মাঝ পথে তাকে থামিয়ে দেয় চৈতি।চৈতি কে সে চিনে, সিফাতের ছোট বোন হয়।

‘ চৈতি তুমি এখানে?’

‘ হুমমম, আমার তোমার সাথে কথা আছে।’

‘ কী কথা? আচ্ছা তুমি যদি তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে কথা বলতে চাও তাহলে সরি আমি শুনতে চাই না।’

‘ আরে না আমি তো অন্য কিছু বলতে চাই।’

‘ আচ্ছা তাহলে তাড়াতাড়ি বলো আমার আবার স্কুলে যেতে হবে।’

‘ আসলে বিকেলে আমি,তুফা নিশা শপিং এ যাচ্ছি তাই ভাবছি তুমিও যদি আমাদের সাথে যাও?’

‘ না মানে তোমরা যাচ্ছ এর মধ্যে আমি গিয়ে কী করব?’

‘ তুমি আমাদের ভাবী হয়ে যাবে, না সরি মানে বড় আপু হয়ে যাবে প্লীজ।’

‘ না না আমি যেতে চাই না।’

‘ প্লীজ প্লীজ প্লীজ,চলো না গো আপু।এই বারে শুধু এরপর আর কখনও বলব না।’

আরুহী বার বার না করেছে কিন্তু চৈতি তো না’ছোড় বান্দা ছাড়বেই না। কোনো রকমে আরুহী কে হ্যা বলায়। এমনিতেই সে ভয়ে আছে কাল রাতে যা হলো তাতে একটু ভয় পাওয়া টা স্বাভাবিক, মায়ের কাছ থেকে জেনেছে সিফাত রাতে আরুহী কে বাড়িতে দিয়ে গেছে।

‘ ওরে আমার বোন ধন্যবাদ তোকে অনেক।’

‘ নট,থ্যাংকিউ এ কাজ হবে না, আমি কিন্তু আজ যত ইচ্ছে শপিং করব?’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আরুহী তো এখনও আসেনি?’

‘ চলে আসবে, একটু অপেক্ষা করো।’

সিফাত অপেক্ষা করতে থাকে,একে একে সবাই শপিং মলের ভেতরে প্রবেশ করে, নিশা আর ইশান এক দিকে যায়,তুফা আর মাহমুদ অন্য দিকে।ওদের মধ্যে হিমেল এক সাইডে একা দাঁড়িয়ে আছে, মূলত সে চাইছে না চৈতির কাছে যেতে।যদি কোনো কিছু ভুল হয়ে যায় তার দ্বারা? না না এগুলো করা সম্ভব হবে না,চৈতি কে নিজের ভালোবাসা দ্বারা জয় করতে হবে। আস্তে আস্তে চৈতি অনেক এখন অনেকটাই বিশ্বাস করে,এমন কিছু করতে চায় না সে যাতে সেই বিশ্বাস ন’ষ্ট হয়ে যাক।

এসব ভাবনার মধ্যে কেউ একজন হিমেল এর পিঠে হাত রাখে। পিছন ফিরে দেখে চৈতি দাঁড়িয়ে আছে।

‘ এই যে মিস্টার রোমিং,কী হয়েছে একা দাঁড়িয়ে আছেন যে?’

‘ কিছু না, এমনিতেই আর কী।’

‘ বুঝলাম।’

‘ কী বুঝলে?’

‘ এটাই যে আপনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না।’

এটা বলে চৈতা মুখ টিপে হাসতে লাগল। হিমেল নিজের ঠোঁট কা’মড়ে ধরে। সত্যি তো ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে অ’ক্ষম।

‘ কী হলো রোমিও জ্বি?’

হিমেল পকেট থেকে ডান হাত বের করে চৈতির বা হাত টেনে নিজের কিছুটা কাছে নিয়ে এসে বলে।

‘ ভালো হয়ে যাও মিসেস জুলিয়েট, না হলে এই রোমিও কিন্তু ভুল করলে সব কিছু জুলিয়েটকেই সহ্য করতে হবে।’

‘ ইশ্,শখ কত? আচ্ছা এবার রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট চরিত্র ছাড়ুন আর আমার সাথে ভেতরে চলুন।’

হিমেল স্মিত হেসে চৈতির সাথে ভেতরে যায়। হালকা বাদামি রঙের ড্রেস পড়েছে আরুহী,চোখ দুটো বার বার এদিক ওদিক কাউকে যেন খুঁজে চলেছে। হ্যা অনেকক্ষণ ধরে চৈতি কে খুঁজে চলেছে। নিজের ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেতে ভয়ে শিউরে ওঠে আরুহী, পিছন ফিরে দেখে সিফাত।ওর দিকে তাকাতে গিয়ে উড়নায় পা আটকে পড়ে নিতে নেয় আরুহী, সিফাত নিজের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় স্পর্শ করে আরুহীর কো’মড়। চোখের দিকে তাকিয়ে আছে সিফাত,এই গাঢ় কাজল কালো চোখের মায়ায় পড়েছিল যে আর কখনও উঠতেই পারেনি।

‘ স সিফাত, আপনি?’

‘ আরু বেবি।’

‘‌ নির্ল’জ্জ,সরুন।’

সিফাত আলতো করে আরুহী কে দাঁড় করায়,মুখে তার প্রশান্তির হাসি।প্রিয় মানুষটি কে অবশেষে এত সময় অপেক্ষার পর দেখতে পেলো, ওদিকে প্রয়াসীর চোখে এক রাশ অভিমান।

আরুহী চোখ পা’কিয়ে বলে।

‘ আপনিও এসেছেন?আর চৈতি আমাকে মিথ্যা কথা বলল তাই তো?’

‘ হি হি হি।’

‘ এই দাঁত দেখানো বন্ধ করুন, না হলে ভে’ঙে দেব।

‘ উঁহু এত রাগ করতে নেই জানু।’

‘ করব,তাতে আপনার কী?আর আমি তো এখন চলেই যাব।’

‘ গেলে খবর আছে।’

‘ কী? তাহলে তো যাবই।’

‘ খালি বেরিয়ে দেখো? সবার সামনে কিস করব।’

‘ ছিঃ ছিঃ আপনি এমন কেন?’

‘ তুমি বানিয়েছ।’

‘ উফ্,ভালো লাগে না।’

‘ চলো চলো।’

একে একে সবাই শপিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,ইশান লুকিয়ে নিশার জন্য গিফট নেয়, ওদিকে আবার তুফা মাহমুদ এর জন্য অনেক কিছু নেয় ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।আরুহী কিছুই নিচ্ছে না তাতে রাগ হয় সিফাতের।একে একে অনেক গুলো শাড়ি নিয়ে ওর সামনে ধরে বাচাই করার জন্য কিন্তু আরুহী করে না,সিফাতও নাছোড়বান্দা সেও কিসের ভয় দেখিয়ে এটা সেটা করায়। নিজের চড়ুই পাখির জন্য মনের মত সুন্দর একটি শাড়ি আলাদা ভাবে নেয় হিমেল, সামনেই তো চড়ুই পাখির জন্মদিন ওর জন্য স্পেশাল করে তুলবে সব কিছু।কথা গুলো ভেবে মুচকি হাসে হিমেল।

_____________

‘ এটা তো ঠিক হচ্ছে না মা। দিনে দিনে আরিফ বদলে যাচ্ছে,যখন ইচ্ছে হয় বাসায় আসে যখন ইচ্ছে হয় চলে যাচ্ছে।এমন কী ওর ফোন পর্যন্ত আমাকে ধরতে দেয় না, আমার তো মনে হচ্ছে অন্য কিছু ঘ’টছে।’

নিহার কথা শুনে হাতে থাকা প্লেট গুলো রেখে এগিয়ে আসেন শান্তা রহমান, নিহার হাতে হাত রেখে বলেন।

‘ কী বলছ এসব নিহা? সংসারে একটু ঝগ’ড়া ঝা’মেলা তো হবেই তাই বলে এসব?’

‘ আপনি বুঝতে পারছেন না মা, এখন প্রতিটা সময় ঝামেলা হচ্ছে, আমি সব ঠিক করতে চাইলেও আরিফ চায় না। আপনি প্লীজ ওর সাথে একটু কথা বলে নিন।’

এটা বলে নিহা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে।ছেলের বউ এর এমন কান্না দেখে বুকের ভেতর কে’পে উঠে শান্তা রহমান এর।উনি ভরসা দিয়ে বলেন।

‘ আচ্ছা ঠিক আছে,আজ আরিফ বাসায় আসুক আমি কথা বলে নেব কেমন?’

‘ আচ্ছা মা।’

‘ এখন চলো তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে নাও, সকাল থেকে কিছুই খাওনি।’

শান্তা রহমান খাবার নিয়ে নিহা কে খেতে দেয়, ওদিকে তিথির সাথে লংড্রাইভে গেছে আরিফ,নিহা কে ফোন করে বলেছে আসতে রাত হবে। তপ্ত শ্বাস ফেলে নিহা বিছানায় শুয়ে পড়ে।তার জীবনের সুখ দুঃখে পরিণত হয়েছে আনন্দ সব কিছু হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে গেল। এলোমেলো প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করে নিহা।

______

‘ আম্মা ভাইজান কী বলল?ওরা কী আসব?’

আনোয়ারা রহমান বিছানায় শুয়ে ছিলেন, ওনার পা মালিশ করে দিচ্ছে আফিদা,তারই মধ্যে আফিদা প্রশ্ন করে বসে আনোয়ারা রহমান কে।উনি শরীরে কম্বল জড়িয়ে বলেন।

‘ আসব আসব, তুই চিন্তা করিস না মা।তোর ভাই ভাবী সবাই আসব।হ্যা রে সালমা কই?’

‘‌ আম্মা ওয় তো ঘুমায়।’

‘ আর হিমানি?’

‘ ওর কথা আর কী কমু?বাজার থাইকা নতুন ফোন যে নিছে ওইটা লইয়া সারাডা দিন বইসা থাকে।’

‘ হুম বুঝলাম,সালমার পর পরেই হিমানির লাইগা পাত্র দেখমু, আচ্ছা এখন তুই গিয়া ঘুমায়া পড় আমিও ঘুমাই।’

‘ আচ্ছা আম্মা।’

আফিদা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে যান,আনোয়ারা সিদ্দিক,ঘরের লাইট বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

চলবে…….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *