তোমার নামে সন্ধ্যা নামুক [পর্ব-০৭] 

বিয়ে করবি আমাকে?ট্রাস্ট মী তোকে সুখে রাখব,তোর কখনও ভালোবাসার কমতি হবে না।’

তুফা কে নিতে এসেছিল চৈতি, আজকে নিশা ওদের সাথে নেই,ও আজ ভার্সিটিতে যাবে না। এদিকে তুফা বলেছে যাওয়ার সময় এক সঙ্গে যাবে দু’জনে,ওর দেরী হচ্ছে বলে ভেতরে আসে সে। রুম্পা সিদ্দিক চৈতি কে দেখে মনে মনে ভীষণ খুশি হন, ওদের জন্য টিফিন বক্স রেডি করে আনতে যায়।চৈতি পা বাড়ায় দুতলার দিকে কিন্তু তুফার রুমে যাওয়ার আগেই কেউ হেঁচকা টান দিয়ে নিয়ে যায় তাকে। কেউ তাকে রুমে নিয়ে দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দেয়, অন্ধকার রুম ছিল তাই কিছু দেখতে পাচ্ছে না চৈতি তাই চেঁচিয়ে উঠে।

‘ কে আপনি?আ,,।’

চৈতি চেঁচানোর আগেই কারও বলিষ্ঠ হাত তার মুখের উপর পড়ে, তখনই কা’রেন্ট চলে আসে। নিজের সামনে হিমেল কে দেখে থমকে যায় চৈতি,তার উপর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার।আজ প্রথম বার হয়ত হিমেল ওর এতটা কাছাকাছি আছে এতটাই কাছে যে ওর প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করতে পারছে। ‌

‘ হিমেল ভাই আপনি?কী করছেন ছাড়ুন?’

‘ হুস, আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।’

‘তাই বলে এভাবে?’

‘কেন? কী ভাবে কী করলাম?’

‘ কিছু না তাড়াতাড়ি বলুন কী কথা আছে?’

এরপরই হিমেল চৈতিকে বিয়ে করার কথা বলে যা শুনার পর থেকে হাত পায়ের কাঁপুনি যেন আরও বেড়ে যায়।

‘ কী বলছেন এসব আপনি? না না আমি বিয়ে করতে পারব না।আর আপনি আমার কী হন ভুলে যাচ্ছেন?’

‘ উঁহু ভুলিনি তো? কিন্তু আমি তোকে কখনও বোন ভাবি নি, ভালোবাসি।’

‘ চুপ করুন হিমেল ভাই,এসব কি বলছেন?’

‘ বিয়ে করতে চাই।’

‘ না এসব বলবেন না,প্লীজ সরুন।’

চৈতি এক প্রকার হিমেল কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে যেতে লাগে, তখনই পিছন থেকে হিমেল বলে উঠে।

‘ তাহলে কী ধরে নেব তুই এখনও আরিফ কে ভালোবাসিস?’

আরিফের নাম শুনে দাঁড়িয়ে যায় চৈতি,পিছন ফিরে তাকায় হিমেল এর দিকে।

‘ তুই এখনও আরিফ কে ভালোবাসিস?’

‘ না এক সময় বাসতাম কিন্তু এখন আর নয়, হয়তো আগের অনুভূতিগুলো রয়ে গেছে আর নতুন করে কোনো অনুভূতির সৃ’ষ্টি হোক তা আমি চাই না।তাই প্লীজ আপনি দয়া করে এসব বলবেন না।’

‘ কিন্তু আমি যে তোকে ভালবাসি?তাও তোর বয়স যখন আট বছর তখন থেকে তোর জন্য আমার মনে অনুভূতির তৈরি হয়েছে সেগুলোর কী হবে?’

‘ কী? আপনি?’

‘ হ্যা সেই আট বছর থেকে তোকে চাই,তখন ভালোবাসা কী জানতাম না, এরপর যত বড় হতে লাগলাম তত তোমার প্রতি ফিলিংস গুলো গাঢ় হতে লাগলো,প্লীজ বিয়ে কর আমায় ভালোবাসার কমতি হবে না।’

‘ আমি আর কখনও আপনার সাথে দেখা কিংবা কথা কোনোটাই হবে না।’

‘ কিন্তু আমি তোকে ছাড়তে পারব না,যদি ভালো না বাসিস পা গ ল করে ছাড়ব।’

‘ ছিহ্।’

___________

ভোরের কুয়াশা শেষে মিষ্টি রোদের সোনালী আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে ধরণীর বুকে।তারই মধ্যে বড় বড় পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে ইশান ওর পিছু পিছু নিজের ছোট্ট পা দুটো দিয়ে অনুসরণ করেছে নিশা। মনে মনে রাজ্যের যত গা’লি আছে সব ইশান এর দিক ছু’ড়ে দিছে।

‘ এই যে মিস্টার এত্ত জোরে হাঁটছেন কেন?’

ইশান এক নজর দেখে নিশার দিকে।

‘ তো কী করব? তুমি কেন আমার পিছু আসছো?কলেজ নেই?’

‘ আছে কিন্তু যাইনি।’

‘ কেন যাওনি?’

‘ আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি যে।’

‘ কী প্রশ্ন?’

‘ ওই যে আপনি কী নিজের আকাশ সম ভালোবাসা থেকে এক চিলতে ভালোবাসা সেই মেয়েটি কে দিবেন?’

‘ তা তুমি কেন জানতে চাইছো?ওই মেয়ে কে বলো আসতে আমি তাকেই বলব।’

‘ কিন্তু,,,,।’

‘ বাসায় যাও পাগলী।’

নিশা কালকের ন্যায় আবারও ঠোঁট ফুলিয়ে দাঁড়ায়।

বিকেলে কোচিং থেকে আসার সময় দেখা হয় মাহমুদ এর সাথে,চৈতি আর তুফা ও নিশা তিনজন এক সাথে বাড়ি ফিরছিল, মাহমুদ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা বিব্রত হয় তুফা।চৈতি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘ মাহমুদ ভাইয়া আপনি এখানে?’

মাহমুদ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে।

‘ আমার তুফার সাথে কিছু কথা আছে।’

তুফার সাথে কথা আছে শুনে চৈতি আর নিশা একে অপরের দিকে এক পলক দেখে আবারও দৃষ্টি দেয় তুফার দিকে। এদিকে তুফা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

‘ আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া আপনি কথা বলুন আমরা বরং একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াই।’

চৈতির কথা শুনে নিশা ফিক করে হেসে উঠে, হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা দেয় চৈতি নিশা কে। ইশারায় বলে ওর সাথে যাওয়ার কথা।

‘‌ তুফা আমার তোমাকে কাল যা হয়েছিল তা নিয়ে কিছু বলার আছে।’

তুফা হাত কচলে হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।

‘ আসলে কাল আমি নিজের মধ্যে একদমই ছিলাম না,কী করেছি কেন হচ্ছে? কিছু বুঝতে পারিনি সত্যি বলছি। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে আমি হঠাৎ করে তোমার সাথে এমন একটা কা’ন্ড করে বসবো ভাবিনি।’

মাহমুদ এক দমে কথা গুলো বলে যাচ্ছে কিন্তু তুফার মুখে একটাও কথা নেই তা দেখে আরও বিচলিত হচ্ছে মাহমুদ,সে কী তাহলে খুব বড় ভুল করে ফেলল?

‘ প্লীজ তুফা তুমি এভাবে চুপ থেকো না, তোমার যদি শা’স্তি দেওয়ার হয় আমাকে দাও, তবুও চুপ থেকো না।’

‘ উঁহু আপনার কোনো ভুল নেই।’

‘ আমি জানি আমার ভুল আছে কিন্তু তবুও তুমি না করছো।’

‘ আসলেই ভুল নেই আর আরেকটা কথা কী জানেন?’

‘ কী কথা?’

‘ যদি এমন হতো তাহলে আমি আপনার কাছে আসতাম না নিজ থেকেই সরিয়ে দিতাম, সম্মতি আছে বলেই তো,,,,।’

‘ তার মানে?’

‘ মানে খুঁজে নিন।’

তুফা দৌড়ে এগিয়ে যায় চৈতির কাছে, ওর এমন লজ্জা মাখা মুখ দেখে চৈতি নিশা দু’জনেই আড় চোখে তাকায় মাহমুদ এর দিকে, মাহমুদ কিছু না জানার ভান করে মাথা চুলকে চলে যায়।

_____________

নতুন বাড়িতে সিফ্ট হয়েছে আরুহী আর রোশনা বেগম, কাউকে জানায়নি,যদি কেউ জানতে পারে তাহলে অবশ্যই সিফাত কে বলে দেবে আর আরুহী এটা একদমই চায় না।

আরুহী এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে খবরটা অলরেডি পেয়ে গেছে সিফাত, রিদওয়ান আরুহীদের যেতে দেখেছে তা আর সাথে সাথে এসে সিফাত কে কথাটা বলে দেয়।

‘ এবার কী করবে ভাই,ভাবী তো চলে গেলো?’

‘ দেখ রিদওয়ান কী করি, দরকার পড়লে বাসর করে ওকে এখানে নিয়ে আসবো। এবার না হয় আগে বাবুর আম্মু বানিয়ে এরপর বিয়ে করব।’

সিফাত এর এমনতর কথা শুনে হাসে রিদওয়ান।

‘ ওকে ভাই, কিছু প্রয়োজন হলে জানিও।’

‘ তুই বরং এক কাজ কর,ওরা কোন বাড়িতে উঠেছে সেটার খুঁজ নিয়ে আয়।

‘ আচ্ছা ভাই, সময় মত খবর পেয়ে যাবে।’

চলবে……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *