পৌষবৃষ্টি

 পর্ব- ০১

লেখিকা:- মিফতা_তিমু

সেদিন পৌষমাস, আবহাওয়া ভালো নয়। চারদিক মেঘের গমগমে আওয়াজে মুখরিত। বাতাবরণ বলছে তাপমাত্রা ১৭°। চলছে শৈত্যপ্রবাহ কিন্তু চয়নিকা থেমে নেই। জ্বর গায়ে সে দ্রুত হাতে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। আর কিছুদিন পরই ইন্টার পরীক্ষা শুরু হবে। হাতে আর মাত্র কটাদিন অথচ এখন যদি ও কোচিং মিস দেয় তাহলে নেহাৎ বিপদে পড়তে হবে।

চয়নিকা আবার পড়াশোনা নিয়ে ভীষন সিরিয়াস। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সে। তাদের ওর কাছে কতই না আশা। সে যদি পড়াশোনা ঠিকমতো না করে, কর্মক্ষেত্রে তার সফলতা না আসে তাহলে তার বাবা মায়ের মন তো ভেঙে যাবে। আদরের সন্তান হয়ে সে অন্তত পারবে না এমনটা করতে। সে পারবে না বাবা মায়ের ইচ্ছেগুলো শেষ করতে।

মেয়ের পিছন খাবার নিয়ে ছুটছেন জেরিন। মেয়ে তার খেতেই চায় না। তার ধ্যান, জ্ঞান সব পড়াশোনা। ইন্টার পরীক্ষায় ভালো না করলে তার ধারণা তিনি ও আলমগীর চৌধুরী কষ্ট পাবেন। কিন্তু মেয়ে এটা বোঝেনা সবার আগে তার নিজের সুস্থ থাকা প্রয়োজন। সে সুস্থ না থাকলে পড়াশোনা করে উন্নতিটা করবে কে।

‘ মা আমার, ভাতটা খেয়ে নে। আজ কোচিং কি না গেলেই নয় ? তোর তো গায়ে জ্বর। দেখে মনে হচ্ছে বাহিরে প্রচুর ঠান্ডা। ‘

জেরিন বললেন কিন্তু মেয়ে তার কথা শুনলো না। চয়নিকা মুখে শেষ লোকমা তুলে নিয়ে ব্যাগ কাধে তুললো। মাকে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ এত চিন্তা করো না মা। মাত্রই তো ১০০° জ্বর উঠেছে। ওটুকু জ্বরে কিছু হবে না। ‘

জেরিন আরও কিছু বলবার চাইলেন কিন্তু চয়নিকা শুনলো না। সে বেরিয়ে গেলো। তিনি মেয়ের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। মনটা কেমন করছে। এই বৈরী হাওয়ায় মেয়েটা না বিপদে পরে যায়। মেয়ে তাদের ভীষন আদরের। একমাত্র মেয়ে কিনা।

চয়নিকা তখন অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করেছে। পথ আর বেশি দূর বাকি নেই। কিন্তু পথটা আর দেখতে হলো না। সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। চয়নিকার সুন্দর মুখখানা হয়ে উঠলো ফ্যাকাসে। সে দৌড়ে গিয়ে ফুটপাতে থাকা গাছের নিচে দাড়ালো। বৃষ্টি থামার নাম নেই। চয়নিকা এখন এমন পরিস্থিতিতে আছে যেখান থেকে না পারবে বাড়ি ফিরতে আর না পারবে কোচিংয়ে যেতে।

ইতিমধ্যে চয়নিকার কুচকুচে কালো কেশরাশি ভিজে একাকার। টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছে। গায়ের সাদা চুমকি বসানো চুড়িদারটাও ভিজে জবজবে। দুর্ভাগ্যক্রমে সে আজই সোয়েটার পড়লো না। জ্বর গায়ে তো সোয়েটার পড়লেই গরম লাগে। চয়নিকার অসস্তি হলো। এমন ভেজা কাপড়ে ঠান্ডার মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে তার ভালো লাগছে না। আফসোস হচ্ছে ইশ যদি মায়ের কথাটা শুনতো।

গাছের নিচে দাড়িয়ে বিশেষ লাভ হয়েছে বলে মনে হলো না চয়নিকার। সেই একই জিনিষ, বটবৃক্ষ তাকেও স্বীয় জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। চয়নিকা বুঝলো দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। এই কাপড়ে কোচিং যাওয়া যাবে না। কাজেই বাড়ি ফিরতে হবে।  কোচিংয়ের কাছকাছি এসেও ফিরে যেতে হবে ভেবে চয়নিকার মেজাজ উষ্ণ হলো। ধুর এই পৌষ মাসে আবার বৃষ্টি হয় কি করে। এ তো শীতের মাস, বছরের শীতলতম সময়। তবে আজ কেন আবহাওয়া তার সঙ্গে বৈরীতা করলো ?

চয়নিকা বেশিক্ষন দাড়িয়ে সময় নষ্ট করলো না। পথে ঘাটে মানুষ তখন কম। বৃষ্টির আগমনে সকলে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটেছে। চয়নিকা দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে গেলো। তবে পিচ্ছিল কাদাযুক্ত রাস্তায় পা রাখতেই সে অসাবধানে পা পিছলে ধপ করে পড়ে গেলো। অপমানে তার তখন মাথা নত। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই তবুও তো আছেন দু চারজন। তাদের নিশ্চই চোখে পড়েছে। এখন চয়নিকা কি করে মুখ তুলে তাকাবে ? লোকগুলো নিশ্চয় তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে নিশ্চই হাসছে।

‘ এই যে ম্যাডাম, আপনার কি লেগেছে ? ‘

চয়নিকা যখন অপমানে জর্জরিত হয়ে মাটিতে বসে চোখের পানি ফেলছিল তখনই অচেনা এক লোক তাকে টেনে তুললো। রাগে চয়নিকার কপালের রগ ফুলে উঠলো। লোকটার সাহস কি করে হলো তাকে না জানিয়ে ছুঁয়ে দেওয়ার ? এই লোককে ছেড়ে দিলে হবে না। কথা তো দু চার একে শোনানো প্রয়োজন।

লোকটাকে কথা শোনাতে চয়নিকা তার টান টান দৃষ্টি সেই লোকের উপর ফেলতেই সে থমকে গেলো। এ তো লোক নয়, এক উদ্দীপ্ত যুবক। আঁখি পল্লবে তার তখনও বৃষ্টির ছোঁয়া। ঠোঁটগুলোয় প্রচ্ছন্ন খেলছে। চুলগুলো ভিজে নেমে গেছে। পরনে হালকা হলুদ সোয়েটার আর ট্রাউজার। হাতে তার রিস্ট ওয়াচ। ঘড়িটা নির্ঘাত আজ নষ্ট হবে যদি ওয়াটার প্রুফ না হয়। চয়নিকা অত্যন্ত বিস্মিত। মানুষটার মায়াবী চোখ দুটো তাকে টানছে। চোখ দুটোর প্রশংসা করার মতো সাহিত্যিক শব্দ তার জানা নেই। সাহিত্যে তার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। তাইতো আর সব বিষয় থেকে বাংলাতেই তার তুলনামূলক নাম্বার কম আসে। ওই কোনো মতে আশি অব্দি টেনে তোলা আর কি!!

‘ ম্যাডাম আপনি কি ঠিক আছেন ? ‘

ছেলেটা আবারও জিজ্ঞেস করলো। চয়নিকা এবার মাথা নেড়ে সায় দিল। ছেলেটা চমৎকার হেসে বলল ‘ দুঃখিত আপনাকে ওভাবে টেনে তুললাম। আসলে আপনাকে বিপদে দেখে মাথা কাজ করছিলো না। একজন মানুষ বিপদে পড়লে মাথা এমনিতেও কাজ করে না আমার। ‘

ছেলেটার কথায় চয়নিকা ঘায়েল হলো কি ? মনে হয় হলো। তা তার ফ্যাকাসে কায়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অদ্ভুত অচেনা এই ছেলের উদারতায় বুদ্ধিদীপ্ত চয়নিকা কিনা গলে গলে পানি হয়ে যাচ্ছে ? কি আছে ঐ ছেলের মাঝে ? কোথায় এর থেকেও আরও সুদর্শন যুবকদের দেখেছে চয়নিকা, অথচ তার তো এভাবে মনটা কখনও নুয়ে যায়নি কারোর প্রতি। তবে আজ কেন এমন হলো ?

ছেলেটা চয়নিকাকে চুপচাপ দেখে আশেপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলো। তারপর গায়ের সোয়েটার টা খুলে ধীর গলায় কারোর শুনতে না পারার মতো করে বললো ‘ ম্যাডাম আপনার আপত্তি না থাকলে এই সোয়েটারটা গায়ে পড়ে নিন। ‘

এবার চয়নিকা আশ্চর্য হলো। এই ছেলের মতলব কী ? নিজের সোয়েটার তাকে পড়তে দিচ্ছে কেন ? চয়নিকা ক্ষুরধার চোখে বললো ‘ কেন ? আপনার সোয়েটার আমি কেন পড়বো ? ‘

‘ দুঃখিত ম্যাডাম কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজা এই সাদা জামায় আপনাকে দেখতে খুব একটা ভালো লাগছে না। আশপাশের লোকজন আপনাকে ভালো চোখে দেখছে না। ‘

ছেলেটার কথায় এবার যেন চয়নিকা নরম হলো। তার টনক নড়লো। এতক্ষণ সে কিনা ব্যক্কলের মতো দাড়িয়েছিল এই অবস্থায়। থ্যাংকস টু সেই ছেলে নাহলে তার তো খেয়ালই হতো না। যাই হোক হাত এগিয়ে সোয়েটারটা পড়ে নিল সে। সোয়েটার পড়ে চোখ তুলতেই অচেনা সেই ছেলেকে বললো ‘ ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে এত সাহায্য করার জন্য। আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। আপনার কথা আমি কখনো ভুলবো না। ‘

আসলেই চয়নিকা সেই ছেলের কথা কখনও ভুলতে পারলো না। সোয়েটার গায়ে দিয়েই ফিরলো বাকিটা পথ। বাড়ির কাছে এসে সে সোয়েটারটা খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো কারণ তার মা দেখলে হাজার প্রশ্ন করবেন তারপর সেই সোয়েটার ফেলে দিবেন। চয়নিকা অন্তত চায় না মানুষটার এই জিনিস তার হাতছাড়া হোক।

ছেলেটার নাম চয়নিকা জানতে পারেনি। এতে তার কোনো আফসোস নেই। পথ চলতে গেলে কত জনের সঙ্গেই দেখা হবে। তারমানে এই নয় তাদের সারাজীবন মনে বয়ে বেড়াতে হবে। এমনিতেও যাকে তাকে মনে জায়গা দিতে নেই সে মানুষটা যতই ভালো, যতই ভদ্র হোক না কেন।

নিজের কাজে চয়নিকা নিজেই অবাক। এক দিকে সে চাইছে সোয়েটারটা নিজের কাছে রাখবে আবার পরক্ষণেই আরেক দিকে সে চাইছে মানুষটাকে ভুলে যেতে। অজানা সেই ছেলেকে মনে না রাখতে। তার হয়েছে কি ? পাগল কি হয়ে গেলো নাকি ? এমন হলে তো হবে না। প্রেমের আগুনে পুড়ে সে তার কাছের মানুষদের পোড়াতে চায় না। তাই সে ভাবলো ভালই হয়েছে সে জানে না ছেলেটার নাম। মানুষটার সঙ্গে তার এই পথ এই অব্দিই থাক। পথের শুরু সেই মানুষটা করলেও সমাপ্তি টানবে সে।

পৌষবৃষ্টি পর্ব- ০২

চয়নিকা ভেবেছিল সে ভুলে যাবে সেই অপরিচিতকে। মানুষটা তার কেউ নয়। তার সঙ্গে ক্ষণিকের হওয়ার পরিচিতিতে তার জন্য মনটা কাদবে না তার। তাকে ক্ষণে ক্ষণে পড়বে না মনে। কিন্তু চয়নিকা ভুল ছিল। তার ধারণা সত্যি হয়নি। সে পারেনি ভুলতে তাকে। মানুষটা রয়ে গেছে তার মনে আবছায়া স্মৃতি হয়ে।

দিন যায়, মাস যায় কিন্তু বর্ষণ মুখর দিনের সেই মানুষটির আর দেখা নেই। চয়নিকা অপেক্ষায় থাকে মানুষটার জন্য কিন্তু পাষাণ সেই ছেলে তাকে দেখাও দেয় না। রোজ কোচিং থেকে ফিরতে সময় রাস্তার ধারে গাছতলায় দাড়িয়ে সে অপেক্ষা করে যদি মানুষটা একবার দেখা দেয়। কিন্তু না, মানুষটা নেই। চয়নিকা শুধু পারে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে।

চয়নিকা ভেবেছিল সেই অপরিচিতর নাম না জেনে সে ভালই করেছে। এই সুবাদে সেই ছেলের সঙ্গে তার আর পরিচিত হওয়ার আর সুযোগ থাকবে না। কিন্তু সেই ভুলটাই তার মস্ত বড় অপরাধ হয়ে দাঁড়ালো। যদি সে মানুষটার নাম জানতো তাহলে আজ তার নাগাল পেত। চয়নিকা বুঝলো তার এই বোকামি তাকে সারাজীবন ভোগাবে।

এর মাঝে চয়নিকার ইন্টার পরীক্ষা মিটলো। মনে সাহস রেখেই একমাত্র মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে এতটা অব্দি নিজেকে চালিয়ে নিয়ে এসেছে সে। বাবা মায়ের জন্যই তার এতদূর আসা। তাই পরীক্ষার সময়টাতে সেই ছেলের চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু পোড়ামুখী এই মন কি আর বিবেকের বিধি নিষেধ মানে ? সে চলে আপনমনে।

পরীক্ষা শেষ হতেই চয়নিকা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এতদিন পড়াশোনার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে মানুষটার কথা যতটা সম্ভব কম ভাবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন তো তার ছুটি চলে। ভার্সিটির এডমিশনের কোচিং শুরু হতে এখনও সময় আছে। অফুরন্ত এই সময়ে সে এখন সময়টা কাটাবে কি করে ? সারাদিন তো মানুষটার কথাই মাথায় ঘুরবে।

আর হলোও তাই। এবার যেন সেই অপরিচিত চয়নিকার মন, মস্তিষ্ক জুড়ে আরও ছড়িয়ে পড়লো। রাগে দুঃখে হতবিহ্বল চয়নিকা তখন পাগলের মতো কপাল চাপড়াতে শুরু করলো। কেন যে এক অচেনার প্রেমে পড়ে এমন কঠিনতম অসুখ বাঁধিয়ে বসলো। এই অসুখের যে কোনো নিরাময় নেই। তবে চয়নিকাকে বাঁচাবে কে এই অনাহুত আগন্তুকের হাত হতে ? তার হাতে ধরা না দিয়েও সে যে তারই শিকলে বন্দী।

প্রেমে, দুঃখে ব্যথিত চয়নিকা তখন হাত পা ছড়িয়ে রোজকার নিয়ম মেনে কাদতে বসলো। লোকচক্ষুর ভয়ে সে গুনগুনিয়ে কাদে। মনের অসুখে তার সময় কাটে অবিলম্বে আর রাত কাটে ভয়াবহ দুঃখ কাধে চাপিয়ে। চয়নিকার মন খারাপ হলেও সূয্যি মামা তখন মাথার উপর দাড়িয়ে তেজোদীপ্ত ভাবে তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হলো চয়নিকার প্রাণপ্রিয় সখী জুলির আগমনে। সে এসেছে বান্ধবীকে নিয়ে ঘন্টা খানেকের জন্য বাহিরে ঘুরতে যাবে এই উদ্দেশ্যে। ইতিমধ্যে সে জেরিন এবং আলমগীরের অনুমতি নিয়ে নিয়েছে। কাজেই এখন আর বিধি নিষেধ নেই।

কিন্তু বেকে বসলো চয়নিকা। সে কিছুতেই বাহিরে যেতে রাজি হচ্ছে না। কিন্তু জুলি হার মানলে তো। ব্ল্যাকমেইল করে, হাতে ধরে, প্রমিজ করিয়ে এবং আরও নানাভাবে সে চয়নিকাকে রাজি করিয়ে নিলো। বাধ্য হয়েই চয়নিকা গেলো তৈরি হতে। তৈরি হয়ে দুই বান্ধবী বেরিয়ে পড়লো বেরোনোর উদ্দেশ্যে। সর্বপ্রথম তারা যাবে বসুন্ধরা মলে।

বসুন্ধরা মল থেকে কিছু কেনাকাটা করলো জুলি আর চয়নিকা। চয়নিকা তেমন কিছুই নেয়নি। জুলিই জোর করে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে চয়নিকার পছন্দের উইন্ড চ্যাম। চয়নিকার জন্য এখন এই বিরহী বেশে শখের কিছু নিয়ে নাচানাচি করা নেহাতই বিলাসিতা। তবে একান্ত বাধ্য হয়েই নেওয়া। কেনাকাটা শেষে ওরা চললো  রেস্টুরেন্টের দিকে। বসে কিছু খাওয়া যায়।

দুই বান্ধবী তখন কথা বলতে বলতে এগোচ্ছে। হঠাৎ চয়নিকার গায়ে ধাক্কা লাগল কারো। ধাক্কা দেওয়া মানুষটা তাকে সরি বলে দ্রুত  সামনে এগিয়ে গেলো। গিয়ে দাঁড়ালো অচেনা এক মেয়ের সামনে। এইদিকে সেই ছেলের এই অভদ্রতায় জুলি খিচে উঠলো। তীব্র গলায় বলল ‘ এ কোন অসভ্য ? এভাবে ধাক্কাও মারলো আবার সরিও বলে চলে গেলো। সরি এমন ভাবে বললো যেন দয়া করছে। না বললেই পারতো। ‘

চয়নিকা ততক্ষণে স্তব্ধ। তার চোখ দুটো ছেলেটার দিকে। ছেলেটা কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। আচ্ছা কে ওই মেয়েটা ? তার প্রেমিকা ? তবে চয়নিকা কে ? চয়নিকা তার কেউ নয়। চয়নিকা টের পাচ্ছে মানুষটা আবারও তার নাগালের বাহিরে চলে গেছে। সে তো জানে এই মানুষটাই তার সেই অপরিচিত। তবে কেন তার আবারও হারিয়ে যেতে হলো ? কেন সে শুধু চয়নিকার হলো না ? এমনটা হওয়ার থাকলে সামনেই বা কেন এলো ?

চয়নিকা কোনোমতে রেলিং ধরে মানুষটার নাগালের বাহিরে মলের অন্যদিকে চলে গেলো। চয়নিকাকে এভাবে এগোতে দেখে জুলিও ওর পিছন পিছন এলো। এসে দেখলো চয়নিকা মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কাদছে। প্রিয় বান্ধবীকে কাদতে দেখে বিমূঢ় জুলি। ও হতভম্ব নয়নে বললো ‘ এ কি হয়েছে তোর ? কাদছিস কেন ? ‘ তবে চয়নিকার মুখে উত্তর নেই। সে মৃদু শব্দে কেঁদে যাচ্ছে। কপোল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে রাশি রাশি মুক্তোর মতো অশ্রুরা।

রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে চয়নিকা আর জুলি। জুলির মুখোবয়ব গম্ভীর আর কপালে সরু দুই ভাঁজ। সে গম্ভীর গলায় বললো ‘ তুই এরকম একটা কিছু করবি ভাবিনি চয়ন। তুই এমন এক ছেলের প্রেমে পড়েছিস যাকে চিনিসই না। উল্টো ওর প্রেমিকাও আছে। তার নাম,ঠিকানা কিছু জানিসও না যে ওর লাভ লাইফ সম্পর্কে কিছু খোঁজ নিবি। এখন কেঁদেকেটে কি লাভ ?  ‘

চয়নিকা কিছু বললো না। সে নির্বিকার। ইতিমধ্যে সামলে নিয়েছে নিজেকে সে। সে ওয়েটারকে ডাকলো। শান্ত মুখেই অর্ডারও দিলো। জুলি এসব শুধু অবাক হয়ে দেখছে। প্রেমে পড়েও যে মানুষ এতটা শান্ত কি করে থাকে সেটা চয়নিকাকে না দেখলে সে বুঝত না। তারপর তাদের অর্ডার এলো। দুজনে মিলে খেয়ে বিল মিটিয়ে যে যার যার বাড়িতে চলে গেলো। পথে অপরিচিতকে নিয়ে ওদের মাঝে আর কোনো কথাই হলো না। হয়তো জুলিই আর কথা বাড়ালো বান্ধবীর মনের অবস্থা টের পেয়ে।

বাড়ি ফিরেই চয়নিকা জানতে পারলো কাল তাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছেন। মেয়ের এই বিরহী আচরণে আতঙ্কিত জেরিন আর আলমগীর ঠিক করেছেন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তবেই পূর্বের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাবেন। এ কথা শুনেও চয়নিকা কোনো কথা বললো না। শান্ত ভাবে মাথা নেড়ে ঘরে চলে এলো।

তাছাড়া বলতোই বা কি সে ? যে মা বাবা তোমরা অপেক্ষা করো কারণ আমার অপরিচিত ফিরবেন ? আদৌ কি সে ফিরবে ? অত সুন্দর প্রেমিকা রেখে কেউ কি অন্য মেয়ের কাছে যায় ?  চয়নিকাও বা কি করবে ? যাকে চিনে না, জানে না তার জন্য অপেক্ষা করবে ? এতে মা বাবার মন না ক্ষুণ্ণ হয়ে যায় ? যেই মা বাবার জন্য এতকিছু করা তাদেরই কষ্ট দিবে এই সাধ্য নেই চয়নিকার।

মা বাবার কথা ভেবে নিজেকে বুঝিয়ে তো নিলো কিন্তু আদৌ কি সে বিনা চয়নিকা সুখী হবে ? নাকি ভালোবাসাহীন সংসার তাশের ঘরের মতোই একসময় বিখরে যাবে ? চয়নিকা জানে না, সে কিছুই জানে না। সে শুধু জানে তার এক জনম কাটবে মানুষটার জন্য চোখের জল ফেলতে ফেলতেই। ভালোবাসা কেন এমন ? কেন ভালোবেসে সবার কষ্ট পেতে হয় ? ভালোবেসে যদি কষ্টই পাওয়ার ছিল তবে একে ভালোবাসা কেন বলে ? বলা উচিত মন্দবাসা।

[অন্তিম পর্ব]

বসার ঘরে আলমগীর সাহেবের তলবে হাজির হয়ে পাত্রের মাকে সালাম দিতে গিয়ে ভদ্র মহিলার পাশে বসে থাকা বহু আকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখে থমকে গেলো চয়নিকা।  যেখানে তাকে দেখতে আসা পাত্রের বসার কথা ছিল সেখানে এই মানুষটা কেন বসে আছে ?

চয়নিকা আরও চমকালো তার প্রিয় পুরুষের  থেকে আরেকটু দূরে অন্য সোফায় বসে থাকা কালকের সেই হাস্যরত রমণীকে দেখে। রমণী তাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। চেহারা আর গায়ে গতরে মনে হচ্ছে বয়স তারই মতো হবে কিন্তু কাল অত দূর থেকে দেখে অত ছোট মনেই হচ্ছিল না। উল্টো শাড়িতে তাকে পরিপূর্ণ এক নারী মনে হচ্ছিল। এই কারণেই তাহলে লোকে শাড়িতে নারী বলে। একমাত্র শাড়ি পড়লেই বাচ্চা একটা মেয়েও পরিণত যুবতী রুপে ধরা দেয়।

চয়নিকা পূর্বেই হতভম্ব ছিল। এবার আলমগীর সাহেব তাকে আরও চমকে দিয়ে তার বিস্ময়ের মাত্রা চড়িয়ে বললেন ‘ ও হলো আমার মেয়ে, চয়নিকা। এবার ইন্টার দিলো। ‘

আলমগীর সাহেবকে অন্যের কাছে বিশেষত স্বপ্ন পুরুষের কাছে নিজের পরিচয় দিতে দেখে চয়নিকা আরও চমকালো। সে বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইলো সোফায় বসে থাকা রাইসা খানম আর তার প্রিয় পুরুষের দিকে। রাইসা খানম আলমগীর সাহেবের কথা শুনে চয়নিকাকে ধরে নিজের পাশে বসালেন। চয়নিকা মুখ তুলে তাকালো রাইসা খানমের পাশে বসা স্বপ্ন পুরুষের দিকে। তাদের মাঝে শুধু এখন এক হাত দুরত্ব।

‘ মা আমার চাঁদের টুকরো,একেবারে আদুরে মেয়ের মতো। আমার ছেলেটার সঙ্গে বড্ড মানাবে। ভাইজান মেয়েকে ঘরে তুললে তো আমার অন্ধকার ঘর আলোতে ঝলমল করবে। ‘

রাইসা খানমের কথায় আলমগীর সাহেব হাসলেন। সঙ্গে হাসলো কালকের সেই মেয়েটাও। চয়নিকা এখনও তার পরিচয় জানে না। কিন্তু খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে কে ওই মেয়ে ? চয়নিকার কৌতূহলে তালা লাগিয়ে মেয়েটা ওর পাশে এসে দাঁড়াল। চুপিচুপি রাইসা খানম আর আলমগীর সাহেবকে কথা বলতে দেখে চয়নিকার কানে কানে বললো ‘ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমারই বয়সী। তোমার কি কপাল দেখো। এই বয়সেই আমার ভাবি হয়ে যাচ্ছ অথচ মা আর ভাইয়া আমার বিয়ের নামও নিচ্ছে না। ‘

মেয়েটার কথার ধরণে চয়নিকা আঁচ করলো কাল তার ধারণা ভুল ছিল। এই মেয়ে আসলে তার স্বপ্ন পুরুষের বোন। চয়নিকার ইচ্ছে করলো নিজেকে আর জুলিকে দু চার ঘা। তারা কি করে পারলো ওদের দুজনকে একসঙ্গে দেখেই উল্টাপাল্টা ভেবে বসতে ? আজকালকার সময় দাড়িয়ে ছেলে আর মেয়েকে একসঙ্গে দাড়াতে দেখে এমনটা ভাবাও তো অস্বাভাবিক নয়। সেদিক দিয়ে তো দোষ কারোরই নয়।

সাফা চয়নিকাকে নিঃশ্চুপ দেখলো। সে ফিসফিসিয়ে আবারও বললো ‘ বুঝলে না ? আমি তোমার হবু ননদ সাফা। আল্লাহ চাইলে এবার আমার বুড়ো ভাইয়ের বিয়েটা হয়েই যাবে। বেটা এবার লাইনে এসেছে। ‘

সাফার কথায় চয়নিকা ওর দিকে একটু কৌতূহলী নজরে তাকালো। তবে কিছু বলার সুযোগ হলো না। রাইসা খানম তাদের কথার মাঝেই আলমগীর সাহেবকে বললেন ‘ ভাইজান আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আমি চাই ওরা আলাদা করে কথা বলুক। বিয়ের ব্যাপারে কোনোকিছু পাকা করার আগে দুজনের একে অপরকে জানা উচিত। ‘

রাইসা খানমের কথায় আলমগীর সাহেব কিংবা জেরিন কেউই আপত্তি করলেন না। বাবা মা হিসেবে হয়তো মেয়ের বিয়ে নিয়ে তাদের অনেক শখ আহ্লাদ কিন্তু বিয়ে করে সংসার তো তাদের মেয়েই করবে। তাই এই ব্যাপারে সমস্তটা দেখে শুনেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাই আলমগীর সাহেব আর রাইসা খানমের একাগ্রতায় চয়নিকা আর তার স্বপ্ন পুরুষকে পাঠানো হলো পাশের ঘরের বারান্দায়।

বাতাবরণ উষ্ণ, বিকেলের পরিবেশেও চারদিকে ঝা ঝা রোদ্দুর। চয়নিকা একবার হেলে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে নিলো। তার বাম হাতের কাচের নীল চুড়িগুলো রিমঝিম শব্দে বেজে উঠলো একে অপরের গায়ে লেগে। চয়নিকা আড়চোখে তাকালো তার স্বপ্ন পুরুষের দিকে। সে দাড়িয়েছে তার থেকেই কয়েক হাত দূরে। দুজনের মাঝে কোনো কথা নেই। দূরত্ব আকাশ সমান আর নিস্তব্ধতা রাতের ঝি ঝি পোকার ডাকের মতো।

প্রথম কথাটা চয়নিকার স্বপ্ন পুরুষই তুললো। আকাশ পানে চেয়ে বললো ‘ কারো পৌষ তো কারো সর্বনাশ। কথাটা শুনেছ ? ‘

চয়নিকা খানিকটা চমকালো। বলা যায় আজ সে ক্ষণে ক্ষণেই চমকে উঠছে। তার জন্য যে ঝুলি ভরে এত চমক রেখেছিল সৃষ্টিকর্তা কে জানতো। আজকের দিনটা চয়নিকার চিরকাল স্মরণে থাকবে।

চয়নিকার উত্তর না পেয়ে স্বপ্ন পুরুষ নিজেই বলতে শুরু করলো ‘ আজ থেকে মাস খানেক আগে এক পৌষের বিকেলে আমি, অনিক  দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ তার চোখে। সে ছিল সদ্য ফোটা পদ্মের মতোই কোমল, মখমলে জড়ানো এক কিশোরী। তার তখন উঠতি বয়স কিন্তু আমি ততদিনে এক পরিপূর্ণ যুবক। ওই বয়সে আমার এক লহমায় কাউকে দেখে প্রেমে পড়া সাজে না। তবুও স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে সেই পৌষবৃষ্টিতে তাকে দেখে আমি প্রেমে পড়েছিলাম। ‘

চয়নিকা এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার স্বপ্ন পুরুষের দিকে। তার মনে হচ্ছে মানুষটা তাকেই কথাগুলো বলছে তবুও বিবেক মানছে না। বিবেক বলছে এত সহজে বিশ্বাস করিস না চয়ন কিন্তু মন বলছে একটু করেই দেখ না বিশ্বাস, দে নিজেকে আশ্বাস। যদি হয় সে তার মনোহরিনী।

অনিক আবারও বললো ‘ আমি মা বাবার বড় সন্তান। একমাত্র ছেলে হওয়ায় তাদের আমার থেকে অনেক আশা ভরসা। ইচ্ছা ছিল আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট রুপে দেখবে। ওদের সেই ইচ্ছার মূল্য দিয়েছি। বাবা মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে সারাদিন খেটেছি বইয়ের পিছনে। পড়াশোনা ফেলে আমার অন্যদিকে চোখ দেওয়ার সুযোগ ছিল না।

বন্ধু বান্ধব ছিল সব নামকা ওয়াস্তে। আমার বাবার কষ্টে অর্জিত টাকা যদি আমি তাদের পিছনে খরচ করি তবেই তারা আমার বন্ধু। কিন্তু আমার এমন বন্ধু দরকার নেই তাদের মুক্ত করে দিয়েছি। এই এক ঘেঁয়ে চলা জীবনে কাউকে কখনও জড়াইনি কারণ আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার অভ্যাস বদলে গেলো এক পৌষের বিকেলের পর। সেই বিকেলের পর আমি নিজেকে হারালাম, নিজের চিরচেনা আমিটাকেও হারালাম। বুঝলাম আমি বদলে যাচ্ছি। ভালবাসার ভয়ালো থাবায় আমি বদলে গেছি। এখন আমি চাই আমার এই শান্তিপূর্ণ জীবনে ঝড়ের মতো ঢুকে গিয়ে আমার যেই ক্ষতি করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। ‘

অনিক কথাগুলো বলে শান্ত চোখে তাকালো চয়নিকার দিকে। চয়নিকার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। অনিকের দিক থেকে সে চোখ ফিরিয়ে নিলো। বললো ‘ তবে এসব আমায় বলছেন কেন ? যে আপনার ক্ষতি করেছে তাকে গিয়ে ধরুন। ‘

‘ মানুষটা কে সেটা এই সুবিশাল আকাশ, উড়ে যাওয়া পক্ষী আর নিশ্চুপ গাছেরাও জানে। জানি তুমি আমিও। হেই চয়নিকা, আমি চাই তুমি আমার আমেজহীন জীবনে আচানক ঢুকে যেই হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়েছ তার শাস্তি তুমি সারাজীবন পাও। এর জন্য কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিবো তোমাকে।

আমাকে প্রেমে ফেলার শাস্তি, আমার অপেক্ষার দিনগুলোতে আমার অপেক্ষার প্রহর আরও দীর্ঘ করার শাস্তি, আমার কাছে ধরা না দেওয়ার শাস্তি। শাস্তি স্বরূপ তুমি বন্দী হবে আমার কাছে চিরকালের জন্য। তারপর!! তারপর কোনো এক পৌষের বিকেলে বৃষ্টি দেখতে দেখতে দুজনে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে হারিয়ে যাবো। ‘

চয়নিকা নির্নিমেষ চেয়ে আছে অনিকের দিকে। অনিক এখনও তার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। তার চোখ দুটো চয়নিকাতেই স্থির। চয়নিকা বুঝতে পারছে অনিকের খোঁজ কেন পায়নি এতকাল সে। সে তো এই স্বপ্ন পুরুষের দেখা পেয়ে বিখরে যাবে এই ভয়েতেই ওই রাস্তা দিয়ে কোচিং যেত না। যেত অন্য এক রাস্তা দিয়ে। কোনওদিন ইচ্ছা করলে হয়তো গিয়ে দাড়াতো সেই রাস্তার ধারে তবে সেটা কদাচিৎ।

‘ আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। না ভুল হলো। আমি তোমার প্রেমে পড়িনি, তোমাকে চোখে হারিয়েছি। তোমায় ভালবাসিনি, হৃদয়ে জায়গা দিয়েছি। আর হৃদয়কে কষ্ট দিলে এতটুকু শাস্তি তো তোমার প্রাপ্য। ‘

চয়নিকার কথায় হাসলো অনিক। এগিয়ে এসে চয়নিকাকে বুকে আগলে নিয়ে চুমু খেল ললাটে। জড়িয়ে ধরে বললো ‘ তুমি আমার পৌষবৃষ্টি চয়নিকা। তোমায় এভাবেই আগলে রাখবো চিরকাল, আমার হৃদয়ের কোঠায়। তোমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তুমি শুধু আমার, শুধুই আমার। ‘

চয়নিকা হাসলো, জড়িয়ে ধরে আদরে মাথা রাখলো অনিকের বক্ষে। আবেশে অনিকের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চোখ বুজলো। এই মানুষটার জন্যই এতকাল অপেক্ষা করেছে। সীমাহীন যন্ত্রণা ছিল সেই অপেক্ষায়। অথচ মানুষটাকে পেতেই আজ সব কষ্ট এক লহমায় মিলিয়ে গেলো। তবে এ জন্যই লোকে ভালবাসে, নিজের জন্য। নিজেকে ভালোবাসার জন্যই মানুষ ভালোবাসে।

সমাপ্ত….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *