বউ পাগল ছেলে…!

সকাল থেকে শরীরের মধ্যে কেমন যেন খারাপ লাগছিলো। কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। সাথে মাথা ব্যথাটাও ভীষণ ছিলো। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গেলাম।

কারও কান্নার আওয়াজে হঠাৎ ঘুম ভাঙলো। ঘুম ভাঙার পর দেখলাম মাথা ব্যথা, শরীর খারাপ কিছুই নেই। কী আশ্চর্য ব্যপার! আমার তো এতো সহজে কখনই মাথা ব্যথা যায় না। আজ কীভাবে গেলো?

বিছানা থেকে উঠে গেলাম। গিয়ে দেখি পাঁচ বছরের ছোট ভাতিজা কান্না করছে। তার পাশেই ভাইয়া কিছু একটা কাজ করছে। ভাতিজাকে বললাম কান্না করিস কেন? কী হয়েছে? কিন্তু ভাতিজা আমার কথার জবাব দিলো না। কান্না করেই চললো। মনে হলো যেন আমার কথা কিছুই শুনতে পায়নি।

ভাইয়ার পাশে গিয়ে বললাম যে কী করছেন? ছেলে কান্না করছে কেন? কী হয়েছে?

ভাইয়াও আমার কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না। তার হাবভাব দেখে মনে হলো যে আমার কথা শোনা তো দূরে থাক, মনে হচ্ছে যেন আমাকে দেখতেই পায়নি সে। দুই বাপ বেটার কেউই যেন আমার কথা শুনলো না।

অতঃপর সেখান থেকে চলে আসলাম কিছুটা রেগে। বাইরে ভাবিকে দেখলাম কাজ করছে। গিয়ে বললাম, “ছেলে কান্না করছে কেন? ভাইয়া পাশেই আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। সে কিছুই বললো না। দুজনের কেউ আমার কথার জবাব দিলো না। কী হয়েছে?”

এতগুলো প্রশ্ন করার পর দেখলাম ভাবিও আমার কথার কোনো জবাব দিলো না। মনে হলো যেন সেও কিছুই শুনতে পায়নি আমার কথা। নিজের মতো করে সে কাজ করেই চললো। যেন আমাকে সে দেখতেই পায়নি।

এদের হলোটা কী? কেউ আমার কথা শুনছেনা কেন? কেউ জবাব দিচ্ছেনা কেন? আসলেই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেনা কেউ? আমার ভয় হতে লাগলো। আমি মরে যাইনি তো? ভয় ঝাপটে ধরলো আমায়।

মুভিতে দেখেছি মানুষ মরার পর তার আত্মা এভাবে ঘোরাফেরা করে। সবার সামনে যায়, কথা বলে। কিন্তু কেউ দেখতে পারেনা তাকে। কথাও শুনতে পারেনা কেউ। তাহলে আমিও কি মরে গেছি? সে কারণেই কি তারা কেউ আমাকে দেখতে আর শুনতে পাচ্ছে না? ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।

দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। কিন্তু কই, এখানে তো আমার দেহ নেই। শুধু আমিই আছি। মরে গেলে তো দেহ বিছানায় পড়ে থাকতো। বিছানা তো খালি পড়ে আছে। তাহলে তারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছেনা কেন? কিন্তু আমি তো ঠিকই আমার কথা শুনতে পাচ্ছি। তারা শোনেনা কেন?

মোবাইলটা হাতে নিলাম। ভয়েস রেকর্ড অপশন বের করে নিজের ভয়েস রেকর্ড করলাম। তারপর সেটা প্লে করলাম।

একি,,,,, এখানেও তো কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। যা রেকর্ড করলাম, তা কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা। ভয় আরও ঘিরে ধরলো আমায়।

বাড়িতে বর্তমানে ভাইয়া, ভাবি, ভাতিজা আর আমি ছাড়া অন্য কেউ নেই। বাবা মা গেছে আপুদের বাড়িতে বেড়াতে। ভাবলাম বাবাকে ফোন দেই। ফোন দিতে গিয়ে বাবার নাম্বার খুঁজে পাচ্ছিলাম না ফোনে। কী ব্যপার, নাম্বার কই গেলো।

বাবার নাম্বার মুখস্থ ছিলো। নাম্বার উঠিয়ে জলদি বাবাকে ফোন দিলাম। বাবা কল ধরার পর কথা বলতে শুরু করলাম। বাবা ওপাশ থেকে শুধু হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। আমি যা বলছি তা যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করে বাবা ফোন কেটে দিলো।

বাবাও আমার কথা কিছুই শুনতে পেলো না। এইবার আমি নিশ্চিত হলাম যে আমি মরে গেছি। ভয়ে কান্না শুরু করে দিলাম।

কান্নারত অবস্থায় ফোন চাপতে চাপতে বউয়ের নাম্বার সামনে আসলো। বউ লিখে সেভ করে রাখা। অতঃপর বউকে ফোন দিলাম। বউ ওপাশ থেকে ফোন ধরতেই আমি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

“ও বউ গো, আমি মরে গেছি গো। তুমি আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে গো। ওরে সোনা বউ গো”

তারপর ওপাশ থেকে বউ ধমকাতে লাগলো। “আরে কী হইছে। কান্না করছো কেন? পাগল হইছো নাকি? মাত্র দুদিন হলো বাবার বাড়ি আসছি। আমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাইনা? তাই উল্টাপাল্টা কথা বলছো। তুমি থাকো, আমি এক্ষুনি চলে আসছি।”

বলে বউ ফোন কেটে দিলো। কী ব্যপার? বউ আমার কথা শুনলো কিন্তু এরা শুনলো না কেন? আমি কি মরিনি?

আমার কান্না শুনে ভাইয়া ভাবি রুমে আসলো। এসে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে, বাচ্চাদের মতো কান্না কেন করছি? আমি জিজ্ঞেস করলাম যে তারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছে কিনা। তারা বললো হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। জিজ্ঞেস করলাম তাহলে তখন কেউ শুনতে পায়নি কেন।

অতঃপর তাদের থেকে সবকিছু শুনে বুঝলাম যে ভাইয়া ভাবি ঝগড়া করেছে, আর ছেলেকেও মেরেছে সেটা নিয়ে। দুজন ঝগড়া করে গাল ফুলিয়ে ছিলো। তাই আমার কথার কেউ কোনো জবাব দেয়নি ইচ্ছে করেই।

আর ফোনে ভয়েস রেকর্ড এর ব্যপারটা কী হইছে তাইলে? নিজের রেকর্ড করা কথা শুনতে পেলাম না কেন? ফোন চেক করে দেখলাম যে ফোনের সাউন্ড রয়েছে জিরোতে। সাউন্ড জিরোতে থাকায় কিছুই শুনতে পাইনি।

আর বাবা কেন শুনতে পায়নি কথা? ভয়ের কারণে তখন তো ভুলেই গেছিলাম যে বাবার ফোনের স্পিকার নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কথা বললে তার ফোন থেকে কিছুই শোনা যায় না। এই হলো এদের কথা না শোনার কাহিনী।

যাক বাবা বড্ড বাঁচা বেঁচে গেলাম। মরে গেছি ভেবে যে ভয়টা পাইছি। আজ বউ না থাকলে তো সেই ভয়ে স্টোক করে সত্যি সত্যি মরে যেতাম। শুধু বউ-ই আমার কথা শুনছে। এখন বুঝলাম বউয়ের উপকারিতা।

কেন যে বউকে বাবার বাড়ি পাঠাইছি। বউটা আজ আসুক বাবার বাড়ি থেকে। আর কখনই বউকে ছাড়া একা থাকবো না।

কিন্তু হঠাৎ মনে হলো। আরে আমি তো বিয়ে করিনি। আমার বউ আসলো কোত্থেকে? আবার বউয়ের সাথে কথাও হইছে। বউ বাবার বাড়ি থেকে আসবে বলছে।

জলদি ফোনটা হাতে নিলাম। নিয়ে দেখি, আরে এটা তো আমার ফোন না। এটা আমার বন্ধুর ফোন। বন্ধু সকালে ফোনটা আমার কাছে রেখে গেছে চার্জ করার জন্য। ওর বাসায় নাকি কারেন্টের সমস্যা হইছে।

অহ তাহলে এই কাহিনী? তাই তো বাবার নাম্বার খুঁজে পাইনি ফোনে। আর বন্ধু বিয়ে করেছে। দুদিন হলো তার বউ বাপের বাড়ি গেছে। ওটা তার বউয়ের নাম্বার ছিলো, আমার বউ না!

লেখা: রাফি আহমেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *