বন্ধ দরজা [পর্ব-২৫]

সকালে চোখ মেলে সুহায়লা দেখতে পেলো তানভীর ওর মাথার কাছে ফ্লোরে বসে আছে। খাটের উপর রাখা দুহাতের উপর নিজের থুতনিটা রেখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

-” এখানে এভাবে বসে আছো কেনো?”

-” তোমাকে কাছ থেকে দেখার জন্য।”

-” খাটে বসেও তো দেখতে পারো।”

-” তুমি তো এদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছো। ওপাশ থেকে দেখবো কিভাবে? এপাশে তো তুমি একদম কর্নারে শুয়ে আছো। বসার জায়গা নেই। তাই এখানে এসে বসেছি”

-” ওহ।”

-” তুমি ঘুম থেকে উঠেছো কেনো?”

-” ঘুম ভেঙে গেছে তাই।”

-” আবার ঘুমাও।”

-” কেনো?”

-” তোমাকে দেখবো।”

-” জেগে থাকলে কি দেখা যায় না?”

-” হুম যায়। কিন্তু এখন আমার ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে।”

-” গতকাল থেকে শুয়ে থাকতে থাকতে আমি বিরক্ত। আমি আর শুয়ে থাকতে চাই না”

-” ব্যাক ইয়ার্ড থেকে ঘুরে আসবা?”

-” গেলে ভালো লাগতো।”

-” ফ্রেশ হয়ে নাও আগে তাহলে।”

-” হুম।”

-” একা যেতে পারবে তো?”

-” পারবো।”

-” সিউর?”

-” হুম।”

সুহায়লা ওয়াশরুমে চলে গেলো। তানভীর নয়নকে ডেকে বললো কফি বানাতে ওদের দুজনের জন্য। দশ মিনিট পর বেরিয়ে আসলো সুহায়লা। ওকে নিয়ে বাড়ির পিছনের দিকটাতে দোলনায় বসেছে তানভীর। সুহায়লা গরম কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।

-” তোমার চুমুক দেয়ার ঢং টা খুবসুন্দর।”

-” চুমুক তো চুমুকই। এখানে ঢংয়ের কি দেখলে তুমি।”

-” অবশ্যই আছে। এই যে তুমি কফি মগের ঠিক মাঝ বরাবর ফুঁ দিচ্ছো। কফিটা মাঝখান থেকে সামান্য স্রোতের মতো চারদিকে ছড়াচ্ছে। ধোঁয়াটা তোমার মুখে এসে লাগছে। তুমি ঠোঁটগুলো করে একটু একটু চুমুক দিচ্ছো। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা সুন্দর।”

-” চুমুক তো সবাই এভাবেই দেয়।”

-” নাহ্ তোমারটা একদম ইউনিক। ভালো লাগছে দেখতে। কথা না বলে আবার চুমুক দাও। আমি দেখবো।

-” তানভীর তুমি এত্ত কথা জানো?”

-” কথা জানি মানে?”

-” তুমি যে ধরনের কথা বলো সেসব শুনলে তোমার প্রেমে যে কোন মেয়ে পড়ে যাবে। তোমাকে দেখেকখনোই আমার মনে হয়নি তুমি এত কথা জানো?”

-” তাহলে কি ধরে নিবো তোমার অভিমান শেষ?”

-” তোমার উপর আমার কোনো অভিমান নেই।”

কথাটা শোনা মাত্রই সুহায়লার কাঁধে চেপে ধরে ঘাড়ে চুমু দিচ্ছে তানভীর। সুহায়লা ধাক্কা দিয়ে তানভীরকে সড়িয়ে দিলো।

-” অভিমান নেই তাই না? তাহলে এটা কি ছিলো?”

-” অভিমান না। যেটা এখন হচ্ছে, সেটা হলো আগের অনুভুতিটা মরে গেছে।

-” ভালোবাসাও কি মরে গেছে?”

-” কি মনে হয় তোমার? “

-” তোমাকে জিেস করেছি তুমি উত্তর দাও।আমাকে কেনো পাল্টা জিজ্ঞেস করছো?”

-” নাহ্ ভালোবাসা মরেনি।”

-” আই লাভ ইউ বলো।”

-” এখন আর ঐ কথা বলতে ইচ্ছে হয় না।”

-” আমাকে ঘিরে ইচ্ছেগুলোও কি মরে গেছে?”

-” হুম। মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি।”

-” যদি আমি মাটি খুঁড়ে বের করতে চাই?”

-” সেটা তোমার ইচ্ছা। তবে কোনো ফায়দা হবে বলে মনে হয় না।”

-” নিজের লস তো নিজেই করেছি। এখন আর লাভ লোকসান নিয়ে ভাবি না।”

-” চলো ঘরে যাই।”

-” এভাবে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবে সুহায়লা?”

-” কোথায় পালালাম? তোমার পাশেই তো বসে আছি।”

-” যে কথাগুলো বলছি সেগুলো থেকে পালাতে চাচ্ছো।”

-” পালাতে চাচ্ছি বললে ভুল হবে। আমি কৌশলে কথাটা এড়াতে চাচ্ছি। যদি এখান থেকে ছুটে দৌড় দিতাম তাহলে সেটা হতো পালানো।”

-” একই তো কথা হলো। এখন বলো এড়াতে চাচ্ছো কেনো?”

-” এমনি। ভালো লাগে না তাই।”

-” আমাকে না তুমি ভালোবাসো? তাহলে আমার কথা কেনো ভালো লাগবে না?”

-” ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।”

-” আমার তো তোমার সবকিছুই ভালো লাগে।”

-” হুমম, মানুষের মনটা বড্ড অনিশ্চিত। আকাশের মতো ক্ষনে ক্ষনে রঙ বদলায় তাই না?”

-” কথাটা মনে হচ্ছে আমাকে বললে?”

-” তুমি যেটা মনে করো সেটাই।”

কথাটা বলেই দোলনা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সুহায়লা। ও বাসার ভিতরে চলে যাচ্ছে। ওর পিছন পিছন তানভীরও যাচ্ছে। রান্নাঘরে গিয়েছে সুহায়লা।গতকাল থেকে এ পর্যন্ত রান্নাঘরে পা দেয়নি সে। নয়ন একাই সমস্ত কাজ নয়ন একাই সামাল দিচ্ছে। আজ শুক্রবার। তাই গতকাল সারারাত ধরে সাবা ফোনে কথা বলেছে ইমরানের সাথে। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে ও। সুহায়লা একবার সাবার ঘরে গিয়ে উঁকি মেরেছিলো। মেয়েটা কাঁথা পেঁচিয়ে ঘুমাচ্ছে। সুহায়লাকে দেখেই নয়ন চেঁচামেচি শুরু করে দিলো,

-” ভাবী আপনে আইছেন ক্যান? যান, বাইর অন এইখান থেইকা। এইখানে কুনু কাম নাই আপনের।”

পিছন থেকে তানভীর এসেও চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।

-” তুমি এখানে কেনো? চুলা গুতাতে ইচ্ছে হচ্ছে বেশি?”

-” আমি তো যাস্ট এমনিতেই……”

-” কেনো এসেছো জানার দরকার নেই। তুমি এখান থেকে বের হও।”

-” ওকে যাচ্ছি। তবু প্লিজ চেঁচামেচি বন্ধ করো। মাথা ধরে যাচ্ছে আমার।

সুহায়লা চলে যাচ্ছে উপরে। দুপুরে কি রান্না করবে সেটা নয়নকে বলে এসেছে তানভীর। সুহায়লার কিছুক্ষন পর তানভীর এলো রুমে।

-” মাথার ব্যাথাটা কমেছে?”

-” একটু কম।”

-” তাহলে চলো আজকে রাতে বাহিরে ডিনার করি। সাথে সাবা, ইমরান, সাদি আর হৃদিতাও যাবে।”

-” তুমি আমাদের সাথে ডিনারে যাবে?”

-” হুমযাবো। এখানে এত অবাক হওয়ার কি আছে?”

-” তুমি তো কখনো আমাকে নিয়ে বাহিরে ডিনার করতে যাও না। আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথেও তো তেমন করে মিশো না। “

-” আগের কথা বাদ দাও সুহায়লা। আমি তোমাকে এখন আগলে রাখতে চাচ্ছি। তোমাকে জানতে চাচ্ছি। আমার তো নিজের ফ্যামিলি নেই। তোমারফ্যামিলিই এখন আমার ফ্যামিলি। ওদের সাথে মিশবো না তো কার সাথে মিশবো?”

-” একের পর এক ধাক্কা দেয়া বন্ধ করো তানভীর। হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।”

চলবে,…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *