বাহারি স্বপ্ন [পর্ব-১৯]

কড়া পাহারায় মঞ্জুরিকে বিমানবন্দরের ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে।মঞ্জুরির চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।মুখে কিছু বলছে না কারণ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সাথে তার কথা বলতে ইগোতে লাগে। কিছু মেয়ে পুলিশ তারই দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকার বিশেষ কারণটা মঞ্জুরি খুঁজে পাচ্ছে না।মঞ্জুরি চোখ তুলে তাদের দিকে তাকালো আর ঝাঁঝালো গলায় বললো, “আমি জানি আমি রূপবতী, তাই বলে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই। ”

মেয়ে পুলিশগুলো মঞ্জুরির কথাগুলো শুনে চোখ নামালো।মঞ্জুরির রাগ মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষচুড়ায় পৌঁছে গেছে।নিজের ট্রিটমেন্টের জন্য দেশ ছাড়ছে অথচ তাকে আটকে দেওয়া হলো।এই অফিসার রূপকের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই।খুনি যেহেতু ধরা পড়েছেই তাহলে এখনও তার পিছু কেন পড়ে আছে এই লোক?তখনই একজন পুলিশ অফিসার এসে মঞ্জুরিকে দেখে।মঞ্জুরি বিরক্তির চাহনী দিয়ে চোখ দিয়েই প্রশ্ন করে ‘কই?’ পুলিশ অফিসার মাথা না-বোধক নাড়িয়ে চলে যায়।আরও কিছুক্ষণ সময় কেটে যাওয়ার পরই সেখানে উপস্থিত হলো রূপক। গম্ভীর পা ফেলে সোজা মঞ্জুরির বিপরীত সোফাটায় গিয়ে বসলো। মঞ্জুরি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এই রূপককে দেখে রাগ দ্বিগুণ বাড়লো।রূপক অন্য কোনো প্রশ্ন না করে,

সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে বসলো,“ তা কোন দেশে পালাচ্ছিলেন মিস মঞ্জুরি?”

‘‘ যাচ্ছিলাম তো সিঙ্গাপুরে। কিন্তু যেতে দিলেন আর কোথায়? ফ্লাইটও তো মিস হয়ে গেলো।’’

‘‘ আসামীকে পালাতে দেব? এমন অসৎ অফিসার আমি নই।’’

রূপকের কথায় খোঁচা স্পষ্ট।মঞ্জুরি মনে মনে ক্ষোভে ফেঁটে পড়লেও মুখে তা বহিঃপ্রকাশ করলো না। রূপক তার সাথে আগে কথা বলার সময় যেমন উচ্ছ্বসিত থাকতো কিন্তু এখন তার মাঝে সেই উচ্ছ্বাসের কমতি ভারী প্রকট।বরং রূপকের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কথা বলতেও বুঝি ঘৃণা করছে তার।

‘‘ তা ঠিক কোন অযুহাতে দেশ ছাড়ছিলেন?”

মঞ্জুরি চোখমুখ শক্ত করে উত্তর না দিয়ে রিপোর্টটা হাত দিয়ে বাড়িয়ে দিলো রূপকের দিকে।রূপক হাতে নিয়ে দেখলো সেটা।দেখা শেষ হলে কঠোর অথচ তাচ্ছিল্য হেসে বলে,“ দারুণ অযুহাত।”

তারপর রিপোর্টটা পাশের টেবিলের ওপর রেখে বলে,“ এটা খুবই কমন একটা বিষয়বস্তু।স্কুলে থাকতে আমিও কতশত বাহানা দিয়ে এভাবে ক্লাস ফাঁকি দিয়েছি।”

“ আপনি ফাঁকিবাজ হতে পারেন।তবে আমার ক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রম হতেও পারে।”

“ হার্টের সমস্যা থাকলে এমন সুস্থ থাকতেন না।”

“ আপনি কোনো অলৌকিক শক্তির অধিকারী নন যে আমার শরীরের সুস্থতা-অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।”

“ বাজে কথা বাদ দিন।এখন এটা বলুন চাচীকে কেন খুন করেছেন?”

মঞ্জুরি ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলে,“ বার বার একই প্রশ্ন করতে আপনারও যেমন বিরক্ত লাগে, বার বার একই প্রশ্নের উত্তরটা দিতে আমারও তেমনই বিরক্ত লাগে।”

কথার উল্টোপিঠে আরেক প্রশ্ন করলো রূপক,“ আমার চাচী তো আপনাকে চিনতোও না।ঠিক কোন কারণে আপনার উনাকে মারতে হলো?”

“ যে খুন করেছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন আর আমার পিছু ছাড়ুন।আপনি কি চান আমি বিনা চিকিৎসায় মারা যায়?”

“ আমি চাই আপনই ফাঁসির দড়িতে ঝুলে মরুন।”

“ ওহ আচ্ছা তাই নাকি?” হেসে উঠলো মঞ্জুরি। গালের দুপাশে টোল পড়লো। হাসি থামিয়ে বলে,“অফিসার আপনি ভুলে যাবেন না আপনি কার সাথে কথা বলছেন? আমি গোয়েন্দা টিম প্রধান, মঞ্জুরি।অন্যদের সাথে এভাবে কথা বললে বলবেন, তবে আমার সাথে মোটেও নয়।”

“ মানুষ ভেদে আচরণ করা আর কথা বলা বুদ্ধিমানের কাজ।সামনের ব্যক্তি যদি একজন অপরাধকারী হয় তবে তিনি যতই মহান কোনো ব্যাক্তিধারী হোক না কেন অন্যায় করা কৃতকর্মের জন্য তার সাথে কথা বলার ভঙ্গিও ঠিক তেমনই হবে। আমি ব্যতিক্রমী পথ বেছে নেব না।”

অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো মঞ্জুরির।উঠে দাঁড়িয়ে তর্জনী উঁচিয়ে শাসানোর সুরে বলে,“ মুখ সামলান অফিসার।পরবর্তীতে তা বিপদ ডেকে আনবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

রূপকও উঠে দাঁড়ালো।দুপাশের পকেটে দু হাত গুজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে কঠোর স্বরে বলে,“ কেন নেক্সট টার্গেট কি আমি নাকি?”

মঞ্জুরির মুখায়বে রহস্য খেলে গেলো।রূপকের প্রশ্নের প্রত্যুত্তর না করলেও শক্ত গলায় বললো,“ আমার সিঙ্গাপুর যাওয়ার ব্যবস্থা দ্রুত করে দিন।”

রূপক মঞ্জুরির কথার উত্তর দিলো না।যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।দরজার সামনে যেতেই একজন পুলিশ অফিসারকে বললো,“ এরেস্ট হার ইমিডিয়েট নাও।”

_______________________

পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ,শীতল হাওয়া কারই না ভালো লাগে? তবে এসব যেন উচ্ছর বিরক্ত লাগে। জানালা বন্ধ করে দিয়ে আবারও সোফায় গিয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে বসলো।তার এই কার্যকলাপে হাসলো ইভান।মুখ ফুটে বলেই ফেললো,“ তুমি তো খুবই ভয়ানক মানুষ।”

“ রেহানাকে কিভাবে মারবো তার বুদ্ধি দাও।নয়তো তুমি নিজেই কাজটা করো।”

“ টাকা ছাড়া ড. ইভান কোনো কাজ করে না।”

তাচ্ছিল্য হাসলো উচ্ছ।ছোট্ট করে আওড়ালো,“ লোভী কোথাকার।”

ইভান শুনলো না।সে নিজ ভঙ্গিমায় বললো,“ তোমার ভাইটা ভীষণ উড়াউড়ি করছে।তাকে আটকাও নয়তো মারা পড়বে।আমরা আবার ওমন যুবক ছেলেকে মারি না।”

কপাল কুঁচকে উচ্ছ জিজ্ঞাসা করলো,“ কোন ভাই?”

“ রূপকের কথা বলছি আমি।এই কেইসের জন্য যেই গভীর পর্যন্ত যেতে চেয়েছে তাকেই আমরা মেরে দেয়েছি।আর সবচেয়ে বড় কথা আইজিপি আমাদের কথায় উঠবস করে সেখানে সামান্য এসপি কি করবে?”

উচ্ছ পাত্তা দিলো না বললো,“ এসব আমার দেখার বিষয় না।যা করার তোমরা করো।”

“ তোমার ভাইয়ের যা তেজ।গতপরশু আমার কাছে এসে ধমকে গেলো।এই হাসপাতালেরই এক ছেলে তাকে কিসব রিপোর্ট দিলো কিন্তু সেগুলো তার মনমতো না হওয়ায় আমাদের হুমকি দিলো শেষটা নাকি দেখে ছাড়বে।আমি আবার মাথা গরম মানুষ খুব কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছিলাম বসের কথায়।তবে বেশিক্ষণ আটকাতে পারবো না।তোমার পরিবারের মানুষ সে। তাকে বলে দিও পাখি যতই আকাশে উড়ুক না কেনো একটা নির্দিষ্ট সীমা বরাবরই উড়াউড়ি করতে পারে।”

উচ্ছ কফির মগে চুমুক বসালো,“ আমি বললে আমায় সন্দেহ করবে।”

ইভান ভাবলো কথাটা ভুল বলে নি।তবে রূপকের সন্দেহে এখন আবার সে নিজেও যুক্ত হয়েছে। ইভানও নিজের কফির মগে চুমুক বসালো।কপাল চুলকে জিজ্ঞাসা করলো,“ তোমার যমজের কি খবর?ওই শালাকে একটাবারও দেখার সুযোগ হয় নি।যমজ যেহেতু তোমার মতোই হবে নিশ্চয়?”

“ উৎস দেখতে অনেক বেশি সুদর্শন।”

“ ড. আশিনের প্রেমে নাকি মাতোয়ারা?”

উচ্ছ উত্তর দিলো না।আশিনের কথা মনে পড়তেই মনটা ধ্বক করে উঠলো।আজ প্রায় কতদিন যাবৎ মেয়েটাকে দেখে না উচ্ছ।চটজলদি ফোন বের করে গালারিতে ঢুকে আশিনের একটা ছবি বের করে দেখলো তবে মন ভরলো না।এই রেহানা নামক উটকো ঝামেলাটা উচ্ছর জীবনের মহাপরিবর্তন এনে দিয়েছে।এটাকে যে করেই হোক সড়াতে হবে।

“ তুমিও তো ওই আশিনের প্রেমে মজেছো। দু ভাইয়ের পছন্দ দেখি একই।একই গোয়ালের গরু তোমরা।”

“ গোলাপের বাগানে লাল টকটকে, সতেজ গোলাপটা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় লাগে।”

হো হো করে হেসে উঠলো,“ গোলাপের সাথে আশিনের বর্ণনা?গোলাপ কোমল পাপড়িতে তৈরি একটা ফুল আর আশিন, সে তো আস্ত একটা লৌহ মানবী।”

থেমে রসিকতা করে বলে,“ এই প্রেম ভালোবাসা তোমরাই ভালো বোঝো আমি আবার এই পথের দিকে চোখও তুলে তাকায় না।”

উচ্ছ চুপচাপ কফির মগে চুমুক দিয়েই চলেছে। আশিন কোথায় আছে? এটা সে জানে না। আশিনের বাবাকে যে হাসপাতালে রাখা হয়েছে সেখানেও নাকি নেই।তবে গেলোটা কোথায়?

তালুকদার বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো নেই আর।সবার মুখেই প্রতিদিন অমাবস্যার আধাঁর নেমে থাকে।বাড়িতে এখন ছেলেমেয়েদের মধ্যে শুধু তন্নিই আছে।আর বাকিরা তারা তো একেকজন একেক জায়গায় একেক অবস্থায়।কেউ বা পাপে লিপ্ত কেউ আবার সেই পাপের খোঁজে কেউ আবার পালিয়ে বেরাচ্ছে।হাসিখুশির একটি সংসার নিমিষেই উলোটপালোট হয়ে গেছে।তন্নি মুখ ভার করে ছাদে বেতের সোফায় বসে আছে।উৎসকে ভীষণ মিস করছে সে।তন্নি বিশ্বাস করে না উৎস ভাই এমন কাজ করতে পারে।এটা অনেকবার তার ভাইকে বলেছে তন্নি।তবে রূপক তো রূপকই।সে নিজের কথামতো চলে।তন্নিকে এ নিয়ে ধমকেছেও, যেন এসব কোনো বিষয়ে নাক না গলায়।তবে তন্নির নাকটা যে একটু বেশিই চলে এটা হয়তো জানতো না রূপক।কুকুরের মতো নাক আর শকুনের মতো চোখ আর বাদুড়ের কানের মতো কান তন্নির।এইযে উচ্ছ ফোনে কারও সাথে কথা বলছে বাগানের ওপাশে এটা ছাদ থেকে দেখতে পেয়ে হুড়মুড় করে নেমে এলো তন্নি।তন্নির সন্দেহটা এই উচ্ছর উপরে। এই লোককে বড় চাচাকে অনেকবার বলতে শুনেছে উৎসই নাকি এমন করেছে।তাইতো লোকটাকে চোখে চোখে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে তন্নি।উচ্ছর থেকে কিছুটা দূরত্বে নিজেকে লুকিয়ে উচ্ছর কথা শোনার জন্য নিজের বাদুড়ের কানটাকে কাজে লাগালো।আশাস্বরূপ শুনতেও পেলো।উচ্ছ কাউকে বলছে,“ রেহানাকে মারার ব্যবস্থা করো।”

শুধু এটুকু শুনেই কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো তন্নির।বিস্ময়ে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো।ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো।আস্তে ধীরে সেখান থেকে সড়ে গেলেও উচ্ছর শ্রবণশক্তিও কম নয়। পাতার খচখচ আওয়াজ শুনতে পেয়েই পেছনে ফিরে তাকালো আর তন্নির যাওয়া দেখলো।উচ্ছ বুঝে গেলো এই মেয়েও অন্যতম এক পথের কাঁটা হলো।

_______________________

কুয়াশাভরা সকাল কারই না প্রিয়।গ্রামে শীতের প্রকোপটা বেশি টের পাওয়া যায়।বাইকের গতির জন্য ঠান্ডা হাওয়ার গতিটাও বেশি।আশিনের শীত করছে।উৎস এখনও আশিনের পেটের কাছেই জড়িয়ে ধরে আছে।আশিন উশখুশ করলেও ছাড়ছে না।বরং হাতের বাধঁন আরও জড়ালো করছে।গ্রামের সরু পথ ধরে আশিনের বাইকটা যেতে যেতে একটি দোকানের সামনে গিয়ে থামলো।পাশেই একটি খেজুর গাছ।খেজুরের ঘ্রাণে চারিপাশ মো মো করছে।গ্রামের সকালটা যে মধুর হওয়ার পেছনে খেজুরের ঘ্রাণ অন্যতম ভুমিকা পালন করে।উৎস চটজলদি নেমে পড়লো সাথে আশিনও।উৎস উৎসাহিত হয়ে বললো,“ তুমি জানলে কিভাবে আমি এই গ্রামে আসবো?”

“ এইসব প্রশ্ন বাদে বাকি যা প্রশ্ন আছে করতে পারো।”

উৎস চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকালো আর বললো,“ আজই চলে যাবে?”

“ এখনই চলে যাব।”

মন ভার হলো উৎসর।তবে প্রকাশ করলো না। আশিনকে এখন আর আটকে রাখাও সম্ভব না। তবে এবার পূর্ণদৃষ্টি আশিনের দিকে।আশিন কালো শার্ট পড়েছে তার উপর কালো একটি জ্যাকেট।মেয়েটাকে এখন ডাক্তার নয় বরং মাফিয়া মনে হচ্ছে।ঢোক গিললো উৎস।আশিন চুলগুলো ঝুটি করে বেধে উৎসর এমন চাহনীর জন্য প্রশ্ন করলো,“ কী?”

উৎস চোখ ঘুরিয়ে নিলো।বললো,“ কিছু না।”

আশিনের চোখ গেলো সামনে।ছয় সাতজন ছেলেপেলে এদিকেই আসছে।এত সকালে এগুলো আবার কোত্থেকে এলো?ছেলেগুলো কাছে আসলো। গায়ে জ্যাকেট জড়ানো,মাথায় শীতকালের টুপি আর হাতে পায়ে মোজা।এই শীতের সকালে এরা এখানে কি করছে?ছেলেগুলো কাছে আসতেই উৎসকে জিজ্ঞাসা করলো,“ আপনেরা কারা?”

উৎস স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো,“ আমি উৎস।”

আশিনের দিকে আঙুল তুলে বললো,“ আর ও হলো আশিন।কিন্তু আপনারা কারা?”

ছেলেগুলো তার উত্তর না দিয়ে কেমন করে যেন আশিনের দিকে তাকালো।আশিনের চোয়াল শক্ত হলেও নিজেকে ধাতস্থ করলো।মনে মনে বোঝালো একটুপরই যেহেতু চলে যাবে তাহলে মাথা গরম করার প্রশ্ন আসে না।তবে এই ছেলেগুলো যে এই সাতসকালে খুব একটা ভালো উদ্দেশ্যে আসে নি সেটা তাদের চেহারাই স্পষ্ট।আপাতত আশেপাশেও কুয়াশার জন্য মানুষ দেখা যাচ্ছে না ঘরবাড়ি তো দূরে থাক।ছেলেগুলো উৎসকে বললো,“ আপনেরা কি একা?নাহি আরও কেউ আছে?”

উৎস পাল্টা প্রশ্ন করলো,“ কেন বলুনতো?”

ছেলেগুলো বিশ্রি হাসলো।আশিন বুঝলো এই ছোকরাগুলো বয়সে তাদের থেকে ছোট।তবে দাপট দেখাতে এসেছে এখানে।তাদের মাঝে একজন ছেলে বললো,“ নোংরামী করবার আইছেন নাকি সারারাত করছেন?”

রেগে উৎস।ধমকে বললো,“ কি বাজে বলছেন আপনারা?”

একটা ছেলে কাছে এসে উৎসকে বললো,“ মামা সারারাইত ধইরা কি চলছে নাকি?”

উৎসর সহ্য হলো না ঘুষি মেরে বসলো ছেলেটাকে। ছেলেটার পাশে থাকা তিন চারজন ছেলের রেগে গেলো।আশিন বুঝলো পরিস্থিতি বেগতিক।একটি ছেলে উৎসর দিকে তেড়ে আসে।উৎসকে ঘিরে ফেললো মুহুর্তের মাঝেই।মুহুর্তেই মারামারি শুরু হলো।আশিন তাকিয়ে দেখলো উৎস একজনকে মারছে তো অন্য একজন উৎসকে মারছে।উৎসর সেদিনের ঘা এখনও ভালোভাবে শুকায় নি।শারিরীক ভাবে দূর্বল হওয়ায় খুব একটা পেরে উঠছে না এতগুলো ছেলের সাথে।এদিকে অন্য একজন এগিয়ে এলো আশিনের দিকে। কুরুচিপূর্ণ দৃষ্টিতে চোখ বুলালো আশিনের সর্বাঙ্গে।আশিন সহ্য করতে না পেরে ছেলেটাকে চড় মারলো।চড়ের বেগ এতটাই ছিলো যে ছেলেটা ছিটকে পড়লো দূরে।মাথা ঘুরতে লাগলো ছেলেটির। তবুও মস্তিষ্ক আওড়ালো হয়তো হাত নাকি লোহা? ছেলেটার এমন অবস্থা দেখে ওপাশের ছেলেগুলোর আর উৎসর মারামারি থামলো।ক্ষণমুহুর্তেই উৎসর বেশ যখম হয়েছে।ঠোঁটের কাছে কাটা দাগে রক্ত দেখা গেলো।

আশিন উৎসর মুখে চোখ বুলালো। উৎসর পাশে গিয়ে সযত্নে হাত বুলালো উৎসর ঠোঁটের কাছে। উৎস থমকে গেলো। শান্ত চোখে আশিনের চোখে তাকালো।আশিন উৎসর থেকে চোখ সড়িয়ে সেই ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো আর একেকটাকে এমনভাবে মারলো সবগুলো মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।একেকজনের অবস্থা খুবই খারাপ। আরও মারতে চাইলে উৎস আটকালো।আশিনও থেমে গেলো।কোনোকিছু না বলেই বাইকের সামনে গিয়ে বাইকে উঠে বসলো।আর উৎসকে বললো,“এখন তুমি যেতে পারো।এরপর থেকে তোমার আমার পথ আলাদা।আর এমন কোনো কাজ করবেনা যেই কাজে তোমার বিপদ হবে।এই আশিন তোমায় বারবার বাঁচাতে আসবে না।”

বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আশিন।আশিনের চলে যাওয়া দেখলো উৎস।মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই।এই লৌহ মানবী যে কখনো ধরা দেবে না এটা উৎস জানে।আবার এটাও জানে এই মেয়ে সাধারণ কেউ না।সন্দেহ হয় উৎসর।শেষটা জানলে না আবার উৎসর নিজেরই কষ্ট হয়।আশিনের যাওয়ার রাস্তার দিকে তাকিয়ে উৎস আকস্মাৎ বলে ওঠে,“ ভালোবাসা আমার, তুমি একটিবারের জন্য হলেও ধরা দিও।”

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *