বৃষ্টি হয়ে নামো  [পর্ব-২৩]

বিভোর রান্না শেষ করে বেডরুমে এসে দেখে ধারা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে পরম আবেশে ঘুমাচ্ছে।বিভোর মৃদু হেসে আলমারি খুলে শার্ট বের করে পরে।এরপর ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়।দু’ঘন্টা পর ফ্ল্যাটে এসে দেখে ধারা এখনো ঘুমাচ্ছে।শপিং ব্যাগ ধারার মাথার কাছে রেখে বিভোর ড্রয়িংরুমে আসে।টিভি অন করে সায়নকে কল করে।যতবার কল করে ততবার বিজি দেখায়।সপ্তম বারের কল রিসিভড হয়।বিভোর রাগে আগে-আগে বলে উঠলো,

——“হালার পুত।কার লগে কথা কস?”

——“দিশারির লগে।”

বিভোর নিভলো,

——-“আমি ভাবলাম অন্য মেয়ে।যাই হোক,আজ রাতে আমার বাসায় থাকবি।”

——-“কাবাব মে হাড্ডি বানাচ্ছিস কেন নিজের ইচ্ছায়?”

——-“যেইটা বলছি সেইটা করিস।চলে আসিস আট টার দিকে।”

——-“ঝগড়া লাগছোস?”

——-“তোর মতো ঝগড়াটে না আমি।”

——-“তাইলে……..

সায়নের কথা পুরোটা না শুনে কল কেটে দেয় বিভোর।সায়ন একদম মেয়েদের মতো।শুধু কথা বাড়ায়।বিভোর টিভি অন করে চ্যানেল পাল্টাতে থাকে।ত্রিশ মিনিট পর ধারা জাগে।ধড়পড়িয়ে উঠে।কখন ঘুমিয়ে গেছিলো টের পায়নি।বিছানা থেকে নামতে গিয়ে খেয়াল হয় শপিং ব্যাগের দিকে।হাতে নিয়ে খুলে,তিনটা শাড়ি দেখতে পায়।তবে,চোখে লাগে আকাশি রঙ এর শাড়িটা।হাতে নিয়ে দেখতে থাকে।অসম্ভব সুন্দর একটা শাড়ি।তবে কি শাড়ি চিনতে পারছেনা।ড্রয়িংরুমে এসে বিভোরকে দেখতে পায়।খুশিতে গদগদ হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

——“আমার জন্য শাড়িগুলো?”

——“আর কার জন্য আনবো?”

——“তুমি কীভাবে জানলে?আমার শাড়ি পরতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

বিভোর অভিজ্ঞ গলায় ভাব নিয়ে বললো,

——” চোখ দেখেই বুঝি।”

——“যাহ!এটা কেমনে সম্ভব। “

বিভোর হাসে।উঠে আসে।ধারার হাত থেকে শাড়ি নিজের হাতে নেয়।তারপর ধারার মাথায় ঘোমটা দিয়ে বলে,

——-“তোমার যে ইচ্ছে হচ্ছিলো মাত্রই জানলাম।শাড়ি এনেছি আমার ইচ্ছে পূরণ করতে।শাড়িতে তোমাকে দেখতে মন চাইছিল।”

ধারা আচমকা লজ্জা পেতে শুরু করে।বিভোর হেসে বলে,

——“লজ্জা পাচ্ছো নাকি?”

ধারা এক দৌড়ে রুমে ঢুকে পড়ে।একবার বিভোরকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়।বিভোর হতভম্ব হয়ে ক্ষণ মুহূর্ত বন্ধ দরজার দিকে দৃষ্টি রাখে।এরপর হেসে আবার সোফায় এসে বসে।ধারা বুকে দু’হাত চেপে রাখে।বুকে ঢিপঢিপ করছে।শাড়ি পরতে যাবে তখন মনে হয় ব্লাউজ নেই।বিভোরের হয়তো খেয়াল নেই।ধারা তাঁর আকাশি রঙেফ ফতুয়া পরে নেয় ব্লাউজের মতোন করে।তারপর শাড়ি পরে।যদিও শাড়ি পর‍তে পারেনা।তবে মোটামুটি পেরেছে।দরজা খুলে বের হতে গিয়ে ধারা লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।বের হবে নাকি বের হবেনা।পড়ে যায় দ্বিধায়।একবার এসে বিছানায় বসে।আবার দরজার সামনে আসে।আবার বিছানায় বসে।রুমে পায়চারি করে।পাঁচ মিনিটের মাথায় ধারা দরজা খুলতে সক্ষম হয়।পায়েলের ঝুনঝুন আওয়াজ শুনে বিভোর ঘুরে তাকায়।ধারা নতজানু হয়ে বেরিয়ে আসে।চুল কানে গুঁজে বিভোরের পানে তাকায়।বিভোরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো দৌড়ে রুমে ঢুকে পড়ে।বিভোর পিছন থেকে ডেকে উঠলো,

——“আরে আরে ধারা…..

কে শুনে কার কথা।ধারা ঠাস করে দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে।ঘামছে প্রচুর।কেমন নাম না জানা অদ্ভুত দমবন্ধকর অনুভূতি হচ্ছে।লজ্জা গিলে নিচ্ছে যেন।বিভোর দরজায় করাঘাত করে বলে,

——“আমাকে বের হতে হবে ধারা।রুমে কিছু দরকারি জিনিসপত্র আছে।ওগুলো লাগবে।খুলো।”

ধারা নাছোড়বান্দা গলায় দৃঢ়ভাবে বলে উঠলো,

——“কোথাও যাওয়া হবেনা।”

——“তাহলে দরজা খুলে সামনে আসো।”

ধারা নিশ্চুপ হয়ে যায়।শাড়ি পরে বিভোরের সামনে দাঁড়াতে এতো মিইয়ে কেনো যাচ্ছে নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা।দ্রুত শাড়ি খুলে ফেলে।দরজা খুলে।বিভোর দেখে,ধারা ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে ট্রাউজার আর ফতুয়া পরে দাঁড়িয়ে আছে।বিভোর ধমকে উঠে,

——“শাড়ি খুলছো কেনো?”

ধারা কেঁপে উঠে।আমতাআমতা করে বলে,

——“অস্বস্তি হচ্ছিলো তাই।”

বিভোর কপাল কুঁচকে বিছানা থেকে শাড়ি হাতে নিয়ে দৃঢ়ভাবে আদেশ করলো,

——“চুপচাপ দাঁড়াও।নড়লে একটা থাপ্পড় ও মাটিতে পড়বেনা।”

ধারার চোখ কপালে উঠে।মিনমিনে গলায় বলে,

——“তোমার কি বউ পেটানোর ইচ্ছে-টিচ্ছে আছে?”

বিভোর ধারার বাচ্চামি কথা শুনে মৃদু হেসে বললো,

——‘না নেই।তবে কথা না শুনলে মারতেও পারি।আমার হাত আগে চলে।”

ধারা ঢোক গিলে।বিভোর বলে,

——“হাত সরাও।”

——“তুমি শাড়ি পরাতে পারো?”

——“না।তবে চেষ্টা করি।”

ধারা মাথা কাত করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।বিভোর কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে বললো,

——“এতো চিকন কেনো?খাও না?”

——“অনেক খাই।মোটা হইনা।”

——“খাওয়ার মতো খেলে মোটা হতে কতক্ষণ।ওহ ব্লাউজ আনে নি না?মনেই ছিলনা।”

——“ফতুয়া আছে।”

——“আচ্ছা শাড়ির কুচি কীভাবে দেয়?”

——“দাও আমি কুচি করি।”

——“লাগবেনা শিখিয়ে দাও।”

বাধ্য হয়ে ধারা শিখিয়ে দেয় কুচি কীভাবে করতে হয়।বিভোর মনোযোগ সহকারে দেখে তারপর সুন্দর করে কচি করে দেয়।

——“কুচিগুলো এখন কই রাখবো?”

——“দাও আমি রাখছি।”

——“আমাকে বলো।”

——“আমি করছি তো।”

——“এতোটা করছি বাকিটাও আমি করবো।”

ধারা বিভোরের সামনে থেকে চলে যেতে চাইলে বিভোর শাড়ির কুচি শক্ত করে ধরে।ধারা জোরাজুরি করে সরতে চায়।বিভোর দু’হাতে ধারাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।ধারা হকচকানো গলায় বললো,

——“এটা কি হলো?”

——“কি হলো?”

—–“কিছুনা।”

কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা।এরপর বিভোর উঠে ধারার পেটে মাথা রেখে শুয়ে বললো,

——“ধারা?”

——“হু?”

——“কিছুনা।”

——“বলো।”

বিভোর ধারার পেট থেকে মাথা তুলে মুখের কাছে এসে নত হয়ে জড়ানো গলায় বললো,

——“এমন করে তোমাকে আর কাছে পাবোনা হয়তো।আমি যদি না ফিরি তুমি….তুমি বেশি কাঁদবেনা বুঝছো।”

ধারার বুক ধ্বক করে কেঁপে উঠলো।অশ্রুরুদ্ধ কন্ঠে বললো,

——“এমন করে আর পাবানা মানে?তুমি এভারেস্ট জয় করে ফিরে আসবা।তারপর সবাইকে নিয়ে ঘরে তুলবা কথা দিছো।”

বিভোর অপরাধী মুখ করে বললো,

——“আচ্ছা,আচ্ছা কাঁদতে হবেনা।আমি ফিরবো।”

ধারার ঠোঁট কাঁপছে কান্নার দমকে।বিভোর অবাকস্বরে বলে,

——‘এমন করে কাঁদছো কেনো?বলছি তো ফিরবো।”

——“তু….তুমমি ওইটা বললা কেন?”

বিভোর ধারার নাক টেনে বলে,

——“বলছি তো সরি।আর বলবোনা।”

ধারা আল্হাদে গদগদ হয়ে বলে,

——“যেভাবে কাঁদাইছো সেভাবে আদর করো এখন।”

বিভোর দুই ভ্রু ঈষৎ কুঁচকায়।বললো,

——“শাড়ি পরে সামনে দাঁড়াতে লজ্জায় মরে যাও।আর এভাবে প্রকাশ্যে নতুন প্রেমের প্রথম দিন বরের কাছে আদর চাইতে লজ্জা লাগেনা না?”

ধারা হেসে বিভোরের বুকে মুখ লুকোয়।বিভোর ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

——“ঘুরতে যাবা?”

——“কই?”

——“ঢাকায়ই।”

——“উহু।বাসার এই রুমটায় থাকবো।আর এই বুকটায়।”

বিভোর হেসে ধারাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

——“তুমি জানো তুমি কত কিউট করে হাসো।”

——“কিউট করে হাসে কেমনে?”

——“ঠিক তোমার মতোন।”

——“আমার হাসি পেলে হাসি।”

বিভোর ধারার চুলে বিলি কেটে দেয়।ধারা বললো,

——“আমি কিন্তু সারাদিন তোমাকে ফোনে,টেক্সটে জ্বালাবো।বিরক্ত হবানা।”

——“আচ্ছা হবোনা বিরক্ত।”

——“কোনো মেয়ের দিকে তাকাবানা।”

——“তাকাই ও না।”

——“আসছে সাধু…..

——“ধারা?”

——“হু?”

——“যত খারাপ পরিস্থিতিই আসুক।ভয় পাবানা।ভেঙে পড়বানা।মনে রাখবা,আমি আছি।আমার সহজে কিছু চয়েজ হয়না।যখন হয়ে যায় কারো সামর্থ্য থাকেনা কেড়ে নেওয়ার।সেখানে তুমি আমার জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান, প্রিয় মানুষ।”

ধারা শক্ত করে বিভোরকে চেপে ধরে গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

——“তোমার কথায় জাদু আছে।মনে বল পাওয়া যায়।ভয় পাবোনা কখনো। “

বিভোর আচমকা ধারাকে বুকের উপর তুলে নেয়।দুয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে পাশে শুইয়ে দিয়ে নিজে ধারার মুখের উপর নত হয়।ধারার রগে রগে শিরশিরি ভালোলাগার যন্ত্রনা শুরু হয়।বিভোর ধারার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে।

দীর্ঘ এক মিনিট সময় নিয়ে ধারাকে ছেড়ে দেয় বিভোর।দ্রুত উঠে নেমে যেতে গিয়ে বুঝতে পারে ধারার শাড়ি পেঁচিয়ে গেছে পায়ে।মিনিট খানেক সময় নিয়ে শাড়ির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়।রুম থেকে বের হতে হতে বলে,

——“রেডি হয়ে নাও বের হবো।”

ধারা আশাহত হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে।সে বুঝেছে বিভোর নিজের উপর আস্থা রাখতে পারছেনা তাই বের হতে চাচ্ছে।ধারা বিভোরের মতকে সায় দেয়।লাগেজ থেকে কাপড় বের করে পরে নেয়।চুল ঝুঁটি করে বেরিয়ে আসে।বিভোর এমন ভাবে হাসে যেন কিছুক্ষণ আগে কিছুই হয়নি।বললো,

——“চলো।”

সিঁড়ি ভেঙে নামতে নামতে ধারা বললো,

——“যাবো কই?”

——“বাইক রাইড।”

ধারা উল্লাসিত হয়ে যায়।বললো,

——“ওয়াও।”

__________

সকাল সাতটা।বিভোর ভোরে উঠে রান্না শুরু করেছে।রান্না শেষ করে এসে দেখে ধারা এখনো রেডি হয়নি।বিভোর তাড়া দেয়।

——“ধারা দ্রুত রেডি হও।পরে ট্রেন ধরতে পারবানা।”

ধারার চোখ রাখা শূন্যে।কিছুতেই যেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা বিভোরকে ছেড়ে।বিভোর আবার তাড়া দেয়।

——“প্লীজ ধারা দ্রুত রেডি হও।নয়তো কিন্তু আমি জামা চেঞ্জ করাবো।”

ধারা জানে বিভোর এটা কখনো করবেনা।তাই নিস্তরঙ্গ গলায় বললো,

——“আচ্ছা করো।”

বিভোর হকচকিয়ে যায়।ধারার মন সে বুঝতে পারছে।তাঁর নিজেরই বুকটা চিনচিন ব্যাথায় বিষধর হয়ে উঠেছে।বিভোর ধারার পাশে বসে ধারার এক হাতে হাত রেখে বললো,

——“নেক্সট মাসে শীতের ছুটি আছে অফিসে।আমি রাজশাহী যাবো তখন।”

——“আজ তুমি চলো?”

——“অফিসে যাওয়ার কথা ছিল শনিবার।আজ সোমবার।দুই’দিন যাইনি।এমনি ভেজাল করবে।চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।আগামী বছর আমার কতগুলি টাকা দরকার জানোই এখন যদি চাকরিটা চলে যা কেমনে হবে?সায়নকে তোমার সাথে পাঠাতে চাচ্ছি ওরেও নিতে চাচ্ছোনা।”

——“আমি একা চলাচলে অভ্যস্ত। তোমাকে যেতে বলছি কারণ……

——“জানি।প্রমিজ আমি খুব দ্রুত রাজশাহী আসবো।আর তো কয়টা দিন।”

——“হু।”

——“রেডি হও।”

——“হচ্ছি।”

বিভোর বেরিয়ে যায়।ধারা চোখের কোণের জল মুছে রেডি হয়।বিভোর বাথরুমে এসে মুখ ধুতে থাকে।বার বার চোখটা ভিজে যাচ্ছে।ধারা দেখলে আর যেতে চাইবেনা।এমনি অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে রাজি করানো হয়েছে।আটটায় ওরা রেল ষ্টেশনে এসে পৌঁছায়।আর পনেরো মিনিট তারপর ট্রেন ছেড়ে দিবে।বিভোর ধারাকে সিটে বসিয়ে নেমে যায়।দোকান থেকে চকলেট,পানি এনে দেয়। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ে।বিভোর জানালা দিয়ে ধারার হাত ধরে রাখে।ধারা অনেক্ষণ ধরে থেমে থেমে কেঁদে উঠছে।বিভোর বুঝাচ্ছে না কাঁদার জন্য।ধারা কিছুতেই শুনছেনা।ট্রেন দ্রুত গতিতে চলা শুরু করেছে।বিভোর আর তাল মিলিয়ে দৌড়াতে পারছেনা।ধারা বলে,

——-“প্লীজ আর দৌড়াইয়োনা।হাত ছাড়ো।”

——-“বলো কাঁদবানা?”

——“কাঁদবোনা।”

——“লাভ ইউ।”

ধারা কেঁদে উঠলো।বিভোর বলে,

——‘কাঁদছো কিন্তু।”

——“না না আর কাঁদবোনা।”

বিভোর ধারার দিকে একবার তাকায় বিভ্রম নিয়ে।তারপর হাত ছেড়ে দেয়।ট্রেন চোখের পলকে চলে যায় অনেক দূর।বুকটা শূন্যতায় খাঁ খাঁ করে উঠে।

বিভোর অশ্রুরুদ্ধ কন্ঠে বিড়বিড় করে,

——“তুমি আমার বৃষ্টি ধারা।”

ধারা ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়েও নামেনি।বিভোর যে বার বার বলে দিয়েছে বাড়ি ফিরতে।সে সিটে এসে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। 

চলবে……..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *