বৃষ্টি হয়ে নামো [পর্ব-৩০]

বাসে প্রায় মিনিট বিশেক ধরে একটা বাচ্চা কাঁদছে।বিভোর শুরু থেকেই খেয়াল করছে।একজন বৃদ্ধার কোলে বাচ্চাটি।সামনের সিটে এক জোড়া যুগল।কথা-বার্তায় বুঝা গেলো বাচ্চাটির পিতা-মাতা এরাই।বৃদ্ধা এদের কি হয়?বাচ্চাটিকে বৃদ্ধার কাছে গছিয়ে দিয়ে নিজেরা ঘুমোচ্ছে।বৃদ্ধার হাব-ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে তিনি অনেক কষ্টে আছেন।সামলাতে পারছেন না বাচ্চাটিকে।বিভোর ধারাকে আস্তে করে ডাকলো,

—- “ধারা? “

ধারা বিভোরের বুক থেকে মুখ না তুলেই বললো,

—- “হু?”

—- “বাচ্চাটিকে নিয়ে আসবো আমাদের কাছে?”

ধারা মুখ তুলে তাকায়।বিভোর আঙ্গুলে ইশারা করে বাচ্চাটিকে দেখায়।আর বলে,

—- “উনার হয়তো খুব কষ্ট হচ্ছে বাচ্চাটিকে রাখতে।”

ধারা কিছু না ভেবেই বললো,

—- “ওকে।”

—- “উনাকে কি বলে সম্বোধন করবো?আন্টি না দাদু?”

—- “তোমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়স মনে হচ্ছে।দাদুই ডাকো।”

বিভোর গলাটা খ্যাঁক করে পরিষ্কার করে হাত নাড়িয়ে ডাকলো,

—- “হাই বেবি?”

বাচ্চাটি সহ বৃদ্ধা তাকায়।বিভোর হাসে।তারপর বললো,

—- “আসসালামু আলাইকুম দাদু?”

বৃদ্ধা কিছুটা ভড়কে গেলো।এত বড় দামড়া ছেলে এমন হেসে কথা বলছে কেনো?তিনি জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো,

—- “অলাইকুম আসসালাম। “

বিভোর বললো,

—- “বেবিটার নাম কি?খুব কিউট তো।”

—- “ইমদাদুল বিভোর।”

বিভোর,ধারা চমকায়।ধারা বাচ্চাটির দিকে তাকায়।ঠোঁট দু’টো রক্তের মতো লাল।বিভোরের মতো।ধারা বললো,

—- “আপনার হয়তো কষ্ট হচ্ছে বাচ্চাটিকে রাখতে।আমার কাছে দেন।গল্প করি ওর সাথে।”

বৃদ্ধা দ্বিধায় পড়ে।সামনের সিটে থাকা বাচ্চাটির মা’কে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো দিবে নাকি।সে অনুমতি দেয়।বিভোরের আগে ধারা বাচ্চাটিকে কোলে নেয়।চাদরের ভেতর নিয়ে বললো,

—- “হাই ছোট বিভোর।”

উত্তরে বাচ্চাটি অপলক চেয়ে রইল ধারার মুখের দিকে।বিভোর তাকিয়ে দেখছে আর হাসছে।ধারা কেমন উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে বাচ্চাটিকে নিয়ে।ধারা বাচ্চাটিকে আবার বললো,

—- “কি দেখছো হুম?”

বাচ্চাটি ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠলো,

—- “মামমা।”

ধারার ভেতরটা নড়ে উঠে।বাচ্চাটিকে এতো আপন লাগছে কেনো?বিভোরের নামের সাথে এবং ঠোঁট ও গায়ের রংয়ের সাথে মিল বলে?হয়তো।ধারা বাচ্চাটিকে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে।বিভোর দু’হাতে বাচ্চাটি সহ ধারাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—- “কি হয়েছে হুম? “

ধারা বিভোরের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

—- “খেয়াল করেছো তোমার ঠোঁট আর ছোট বিভোরের ঠোঁট একদম একরকম।”

বিভোর হাসলো।বললো,

—- “আমার জন্মের আগে আম্মা আব্বা চেয়েছিল একটা সুন্দরী মেয়ে হউক।হয়ে গেছি আমি।তবে ঠোঁট লাল ছিল।আর গায়ের রঙ ছিল ধবধবে।চোখের পাপড়ি ছিল ঘন।আমাকে মেয়ে বলে চালানো যেত।জন্মের পর তিনদিন আম্মা আব্বা যখনি আমাকে দেখতো মগ্ন হয়ে দেখতো।বিভোর হয়ে দেখতো।তাই নামও রেখে দেয় বিভোর।তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে ওসব সৌন্দর্য চলে গেছে।”

ধারা হাসলো।বললো,

—- “বাচ্চাটিকে আমার খুব আপন লাগতেছে।পুরো যেন তুমি।ছোট বিভোর।”

বিভোর রসিকতা করে বললো,

—- “তোমার জায়গায় যদি দিশারি হতো ও কি বলতো জানো?”

—- “কি?”

—- “বলতো, বিভোইরে এই বাচ্চাটা তোর মতো দেখতে কেনো?ওর মায়ের লগে তোর কি সম্পর্ক?বাচ্চাটিকে নিয়ে এখনি হস্পিটাল চল।আমি ডিএনএ টেস্ট করাবো।”

ধারা জোরে হেসে উঠলো।সাথে বিভোর।যাত্রী ক’জনের ঘুম ভেঙে যায়।উৎসুক হয়ে তাকায়।বাচ্চাটির মা, বাবাও জেগে যায়।দেখে তাঁদের বেবিও হাসছে।বিভোর চারপাশ দেখে ধারাকে চাপা স্বরে হেসে বললো,

—- “সবাই তাকিয়ে আছে।হাসির আওয়াজ কমাও।”

ধারা কোনোমতে হাসি আটকায়।যে যার মতো আবার চোখ বুজে।বাচ্চাটির মা বাবা হঠাৎ আনমনা হয়ে গেলো।ধারা বিভোরের মতো কখনো নিজেদের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আড্ডা দেওয়া হয়নি।হাসাহাসি করা হয়নি।অথচ বিয়েটা প্রেমের ছিল।বাচ্চা নিয়ে ছিল অনেক স্বপ্ন।বাচ্চাটির মা বিভোরকে বললো,

—- “ভাইয়া বিভোরকে দিন?”

ধারার মুখটা চুপসে যায়।বিভোর বাচ্চাটিকে এগিয়ে দেয়।ধারা মুখ গুমোট করে বিভোরের বুকে মাথা রাখে।ধারার গায়ে চাদরটা ভালো করে টেনে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

—- “এভারেস্ট থেকে ফিরে একটা ছোট বিভোর আর ধারা ঘরে নিয়ে আসবো প্রমিজ। “

ধারা হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিভোরকে।বিভোর বললো,

—- “ছোট বিভোর হবে লাল ঠোঁটের অধিকারী।আর ছোট ধারা হবে শয়তানের নানি।”

ধারা চোখ চোখা করে বললো,

—- “কি বললা?”

—- “আরেএ বলছি মানে।ওইতো বিয়ে ঠিক করলেই তোমার মতো পালাবে।”

ধারা আহ্লাদিত হয়ে বললো,

—- “এভাবে পালাতে পালাতে যেন তোমার মতোই একটা বিভোরের দেখা পায়।”

—- “আরে বাহ।ছেলেও চাও বিভোরের মতো।মেয়ের জামাই ও।এসব কিছুই হবেনা হা।বিভোর এক পিসই।”

—- “ওলে!কি ভাব রে।”

বিভোর হেসে ধারার নাকে নাক ঘষে বললো,

—- “ওলে!কি মিষ্টিরে।”

দুজনি হেসে উঠলো।

_____________________________________________

সকাল ছয়টায় বান্দরবান পৌঁছে ওরা।বান্দরবান থেকে এবার যেতে হবে রুমা বাজার।বান্দরবান থেকে রুমা বাজার এর দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার।রুমা বাজার পৌঁছে কেওক্রাডং যাবার জন্যে প্রথমেই গাইড ঠিক করে নিতে হয়।গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক।গাইড সমিতির রেজিস্টার্ড গাইড আছে।তেমন কাউকে ঠিক করে নিতে হবে।রওনা হওয়ার আগে রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে কেওক্রাডং যাবার অনুমতি নিতে হবে।অনুমতির জন্যে ভ্রমণকারী সকল সদস্যের পরিচয় লিখিত কাগজে জমা দিতে হয়।এই কাজ গুলো করার জন্যে গাইড সাহায্য করে।কিন্তু বিভোর গাইড চাইছেনা।ধারাকে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেকিং করতে চাইছে।যেখানে বিপদে পড়লে নিজেকেই নিজের রক্ষা করতে হবে।বিভোর পূর্বে দু’বার কেওক্রাডং ট্রেকিংয়ের জন্য এসেছে।আর্মি ক্যাম্পের সাথে এভারেস্ট নিয়ে আলোচনা করে।প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের কাগজ প্রমাণ দেখায়।আর্মি ক্যাম্প বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় বিভোর একজন এভারেস্ট অভিযাত্রী।সে নিজেকে সহ অন্য যে কাউকে এই সামান্য পর্বত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।তাই গাইড ছাড়া ছেড়ে দেয়।রুমাবাজার থেকে বগালেকের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার।চার ঘন্টা জার্নি করে ওরা বগালেক পৌঁছে।বগালেক পৌঁছে সেখানের আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে।একটা রিসোর্ট নেয়।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বারান্দায় এসে বসে।চোখের সামনে সবুজের সমোরোহ।ধারা বললো,

—- “ট্রেকিং এ বের হবো কবে?”

—- “কালই বের হই।আজ একটু ঘুরাফিরা করি।কাল দিন – রাত ট্রেকিংএ থাকবো।আজ খুব ক্লান্ত।আমি পারবো।তুমি পারবেনা।তোমাকে টানতে হবে।এর চেয়ে রেস্ট নাও আজ।”

—- “আচ্ছা।”

বিভোর বললো,

—- “আজকের বাকি দিনটা আর রাত আমাদের হানিমুন ধরে নাও।”

কথা শেষ করেই বিভোর চোখ টিপে।ধারা নাক লাল হয়ে আসে।উঠে চলে যায় ভেতরে।বিভোর হাসে।জেদি মেয়েদের এতো লজ্জা হয়?

_____________________________________________

যথাসময়ে এরপরদিন ভোরে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে পড়ে দুজন।দুজনকে দেখেই মনে হচ্ছে ট্রেইকার।পায়ে হেঁটে কেওক্রাডং এর চূড়ায় পৌঁছাতে হবে।মোটামুটি বেশ খাড়া পাহাড় আছে পথিমধ্যে।মিনিট ত্রিশেক হাঁটার পর বৃষ্টি নামে।অনেক ট্রেইকার রা আর উপরে উঠলোনা।নিচে নেমে যেতে শুরু করে।বিভোর ধারাকে নিয়ে অন্য পথ ধরে।যেখানে ঝোঁপঝাড় বেশি।ধারা বললো,

—- “ভালো রাস্তা রেখে এসব ঝোঁপঝাড় ভেঙে কেনো যাচ্ছি?”

বিভোর চোয়াল শক্ত করে বললো,

—- “যা বলি করো।আর আমাকে অনুসরণ করো।”

—- “হাঁটতে পারছিনা তো।হাতটা ধরোনা।”

—- “কোনোরকম সহযোগিতা পাবেনা।মনের জোর বাড়াও।ভাবো তোমার পাশে কেউ নেই।”

ধারা চুপ হয়ে যায়।বড় করে দম নিয়ে বিভোরকে অনুসরণ করে।বিভোর হাতের লাঠি দিয়ে ঝোঁপঝাড় সরিয়ে সামনে এগুচ্ছে।এক তো বৃষ্টি তার উপর এতো ঝোঁপঝাড়।যদি সাপ আসে?ধারা আৎকে উঠে ভেতরে ভেতরে।পায়ের স্পিড কমে যায়।বিভোর ঘুরে তাকায়।দেখে অনেকটা দূরে ধারা।বিভোর কঠিন স্বরে ডাকলো,

—- “ধারা?এভাবে হাঁটলে হবে?দ্রুত হাঁটো।”

ধারা দৌড়ে আসে।বিভোরের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে থাকে।মাঝে মাঝে আড়চোখে বিভোরকে দেখে।বৃষ্টির পানিতে ভিজে চুল কপাল ঘুরে দিয়েছে।ধারা কাচুমাচু হয়ে বলে,

—- “কি হট মাইরি।”

বিভোর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,

—- “কিছু বললে?”

ধারা মাথা নাড়ায়। তারপর বিড়বিড় করে,

—- “ট্রেনিং দেওয়ার সময় এমন ভান করে যেন আমি কেউ না।উফ!এমন একটা জায়গায় কই একটু চুমা টুমা দিবে।তা না খালি ধমকা-ধমকি।বাড়ি ফিরি তখন খামচিয়ে লাল করে দেবো আমার সাথে এমন করার জন্য।”

ঘন্টাখানেক পর ধারা ‘আ’ করে আর্তনাদ করে উঠলো।বিভোরের বুক ধ্বক করে কেঁপে উঠে।ফিরে তাকায়।একটা উঁচু গাছের কাঁটাযুক্ত ডালের আঘাতে ধারার গাল ছিঁড়ে গেছে।রক্ত আসছে।বিভোর দৌড়ে এগিয়ে আসতে গিয়েও আসেনি।ঢোক গিলে ধারার কষ্ট হজম করে নেয়।বলে,

—- “এদিকে আসো।”

ধারা কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসে।বিভোর তুলা বের করে রক্ত মুছে স্যাভলন লাগিয়ে দেয়।তারপর গ্লুকোজ গুলে খাইয়ে দেয়।আবার যাত্রা শুরু করে।ধারা অবাক হয়।বিভোর এত স্বাভাবিক!কোনো পার্থক্য দেখলোনা তাঁর কষ্ট দেখে।এতো কঠিন হওয়া খুব প্রয়োজন?প্রায় তিন ঘন্টা পর ওরা চূড়ায় এসে পৌঁছে।ধারা খুশিতে লাফাতে থাকে।যেন এভারেস্ট জয় করেছে।বিভোর ধারার খুশি দেখে মৃদু হাসে।তারপর এগিয়ে এসে ধারার গালে হাত রেখে বললো,

—- “ব্যাথা হচ্ছে আর?”

—- “উহু।”

—- “ঠিক হয়ে যাবে।আসো বসি।খেয়ে নেই।”

—- “হুম।”

ত্রিশ মিনিট সময় নিয়ে শুকনো খাবার খেলো দুজন।তারপর বিভোর বললো,

—- “পুরো দিন বাকি।পাহাড়ের ওই সাইট দিয়ে নামি চলো।ওদিকটা একদম খাড়া।খুবই কষ্টকর ট্রেকিং হবে তোমার জন্য।সময় লাগবে পাঁচ -ছয় ঘন্টা।”

—- “পারবো।”

—- “ইনশাআল্লাহ। “

বিভোর ধারাকে আগে নামতে বললো।ধারা নামতে গিয়ে অসাবধানতার জন্য পিচল খেয়ে চিৎকার করে পড়ে যায়।দ্রুত দু’হাতে মাটি আঁকড়ে ধরে।মুহূর্তে বিভোরের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়।এই বুঝি ধারা পড়ে গেলো।ধারা চেঁচাচ্ছে,

—- “আমি আর ধরে রাখতে পারছিনা মাটি।পড়ে যাবো।”

—- “উঠে আসো ধারা।আমি সাহায্য করবোনা।তোমাকে নিজে উঠে আসতে হবে।”

ধারা দাঁতে দাঁত চেপে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।শরীর অবশ হয়ে আসছে ঝুলে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।পড়ে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু।কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

—- “প্লীজ সাহায্য করো।”

—- “ধারা চেষ্টা করো।তোমার পায়ের কাছে পাহাড়ের যে মাটিটুকু সেটা পা দিয়ে আঁকড়ে ধরো।শরীরের জোর বাড়াও।তারপর দু’হাতে ধরে রাখা মাটি কে আরো শক্ত করে ধরে ধীরে ধীরে শরীর উপরে তোলার চেষ্টা করো।”

ধারা দু’পা নাড়িয়ে মাটি খুঁজে।এক সেকেন্ডে পেয়ে যায়।জুতা দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে। সফল হয়।পরক্ষণে আবার পা ছুটে যায়।ধারা চিৎকার করে উঠে।বিভোরের কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।সাহায্য করা যাবেনা।আবার ধারা যদি সত্যি পড়ে যায়।বিভোর বললো,

—- “যদি আমি সাহায্য করি এভারেস্ট যেতে দেওয়া হবেনা।রাজি?”

ধারা বিভোরের কথায় শূন্য চোখে তাকায়।এরপর চোখ বুজে দু’পায়ের জুতার গোড়া দিয়ে মাটি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।ভাবে হয় এখন উপরে উঠবো নয় মরবো।দু’হাতের নিচে থাকা মাটিতে খামচে ধরে পা দিয়ে মাটিকে ঠেলে উপরে উঠার চেষ্টা করে।দু’তিন বার ব্যার্থ হয়।চারবারের সময় উঠে আসে।শরীরের শক্তি ততক্ষণে শেষ।হেলিয়ে পড়ে বিভোরের বুকে।বিভোর ধারার মাথাটা কোলে নিয়ে বোতল থেকে পানি ঢালে মাথায়।শরীর গরম হয়ে গেছে ধারার।ভেজা মাটিতে নোংরা হয়ে গেছে জামা-কাপড় ।এতো জেদ!তবুও যাবে!বিভোর চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

—- “কিছু সময় নাও ঠিক হয়ে যাবা।”

মিনিট বিশেক পর পানি খেয়ে যাত্রা শুরু হয় নিচে নামার।ধারা বিভোরের সাহায্য ছাড়া নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে আপ্রাণে।কাঁটাযুক্ত বিভিন্ন গাছে হাত,পা লেগে ছিঁড়ে যাচ্ছে।হজম করে নিচ্ছে ধারা সব কষ্ট।বিভোর চোখ-কান খোলা রাখে।কখন না ধারা ছুটে যায় পর্বত থেকে।দু’ঘন্টা নামার পর ধারা আর পারছেনা।সমতল একটু জায়গা দেখে বসে পড়ে।দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলছে।রোদ উঠেছে।সূর্যটা একদম মাথার উপর।শীতকাল সূর্যে আরাম লাগার কথা।কিন্তু এতো পরিশ্রমের জন্য উল্টো কষ্ট হচ্ছে।বিভোর স্যালাইন,গ্লুকোজ,বিস্কুট বের করে।ধারাকে খাইয়ে দেয়।ধারার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে।দুজন ব্যাগপ্যাক কাঁধে নিয়ে নামতে থাকে।পথিমধ্যে ধারা খুবই দূর্বল গলায় বললো,

—- “আমি আর পারছিনা।”

কথা শেষ করার পাঁচেক সেকেন্ড পর ধারা শরীরের ভার ছেড়ে দেয়।পাহাড়ের ঘাস,গুল্মলতা,থেকে হাত সরে যায়।বিভোর দ্রুত ধারার ব্যাগপ্যাক ধরে ফেলে।ধারা জ্ঞান হারিয়েছে।বিভোর শরীরের সবটুকু জোর দিয়ে ধারাকে কাছে নিয়ে আসে।তারপর কাঁধে তুলে নেয়।সাত মিনিট নামার পর সমতল জায়গা খুঁজে পায়।সেখানে ধারাকে নিয়ে বসে।বোতল থেকে পানি বের করে মুখে ছিটিয়ে দেয়।ধারা জাগে।তবে খুব দূর্বল।কথা বলার শক্তিটুকু নেই।পিটপিট করে শুধু তাকায়।বিভোর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

—- “মাত্র দুপুর।কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও।তারপর উপরে উঠে যাবো।”

ধারা সত্যি খুব ক্লান্ত আর দূর্বল।চোখ দু’টো ঘুম চাচ্ছে।বিভোরের কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে সে।

বিভোর কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।খেয়াল হয় ধারার হাত থেকে হালকা রক্ত বের হচ্ছে।কখন আঘাত পেলো বলেনিতো।বিভোর তুলা বের করে রক্ত মুছে।তারপর স্যাভলন লাগিয়ে দেয় ক্ষত স্থানে।এরপর গালের আহত স্থানে চুমু এঁকে দেয় অনেক্ষণ সময় নিয়ে।

চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *