বৃষ্টি হয়ে নামো [পর্ব-৩১]

ধারার ঘুম ভাঙে বিকেলের দিকে।ধড়ফড়িয়ে উঠে।বিভোর ব্যাগপ্যাক কাঁধে নেয়।এরপর কোমরের সাথে ব্যাগপ্যাকের বন্ধনী যুক্ত করে বললো,

—- “এক ঘন্টার মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।চলো উপরে উঠি।”

ধারা চুল ঠিক করে উঠে দাঁড়ায়।অপরাধী স্বরে বলে,

—- “সরি।কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।প্লীজ এভারেস্ট যাবো।”

বিভীর হেসে ফেললো।বললো,

—- “আচ্ছা যাবা।চলো এখন।”

—- “নিচে আর নামবোনা?”

—- “না।”

—- “রাত হয়ে যাবে তাই?”

—- “তোমার রাতেও ট্রেকিং করতে হবে।তবে সেটা এখন নয়।নেক্সট বার।আজ অনেক হয়েছে।উপরে উঠে পড়ি।কাল ভোরে নেমে যাবো।”

—- “আচ্ছা।”

সন্ধ্যার অনেক্ষণ পর ওরা চূড়ায় পোঁছালো।দূরে আলোর রেখা দেখলো ধারা।বিভীরকে প্রশ্ন করলো,

—- “কীসের আলো?বাড়ির মতো মনে হচ্ছে।”

বিভোর বললো,

—- ” কটেজ থেকে আলো আসছে।আদিবাসী কটেজ।”

—- “ওমা!পাহাড়ের চূড়ায় কটেজ?”

—- “অনেকে চূড়ায় রাত কাটায়।তাই এই ব্যবস্থা।তুমি না ক্রেওকাডং এসেছিলে জানোনা?”

—- “চূড়ায় আসিনি।কাছাকাছি এসে ফিরে গেছি।এর কারণ ও ছিল।অন্যবার বলবো।আর আমরা তাহলে কটেজে উঠবো?”

বিভোর ব্যঙ্গ করে বললো,

—- “জ্বে না।আপনি হানিমুনে আসেন নি।এসেছেন ট্রেনিংয়ের জন্য। সো তাঁবুতে রাত কাটাচ্ছেন।”

ধারা খুশিতে বাকবাকম হয়ে বললো,

—- “কোনো সমস্যা নাই।কখনো থাকেনি।আজ থাকবো।উত্তেজনায় দম ফেটে যাচ্ছে আমার।”

ধারার উল্লাসিত কন্ঠ শুনে বিভোর হাসে।বললো,

—- “চলো।”

—- “কই?”

—- “জায়গা ঠিক করতে হবেনা তাঁবুর জন্য?”

—- “ওহ চলো।”

আরো কিছুটা হেঁটে একটা সমতল জায়গা চিহ্নিত করলো।এরপর তাঁবু স্থাপন করলো।সব কিছু ঠিকঠাকের পর বিভোর শার্ট প্যান্ট চেঞ্জ করে বললো,

—- “কাপড় চেঞ্জ করে নাও তুমি।”

—- “তুমি বের হও।”

বিভোরের মাথায় যেন বাজ পড়লো।এমন ভঙ্গি করে বললো,

—- “ওমা!কেনো?”

ধারা কটকটে গলায় বললো,

—- “জামা চেঞ্জ করবো কি তোমার সামনে?”

বিভোর হতচকিত হয়ে বললো,

—- “আমি তোমার…..

—- ” জামাই।জানি আমি।তবুও বের হও।”

বিভোর নাছোড়বান্দা গলায় বললো,

—- “বের হবোনা।আমি ঘুমাবো।”

ধারার শরীর চুলকাচ্ছে অনেক্ষণ।বাধ্য হয়ে অন্যদিকে ফিরে টি-শার্ট খুলতে নেয় তখন বিভোর বেরিয়ে যায়।সাথে ব্যাগপ্যাক নেয়।ধারা খেয়াল করেনি।কাপড় চেঞ্জ শেষে উঁকি দিয়ে দেখে বিভোর স্টোভে রাঁধছে কিছু।উৎসুক চোখ নিয়ে বেরিয়ে আসে।

—- “কি রাঁধো?”

—- “নুডলস। “

—- “পাতিল কখন ব্যাগে ঢুকালা?”

—- “ঢুকিয়েছি কোনো এক ফাঁকে।”

—- “পানি কতটুকু আছে?চলবে?”.

—- ” এক বোতল আছে।না চললে কটেজ থেকে পানি নিয়ে আসবো।সমস্যা নেই।”

ধারা আহ্লাদী গলায় বললো,

—- “চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে।”

—- “তোমার ব্যাগে আছে গিয়ে দেখ।”

—- “কখন নিলা?”

—- “আসার পথে।তোমার সামনেই তো কিনলাম।”

—- “মনে নেই।আচ্ছা নিয়ে আসছি।তুমি খাবা?”

—- “না।কয়েল নিয়ে এসো।মশা জ্বালাচ্ছে খুব।”

—- “আচ্ছা।”

ধারা উঠে দাঁড়ায়।তাঁবুর ভেতর ঢুকে।মশার কয়েল নিয়ে ফিরে আসে।রান্না শেষে দুজন একসাথে পেট ভরে খেল।খাওয়া শেষে ধারা বললো,

—- “এতো নুডলস কখনো খাইনি আমি।পছন্দ না নুডলস।আজ কতটা খেয়ে ফেললাম।”

—- “পেট খালি থাকলে সবই ভালো লাগে।”

—- “সেটা ঠিক।”

রাত তখন প্রায় নয়টা দশটা হবে।দুজন জ্যাকেট পরে দাঁড়িয়ে আছে তাঁবুর চেয়ে কিছুটা দূরে।যত দূর চোখ যায় মুগ্ধ হয়ে দেখছে।কুয়াশা উড়ে বেড়াচ্ছে।পাহাড়ের শীতল বাতাস মিতালী আন্দোলিত করছে মায়াবী আকর্ষনে।বিভোর গাঢ় স্বরে বললো,

—- “যদিও অনেকবার এসেছি।তবুও ভালো লাগে।”

—- “হু।ঝর্ণা দেখে আসলামনা একটা?পাহাড় বেয়ে পড়ছে যে।ওখানে ফ্রেন্ডরা মিলে গোসল করেছিলাম।তখন এইচএসসি দিয়েছি মাত্র।”

—- “তবে আমার বেশি ভালো লাগে চূড়ায় পৌঁছানোর পথটা।আঁকাবাঁকা।দেখতে ভালো লাগে।”

কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা। দুজন প্রকৃতিতে মিশে আছে।ধারা একসময় চাপা স্বরে বললো,

—- “শুনো?”

—- “কি?”

—- “ওই লোকটা অনেক্ষন ধরে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।”

ধারার কথায় বিভোর ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে তাকায়।হালকা আলোয় যা মনে হচ্ছে লোকটা খুব কালো।পরনে কালো জ্যাকেট,লুঙ্গি।মোটাসোটা দেখতে।তাদের দিকেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।বিভোর ধারাকে বললো,

—- “তাঁবুতে চলো।”

ওরা দুজন তাঁবুতে চলে আসে।বিভোর নজর রাখে বাইরে।লোকটা এক পা এক পা করে এগুচ্ছে তাবুর দিকে।ওরা যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এসে থেমে যায়।ধারা ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,

—- “কে উনি?”

—- “এখানে সাধারণত ট্রেকারদের জিনিসপত্র চুরি হয়।না দিলে আঘাতও করে।তবে অন্য কেউও হতে পারে।ভয় পেয়োনা। কিছু হবেনা।”

তবুও ধারা ভয়ে গুটিয়ে যায়।বিভোর শুয়ে ধারাকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

—- “ঘুমাও।ভেবোনা।কিছু হবেনা।”

কিছুক্ষণ পর আরো দুজন আসে।তিনজনের কথার ফিসফিসানি শোনা যাচ্ছে।এরপর মনে হলো এরা তাঁবুর দিকেই এগুচ্ছে।বিভোর শক্ত করে ধারাকে ধরে।ধারা ভয়ে খামচে ধরে বিভোরকে।চোখ বুজে।বিভোর ফিসফিসিয়ে বললো,

—- “ছুরিটা হাতে রাখো।”

ধারার ভয়ে হৃদপিন্ড ফেটে যাওয়ার উপক্রম।বিভোর উঠে বসে দু’হাতে দু’টো ছুরি নেয়।প্রস্তুত হয় আক্রমণ করার।

চলবে…….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *