কালো ছায়ার ছোঁয়া

 মায়ের কথা অনুযায়ী বাড়ীটা খুব পয়া | বহুদিন ভাড়াবাড়ীতে কাটিয়ে মাস পাঁচেক হলো আমরা এই নতুন বাড়ীতে উঠে এসেছি | বাঘমারি পাড়ায় বেশ সুন্দর ছোট্টখাটো একতলা এই বাড়ীটা | একটু যায়গাটা নিরিবিলি বটে তবে পাণ্ডুয়া স্টেশন এখান থেকে এক কিলো মিটার মত হবে। আর জন সংখ্যার চাপে কোনো যায়গাই বেশী দিন নিরিবিলি থাকবেনা | সামনে বেশ খানিকটা উঠোন , আমগাছ একটা বড় কাঁঠাল গাছ পুরো পাঁচিল ঘেরা বাড়ীটা বেশ সস্তায় বাবার এক বন্ধুই দেখে দিয়েছে | মায়ের কথায় এই বাড়ীটাকে পয়া বলার যথেষ্ট কারন আছে | এই বাড়ীতে ঢুকতে না ঢুকতেই বাবার বহুদিন আটকে থাকা প্রমোশন টা বাবা পেয়ে গেছে  , আর হঠাৎ করেই দিদির জন্য একটা  ভালো পাত্রের সন্ধান মিলেছে | ছেলে কাছেই হাইস্কুলের অঙ্কের টিচার , ছোট্ট সংসার বিশেষ কিছু চাহিদা ও নেই | আগামী ফেব্রুয়ারিতে মোটামুটি আশীর্ব্বাদ টা হয়ে যাবে , তারপর শুভদিন ধরতে হবে | মানে আগামী বছরেই বিয়ে হয়ে যাবে | তবে এখন মায়ের একটু অসুবিধ হচ্ছে | এখানে আসার পর ঠিকে কাজের লোক এখনো মা জোগাড় করে উঠতে পারেনি | সমস্ত কাজ মাকে একা হাতে সামলাতে হচ্ছে , কত্ত ব্যস্ততা , বিয়ের একটু একটু জোগাড় করা সাথে সংসারের সমস্ত কাজ , মায়ের কথায় বাবা নাকি জীবনে যদি একটা কাজের মত কাজ করে থাকে সেটা হলো এই বাড়ীটা জোগাড় করা | এটাই নাকি বাবার বিয়ের পরে শ্রেষ্ট কাজ | বাবা আমার মাটির মানুষ | মায়ের কথায় রাগ তো করেই না উল্টে মুচকি হেসে উত্তর দেয় , বুঝলে স্বরমা ওস্তাদের মার শেষ রাতে, একটা প্রবাদ আছে | যাক্ , এভাবেই বেশ দিন চলছে , হঠাৎ দিন দশ বারো আগে আমরা তখন কেউ-ই বাড়ী নেই দিদি কলেজ আমি স্কুল আর বাবা অফিস | মায়ের কাছে এক মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা এসে হাজির | সে বলে , বৌদি , আমার একটা কাজের খুব দরকার , আমার স্বামী আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে , মাতাল মানুষ , তোমাদের বাড়ীতে যদি কাজের জন্য আমায় রাখো আমি বেঁচে যাই | মা তো যেন হাতে স্বর্গ পেয়ে যায় , তৎক্ষণাৎ কথা বার্তা পাকা , সে আমাদের বাড়ীতেই থাকবে , গ্রিল দিয়ে ঘেরা বারান্দার বামপাশে ছাদে ওঠার সিঁড়ি উঠেছে তার নীচে বহুদিনের একটা ঠাকুমার আমলের এক ঠ্যাঙ ভাঙা চৌকী রাখা ছিলো তাতেই শোবে | খাওয়া থাকা মাসে দুশো টাকা হাতে দিলেই হবে | সঙ্গে সঙ্গে স্পট জয়েনিং হয়ে গেল | পুরোনো কটা বড় বড় বস্তা কাঁথা যা ছিলো চৌকিতে বিছিয়ে তার উপর পুরোনো চাদর বালিশদিয়ে বিছানা তৈরী , মায়ের দুটো পুরনো শাড়ি ইত্যাদি দিয়ে তাকে সাজিয়ে কাজ শুরু | আমরা বাড়ী ফিরে দেখি ওরে বাবা এযে সবে আজ এসেছে বোঝা ভার | যেন কতদিনের পরিচিত | মা ও যেন যুদ্ধজয়ের গর্বে আল্হাদিত | বাবা যা করতে পারিনি মা করে দেখিয়ে দিয়েছে | যাক বাবা ও কাজের লোক খোঁজার দৌড়োদৌড়ি থেকে অব্যাহতি পেয়ে বেশ সন্তুষ্ট , ভালোই হয়েছে | কিন্তু একটা জিনিষ লক্ষ্য করছিলাম আমি  , দিদি যেন এই কাজের মাসীকে দেখে সন্তুষ্ট নয় , তার যেন ঠিক পছন্দ হচ্ছেনা একে | একদিন আড়ালে ডেকে দিদি বল্লে ভাই ঐ মাসীর থেকে একটু দূরে দূরে থাকবি , কিছু আলাদা করে খেতে দিলে একদম খাবিনা , একটু নজরে নজরে রাখবি , আমার কেমনজানি ওকে ভালো লাগছেনারে | আমি বল্লাম কেন? তুই মাকে বল তাহলে , দিদি বল্লে , বলবো তো কি বলবো? আর মা আমার পছন্দ নয় বলে কি ওকে তাড়িয়ে দেবে নাকি? যা তোকে যে কথা বলছি মনে রাখিস | লক্ষ্য করতে লাগলাম দিদি এ কাজের মাসীকে এড়িয়েই চলতো , আর ঐ মাসীও কেমন জানি দিদির ধারে কাছে ঘেষতো না | এভাবেই দিন যেতে লাগলো | তবে এর মধ্যে বাড়ীতে কতকগুলো পরিবর্তন লক্ষ্য করতে লাগলাম , যেমন , বকুল ভর্ত্তি আম গাছটার সব বকুল গুলো যেন কেমন রাতারাতি কালো হয়ে শুকিয়ে গেল , বাবার বড়আদরের ভুলো দেশি কুকুরটা হঠাৎ-ই একদিন রাতে দাপাদাপি করে কেমন বিভৎসভাবে জিভবার কারে উঠনের মাঝে মরে পড়ে রইল | সারাবাড়ীতে ইদানিং কেমন একটা আঁশটে গন্ধ যেন সব সময় নাকে বড্ড লাগে | বাবা বলে বাড়ীর পেছনের দিকের পুকুরে হয়তো খোল দিয়েছে তাই এমন আঁশটে গন্ধ বেড়ুচ্ছে। সারাটা দিন বড় বড় দাঁড়কাকের বিভৎস চিৎকারে অতিষ্ট্ হয়ে যাচ্ছি আমরা | আর সব থেকে বেশী যেটা মনে লাগতে শুরু করলো তা হলো ইদানিংকালে বাবা মায়ের মধ্যে তুমুল অশান্তি | আমরা এপর্যন্ত বড় হওয়া অবধি মা বাবার মধ্যে এমন অশান্তি হতে কোনো দিন দেখিনি | কেউ যেন কাউকে এক দম সহ্যই করতে পারছেনা | দিনদিন অশান্তির মাত্রা যেন বাড়তে ই লাগলো | অশান্তি বাড়তে বাড়তে একদিন এমন পর্যায় পৌঁছালো যে মা গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পরতে যাচ্ছিল , ভাগ্য ভালো দিদি এসে পরায় সে যাত্রায় তেমন বড় কিছু অঘটন ঘটে যায়নি | এখন বাড়ীতে আর একদম মনটেকে না , বাইরেই যেন ভালো থাকি | আজকাল রাতেও ভালো করে ঘুম হয় না | যদিবা ভোর রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়ি ভীষন ভয়ের স্বপ্নে চমকে উঠে যাই | একদিন সকাল নয়টা কি সাড়ে নয়টা হবে গেঁট দিয়ে বাড়ী ঢুকছি দেখি গেটের পাশে কলতলার বাঁধানো চাতালে মাসী নিজের মনে বেশ কিছু বাটা মাছ আঁশ ছাড়িয়ে ধোয়াধুয়ি করছে  ,ও মা! লক্ষ্য করলাম একটা কাঁচা গোটা মাছ টপাং করে মুখে পুরে কড়মড় কড়মড় করে চিবুতে লাগলো! আমিতো চিৎকার করে উঠলাম , মাসী আমার দিকে বড় বড় চোখ করে বল্লে কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবিনা , চুপ করে ঘরে চলে যা | ধমকের সুরে বল্লে ঘরে যা বলছি | আমি এক ছুটে ঘরে গিয়ে মাকে সব বললাম , মা তো হেসেই খুন , আমায় বললে আরও বেশী করে ফোনে ভূতের বই দ্যাখ , পাগল হবি এবার | আমার কথার কোনো গুরুত্বই দিলো না | দিদিকে বলেছিলাম | দিদি ঠাকুরের চরণামৃত মুখে ঢেলে দিয়ে বল্লো আজ শনিবার সন্ধ্যাবেলা আমার সঙ্গে একটু কালিবাড়ী যাবি | প্রায়দিন রাত্রে দেখি একটা ছায়া মূর্ত্তী যেন আমার জানলার কাছে দাঁড়িয়ে আমাকে বেশ রাগত ভাবে দেখে | আমি চোখ টিপে শুয়ে পড়ে থাকি | আমিজানি বাড়ীর কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবেনা | বাবা মা কারুরই এখন রাতে নাকি ভালো ঘুম হয়না | বাবা ঘুমের বড়ি খাওয়া শুরু করেছে ইদানিং | যে বাবা একদিনও অফিস কামাই করতো না সেই বাবা দিনের পর দিন অফিসে ছুটি নিয়ে বহুবেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে | একমাত্র দিদিকে দেখি তার কোনো পরিবর্তন নেই | সে আগেও যেমন ছিলো আজও সেই রকমই আছে , ভোরবেলা ওঠে , সকাল সন্ধ্যা ঠাকুর পূজো করে সারা বাড়ীতে গঙ্গা জলের ছিটা দেয় | নিজের পড়াশোনাও দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে | আর মা তো ঠাকুর ঘরের ধারে কাছে মাড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে | প্রায়দিন স্নান করেনা | গত সপ্তাহে রাত্রে বাবা বাথরুমে যাবার সময় যেই ঘর থেকে বাইরে পা বাড়িয়েছে বাবা হঠাৎ দেখে সামনে গ্রীলের কাছে কে যেন একজন দাঁড়িয়ে মাসীর সঙ্গে ইশারায় কথা বলছে তখন অনেক রাত , প্রায় রাত দুটো হবে | বাবা বারান্দার আলোটা জ্বালতেই সব উধাও , কেউ কোত্থাও নেই , বাবা মাকে বলতে মা সঙ্গে সঙ্গে সিঁড়ির নীচে মাসীর কাছে গিয়ে দেখে মাসী গভীর ঘুমে ডুবে | মা বাবা কে বলে ঘুমের ঘোরে তুমি কি দেখতে কি দেখেছো , বাবা ও চুপ করে যায় | তারপর প্রায় প্রতিদিন ভাত পুড়ে যেতে লাগলো | একদিন মা ও ভয় পেল | রাতে রান্না ঘরের সব কাজ সেরে তালা লাগিয়ে মা বারান্দা দিয়ে ঘরের দিকে আসছে হঠাৎ মা চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় | আমরা সবাই ছুটে গিয়ে মাকে ধরাধরি করে ঘরে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়ে চোখে মুখে জলের ছিটা দেবার পর মা আতঙ্কে চোখ খুলে বলে , মা ঘরের দিকে যখন আসছে তখন মা অনুভব করে একটা বরফের মত ঠাণ্ডাহাত মায়ের কাঁধে রেখে মা কে যেন কেউ পেছন দিকে টানছে , পেছন ফিরতেই মা দেখে , একবিভৎস মুখ , চোখের মনি বলতে কিচ্ছু নেই , টক টক করছে লাল আগুনের গোলা | কান্ পর্যন্ত হ্যাঁ করা লম্বা লম্বা দাঁতের মাঝখান থেকে লম্বা চেড়া চিভটা গলা পর্যন্ত ঝুলছে | সবাই আমরা বেশ ভয় পেয়ে যাই কিন্তু দিদিকে দেখি সে চট্ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে মাসীর চৌকীর কাছটায় যায় , | দিদি দেখে মাসী তখন একটা ঘটি করে ঢক ঢক করে জল খাচ্ছে আর কেমন জানি হাঁপাচ্ছে | দিদিকে দেখে চমকে উঠে বলে এখনো ঘুমওনি যাও শুয়ে পরগে | দিদি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে ঘরে চলে আসে | তারপর থেকেই মা এক প্রকার বিছানা নেয় | কেবলই মাথা ঘোরে, দিনদিন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে মা | গত শুক্র বার আমার স্কুল আরদিদির কলেজ ছুটি ছিল | দুপুর বেলা আমরা গ্রীল দেওয়া বারান্দায় বসে মায়ের ব্যাপারেই কথা বলছি | মা ঘরে বিছানায় শুয়ে , হঠাৎদেখি গেট খুলে বাবা ঢুকছে | বাবাকে দেখে আমরা তো অবাক , দিদি বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো কি হলো বাবা তুমি অফিস থেকে চলে এলে ! বাবা বল্লো শরীরটা ভালো লাগছে না তাই বাড়ী চলে এলাম | বাবা হাত মুখ  ধুয়ে ঘরে ঢুকে গেল , এমন সময় হঠাৎ গেটের কাছে চেঁচামেচি | কী ব্যাপার , দেখি কাজের মাসীর গলার আওয়াজ , মাসী ওখানে গেল কখন ! দৌড়ে গেটের কাছে গিয়ে দেখি , এক সন্ন্যাসী গোছের লোক কাজের মাসীকে বলছে , শয়তানী এখানে ডেরা বেঁধেছিস ? এবার এদের ক্ষতি করতে এসেছিস? ভালো চাস তো দূর হয়ে যা এখান থেকে | না হলে তোর যে কি হাল করবো আমি , মার্সী ও চেঁচিয়ে বলছে তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবিনা , আমি তোর কথায় কিছুতেই যাবোনা | আমি বারণ করছি তুই এই বাড়ীতে পা রাখবি না | আমাকে এখন এখানে থাকতে দে | আমার কাজ শেষ হলেই আমি চলে যাবো | তোর কাজ শেষ মানে তো তুই এদের মেরে তবে এখান থেকে যাবি | কে তোকে এখানে পাঠিয়েছে বল বলছি | সন্ন্যাসী জিজ্ঞাসা করে | মাসীও চিৎকার করে বলে ওঠে ,না তোকে আমি কিছুই বলবো না | সেশুনে তোর কাজ কি? যা চলে যা এখান থেকে | আমি এক দৌড়ে বাবাকে ডেকে আনি , বাবাকে দেখে মাসীর সেকি চেল্লানি , একে এখান থেকে দুর করে দিন দাদা বাবু , এ একটা ভন্ড সন্ন্যাসী | সন্ন্যাসী তখন মুচকী মুচকী হেসে বলল আমি স্টেশনের ধাপিতে বসে ছিলাম  , চোখে পড়ল তুই ট্ৰেন থেকে নামলি আর তখনই আমি লক্ষ্য করলাম তোকে একটা ভয়ঙ্কর অশুভ কালো ছায়া ঘিরে আছে , আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তোর উপর প্ৰেত ভর করেছে , বিরাট কিছু ক্ষতি হতে চলেছে তোর , তাই তোর পথ ধরলাম বাবা ভোলে নাথের নাম নিয়ে , এখানে এসে দেখি ঠিক তাই | তোর বাড়ীটাকে কালো পিশাচ ঘিরে ফেলেছে | আর এই শকুনী পিশাচিনি তোর বাড়ীতে ডেরা গেঁড়েছে | একে এখানে কেউ পাঠিয়েছে তোদের চরম ক্ষতি করতে | এই বলেই সন্ন্যাসী তার ঝোলা থেকে এক মুঠো গুঁড়ো গুঁড়ো কি যেন ছুঁড়ে মারলো মাসীর গায়ে আর সাথে সাথে মাসী দৌড়ে পালাতে গিয়েও পালাতে পারলো না হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল | তার পর সন্ন্যাসী বাবাকে বল্লে , বেটা তোর বাড়ী থেকে এই কালো ছায়া দূর করতেই হবে না হলে তোদের সর্বনাস হয়ে যাবে | বাবা তখন সন্ন্যাসীকে হাত জোড় করে বল্লে , ঠাকুর আপনি উপায় বলুন ঠাকুর | সন্ন্যাসী তখন তার হাতের আঁকা বাঁকা লাঠিটা দিয়ে মাসীকে দু তিনটে ঘা দিলো লাঠির ঘা খেয়েই মাসী ক্ষণা গলায় বলে উঠলো আমি আজ চলে যাচ্ছি বটে তবে তুই এদের কতক্ষন বাঁচাতে পারবি আমি যখন একবার এবাড়ীতে ঢুকতে পেরেছি আমাকে যে পাঠিয়েছে তার কথায় আমি এদের ছাড়বোনা | আমি তার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ | পিশাচের প্রতিজ্ঞা জানিস তো? সন্ন্যাসী তার লাঠি টা বাগিয়ে তেড়ে যেতেই হুস করে হাওয়ায় যেন মিলিয়ে গেল জলজ্যান্তো মানুষটা | বাবা সন্ন্যাসী ঠাকুরের পায়ে আছড়ে পড়লো , কেঁদে বললে বাবা আমায় রক্ষা করুন বাবা কে আমার এমন ক্ষতি চায়বাবা | সন্ন্যাসী ঠাকুর মুচকী হেসে বল্লে ক্ষতি চাওয়ার লোকের কি অভাব আছেরে এ দুনিয়ায় , মানুষ মানুষের সুখ সহ্য করতে পারেনা তাই হিংসায়, আগুন নিয়ে খেলা করে , এইযে আজ আমি আর ওকে তোদের ক্ষতি করতে দোবোনা তাতে ও কিন্তু ভয়ানক রেগে উঠবে আর কোনো উপায় না পেয়ে যার হয়ে ও কাজ করতে এসেছিলো তারই ক্ষতি করে দেবে | বাবা কাঁদো কাঁদো ভাবে বল্লে ওযে আবার আসবে বলে গেল  , সন্ন্যাসী হেসে ঠান্ডা গলায় বল্লো তোর ভয় নেই বেটা , বাবা ভোলে নাথ যখন কৃপা করেছে তোর ভয় কিরে বেটা ? তোর ঘরে এই সুলক্ষ্মনা মা যে আছে , দিদিকে দেখিয়ে সন্ন্যাসী বলে চললো এর উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ আছে , আর তাই তোদের কোনো ক্ষতি এখনো করতে পারিনি | ও অপেক্ষা করছিলো এই কন্যার গোত্রান্তর হবার  , তাহলেই তোদের বাকীদের শেষ করে দিত | বাবা বল্লো গোত্রান্তর মানে বিয়ে হলেতো মায়ের আমার গোত্রান্তর হতো তাইনা বাবা ? সন্ন্যাসী ঠাকুর মুচকী হেসে ঘাড় নাড়লো | আর দেরী করা যাবে না আজকের মত ওকে ঠেকিয়ে দিয়েছি | আজ অমাবস্যা আজ সন্ধ্যা বেলাই আমি তোর উঠানে যজ্ঞ করবো , তুই শুধু চার কিলো বেলকাঠ এক কেজি সরিষা  পাঁচশো ধূনো আর এক কেজি ঘি নিয়ে আসবি সন্ধ্যার মধ্যে আর হ্যাঁ খরচের জন্য ভাববিনা আমার কোনো টাকা পয়সা লাগবে না তুই খুশি মনে ষোলো আনা দক্ষিণা দিলেই আমার হবে , এ আমার গুরুর আদেশ বলতে পারিস | বাকী যা যা লাগবে আমার সাথেই আছে | যা আর দেরী করিসনা | আমি যথা সময়ে উপস্থিত হয়ে যাবো | সন্ন্যাসী ঠাকুর কোথায় চলে গেল | বাবাও সন্ধ্যার মধ্যে ঐ সব জিনিষ জোগাড় করে এনে রাখলো | তখন রাত আটটা হবে , সন্ন্যাসী ঠাকুর চারখানা বড় বড় কলা পাতা নিয়ে বাড়ীর গেটে আওয়াজ দিলেন জয় মা তারা বোম শঙ্কর | আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম | সন্ন্যাসী ঠাকুর বললেন  , তোর আনা জিনিষগুলো দিয়ে তোরা ঘরে যা , রাতের খাবার খেয়েনে | আমি আমার কাজ শেষে তোদের ডেকে নেব | রাত তখন প্রায় দশটা হবে সন্ন্যাসী ঠাকুর আমাদের সবাইকে ডাকলেন | দেখলাম একটা কলাপাতা পেতে তার উপর যজ্ঞের কাঠ সাজিয়ে পাশে কলা পাতা বিছিয়ে তাতে অনেক দ্ৰব্যাদি শেকড় বাকড় রেখেছেন আর রেখেছেন একটা মানুষের মাথার খুলি | আমাদের সকলকে পূর্বমুখ করে মাটিতে বসে যেতে বললেন | আমরা বসতেই তিনি কিছুটা জল মন্ত্র পূত করে আমাদের গায়ে ছিঁটিয়ে দিয়ে বললেন কোনো অবস্থাতেই ভয় পাবে না  , আমি যজ্ঞ শুরু করছি | বলেই যজ্ঞ কুণ্ডে অগ্নিসংযোগ করলেন , ঘিয়ের ছিঁটায় দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগলো যজ্ঞের কাঠ সঙ্গে চলতে লাগলো মন্ত্রপাঠ | বহুক্ষন মন্ত্র পাঠের পর রাতপ্রায় শেষ হয়ে আসছে  , আম গাছের মাথাটা অসম্ভব ভাবে দোল খেতে লাগলো | যেন অত মোটা আম গাছটাই উপড়ে পড়ে যাবে | সন্ন্যাসী ঠাকুরের কোনো দিকে তখন লক্ষ্য নেই তিনি আপন মনে মন্ত্রপাঠ করছেন আর যজ্ঞে ঘৃতাহুতী দিচ্ছেন | হঠাৎ কোথা থেকে একটা কাক ছটফট ছটফট করতে করতে এসে সোজা যজ্ঞের আগুনে পড়লো আর সঙ্গে সঙ্গে একটা মোটা আম ডাল মড় মড় করে ভেঙে পড়লো | তক্ষুনি সন্ন্যাসী ঠাকুর বেশ খানিকটা ঘি যজ্ঞের আগুনে ঢেলে দিয়ে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালেন | তারপর বললেন এ বাড়ী পাপ মুক্ত হলো | যজ্ঞ কুণ্ড নিভিয়ে সন্ন্যাসী ঠাকুর বল্লেন  , শোনো মা , শয়তানির যে সমস্ত জিনিষ আছে সব যেগুলো জ্বালানো সম্ভব জ্বালিয়ে দেবে আর যেগুলো জ্বালানো সম্ভবনয় সেগুলোকে জলে ভাসিয়ে দেবে | আমার কাজ শেষ , এবার আমি চলি | বাবা সন্ন্যাসীঠাকুরের পায়ের উপর পড়লো , ঠাকুর এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাবেন আপনি ? একটু আপনাকে সেবা করার সুযোগ দিন বাবা   , মা র্কেঁদে বল্লে | সন্ন্যাসী ঠাকুর প্রসন্ন হাসি হেসে বল্লে তা হয় না মা , আমরা সাধক মানুষ , পথে পথেই আমাদের জীবন যতদিন মাতারা চাইবেন – ভোলানাথ চাইবেন আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে | বাবা জিজ্ঞাসা করলো আপনার নাম কি বাবা ? সন্ন্যাসী হেসে বল্লে , ওরে , বাবা মায়ের দেওয়া একটা নাম আমার এক সময় ছিলো ভবতারণ মুখার্জী তবে ঐ নামে এখন কেউ আর আমায় ডাকেনা সবার কাছে এখন আমি ভবা তান্ত্রিক | যাক তোদের মঙ্গল হোক | বলেই সন্ন্যাসী বাবা পথে বেড়িয়ে পড়লেন , এমন সময় বাবার মোবাইলে একটা ফোন এলো , আমার কাকার ছেলের ফোন | কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে ফোন করে জানালো গতকাল সন্ধ্যা বেলা থেকে বাবার ভীষন রক্ত বমি হতে থাকে আজ ভোর বেলা বাবা মারা গেছে তোমরা গ্রামের বাড়ী যত তাড়াতাড়ি পারো এসো | বাবা পাথরের মত গ্রীলটা ধরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো নেপাল আমার ভাই নেপু আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো স্বরমা | ! অনেক বছর হয়ে গেল এখন আবার সব কিছু আগের মত  , দিদির  বিয়ে হয়ে গেছে , একটা ফুটফুটে ভাগ্না আছে আমার খুব আদরের আর বাবা মায়ের সেই মিল যা বহু মানুষের ঈর্ষার ” | |

  • রঞ্জন ভট্টাচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *