দ্য গেইম 

“দুলাভাই, আসেন এক দান দাবা হয়ে যাক। গরম গরম কফি খেতে খেতে। নেন, কাপটা ধরেন।”
“উমম, কফিতো জোশ বানাইছো। আচ্ছা চলো খেলা যাক। কি নিবা? সাদা না কালো?”
“কালো।”
“কালো কেন? সবাই তো সাদা খোঁজে!”
“আমার আবার এক পা পেছন থেকে শুরু করতে ভাল লাগে।
“তাই! কেন?”
“ওপাশের জনের শুরুর স্টেপটা দেখতে ভালো লাগে।”
“কিন্তু সবসময় তো শুরুর স্টেপে ধরা যায় না কে কোন প্লানে আগাবে।”
“তা যায় না। কিন্তু ওই যে, আমার ভাল লাগে।”
“আচ্ছা! ব্যক্তিগত ভালো লাগা বলে কথা। সে যাক। চল শুরু করি। নাও, তোমার কালো আর এই আমার সাদা। এই, ভালো কথা, তোমার বোন কই? সন্ধ্যা থেকে খবর নাই। বাইরে থেকে আসে নাই এখনো?”
“আপনার বৌ এর খবর আমি রাখবো না নিজে রাখবেন? আইসা পড়বে। কল দিছিলাম।”
“তোমার বোনরে নিয়া টেনশনে আছি বুঝলা। দুই মাস হলো তোমাদের বাবা মারা গেলেন। এখনো নর্মাল হতে পারলো না ঠিকমতো তোমার বোন।”
“সময় তো লাগবে দুলাভাই। ঠিক হয়ে যাবে। টেনশন নিয়েন না। চলেন শুরু করি।”
“ওকে।”
“কিন্তু দুলাভাই, কথা আছে একটা।”
“কি কথা?”
“হোক এইটা নিজেদের মাঝে খেলা, কোন আনুষ্ঠানিকতা নাই, তারপরেও খেলাটা হবে টাচ এন্ড মুভ। যেইটা টাচ করবেন সেইটাই মুভ করতে হবে। আর সেইটাই মুভ করবেন আর নো রিটার্ন মুভ। চাল দিয়ে দিলে আর ফেরত নাই।”
“এত কড়া নিয়ম? আচ্ছা যাও। তাই হোক।”
“দুলাভাই, আপনার প্রথম চালেই কিন্তু বুঝে গেছি কোন মাইন্ডেসেটে আছেন।”
“হাহা, বললেই হলো? ওপেনিংয়ে কোনদিনও ধরতে পারবা না কে কোন মাইন্ডসেটে আছে। সম্ভবই না। মিডলগেইমে গিয়া যদি কিছু আন্দাজ করা যায় আর কি খেলা কোনদিকে গড়াচ্ছে। তার আগে ভুলেও না।”
“তাই নাকি?”
“তা আর বলতে! তুমি অযথাই ভাব নিলা একটা প্রথম চালের পর বুঝলা। জানি তো আমি।”
“আচ্ছা, খেলাটা আগাক তাহলে।”
“খেলা তো গুটায়ে নিয়ে আসতেছি শালা সাহেব। মাত্র সাত আট মিনিটেই হেরে যাইতেছো?”
“শেষ তো হয় নাই। গুটানো তো বহুদূরের কথা দুলাভাই।”
“দুইটা পাওয়ার পিসেস শর্টে আছো। ঘোড়া নাই একটাও, হাতি একটা আটকা পইড়া আছে সৈন্যের চিপায়। সৈন্য যে কয়টা আছে একটাও পজিশনে নাই। নির্ঘাত হারবা শালাবাবু।”
“কুইন আছে তো। মন্ত্রী দ্য গ্রেইট। আপনি তো জানেন মন্ত্রী দিয়ে কেমন খেলি আমি।”
“সাপোর্ট তো লাগবে! একলা মন্ত্রী কি করবে? আমারটা তো পুরাই পজিশনে আছে। তুমি তো শেষ ভায়া।”
“দেখাই যাক।”
“এই তোহ! এই তো খেললা ভুল! তোমার কুইন তো খায়া দিলাম। হাহাহা! এইবার? তোমার থেকে এত বড় ভুল আশা করি নাই। তো, গেম রিজাইন করবা না খেলা চলবে?”
“চলুক না।”
“এইই… এই চালটা আসলে দিতে চাই নাই বুঝলা। ভুলে গুটিতে হাতের টাচ লেগে গেছে।”
“উহুম দুলাভাই। তা হবে না। টাচ এন্ড মুভ। রিমেম্বার?”
“হু! এটা মুভ করা মানে আমার কুইনও আটকা পড়া। ঘরই আছে দুইটা। টাচ এন্ড মুভই? দিতেই হবে?”
“ইয়াপ। দিতেই হবে দুলাভাই।”
“আচ্ছা! কি আর করা। এই দাঁড়াও, কলটা ধরে নেই। তোমার বোনের কল।”
“কি ব্যাপার দুলাভাই। মুখ হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো কেন?”
“তো… তো…তোমার বোনকে নাকি কারা ধরে রেখেছে! গলায় ছুরি ঠেকিয়ে…!”
“বলেন কি? কি চায় ওরা?”
“ ……..”
“চুপ করে আছেন কেন দুলাভাই? কি চায় ওরা? আপাকে ধরে রাখছে কেন?”
“ওরা মেরে ফেলবে ওকে যদি আমি স্বীকার করে না নেই…!”
“স্বীকার? কি স্বীকার করে নেবেন?”
“ওরা তোমার বোনের গলা কেটে ফেলবে যদি আমি স্বীকার না করি যে… তোমাদের বাবাকে… আমিই মেরেছি!”
“ওহ। এই কথা। তো? স্বীকার করে নিবেন না? মানে, নিজের বৌকে বাঁচাবেন না? এখনো তো ওর থেকে ওর স্বাক্ষর নেয়া হয়নি আপনার। সব সম্পত্তি আর জায়গাজমি নিজের নামে করে নেবার যে উইল তৈরী করেছেন সেটা তো খালিই পড়ে থাকবে। সাইন করবে কে তখন যদি বোনই বেঁচে না থাকে?”
“মা…মানে? তুমি? তুমি জানো? সব জানো? তু…তুমিই করছো এসব?”
“জানবো না কেন? আর ভুলে যাচ্ছেন কেন, এখন তো আপনার চাল। আপনার চালের পরই আমি চাল দেয়া শুরু করেছি। আর এখন আপনি মন্ত্রী টাচ করেছেন। আপনার বৌ হলো আপনার কুইন। টাচ এন্ড মুভ, খাওয়া গেলে খাওয়া, কিছু করার নেই।”
“তুমি? নিজের বোনকে মেরে ফেলতে পারবে?”
“নিজের বোন যদি তুখোড় চাল চেলে নিজের বাবাকে মেরে ফেলে সব কিছু নিজের নামে করে নিতে পারে আর নিজের বোন-জামাই যদি সেই বোনের আড়ালে থেকে ক্যাসলিং করে নিরাপদে থেকে গিয়ে সব কিছু নিজের নামে করে নেবার ছক কষতে থাকে তখন তো এই দুই ঝানু খেলোয়াড়ের বিরূদ্ধে আমারো খেলায় নামতেই হয়। কি বলেন?”
“তো, আমার এই খেলা শেষ করতে হবে?”
“চাল আপনার। আপনার কুইন মরতে যাচ্ছে। ওহ বাই দা ওয়ে, আমি বহুক্ষণ আগেই আমার কুইনটা অবশ্য স্যাক্রিফাইজ করে দিয়েছিলাম ইচ্ছে করেই। না মানে, দু’জনের কুইনই একই মহিলা ছিলো কি না। অবশ্য আমার বোন আপনার চেয়েও ভালো খেলতে পারতো, কিন্তু এবার ভুল চালে ফেঁসে গেলো। ওকে যখন আমার মন থেকে মৃত ধরে নিয়েছি ঠিক তখনই তো আমার কুইন ডেড। তোহ? আপনার চাল। আপনার কুইন খাওয়া যাবার ঠিক তিন চালের মাথায় আপনি আটকে যাবেন। হয় কুইন স্যাক্রিফাইজ করে চেকমেট হবেন, না হয় আগেই খেলা ছেড়ে দিতে পারেন, রিজাইন করে নেন। আর এই কাগজটায় ছোট্ট একটা অ্যাডভান্স সাইন করে দেন। সাইন করতে দশ সেকেন্ডের বেশি দেরী হলে আপনার স্ত্রী শেষ! টাইম ইজ ওয়ে টু শর্ট দুলাভাই!”
“করছি। দাও।”
“সেকি! না পড়েই সাইন করে দিলেন? বাহ! বৌকে খুব ভালোবাসেন দেখি? আচ্ছা আমিই পড়ি। এটায় লেখা আছে… আমার বোন সব আপনাকে লিখে দিয়েছে, আর তারপর আপনি সবকিছু আমাকে লিখে দিচ্ছেন। অ্যাডভান্স বোনের কপি সাইন নিয়ে রেখে ঘোড়ার আড়াই ঘরের চালটা দিয়ে রেখেছিলাম আগেই। আর, এখন দুজনই মারা যাওয়ায় সব কিছু এখন, শুধুই আমার।
“দু’জনই মারা যাওয়ায়? মারা যাওয়ায় মা…মা…ম্মা…!”
“সে কি দুলাভাই! শেষ কথাটা শেষ না করেই মরে গেলেন? যাহ শালার…! কফিতে মেশানো পয়জনটা এত ফাস্ট কাজ করবে ভাবিনি! আপনার বৌ-তো আপনি কল রিসিভ করার পরপরই ওপারে, এখন আপনিও চলে গেলেন ওপারে! শেষ চালটা বাকিই রয়ে গেলো দুলাভাই। আপনাদের দুইজনকে দুনিয়ার লোকচক্ষুর অন্তরালে পুরোপুরি অদৃশ্য করে দেয়ার সমস্ত স্টেপ রেডী আছে। এখন একটা চেক হবে। পরের চালে যা-ই দেন না কেন… ওই চেক এরপরের চালে? ইট উইল বি আ… চেকমেইট!”

  • সাজ্জাদ সিয়াম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *