তাঁর চোখে আমার সর্বনাশ [পর্ব-০৬]

পৃথিবীর সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে, আগামী পরশু পুষ্পিতার বিয়ে। হুট করে পুষ্পের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে প্রথমে আমরা বেশ হতচকিত হয়েছিলাম। তাও নাকি পারিবারিক না,সোজা প্রেমের বিয়ে!  গত চার মাস ধরে প্রেম,তারপর বছর না ঘুরতেই বিয়ে! পুষ্পের জীবনে এটাই প্রথম প্রেম। অথচ এর আগে কখোনো প্রেম না করেও শতো শতো পুরুষকে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা দিয়ে বিয়ের পিরীতে বসতে যাচ্ছে পুষ্প! ছেলে হলে আমিও হয়তো অনেকটা দুঃখ পেতাম! সুদর্শন পুরুষদের বিয়ে মানুষ যত সহজে মেনে নিতে পারে,সুন্দরী নারীদের বেলায় ঠিক তার উল্টো। ওর বিয়ে নিয়ে বন্ধুমহলে রীতিমতো আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সকলের একই প্রশ্ন “হাউ ইজ দ্যাট পসিবল পুষ্প?”

পুষ্প আমাদের ব্যাচের সবচেয়ে সুন্দরী রমনী। ইউনিভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই পুষ্পকে নিয়ে সিনিয়র, জুনিয়র সকল ব্যাচের ছেলেদের আগ্রহ ছিল চোখে পরার মতোন। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়া এই মেয়েকে কখনো কোনোকিছু নিয়ে মাতামাতি করতে দেখা যায়নি। অভ্র ছাড়া পুষ্প কোনো ছেলেকেই তেমন পছন্দ করতোনা। বন্ধুমহলের মধ্যেও দু,একজন পুষ্পকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। তার মধ্যে সিফাত ছিল সবচাইতে লয়াল। বেচারা নিজের গার্লফ্রেন্ড থাকার সত্বেও প্রেমবিহীন এই অদৃশ্য বিচ্ছেদ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। লোকলজ্জার ভয়ে ঠিক মতো সেটা প্রকাশও করতে পারছেনা।

বিয়েটা খুব বেশি ধুমধাম করে না হলেও পুষ্পের আব্বু,আম্মু আমাদের সব ফ্রেন্ডস দেরই দাওয়াত করেছে। হঠাৎ বিয়ের দাওয়াতে সবাই অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিলাম। পুষ্পের হবু বর কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকা ব্যাক করছে, যার কারনেই এতো তারাহুরোর মধ্যেই সবকিছু করতে হয়েছে আঙ্কেল,আন্টিকে। পুষ্পের অনার্স শেষ হওয়ার পরেই নাকি আয়োজন করে আবার অনুষ্টান করবেন। তার আগ পর্যন্ত পুষ্প বাপের বাড়িতেই থাকবে।  এতো কম সময়ের মধ্যে আমরা ফ্রেন্ডস রা তেমন কোনো প্রিপারেশনই নিতে পারিনি। তারাহুরোর মধ্যেই যা কেনাকাটা করার করেছি। বিয়েটা সিলেটে পুষ্পের দাদার বাড়িতেই হতে যাচ্ছে। এই নিয়ে এক এক জন ব্যাপক উত্তেজিত। প্রথম দিকে কারোরই আগ্রহ ছিলনা এমন সাদামাটা বিয়েতে এটেন্ড করার। কিন্তু,  সিলেটের নাম শোনামাত্রই এই সাদামাটা বিয়েটাও সকলের চোখে লাল,নীল দেখালো। বেচারা সিফাতও বিচ্ছেদের দুঃখ ভুলে নাচতে নাচতে ব্যাগ প্যাক করা শুরু করে দিল।

আমাদের ঢাকা টু সিলেট ট্রেইনের যাত্রা সময় আজ দুপুর ২:৫৫ মিনিট।

সবাইকে ২:২০ এর মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত থাকতে বলে দিয়েছে অভ্র। আমরা সকলেই সময়মত পৌঁছে যাই। বন্ধুমহলের সকলকে নিয়ে এটাই আমাদের প্রথম ভ্রমন। তাই সকলের চোখে মুখেই এই নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। আমরা সবাই সঠিক সময়ে স্টেশনে পৌঁছালেও, সিফাতকে  তখনো আসতে দেখা গেলোনা । অভ্র কিছুক্ষণ পরপর ফোন করছে ওকে,রিং হলেও অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ হচ্ছেনা।

 ২:৪০ বাজতে চললো,সিফাত এলোনা।  মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে আমরা সকলেই এবার উদ্বিগ্ন হয়ে পরলাম। সিফাত না এলে আমরা আদোও সিলেটে যাচ্ছি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। আর অল্প কিছুক্ষণ সময় আছে, তার মধ্যে সিফাত না এলে আমরাও সিলেটে যাচ্ছিনা বলেই সিদ্ধান্ত নিলাম। সকলের মনের মধ্যে বিরাজ করা টান টান উত্তেজনা, যেনো মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পরতে লাগলো। আমরা হতাশ মুখে দাঁড়িয়ে রইলাম। এতো কাঠখড় পুড়িয়ে বাসা থেকে পারমিশন নেয়ার পর যদি না যেতে পারি,এর চেয়ে দুঃখের আর কিছুই হতে পারেনা!

-গাইজ, আর ইউ এক্সাইটেড?? 

হঠাৎ কারোর উচ্চস্বরে আমরা পেছন ফিরে তাকালাম। হাটু ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে দাঁত কেলিয়ে হাসার চেষ্টা করে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি বললো-

-কিরে তোদের মধ্যে কোনো এক্সাইটমেন্ট নাই কেন? বুঝলামনা এমনে তাকাই আছোস কেন? সুন্দর লাগতেছে আমাকে? আসার সময় শুধু ফেয়ার এন্ড লাভলী দিসিলাম বিশ্বাস কর।

ওর কথা শেষ না হতেই জাহিদ হাতের বোতল টা ছুরে মারলো সিফাতের গায়ে। তারপর পায়ের জুতা খুলতে খুলতে বললো-

-তোর এক্সাইটমেন্টের অমলেট বানা তুই! তোর খবর আছে শা*লা খারা কইতাছি।

সিফাত দিক দিশা ভুলে জাহিদের দুবাই থেকে আগত জুতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে দু একবার ওর গায়ে লেগেও যায়। জাহিদ পুনরায় জুতা তুলে আবার ওর পিছনে দৌড়াতে থাকে। শেষমেশ দৌড়ে না পেরে আমার পেছনে এসে লুকালো।

-মিতু, বইন আমারে বাঁচা প্লিজ! শালার উপরে পাগলা কুত্তার আত্না ভর করছে, যেকোনো সময় দিব কামড়। এই যুবক বয়সে কুত্তা’র কামড়ের ইনজেকশন নেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নাই!

কথাটা শোনামাত্রই জাহিদ আবার তেরে আসলো।

পুরো স্টেশন দৌড়াতে দৌড়াতে দু’জনেই এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে হাঁটু ধরে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। তারপর দুঃখী দুঃখী মুখ করে সিফাত বললো-

-দোস্ত বিশ্বাস কর আমার কোনো দোষ নাই। আমি ঠিক টাইমেই বাসা থেইকা বাইর হইছি। রাস্তায় এতো জ্যাম, মামা! 

-ঢাকা শহরের জ্যাম শুধু তোরেই পাইছে শালা? আমরা আসিনাই? বাইর হওয়ার আগে তোমার মৌনি নিব্বি রে কনভেন্স করতেই তো এক ঘন্টা লাগাইছো নিশ্চয়ই। 

সিফাত হতচকিত হওয়ার ভান করে ভাব নিয়ে বললো-

-ছ্যাহ্! আমারে এতো ল্যাইম মনে করস তোরা? শেষমেশ  ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া প্রেমিকার থেইকা পারমিশন নেওয়া লাগবো আমার? এতো খারাপ দিনও আসেনাই( শার্টের কলার ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে) 

রুম্পা বিরক্তি নিয়ে বললো-

-চুপ থাক তুই! একেতো লেইট আসছোস, তার উপর চাপা মারতে এতোটুকুও কার্পণ্য হচ্ছেনা। তোর কোনো আইডিয়া আছে আমরা কতো টেনশনে ছিলাম?

সিফাত টলমলে চোখে বললো-

-হাউউ সুইটট,রুম্পা! তোরা আমারে এতো ভালোবাসোস!(চোখের পানি মোছার ন্যায় নাটক করে) এদিকে আয় তোরে একটা চুমা দেই দোস্ত! তোর টেনশন একটু রিলিজ করা দরকার এখন।

বলেই রুম্পার কাছে আসতে নিতেই রুম্পা ওর হাতের পানির বোতল টা ওর দিকে ছুঁড়ে মেরে পেছাতে পেছাতে বলতে লাগলো-

-ওই হারামি দুরে থাক,কিরে তোরা ওরে আটকা একটু!এই অভ্র, ভাই বাঁচা এই মহিষের হাত থেইকা!

ট্রেন চলছে…

 বিকাল প্রায় পাঁচ টা বাজতে চললো । ট্রেনের বাইরে এখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরতে দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের সিটগুলো পাশাপাশি বুক করেছি বলে সকলের দূরত্ব একে অপরের থেকে খুব বেশি না। এই সুন্দর ওয়েদার, সুন্দর দিনটাকে আরো উপভোগ্য করে তোলার জন্য আমরা সকলে মিলে গান গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি ট্রেনের জানালাগুলো খুলে দিলাম। 

প্রথমে সিফাত শুরু করলো। তারপর,দু-এক লাইন গাওয়ার পরে আমরাও সুর মেলালাম।

” দুঃখটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে

এক পৃথিবী ভালোবাসা রয়েছে ঘিরে 

মনটা যেনো আজ পাখির ডানা 

হারিয়ে যেতে তাই নেই তো মানা

চুপি,চুপি,চুপি স্বপ্নটাকে হাত বারিয়ে…

হেএএএএই

মন চায়, মন চায় যেখানে চোখ যায়

সেখানে যাবোওও হারিয়ে…..” 

গানের তালে তালে হেলেদুলে অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ হাত তালি দিচ্ছে,কেউবা মুখ দিয়েই শিশ বাজানোর ন্যায় বাশির সুর তুলতে লাগলো। আমাদের বগীর সব যাত্রীরাই ততখনে আমাদের সাথে সুর মিলিয়ে গাইতে শুরু করলো। ছোট ছোট বাচ্চারা কেবিন থেকে উঠে হাত পা নাড়িয়ে নাচতে শুরু করলো। কিছু মধ্যবয়স্ক লোকদের আমরা উঠে নিজেদের সাথে বসার জন্য যায়গা করে দিলাম এতো আকর্ষণীয় দিন আমার জীবনে এটাই প্রথম! আমার মনে হলো, এই পথ আজ শেষ না হলেই বোধহয় ভালো হয়! এই মুহূর্তের,এই যাত্রার সমাপ্তি না ঘটুক আজ!

-দোস্ত আমার না কেমন কেমন লাগতেছে মামা। বুকটায় একটু হাত দিয়া দেখ ,অভ্র। মনে হইতাসে কেউ হাতুড়ি আর ইট নিয়া বুকের মধ্যে বাইরাবাইরি করতাসে!

কারোর কাছ থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে পূনরায়-

-কেমনে পারলো পুষ্প এইটা করতে!!! আমার মধ্যে কোনো কমতি আছে? তোরাই ক?

সিফাতের কথায় যেনো আমরা আকাশ থেকে পরলাম। জাহিদ সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ক্যামেরা অন করে সিফাতের দিকে তাক করে বললো-

-বন্ধু যে-ই বিরহ গান একটু আগে শুনাইলা?ওইটা একটু রিপিট করো প্লিজ। আমরা চাইনা তোমার অস্কার ডিজার্ভ করা গান মৌনি কোনোভাবে মিস করুক।

 রুম্পা বিজ্ঞের ন্যায় বললো-

-এই তুই এতো হিপোক্রিয়েট কবে থেকে হলি রে? সিলেটের নাম শুনে গতকাল রাত থেকে সবার চেয়ে বেশি তো তুইই লাফালি। ইভেন, আমরা তিনটা মেয়ে যতগুলা না জামাকাপড় নিয়েছি তার চেয়ে বেশি নিয়েছিস তুই। এখনো তোর ব্যাগ ঘাটলে আগামী এক মাসের শার্ট প্যান্ট পাওয়া যাবে । তোর আনন্দ দেখে আমাদের তো মনে  হয়েছিলো বিয়েটা পুষ্পিতার না, তোর। এর মধ্যেই তোর কি হইলো আবার?

সিফাত অভিমানী মুখ করে বললো-

– এই তোরা এতো নিষ্ঠুর কেন? কই কষ্ট পাইতেছি, গলায় গলায় ধইয়া শান্তনা দিবি, তা না! 

পূনরায়-

-আমার মতোন একটা ভালা মানুষরে বন্ধু হিসেবে পাইয়া, তগো দৈনিক কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া উচিৎ…..

 কথা শেষ হওয়ার আগেই সিফাতের গালে সিঙ্গাম মার্কা একটা চর বসে গেলো । সিফাত বিস্মিত নয়নে, গালে হাত দিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আমরাও একইভাবে বিস্ময় নিয়ে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইলাম! কিন্তু মেঘা একটুও বিস্মিত হলো না। ও হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পরার ন্যায় বললো-

-পার্ফেক্ট!

ওর কথায় সিফাত আরো কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো-

-ওই যা আমি খেলুমই না তগো লগে! সর

বলেই কেবিন থেকে উঠে যেতে নিতেই অভ্র ওর শার্টে ধরে হেচকা টান মেরে আবার বসিয়ে দিল। তারপর একটা কোল্ড ড্রিংকস এর বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো-

-পাঁচ মিনিট মুখ টা অফ রাখ।

সিফাত খুশি হয়ে টলমলে চোখে তাকিয়ে,  বোতলের মুখ টা  খুলতে খুলতে  বললো-

-হাউ সুইট অভ্র! তুই এতো ভালো কেন? 

আমি আর রুম্পা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম। পৃথিবীর সকল অদ্ভুত প্রানী দের মধ্যে সিফাত কে শ্রেষ্ঠ উপাধি দিতে আমাদের আর গবেষণা করতে হলোনা।

খাওয়াদাওয়া,হাসি,আড্ডায় কখন যে সন্ধা নেমে এলো টেরই পেলামনা। আনন্দে অতিবাহিত করা সময়গুলো হয়তো এমন-ই হয়। এই মুহূর্তটাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তগুলোর একটি বলে মনে হচ্ছে। মনে মনে চাইতে লাগলাম আজকের এই দিন, এই মুহূর্ত সময়ের একটা নির্দিষ্ট কাটায় আটকে যাক,তারপর নষ্ট হয়ে যাক সে-ই নব্বই দশকের দেয়ালঘড়ি! হয়ে যাক কিছু অনিয়ম! কিন্তু তা কি আদোও হতে পারে?পারে না।প্রকৃতি কি এই অনিয়ম করতে প্রস্তুত? কোনোভাবেই না। প্রকৃতি কখনো নির্দিষ্ট কারোর প্রয়োজনে নিজের নিয়মের উর্ধ্বে যেতে রাজি নয়। তা-ই আমাদেরই প্রকৃতি আর পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয়। প্রকৃতি কখনোই আমাদের সাথে মানিয়ে নেবেনা। নির্দিষ্ট কোনো ভালো লাগা ঋতু যেমন বারোমাস থেমে থাকেনা, পরিস্থিতি, মানুষ, মুহুর্তও তেমনই! আজকের এই দিন এই মুহূর্ত হয়তো আর কখোনোই ফিরে আসবেনা! এই নিদারুণ, নিষ্ঠুর সত্যটাই আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়!

রাত প্রায় ৯ টা 

নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো যানবাহনে চলাকালীন সময়ে আমার ঘুমাতে হবেই। সে-ই নিয়মের ব্যতিক্রম আজোও হলোনা। আড্ডা দিতে দিতে কখন ঘুমিয়ে পরলাম খেয়ালই হলোনা।

সিফাতের ডাকে কোনোরকমে চোখ মেলে তাকালাম আমি।

-দোস্ত আইসা পরছি উঠ,নামতে হইবো।

ভালো করে চোখ মেলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম অভ্রের বুকে,অভ্রও সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে। আমার গায়ের উপর অভ্রের জ্যাকেট দেখতে পেয়ে অবাক হলাম কিছুটা। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকাতেই ও বললো-

-ঠান্ডায় কাঁপা-কাঁপি করছিলি তুই, অভ্র ওর জ্যাকেট টা খুলে তোর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে।যাতে তোর ঠান্ডা না লাগে। 

অভ্র এখনো ঘুমিয়ে। ওর ঘুমন্ত চেহারা টা কি নিষ্পাপ দেখালো আমার চোখে! কেমন আদুরে একটা মুখ! আমার ইচ্ছে হলো ওর মুখটা ছুঁয়ে দেখতে। মায়াবী চেহারায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো আমাকে চুম্বকের ন্যায় টানতে লাগলো! খুব ইচ্ছে হলো ওর শ্যামবর্ন গালে অজস্র চুমু একে দিতে! কিন্তু,নিজের এই ইচ্ছেটা বাস্তবায়ন করার আগেই অভ্রের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলেই ঘরিতে চোখ বুলিয়ে তারাহুরো করে ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো-

– শিটট! নয়টা বেজে গেছে? কিরে ডাকলি না আমাকে?

আমি নিচু স্বরে বললাম-

-তোর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে হয়নি।

আমার আদুরে উত্তর টা বোধহয় মহিষটার হজম হলোনা। অভ্র বেশ ধমকের স্বরেই বললো- 

– ঘুম না ভাঙালে কোলে করে নিতি আমাকে? আজব! কথাবার্তা কিভাবে বলতে হয় এটাও শিখিসনাই?

আমি বুঝে গেলাম এই গরুর সাথে কোনোভাবেই আমার মতো সভ্য মেয়ের বনিবনা হবেনা। আমাকে গরম চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র বললো- 

-রাক্ষসীর মতো তাকাই আছোস কেনো আবার? খাইয়া ফেলবি? 

তারপর হঠাৎ রুপ বদল করে  মুখে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে পূনরায় বললো- 

– ওসব হলে পরে হবে! এমন দুষ্টু দুষ্টু চিন্তা এখন ভুলেও মাথায় আনবিনা, মিতু। আমি যথেষ্ট লেভেলের গুড বয়! বৈধতা ছাড়া এসব কিছুতেই হচ্ছে না আমাকে দিয়ে। সো ডোন্ট এক্সপেক্ট সাচ থিংস রাইট নাউ বেইবি!(আলতো করে আমার গাল টেনে দিয়ে)

ওর কথায় আমি যেনো আকাশ থেকে পরলাম! এইটুকু একটা কথায় আকাশ বাতাস লজিক শুনিয়ে দেওয়ার কোনো অর্থ খুঁজে পেলামনা আমি। মনে মনে সয়তানটাকে ধাক্কা দিয়ে চার,পাঁচ বার ট্রেন থেকে ফেলে দিলাম। একটু আগের হওয়া অনুভুতি নিয়ে নিজেই নিজেকে গালি দিতে লাগলাম আমি মনে মনে।

অসভ্য ছেলে একটা!

চলবে… …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *