উৎস আর উচ্ছ আজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার মতো কোনো কায়দা দেখছে না।এতদিন আয়েশে দিন কাটালেও আজ রেস্ট নেওয়ার ফুসরতটা পর্যন্ত পাচ্ছে না।কল্পনার বরপক্ষ শহর থেকে রওনা দিয়েছে।কল্পনার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে ছেলের পরিবার ঢাকায় থাকে।ছেলের বাবা ব্যবসায়ী।কল্পনা আর কাজিনরা মিলে শহরে একবার মার্কেট করতে গিয়েছিলো সেখানেই দেখে পছন্দ হয়ে যায় রিভানের।বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলে অশোক সাহেব রাজি হয়ে যান।কল্পনা রাজি ছিলো না তবে বাধ্য হয়েই এ বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে তাকেও।রিভান ছেলেটা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।দেখতে শুনতেও ভালো। খুবই নম্র ভদ্র একটি ছেলে।এইতো গতকাল রাতেই তো হবু বউকে দেখতে এলো।এ নিয়ে সকলের সে কি শোরগোল।তবে কল্পনা দু একটা কথা ছাড়া আর একটা টু শব্দও করেনি রিভানের সাথে।রাত দেড়টা বাজে ছেলেটা চলে গিয়েছে।এদিকে কল্পনার দুচোখ খুজেছে শুধু রূপককে, একটিবার দেখার জন্য। তবে রূপকের কোনো দেখা নেই।কল্পনার আশাহত হৃদয় এখনও রূপকের পথ চেয়ে বসে।তবে গতকাল কল্পনাও ঠিক করে নিয়েছে আর নয়।সেও রূপককে ভুলে যাবে।তবে এটা কি এতই সহজ?ভালোবাসার মানুষকে কি ভোলা সহজ?দূর্বলতা আর পিছুটান কিন্তু আমৃত্যু থেকে যাবে।
উচ্ছ দুপুরে শাওয়ার নিয়ে রেডি হচ্ছিলো একটুপর তার আরও অনেক কাজ আছে।সেসময় দরজা নক না করেই ভেতরে ঢুকে পড়ে নৌশিন।উদম শরীরে সবে পাঞ্জাবী গায়ে দেওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো এরই মাঝে নৌশিনের অনুমতিবিহীন রুমে প্রবেশ ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় উচ্ছকে। রুষ্ট হয় মস্তিষ্ক, শক্ত হয় চোয়াল।নৌশিন উচ্ছকে উদম শরীরে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।চোখে লোলুপ দৃষ্টি নিহিত।উচ্ছ রেগেমেগে বলে, ‘ কি চাই?’
নৌশিন একবার সেদিকে তাকিয়ে আবারও পেছনে ঘুরে দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকে। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে তার।উচ্ছ পাঞ্জাবী তাড়াতাড়ি পড়ে নেয়। আর বিস্ফোরিত গলায় বলে ওঠে, ‘সামান্য ম্যানার্স টুকুও কি নেই তোমার? যে কারো রুমে ঢুকতে হলে নক করে ঢুকতে হয়। ’
নৌশিন মুখ থেকে হাত সড়িয়ে মাথা নিচু করে বলে, ‘ক্ষমা করবেন উচ্ছ ভাই।আমি বুঝতে পারি নি। ’
‘তুমি আর এ জীবনেও বুঝতে পারবে না। ’
নৌশিন কিছুটা মন খারাপ করে।মানুষটাকে সে পছন্দ করে।কিন্তু মানুষটা সবসময়ই তার সাথে রুক্ষ আচরণ করে।ফুপু তাকে উচ্ছকে ডাকার জন্য পাঠিয়েছিলো বলেই এসেছে।কথাটা মনে পড়তেই পেছনে না ফিরেই মিনমিনে স্বরে বলে, ‘ফুপু ডেকেছেন আপনাকে। ’
‘যাও তুমি।আমি আসছি। ’
নৌশিন পেছন ফিরে একবার তাকিয়ে দেখে উচ্ছকে।কালো পাঞ্জাবিতে দারুণ মানিয়েছে লোকটাকে।কড়া পারফিউমের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রুম জুড়ে। চোখ বুজে নৌশিন একটা বড় শ্বাস নেয়।উচ্ছ নৌশিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রকুটি কুচকে বলে, ‘কি?দাঁড়িয়ে আছো কেন? ’
সৎবিৎ ফিরে পাওয়ার মতো করে নৌশিন বলে, ‘যাচ্ছি যাচ্ছি। ’
কচ্ছপের মতো করে হেঁটে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। উচ্ছও রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মায়ের সাথে দেখা করে এখন একবার হাসপাতালে যেতে হবে তাকে।ড. আশিনকে একপলক না দেখলে আজ শান্তি পাবে না। গতকালও দেখা হয় নি তাদের।নিচে নেমে এসে দেখে উৎস দাঁড়িয়ে আছে।আর তার সামনে তন্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।উচ্ছ গিয়ে উৎসের পাশে দাঁড়াতেই শুনতে পায় তন্নি বলছে, ‘উৎস ভাই আমি আপনাকে পছন্দ করি।’
তন্নি খেয়াল করে নি উচ্ছও এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। মাথা তুলে তাকাতেই উৎসের পাশে উচ্ছকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে যায় মেয়েটা।তখনই আবার সিড়ি বেয়ে নামছিলো রূপক।এভাবে উৎস উচ্ছ আর তার বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করে, ‘কি হচ্ছে এখানে?’
তন্নির সামনে এসে প্রশ্ন করে, ‘তুই এখানে কি করছিস? ’
উচ্ছ তাড়াতাড়ি বলতে নেয়, ‘তোর বোন উ…’
তৎক্ষণাৎ উচ্ছ’র মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তন্নি বলে,‘বড়মা উৎস ভাইকে ডাকছিলো তাই বলতে এসেছিলাম।আমি আসি তাহলে ভাইয়া। তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। ’
রূপক বোনের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, ‘যা আমি আমরা আসছি।’
তন্নি একবার উৎসের দিকে আর আরেকবার উচ্ছ’র দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে যায়।উৎস এতক্ষণ যাবৎ ফোন ঘাটাঘাটি করছিলো।সেসবে তার মন নেই।রূপক উৎসের কাধে হাত রেখে বলে, ‘এমন সাজগোজ করলে দু একটা আসবেই। ’
কথাটা বলে হাটা ধরে বাড়ির বাইরে।এখন বাড়িতে থাকতে পারবে না সে।আজ রাতে কল্পনা যতক্ষণ না পর্যন্ত চলে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বাইরেই থাকবে। এমনিতেও আজ পাশের গ্রামে খোজ করতে যেতে হবে।
ইতোমধ্যে পুরো বাড়ি লোক সমাগমে ভরপুর। বাচ্চাগুলো খুশির আমেজে খেলছে আর যুবতী মেয়েরা লুকিয়ে লুকিয়ে উৎস উচ্ছ’র দিকে উঁকি দিচ্ছে।এসব দেখে উচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উৎসের কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘এভাবে যদি আমার আশিন আমার দিকে একটাবারের জন্য তাকাতো। ’
উৎস উচ্ছ’র দিকে তাকায়।ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি রেখে বলে, ‘তোর আশিন? ’
উচ্ছ হেসে ওঠে।মাথা চুলকে বলে,‘হতে কতক্ষণ?’
উৎস বাঁকা হাসে।অন্যত্র হাঁটা ধরে।রান্নার দেখাশোনার দায়িত্ব উৎসের কাঁধে পড়েছে।উৎস প্রথমে নারাজ হলেও এখন করতে বাধ্য সে।
উচ্ছ মায়ের সাথে দেখা করেছে।সবার অগোচরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে একবার ড. আশিনের সাথে দেখা করতে।ঠোঁটে খোশমেজাজে হাসি।আকাশের দিকে একবার তাকায় উচ্ছ।অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ রৌদ্রজ্বল নয়।পাঞ্জাবির হাটা গুটাতে গুটাতে হাটতে থাকে।বড় রাস্তার পথ দিয়ে গেলে দোকানের সবাই দেখে ফেলবে তাই অন্য পথ অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেয় উচ্ছ।হাটার সময় এদিক ওদিকে তাকিয়ে হাঁটে না উচ্ছ।একদৃষ্টে মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলো তখনই কারোর সাথে ধাক্কা লাগে তার। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই রূপবতী এক নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।ফর্সা মুখে রাগের আভাস স্পষ্ট।
মঞ্জুরি ভীষণ রেগে গিয়েছে।ক্ষুব্ধ মেজাজে উচ্ছ’র দিকে তাকায়, ‘কানা নাকি আপনি? ’
কথাটা শুনে মেজাজ বিঘড়ে যায় উচ্ছ’র। পালটা জবাব দেয়, ‘আমি নাহয় কানা, আপনার তো চোখ আছে। তা আপনি কি চোখ হাতে নিয়ে হাঁটছিলেন? ’
‘মুখ সামলে কথা বলবেন। ’
‘মুখ সামলেই কথা বলছি। ’
‘আপনি তো দেখছি প্রচুর ঝগড়াটে। ’
উচ্ছ বলে, ‘যে যেমন তার সাথে তেমনই করতে হয়। ’
মঞ্জুরি আঙুল তুলে শ্বাসানোর ভঙ্গিতে বলে, ‘আপনি জানেন আমি কে? ’
‘হ্যা জানি তো।আপনি হচ্ছেন পৃথিবীর একমাত্র অদ্ভুত প্রাণী সরি মানুষ, যে কিনা চোখ হাতে নিয়ে ঘুরে। ’
‘ভদ্রভাবে কথা বলুন।নয়তো মঞ্জুরির পিস্তলের গুলিতে এখানেই লুটিয়ে পড়বেন। ’
উচ্ছ ভয় পাওয়ার মতো করে বলে, ‘ওমা! ভয় পেলাম মিস মঞ্জুরি।আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিন।’
অহেতুক কারো সাথে ঝগড়া করার স্বভাব নেই উচ্ছ’র।আর এই পাগল মেয়েটার সাথে তো আরও নয়।যেতে যেতে হাত নাড়িয়ে বলে, ‘যান যান অন্য কাউকে গিয়ে এসব সস্তা হুমকি দিন।এই উচ্ছ তালুকদারকে নয়। ’
মঞ্জুরি আরও রেগে যায়।রেগে গেলে তার নাকের ডগা লাল হয়ে যায়। বিশ্রি একটা গালি দিয়ে নিজেও হাঁটা ধরে।অফিসার রূপকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো কেইসটি সম্পর্কে।বিকেলের দিকে পাশ্ববর্তী গ্রামে যাওয়ার জন্য বলে রূপক।তাই নিজ বাসায় ফিরছিলো মঞ্জুরি।তবে পথিমধ্যে এমন বেয়াদব একজনের সাথে দেখা হবে এটা মোটেও ভাবে নি মঞ্জুরি।এই ছেলের সাথে আরেকবার দেখা হলে খুলি উঁড়িয়ে দেবে ভেবে ঠিক করে মঞ্জুরি।
_
রূপক আর তৌশিক বটগাছের নিচে বসে আছে।কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।মেদুর রোদের শীতাষ্ণ তাপ বটগাছের পাতা দিয়ে মুখে এসে পড়ছে।এই গাছটির নিচে রূপক ছোটবেলায় একা বসে থাকতো।উৎস,উচ্ছ আর রূপক তিনজনই সমবয়সী।শুধু কয়েক মাসের গ্যাপ তাদের মাঝে। উৎস আর রূপক গম্ভীর স্বভাবের হলেও উচ্ছ মিশুক।স্কুল যখন ছুটি হতো তখন এই গাছটির নিচে এসেই বসে থাকতো রূপক।কোনো বন্ধুও ছিলো না তার জীবনের।শুধু উৎস আর উচ্ছই তার ভাই কম বন্ধু বেশি।একদিন রূপক স্কুল শেষে যখন এই গাছের নিচে বসে থাকতে আসে তখন দেখে এখানে কিছু ছেলে বসে আছে।রূপক তাদের দেখে চলে যেতে নিতেই ছেলেগুলো তাকে ডাকে।ছেলেগুলো তার থেকে এক ক্লাস সিনিয়র ছিলো।ভীষণভাবে হেনস্তা করতে থাকে রূপককে।তাদের পরিবার তখন গ্রামে সচ্ছল পরিবার হলেও চেয়ারম্যান নামক পদ তার চাচা সেসময়ে পান নি।সেই সিনিয়র ছেলেগুলো যখন তাকে বাজেভাবে হেনস্তা করছিলো উৎস এসে সবগুলোকে আচ্ছামতো পেটানো শুরু করে।উৎসের রাগ সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলো রূপক।স্কুল জীবনে মারামারি করার রেকর্ড রূপক আর উচ্ছ’র না থাকলেও উৎসের আছে।এমনকি কলেজ আর ভার্সিটি লাইফেও।ভার্সিটি লাইফে থাকাকালীন উৎস রাজনীতিও করেছে।রাজনীতির উপরস্থ পদেও ছিলো উৎস। তবে পরে সেসব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে এসে বেকার জীবন কাটাচ্ছে।আর পাশের গ্রামের ছেলেরা এই গ্রামের কাউকে বিরক্ত করলে তাদের ধরে বেধরম পেটাচ্ছে।পুরোনো সেসব স্মৃতি আর ভাই-দুটোর কথা মনে পড়তেই হাসে রূপক।তখনই কারোর কথাবার্তা শুনে সামনে তাকায়।তাদের থেকে কিছুটা দূরে আশিন আর একটি বাচ্চা মেয়ে হেটে আসছে রাস্তা দিয়ে। কিছু একটা নিয়ে মাতামাতি করতে দেখে।জিনিসটা ঠিক কি এটা ভালোভাবে দেখার জন্য উঠে দাঁড়াতেই দেখে একটি ছোট্ট বিড়াল।আশিনের মুখে আজ মাস্ক নেই।রাগী আর ঘাড়ত্যাড়া এই ডাক্তার আজ হাসছে বাচ্চা মেয়েটির সাথে।রূপক সেদিকেই তাকিয়ে আছে।এই ত্যাড়া কথা বলা মেয়েটা আজ কেমন প্রাণবন্ত হাসছে।মেয়েটার হাসি সুন্দর।কিন্তু এই মেয়েটাকে রূপকের সন্দেহ হয় রিপোর্টগুলো নিয়ে।তবে একটা লাশগুলো নিয়ে একটা বিষয় হলো লাশগুলোতে কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্টও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।এ বিষয়টা রূপক নিজেও দেখেছে।যে খুনগুলো করেছে সে প্রফেশনাল একজন কিলার বলে মনে হচ্ছে রূপকের।সবচেয়ে বড় কথা গ্রামাঞ্চলের মানুষ ওমন খুন করতে পারে না।হয় সিরিয়াল কিলার নয়তো কন্ট্রাক্ট কিলারের কাজ এসব।তবে রূপককে এ বিষয়টাও খুব ভাবায় বৃদ্ধদেরকেই কেন টার্গেট করা হয়?আর অন্য গ্রামের বৃদ্ধদের লাশ এ গ্রামে কেন পাওয়া যাচ্ছে?রহস্য তো কিছু একটা আছে।
আর অফিসার মঞ্জুরির ভাষ্যমতে গতকাল রাতে কোনো এক মুখোশধারী ড. আশিনকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে তবে ড. আশিন সুকৌশলে বিচক্ষণতার সাথে নিজ প্রতিরক্ষা করেছে।এইসব ডেয়ার কথাবার্তা শুনলেই রূপকের এতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্কও প্রশ্ন করে ওঠে নানাবিধ। তৌশিক রূপককে একধ্যানে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখে রূপকের দেখাদেখি সেও সামনে তাকায়।আশিনকে হাসতে দেখে বলে ওঠে, ‘বাহ ড. আশিন হাসতেও জানে। ’
রূপক রহস্যের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে একপলক ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পুনরায় চোখ ফিরিয়ে নেয়।হাতে থাকা কাগজে চোখ রাখে।আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আশিন আজ তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরছিলো পথিমধ্যে দেখা হয়ে যায় রূপালির সাথে। রূপালি একটি বিড়াল নিয়ে যাচ্ছিলো।আশিনের বিড়াল খুব পছন্দ।তাইতো খুব খুশি হয়ে যায় ছোট্ট এই বিড়ালটা দেখে।বটগাছের নিচে বসা রূপককে সে দেখে নি। রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে ওই বটগাছটি।তাই খেয়াল না করা স্বাভাবিক।আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখা হয়ে যায় উচ্ছ’র সাথে।উচ্ছ তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে, ‘কি ব্যাপার ড. আশিন। আমাদের গ্রামের গ্রেইট এংরি ড. আশিন আজ হাসছে। ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক। ’
‘কোন বিধানে লেখা আছে আশিন হাসতে পারবে না।’
হো হো করে হেসে ওঠে উচ্ছ, ‘প্রতিদিনই গোমড়া মুখে থাকেন।আপনাকে কোনোদিন হাসতে দেখিনি। আজ প্রথম দেখলাম।’
আশিন আর রূপালি ধীরে ধীরে হাঁটছে সাথে উচ্ছও।পেছন থেকে রূপক তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।উচ্ছ ডান হাত মাথার পেছনে স্লাইড স্লাইড করতে করতে বলে, ‘ড. আশিন।হাসলে আপনাকে দারুণ লাগে। ’
আশিনের আজ মেজাজ ভালো।ভালোভাবেই উত্তর দেয়, ‘ধন্যবাদ। ’
উচ্ছ খুশি হয় খুব।প্রশ্ন করে আবার, ‘আজ যাবেন না আমাদের বাড়িতে? ’
আশিনও জবাব দেয়, ‘না যাওয়া হবে না।’
উচ্ছর মুখ চুপসে যায়,‘কেন যাবেন না?’
‘আমার বাড়িতে কাজ আছে।আর এমনিতেও আমার এসব পছন্দ নয়। ’
উচ্ছ আর কিছু বলে না।পেছন পেছন হাটতে থাকে শুধু।আশিন আড়চোখে একবার তাকায় উচ্ছ’র দিকে।এখনও পেছন পেছন আসছে।এমন পেছন পেছন আসা মোটেও পছন্দ নয় আশিনের।তবুও সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ কিছু বলবে না উচ্ছকে। রূপালি উচ্ছ’র দিকে তাকিয়ে আছে।চেয়ারম্যানের ছেলেগুলোকে তাদের স্কুলের মেয়েরা পছন্দ করে।অনেক সুন্দর নাকি!উচ্ছ কি মনে করে হঠাৎ বলে, ‘আচ্ছা ড. আশিন, আজ আমায় কেমন লাগছে? ’
কেমন বাচ্চাদের মতো শোনায় উচ্ছ’র কণ্ঠ।পেছন ফিরে উচ্ছকে আপাদমস্তক দেখে।কালো পাঞ্জাবীতে সুপুরুষ লাগছে আজ।আশিন বলে, ‘হ্যা আজ সুপুরুষ লাগছে। ’
উচ্ছ তাড়াতাড়ি করে বলে, ‘আগে কি কাপুরুষ লাগতো নাকি?’
কথাটা শুনে রূপালি হেঁসে ওঠে।
আশিন নিরুত্তর থাকে।সে নিজের মতো হেঁটে যাচ্ছে।আশিন এদের যথাসম্ভব উপেক্ষা করে চলতেই পছন্দ করে।হাটঁতে হাটঁতে হঠাৎ চোখ পড়ে তাদের থেকে কিছুটা দূরে বাম পাশের কাঁঠাল গাছের সাথে হেলান দিয়ে সিগারেট ফুঁকছে উৎস।দৃষ্টি তাদের দিকেই।একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আর সিগারেটে টান দিচ্ছে।উৎসের পরনে আজ বাদামী রঙা পাঞ্জাবী।বখাটেদের মতো পোশাক আজ ছেড়ে এই পোশাকে ওই বখাটেটাকেও সুপুরুষই লাগছে।আশিন চোখ সড়িয়ে নেয়।এদিকে উচ্ছ কথা বলেই যাচ্ছে।আর রূপালি হেসেই যাচ্ছে।