তোমার নামে সন্ধ্যা নামুক [পার্ট ০৪]

শীত কালে বিকেলে ঠান্ডাটা একটু বেশীই পড়ে, তবুও এই ঠান্ডার মধ্যে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুঠামদেহী সিফাত। মাত্র স্কুল ছুটি হলো

এত এত বাচ্চাদের ভিড় থেকে বেড়িয়ে এলো আরুহী,চোখ তার চশমা, কপালের চুল গুলো বাতাসে এদিকে ওদিকে উড়ছে,সাদা রঙের থ্রি পিস পড়নে মনে হচ্ছে একদম শুভ্রপরী।আরুহীকে দেখে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠে সিফাতের,আরুহী সিফাত কে দেখা মাত্র মুখের মধ্যে গম্ভীর্য আনে। এমনিতেই সবসময় চুপ থাকতে পছন্দ করে সে তার উপর সিফাত কে দেখলে চুপ থাকার মাত্রা যেন আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। সিফাত দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল আরুহী, কিন্তু তা হতে দেয় না সিফাত। সামনে এসে দাঁড়ায় আরুহী।

‘‌এমন কেন করো তুমি? আমার সাথে কথা বললে কী হয়?’

আরুহী এক পলক আশেপাশে দেখে নেয় কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে কী না,আরুহী এই স্কুলের একজন শিক্ষক এখন যদি ওকে এভাবে রাস্তায় কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখা যায় তাহলে অবশ্যই তা ভালো দেখায় না।

‘‌ দেখুন দয়া করে রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করবেন না,আর মোট কথা আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।’

‘‌ যদি আমার সাথে কথা না বল তাহলে কিন্তু আমি এখন চেঁচিয়ে বলব তোমাকে ভালোবাসি।’

‘ চুপ করুন কী হচ্ছে এসব?এটা আপনার বাড়ি নয় রাস্তা।’

‘ দিদি মনি টাইপ কথা তুমি তোমার স্কুলে বল,এখানে না।চল ক্যাফেতে বসে তার পর কথা বলব।’

‘ না আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে চাই না,প্লীজ রাস্তা ছাড়ুন?’

‘‌ এবার কিন্তু টেনে নিয়ে যাব, পরে দোষ দিতে এসো না।’

সিফাতের কথায় কিছুটা ঘাবড়ে গেল আরুহী,সে জানে সিফাত যেটা বলে সেটাই করে তাই আর কথা না বাড়িয়ে সিফাতের সাথে যেতে লাগল।

রিতু কে কোলে নিয়ে বসে আছে চৈতি,তার পাশেই নিজের বাবা কে জড়িয়ে ধরে তানিয়া।এত দিন পর নিজের মেয়েকে কাছে পেয়ে ভেতরে ভেতরে আনন্দে আ’ত্ম’হা’রা আফতাব রহমান, ওদিকে বাপ বেটির এমন জড়িয়ে ধরা দৃশ্য দেখে চোখ ভরে আসে উনার।

ভেতরে আসে হিমেল,ওকে দেখে মূহুর্তের মধ্যে যেন চৈতির হাব ভাব পুরোপুরি বদলে যায়,ভেতরে ভেতরে একটা স্টাইল চলে আসে।সবটা দেখেও না দেখার ভান করে মুচকি হাসে হিমেল। তানিয়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হিমেল কে,এখ মতে নিজের ফুফাতো ভাইয়ের চেয়েও বেশি আপন ভাই ভাবে সে।

‘ এখন আসার সময় হলো তোর? আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।’

তানিয়ার এমন বাচ্চামো দেখে হাসি পাচ্ছে হিমেলের।

‘ সরি দী,রাগ কর না একটু দেরী হয়ে গেছে।’

‘‌তখনি মানবো যখন তুই বলবি আজকে আমাদের বাড়িতে থাকবি।’

তানিয়ার এমন আবদার শুনে স্মিত হাসে হিমেল,এক মতে ভালোই হলো সে তার চড়ুই পাখির কাছাকাছি থাকতে পারবে।

‘ আচ্ছা দী,আজকে না হয় আমি এখানেই থাকব।’

হিমেল হাওয়া আজ এখানে থাকবে?বিষয়টি একদমই বোধগম্য হলোনা চৈতি?মুখ বাঁকিয়ে রিতু কে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

সবার জন্য ফল কেটে প্লেটে করে নিয়ে আসেন শান্তা, টেবিলের উপর রাখে। সবাই আছে কিন্তু নিশা নেই, তপ্ত শ্বাস ফেলেন শান্তা। শান্তার শুকনো মুখ দেখে আসিফা রহমান জিগ্গেস করেন।

‘ কী হয়েছে ছোট?মুখ এমন শুকনো লাগছে কেন?’

‘ আর বলো না আপু,মেয়ে কে নিয়ে আর পারি না কী করব বল?সেই সকালে বেড়িয়েছে এখনও ফেরেনি।’

‘ আচ্ছা, তুই এত চিন্তা করিস না এসে যাবে।’

‘ হুম, কিন্তু দিন দিন যেন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে।’

‘ পা গ লী একটা।’

আসিফা হেসে হিমেলের ঘর পরিস্কার করতে যায়।

___________

‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি ইভেন আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’

সিফাতের কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল আরুহী।

‘আমি আপনাকে অনেক বার বলেছি, আমি ভালোবাসি না আর এটাই সত্যি।’

চোয়াল শক্ত করে দাঁড়ায় সিফাত।আরুহীর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

আরুহী চায় না তার ভয়ংকর অতীত আবারও সামনে আসুক,আর যা যা ঘটেছে তা আবার রিপিট হোক। অনেক কষ্ট পেয়েছে আর চায় না সে,মোট কথা আর স’হ্য করার ক্ষ’মতা তার নেই। নিজের মা আফিফা হাসান কে নিয়ে সে ভালো আছে,আর কাউকে প্রয়োজন নেই তার।বাকি জীবনটা না হয়ে এভাবেই বাচ্চাদের পড়াতে আর মায়ের সাথে কা’টিয়ে দেবে তাহলে আর কী চাই?

আরুহীর ভাবনায় সিফাত রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে।

‘ তোমার কী মনে হয় এই যে বার বার একজন মানুষ কে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ তা কী ঠিক? তুমি না একজন শিক্ষক তাহলে কেউ কাউকে ভালোবাসলে কত কী স’হ্য করে তা কী জানা নেই?’

সিফাতের কথা গুলো শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আরুহী,কেউ তার জন্য পা গ লামী করছে ভাবা যায়?যাই হয়ে যাক সে চায় কাউকে আপন করে নিতে এবং এরপর অতীত নিয়ে ক’টু কথা শুনতে।

‘ আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, আমার থেকে দূরে থাকুন এটাই ভালো হবে প্লীজ।’

‘ উঁহু এটা তো হবে না, আমিও দেখব তুমি ভালো না বেসে কী করে থাক?’

আরুহী বুঝতে পারছে এই লোকটিকে বুঝিয়ে লাভ নেই,ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু করে বাড়ির পথে,তারই মধ্যে আবার সিফাত ডেকে বলে।

‘ আরু পাখি,আই লাভ ইউ ইনফিনিটি।’

আরুহী পিছন ফিরে এক পলক দেখে নেয় সিফাত কে আর বিড়বিড় করে বলে।

‘ পা গ ল একটা।’

ধানমন্ডির জমিতে ফ্লাট ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করেন আফতাব রহমান,তাই আজকে আনোয়ার রহমান আরিফ রহমান এবং আফতাব রহমান তিনজন মিলে দেখতে যায়। অনেক দিন পরিষ্কার না করানোর দরুণ অপরিষ্কার হয়ে আছে জমিটি।

‘ বলছি কী ছোট আমাদের তাড়াতাড়ি এই জায়গায় লোক লাগাতে হবে, না হলে মনে হচ্ছে এভাবে আর কিছু দিন রাখলে জমিটি নষ্ট হয়ে যাবে।’

‘ হ্যা ভাইয়া ঠিক বলেছ, আমাদের লোক লাগানো উচিত।’

‘ আরিফ।’

‘ হ্যা চাচা বল?’

‘ তুই এক কাজ কর বাবা, কিছু লোক লাগিয়ে জায়গাটা তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে ফেল,এর পরেই ফ্লাট তৈরি করার কাজ শুরু করব।’

‘ ঠিক আছে চাচা,আমি আজকেই লোক দেখছি।’

টুংটাং শব্দ করে আরিফের হাতে থাকা ফোন বেজে উঠে,সে স্ক্রিনে একবার চোখ বুলিয়ে ফোন রিসিভ না করেই কে’টে দেয়। বিষয়টি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে আফতাব রহমান, অবশেষে তিনি বলেন।

‘ কী ব্যাপার আরিফ? কখন থেকে কেউ ফোন করছে বার বার কে’টে দিচ্ছ কেন? রিসিভ কর যদি কোনো আর্জেন্ট কল হয়?’

‘ না চাচা তেমন জরুরী নয়,পরে ফোন করে নেব।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে।’

কপালে জমে থাকা ঘাম টুকু রুমাল বের করে মুছে নেয় আরিফ।

অফিস থেকে বের হতে না হতেই হিমেল দেখে মাহমুদ গ্রেটের সামনে দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে। হিমেল কে দেখে আরেকটু চওড়া হাসি দেয় মাহমুদ, এগিয়ে আসে ওর কাছে।

‘ কী রে তুই এই সময় অফিসে?’

মাহমুদ কিছুটা দুঃখভরা কন্ঠে বলে উঠে।

‘ কী আর বলব ভাই? সারাদিন কাজ করতে আর ভাল্লাগে না, এবার মনে হচ্ছে একটা প্রেম করতেই হবে।

মাহমুদ এর কথা শুনে কিছু বলল না হিমেল, গাড়িতে উঠে বসে ওর পিছু পিছু মাহমুদ গাড়িতে বসে।

এই মধ্য রাতে নিজের গ্রীবা দেশে কারও স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভে’ঙ্গে যায় চৈতির। আবছা আলোয় কারও অবয়ব দেখতে পাচ্ছে সে কিন্তু চাইলেও উঠতে পারছে না। খুব দূর্বল লাগছে। একটু একটু করে অবয়ব আরও কাছে আসতে লাগল চৈতির, কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।

‘ চড়ুই পাখি।

চড়ুই পাখি ডাক শুনে আন্দাজ করতে পারে এটা হিমেল,উঠতে যেতেই পা গ লের ন্যায় হিমেল চৈতির মুখশ্রীতে চুমু খে’তে লাগল।

চলবে………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *