বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হিমেল তুফা আর চৈতি, তিনজনে মিলে শপিং এ বের হয়। বাতাস বইছে ঠান্ডার মধ্যে এই বাতাস যেন হিম করে দিচ্ছে চৈতির নরম তুলতুলে শরীরটাকে।গাড়ির জানালা খুলে বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চৈতি, এদিকে লুকিং গ্লাস দিয়ে বার বার চৈতির স্নিগ্ধ মুখশ্রী দেখছে।
গেস্ট হাউসের একটি রুমে তিথি আর আরিফ দু’জনেই ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আছে,তিথি নিজের গায়ে জড়ানো উড়না খুলে নিচে ফেলে দেয় আরিফ একটু একটু করে কাছে যেতে লাগে।একে অপরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার মূহুর্তে ক’র্ক’শ শব্দে আরিফের ফোন বেজে ওঠে।
‘ উফ্ আরিফ এই সময় তোমাকে আবার কে কল করছে?’
‘ ডার্লিং একটু ওয়েট করো এখুনি দেখে আসছি।’
আরিফ ফোন হাতে তুলে দেখে নিহা কল করেছে,মুখ দিয়ে ‘ছ’ শব্দ বের হয়ে আসে তার।
‘ হ্যলো নিহা।’
‘ হ্যা আরিফ তুমি এখন কোথায় আছো? আচ্ছা যেখানেই থাকো প্লীজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো খুব প্রয়োজন আছে।
আরিফ ভ্রু কুঁ’চকে বলে।
‘কেন কী হয়েছে?এত তাড়া দিচ্ছ কেন?’
‘ ওহো তুমি আসো না তার পর বলছি। প্লীজ একটু তাড়াতাড়ি।’
‘ আচ্ছা আচ্ছা আমি আসছি।’
আরিফ আর কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ফোন টু টু শব্দ করে কে’টে গেল,তিথি রাগা’ন্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিফের দিকে।যখনই ওরা কাছাকাছি আসতে যায় ঠিক সেই মূহূর্তে কিছু না কিছু বাঁধা পড়ে এইবারেও এমন হলো।
_____________
বাড়িতে এসে তানিয়ার কাছে জানতে পারে ইশান তাকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চায়,এটা বাড়ির অনেকেই জানানো হয়েছে কিন্তু আসিফা আর আফতাব রহমান এর একটাই কথা যদি চৈতি রাজী থাকে তাহলেই বিয়েটা হবে নয়তো না।এটা একদমই মানতে পারছে না চৈতি, নিজের রুমে রিতু কে নিয়ে বসে আছে সে, ওদিকে হিমেল এই খবর শুনে কিছুটা গম্ভীর হয়ে যায়।আর অপেক্ষা না করে বাড়ির সামনে থেকেই নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্থান করে।
‘ কী রে চৈতি,তোকে নিচে এত কিছু জিজ্ঞেস করা হলো আর তুই কোনো উত্তর না দিয়ে রুমে চলে এলি?’
রিতু কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিল চৈতি, তানিয়ার কথা কর্ণকুহ হতেই উঠে বসে সে।
‘ কী বলব?’
তানিয়া এসে রিতুর কাছে বসে, আবারও চৈতি কে জিজ্ঞেস করে।
‘মানে কী? সবাই তো জিগ্গেস করল ইশান কে বিয়ে করার কথা,আর ইশান তো তোকে পছন্দ করে।’
‘ না আমি বিয়ে করতে চাই না,আর না ইশান ভাইয়া কে স্বামীর নজরে দেখেছি।’
‘ দেখিস নি তো কী হয়েছে? এখন থেকে দেখবি।’
‘ না আপু আপাতত এটাই সত্যি আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই না।’
‘ তাহলে কী কাউকে পছন্দ করিস?’
তানিয়ার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে চৈতি, ভেসে উঠে হিমেলের সুদর্শন মুখশ্রী,ফট করে চোখ খুলে চৈতি,জিহ্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁ’ট ভিজিয়ে বলে।
‘ না না কাকে পছন্দ করব? আমি আর এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না ব্যাস।’
বাড়ির পিছনে বড় একটা মাট আছে সেখানে বসে আছে ইশান, বিয়েতে না করে দিয়েছে চৈতি।সেটা মানতে একটু কষ্ট হচ্ছে ইশান এর কিন্তু কেউ যদি বিয়ে করতে না চায় তাহলে কী তাকে জোর করা যায়? অবশ্যই না, মনের মিল না থাকলে বিয়েতে সুখ শান্তি কিছুই থাকবে না।
‘ ভালোবাসেন চৈতি কে?’
পিছন থেকে কেউ প্রশ্ন করে ইশান কে, ফিরে তাকাতে দেখতে পেল নিশা,ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিশা আবারও সুধায় ইশান কে।
‘ ভালোবাসেন?’
ইশান স্মিত হেসে বলে।
‘ হুম বাসি, প্রচুর ভালোবাসি।’
‘ কবে থেকে?’
‘ যখন থেকে ওকে দেখেছি সেদিন থেকে,ওর জন্য অপেক্ষা করেছি ভালোবেসেছি কিন্তু আফসোস পেলাম না।’
‘ কতটা ভালোবাসেন?’
‘ ভালোবাসার পরিমাপ করা যায় না,আর আমি ঠিক ততটাই ভালোবাসি।’
‘ আচ্ছা এমনও তো হতে পারে আপনাকেও কেউ খুব ভালোবাসে।’
‘ মানে?’
‘ মানে ধরুন আপনাকেও একজন হতে পারে খুব ভালোবাসে, যেমন নিজের থেকেও বেশি প্রচন্ড রকম,সেই প্রথম থেকে।’
‘ তা ম্যাডাম সে কবে থেকে ভালোবাসে?’
নিশা ইশান এর পাশে এসে বসে,এক পলক দেখে নেয় ইশান কে এরপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আকাশ পানে।
‘হুম প্রথম থেকে হয়তো সেও আপনাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলছে।’
‘ এগুলো বাচ্চামো।’
‘ উঁহু সত্যি, এখন সে চায় আপনার এই এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসা থেকে এক মুঠো ভালোবাসা নিজের জন্য নিতে, আপনি কী দেবেন?’
ইশান মুচকি হেসে উঠে চলে যায় বাড়ির দিকে, ঠোঁট ফুলিয়ে বসে থাকে নিশা।খালি একটা কথাই ভাবছে কী করে ওনাকে বুঝাবে ও ঠিক কথাটা ভালোবাসে ইশান কে।
____________
মাহমুদ এর ফ্যামিলি বলতে তো শুধু বাবা ছাড়া আর কেউ নেই তাই সে বেশীরভাগ সময় সিদ্দিক বাড়িতে আসা যাওয়া করে।তার পর রুম্পা সিদ্দিক ভীষণ পছন্দ করে মাহমুদ কে,আজকেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। রান্নাঘরে রান্না করছিল রুম্পা হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে একটু বিব্রত হয় রুম্পা কিন্তু তা মূহুর্তেই উবে যায় পিছন ফিরে পরিচিত মুখ দেখে খুশী হন উনি।
‘মাহমুদ তুই?’
‘ হুমমমম আন্টি আচ্ছা বলো হিমেল কোথায়?’
‘ ও তো এখনও অফিস থেকে ফিরেনি, তুই বস আমি তোর জন্য কফি বানিয়ে আনছি।’
‘ ওকে আন্টি, আমি বরং হিমেল এর রুমে যাচ্ছি।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে যা।’
রুমের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কারো গুন গুন গানের শব্দ আসছিল,তা কর্ণকুহ হওয়ার সাথে সাথেই সেদিকে এগিয়ে যায় মাহমুদ।
টপস পড়ে এলোমেলো চুলে সাউন্ড বক্স অন করে একটু আনন্দে মেতে আছে তুফা,ওকে এই অবস্থায় দেখে বুকের ভেতর ধুক ধুক করছে মাহমুদ এর।বার বার চলে যেতে চাইছে কিন্তু পারছেনা চক্ষু যোগল বার বার ওই দিক পানেই আটকে আছে। নিজেকে সামলাতে পারল না মাহমুদ, এক পা দু পা করে ভেতরে প্রবেশ করে। নিজের রুমে হঠাৎ মাহমুদ কে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায় তুফা, তাড়াতাড়ি উড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে ফেলে।
‘ মামমম মাহমুদ ভা,,,,,।
তুফা আর কিছু বলতে পারেনি মাহমুদ নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয় তুফা কে,কী করবে কিছু বুঝতে পারছে না তুফা। পুরো শরীর কাঁপছে তার কিন্তু তবুও কেন জানিনা মাহমুদ কে একদমই বলতে ইচ্ছে করছে না ছাড়ার কথা।তুফাও যেই জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনই রুম্পা সিদ্দিক ডাক পারেন।
‘ তুফা,এই তুফা মা একটু নিচে আয় তো?’
রুম্পা সিদ্দিক এর ডাকে হুঁ’শ ফিরে মাহমুদ এর,তুফা আর না দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাহমুদ বিচলিত হয়,এটা কী করল সে? একজন মেয়ের অনুমতি না নিয়ে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরল?আর তুফাও ওকে কিছু বলল না কষিয়ে থা’প্পড় দিতেও তো পারত না। লজ্জায় আর এক মুহূর্তও থাকে না সে বেড়িয়ে যায়, রুম্পা সিদ্দিক জিগ্গেস করে কী হলো? কিন্তু মাহমুদ একটু জরুরি কাজ আছে বলে বেরিয়ে গেলো। হঠাৎ ছেলেটার কী হলো বুঝতে পারল না রুম্পা সিদ্দিক।
_____________
‘ কী শুনছি এসব আরুহী?’
স্কুল থেকে বাড়িতে আসার সময় আশেপাশে লোকজন আড় চোখে তাকাচ্ছিল আরুহীর দিকে তার পর এখন বাড়ির ভেতর এসে মায়ের গম্ভীর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে একটু অবাক হয় আরুহী।
‘কী হয়েছে মা?কী শুনেছো?’
‘শুনলাম তোমাকে নাকি কোন এক ছেলের সাথে দেখা গেছে? এসব নিয়ে আশেপাশের লোকজন কানাঘু’ষা করছে। আমি অন্যদের কথা জানি না আমি তোমার কথা জানতে চাইছি তুমি কী ওই ছেলেকে চেনো?’
তপ্ত শ্বাস ফেলে আরুহী, নিজের ব্যাগ রেখে রোশনা বেগম কে চেয়ারে বসায় এমন ওহ পাশে বসে।একে একে সবটা খুলে বলে রোশনা বেগম কে।
‘ তাহলে এখন কী করবি তুই?যতটা বুঝলাম ও তো এখন তোর পিছু ছাড়বে না।’
‘ জানি মা কিন্তু আমি ছেড়ে দেব।’
‘ কী?’
‘ এই এলাকা।’
‘ কোথায় যাবো আমরা?’
‘ তুমি চিন্তা করো না মা আমি সবটা ম্যানেজ করছি, খুব তাড়াতাড়ি চলে যাব।’
‘ আই লাভ ইউ আরু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আপন করে নেব এরপর তুমি আমাকে ভালোবাসতে বা’ধ্য হবে।’
বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে কথা গুলো ভাবছে সিফাত।
চলবে……