শীত কালে বাঙালিদের একটা স্বভাব, সকালে উঠে সবার জন্য গরম গরম খিচুড়ি সাথে মাংস এবং নানা রকম পিঠেপুলি তো আছেই।
সকাল থেকে আসিফা রহমান আর শান্তা রহমান রান্না বসিয়েছে,নিহা সবাই কে একে একে প্লেটে খিচুড়ি আর মাংস দিচ্ছে।
নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে রিতু এসে ফট করে ওর কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ে।
‘ খালামুনি উঠো উঠো।’
রিতুর ডাক শুনে ঘুম ঘুম চোখে তাকায় চৈতি,রিতু পিটপিট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
‘ জানু পাখি, এত্ত সকাল সকাল কেন ডাকছ?’
রিতু হঠাৎ এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে চৈতির উপর, জড়িয়ে ধরে তাকে।স্মিত হাসে চৈতি।
‘ বলো খালামনি এত্ত সকাল সকাল কেন?’
‘ আম্মু বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে, সবাই খেয়ে ফেলছে সব তুমি কী খাবে খালামনি?’
রিতুর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসে চৈতি, বিছানা থেকে উঠে নিজের ফোন রিতুর হাতে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে।রিতু কে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে,প্রায় বাড়ির সবাই উপস্থিত আছে।সোফার এক পাশে বসে পড়ে চৈতি,ওর দিক সামনেই বসে আছে আরিফ বার বার আড় চোখে দেখছে তাকে বিষয়টি একদমই ভালো লাগছে না চৈতির।
‘ কী রে তুই এখন উঠেছিস? আচ্ছা তোর কী কোনো কা’ন্ড জ্ঞান নেই?’
তানিয়ার কথা শুনে চৈতি বলে।
‘ কেন কী হয়েছে এত্ত তাড়াহুড়ো হচ্ছে কেন আজ?’
‘ আরে তুই জানিস না আজকে আম্মু আব্বু ঠিক করেছে মাজার জিয়ারত করতে যাবে,তো বাড়ির সবাই যাবে তাই তো এত্ত আয়োজন।’
মাজার জিয়ারত করতে যাওয়া হবে শুনে চৈতি বেশ খুশী হয়, অনেক দিন পর মাজারে যাবে। গাড়ির শব্দ শুনা যাচ্ছে, বাড়িতে প্রবেশ করে রুম্পা সিদ্দিক তুফা আর হিমেল সিদ্দিক। হিমেল কে দেখে রিতিমত নির্বাক হয়ে গেছে চৈতি, ইশারা করে নিহা কে কাছে ডাকে।নিহা এসে রিতু কে নিজের কোলে নিয়ে বসিয়ে বলে।
‘ কী রে কী হয়েছে?’
‘ না এটাই যে ফুপিরা আমাদের সাথে যাচ্ছে?’
‘ হ্যা সবাই মানে তো সবাই।’
‘ সবাই তো ঠিক আছে কিন্তু এই হিমেল ভাইয়ের যাওয়ার কী আছে?’
‘ কী বললি?’
‘ না কিছু না। আমি বরং রুমে যাই ভার্সিটিতে যেতে হবে না হলে দেরী হয়ে যাবে।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে যা।’
হিমেল ঠিকই বুঝতে পারছে চৈতি ওকে দেখে পালানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তা তো সে একদমই হতে দেবে না ঠিকই নিজের মনের খাঁ’চায় তার চড়ুই পাখি কে ব’ন্দি করবে। কথাটা ভেবে স্মিত হাসে হিমেল।
সকাল সকাল নিশা ইশান এর বাড়ি চলে গেছে,সে জানে যে ইশান একাই থাকে ওর বাবা মা তিন বছর হলো মা’রা গেছেন তানিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওই সবটা সামলাচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে বেল বাজল নিশা কিন্তু কারো সাড়া শব্দ নেই বিরক্ত হয়ে এবার স-জোরে লা’থি মা’রে দরজায়। সকাল সকাল এত ধা’ক্কাধা’ক্কি শুনে খালি গায়ে উঠে গিয়ে দরজার পাট খুলে দেয়,নিশা এভাবে ইশান কে খালি গায়ে দেখবে তা বিন্দুমাত্র আশা করেনি।
সুঠামদেহী এই পুরুষ কে দেখে বুকের ভেতর উথাল পাতাল শুরু হয় নিশার, হৃদয় স্পন্দন হুঁ হুঁ করে বেড়ে যায় নাকের ডগায় সুড়সুড়ি লাগে তল পেটের প্রজাপতি গুলো উ’ন্মা’দের মত উড়তে চায়।
‘ এই যে ওভাবে দেখার ভুল একদমই করো না,তা না হলে মুশকিল হবে। না নিজে বাঁচবে আর না আমাকে বাঁচতে দেবে।’
ইশান এর কথায় বাস্তবে ফিরে আসে নিশা, লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।
‘ কী চাই?’
ইশান এর প্রশ্নের উত্তর কী দেওয়া যায়?আর সত্যি তো কী চাই কেন এসেছে কোনো কারণই তো নেই নিশার কাছে। এবার কী হবে?’
‘ আসলে আমি এমনি এসেছিলাম, কোনো কারণ ছাড়াই।’
ইশান ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসে।
‘ আচ্ছা ভেতরে আসো।’
নিশা ধীর পায়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে,পুরো বাড়ি অগোছালো অবস্থায় আছে, তানিয়ার সাথে আরও কয়েক বার দেখা করতে এসেছিল তখন পরিপাটি করে সব কিছু গুছিয়ে রাখা থাকত তার মানে লোকটি কিছুই পারে না।ইশানের পিছু পিছু নিশা হাঁটতে লাগে,ইশান নিজের রুমে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে নিশা ভ্রু কুঁ’চকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।দু হাত দিয়ে চোখ কচলে তাকায় নিশার দিকে,ভ্রু উঁচু করে কী জিজ্ঞেস করে।
‘ কী বলব ছিহ্ ইশান ভাই আপনি এমন? একজন অতিথি আপনার বাড়িতে এসেছে আর আপনি কী না এভাবে শুয়ে আছেন?আপ্যায়ন করবেন তা না করে এভাবে ঘুমিয়ে পড়ছেন?
নিশার কথা শুনে ইশান নিজের পায়ের সাহায্য আলতো করে নিশার পায়ে ধা’ক্কা দেয় ফলে নিশা হুম’ড়ি খেয়ে ইশান এর উপর এসে পড়ে, মৃদু স্বরে আ’র্ত’না’দ করে উঠে।
‘ উফ্ ইশান ভাই।’
‘ ইশ্ এভাবে শব্দ করলে তো,,,,।’
‘ কী?’
‘ কিছু না এখন সোজাসুজি বলেন তো ম্যাডাম কী জন্য এসেছেন?’
‘ আসলে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর নিতে এসেছি, না মানে ওই মেয়েটির।’
‘ তাই নাকি? আচ্ছা ঠিক আছে মেয়ে কে বলো আসতে সামনাসামনি উত্তর দিয়ে দেব।’
‘ আমাকে বললে কী হয়?’
ইশান নেশা’ক্ত কন্ঠে বলে।
‘ যদি তোমাকে সবটা বলে দেই তাহলে সহ্য করতে পারবে না, এগিয়ে যাবে অ’পরাধের পথে আর শেষে ভীষণ য’ন্ত্রণা অনুভব হবে যা হবে ভীষণ সুখের। কিন্তু এগুলো সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে যা তোমার মধ্যে নেই।’
‘ তাহলে ওই মেয়ে কী করে সহ্য করবে?’
‘ আমি সহ্য করিয়ে দেব।’
‘ আমাকে দিলে কী হবে?’
‘ হুস।’
কিছুক্ষণ আগে মাহমুদ তুফা কে কল করে বলে সে কোথায় আছে?তুফারা যে মাজারে যাচ্ছে সেটা জানায় মাহমুদ কে। ওদিকে হিমেল মাহমুদ কে অলরেডি বলে দিয়েছে আসার কথা সে ভেবেছিল যাবে না এই ফাঁকে তুফার সাথে একটু সময় কা’টাবে কিন্তু তা আর হলো কই?তুফাও মাজারে যাবে তাই চৈতিদের ওখানে চলে গেছে স্বপরিবারে।
‘ মাজার জিয়ারত করতে যাচ্ছি সবাই।’
‘ আপনি আসছেন?’
‘ হুম যাব, হিমেল আমাকে বলেছে যেতে আর আন্টিও বলেছে যাওয়ার কথা।’
‘ওহ তাহলে চলে আসুন সবাই তো তৈরি হচ্ছে।’
‘ আচ্ছা আসছি আমি।’
___________
আজ সকাল থেকে সিফাত কে দেখতে পাচ্ছে না আরুহী,কেন জানি ভেতরে ভেতরে অশান্তি লাগছে। ছেলেটা সবসময় স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও ওকে দেখা যায় তাহলে আজ কোথায় গেলো? সকাল থেকে এসব ভেবে যাচ্ছে আরুহী, তাহলে কী সে সিফাত কে মিস করছে? না না এসব কী করে সম্ভব?আজকে আর দাঁড়াল না আরুহী,অটো নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয় । বাড়ির ভেতরে ঢুকে নিজের মায়ের চোখে পানি দেখে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল আরুহীর,ব্যাগ রেখে মায়ের কাছে গিয়ে হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘ মা কী হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?’
‘ কী করব বল?ও তো আবার আমাকে ফোন করে বলেছে হয়ত তোকে পাঠাতে নয়তো টাকা দিতে। এখন আমাদের যা অবস্থা তাতে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় আর আমি তোকে ওই জায়গায় আর পাঠাতে চাই না।’
নিজের মায়ের কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে আরুহী, কিন্তু তা বুঝতে দেয়নি না হলে যে সব দিক সামলে উঠতে পারবে না। খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে তাকছ।
চৈতি আর হিমেল এর বিয়ে হবে এটাতে বাড়ির সবাই খুশি কিন্তু একজন বাদে সে হলো আরিফ।আরিফ চায় না চৈতি ভালো থাকুক কিন্তু সেটা কিসের জন্য? তাও সে জানে না। ওদিকে সবাই চাইছে সিফাতের বিয়েটা আগে হোক এরপর চৈতির তাতে হিমেল একটু বিরক্ত হয় ওদের বিয়ের মাঝখানে এই সিফাত কে আসতেই হলো? সোফায় বসে ফোন স্কল করছে হিমেল ওর পাশে এসে ধপাস করে বসে পড়ে সিফাত।
‘ আহা ভাই কী আনন্দ রে তোদের আগে আমার বিয়ে হবে ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে।’
সিফাতের এমন কথায় চোয়াল শক্ত করে ফেলে হিমেল, ওকে রাগানোর জন্য সিফাত আবার বলে।
‘ তা বুঝলি তার মানে তোদের আগে আমাদের বাসর এরপর হানিমুন এরপর বাচ্চা আহা আহা শান্তি।’
এই বার আর চুপ থাকতে পারলো না হিমেল হাতে থাকা ফোন টেবিলের উপর রেখে উড়াধুড়া মা’ইর দিতে লাগল সিফাত কে।
‘ এই হিমেল ভাই আমার কী করছিস ছাড় লাগছে।ও বাবা গোঁ তোমার বোনের ছেলে বিয়ে হওয়ার আগেই আমাকে মে’রে ফেললো।
‘ চেঁচা আরো চেঁচা,এই দেখ সিফাত তাড়াতাড়ি তুই বিয়ে কর এরপর আমি চড়ুই পাখি কে নিজের বাড়ি নিতে চাই।’
‘ হবে হবে বিয়ে তো অবশ্যই হবে, তবে ম্যাডাম কে আগে রাজী করাতে হবে।’
‘ ওহো ম্যাডাম?তার মানে তোর পাত্রী ঠিক আছে?’
‘ আরে হ্যা রে ভাই ওর বউ ঠিক করা আছে।’
বাড়ির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলে উঠে মাহমুদ।
‘ হেই মাহমুদ কী অবস্থা ভাই?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তা তোদের কী খবর?’
‘ কী আর হবে বিয়ে করব ভাবছি।’
সিফাতের এমন ভাবলেশহীন জবাবে হাসে মাহমুদ, সিফাত আর হিমেলের পাশেই বসে মাহমুদ। হিমেল কপাল চুলকে জিজ্ঞেস করে।
‘ মাহমুদ তা আমাদের ভাবী সাহেবা কে?’
‘ আর কে স্কুলের ম্যাডাম কিন্তু ওরে তেমন একটা পাত্তা দেয় না ছে।’
এই কথাটা শুনে মাহমুদ এর মাথায় চা’টি মা’রে।
‘এই তোকে কে বলেছে রে পাত্তা দেয় না,এটা কেন বলছিস না তোকে কোনো মেয়ে পাত্তা দেয় না।’
‘জ্বি না আমাকে এমন একজন পাত্তা দেয় যাকে তোরা কল্পনাও করতে পারিস না।’
মাহমুদ এর কথা কর্ণ স্পর্শ করতেই হিমেল আর সিফাত একে অপরের দিকে তাকায়, মাহমুদ বুঝতে পারে সে মুখ ফসকে কী বলে ফেলছে।
‘ হে হে তোরা এভাবে দেখছিস কেন?’
হিমেল নিজের জ্যাকেট খুলে পাশে রেখে বলে।
‘ দাঁড়া দেখাচ্ছি কেন এভাবে তাকাচ্ছি?তুইও ভেতরে ভেতরে কত কী করছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন পর্যন্ত হয়নি?বেডা হা’রা’মি।
মাহমুদ সোফা থেকে উঠে পড়ে, এদিকে হিমেল আর সিফাত ওর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
‘ নো নো ব্রো এটা ঠিক নয়।পালাওওওওওও
চলবে.. ….