তোমার নামে সন্ধ্যা নামুক [পর্ব-১০]

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে বাড়ির চারপাশে,এই শীতে সবচেয়ে বেশী ফুল ফুটে আর ইয়া বড় ফুলের বাগান যদি বাড়ির সাথে থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই।

পুরো বাড়ি ফুলের গন্ধে মে’তে থাকে অন্য রকম ব্যাপার স্যাপার।

রুম জুড়ে গোলাপ ফুলের গন্ধে ঘুম ভেঙ্গে গেলো চৈতির,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল ওর বিছানার পাশে অনেক গুলো ফুল রাখা আছে সাথে আছে একটি চিরকুট। কম্বলের উপরেও বেশ কিছু ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে।

‘ এগুলো আমার কে দিল?’

সাইড টেবিল থেকে চিরকুট টা নিয়ে খুলে,তাতে স্পষ্ট ভাবে লিখা আছে।আই লাভ ইউ চড়ুই পাখি প্লীজ রাগ করো না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই বিয়ে করতে চাই।’

তপ্ত শ্বাস ফেলে চৈতি,সে জানে এটা হিমেল এর কাজ,লোকটি কী তাকে সত্যি ভালোবাসে? না কী শুধু কাছে পেতে চায়? কিন্তু কেউ এত বছর অপেক্ষা করে থাকবে শুধু কাছে পাওয়ার জন্য? অনেক কিছু ঘোরপাক খাচ্ছে চৈতির মাথায় কিন্তু কোনো কিছুই মিলিয়ে উঠতে পারছে না। অবশেষে বিছানা ছেড়ে উঠে হঠাৎ পর্দার আড়াল থেকে হিমেল বেরিয়ে আসে।

‘ চড়ুই পাখি।’

ডাক শুনে সেই দিকে তাকিয়ে অবাক হয়।

‘ হিমেল ভাই আপনি আমার ঘরে কী করছেন?’

‘ অপেক্ষা করছি,কখন আমার চড়ুই পাখির ঘুম ভা’ঙবে?’

‘ওহ্ রোমিও হওয়ার চেষ্টা করছেন? কিন্তু শুনে রাখুন আমি জুলিয়েট না বুঝলেন?’

হিমেল দেয়ালের হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে।

‘ রোমিও হতে চাই না কারণ ওরা এক সাথে বাঁচতে পারেনি কিন্তু আমি আমার চড়ুই পাখির সাথে হাজার হাজার বছর বাঁচতে চাই।’

‘ উঁহু সব মুখে মুখে।

‘ তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে সব করে দেখাই?’

‘ দরকার নেই, আচ্ছা এখন বলুন আপনি এখানে আছেন বাসার কেউ কিছু বলেনি?’

‘ কী বলবে? আমি তো আমার বউয়ের ঘরে এসেছি।’

‘ আহারে, এখনও বিয়ে হয়নি বুঝলেন?আগে ভাইয়ের বিয়ে এরপর আমাদের বিয়ে তাই এখন এসব দুষ্টুমি আর স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।যান আমি ফ্রেশ হবো।’

‘ তো হো আমি কী না করেছি?’

‘ আপনি থাকলে কী করে করব?’

‘ বোকা চড়ুই পাখি আমার, তুই তো ওয়াশরুমে যাবি না কী?

হিমেল এর মুখে বোকা ডাক শুনে নিজেকে সত্যি ভীষণ বোকা মনে হচ্ছে চৈতির।মাথা চুলকে,টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।হিমেলও নিজের বোকা চড়ুই পাখির এমন কান্ড দেখে মুচকি হেসে বসার ঘরে পা বাড়ায়।

‘‌ শুনো না আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে?’

চায়ের কাপ আফতাব রহমান এর হাতে দিতে দিতে বলে আসিফা।নিউজ পেপারে মুখ গুজে বসেছিলেন আফতাব,আসিফার কথায় পেপার রেখে চায়ের কাপ হাতে নেয়।

‘ হুম বলো শুনছি।’

‘ বলছিলাম কী চৈতির আগে তো সিফাতের বিয়ে দেওয়ার কথাটা উঠেছে তা কোনো মেয়ে কী পছন্দ করেছো?’

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আফতাব রহমান বলেন।

‘ না এখনো দেখিনি তবে তাড়াতাড়ি দেখা উচিত সামনের মাসে চৈতির আর হিমেল এর বিয়ের কথাটা ভাবছি তাহলে তো এ মাসেই সিফাতের বিয়েটা দিয়ে দেওয়া উচিত।’

‘ হুম আমিও তো এটাই বলছি।’

আনোয়ার এসে আফতাব এর পাশে বসে।

‘ শুভ সকাল ভাইয়া শুভ সকাল ভাবী।’

‘‌শুভ সকাল ভাই,বস।’

‘ শুভ সকাল ভাইয়া তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি।’

শান্তা আরেক কাপ চা নিয়ে আসে।

‘ যেতে হবে না আপা,এই যে আমি নিয়ে এসেছি।’

‘ আয় ছোট,বস আমারা একটু জরুরি আলোচনা করছি আমাদের মনে হয় তোদের ও থাকা উচিত।’

আনোয়ার রহমান জিজ্ঞেস করেন।

‘ কী নিয়ে কথা হচ্ছে ভাবী?’

‘‌না বলছিলাম যে চৈতির আগে যদি সিফাতের বিয়েটা হয়ে যেতো তাহলে বেশ ভালো হতো।’

আনোয়ার শান্তা রহমান এর থেকে চায়ের কাপ নিয়ে বলে।

‘ হ্যা এটা ভালো হবে, বাড়িতে একজন নতুন সদস্য আসবে।’

‘ কিন্তু আপা আর ভাইয়া সিফাতের কী কোনো পছন্দ আছে সেটা জেনে ছিলে ভালো হতো।’

আফতাব রহমান শান্তা কে উদ্দেশ্য করে বলে।

‘ হ্যা শান্তা বোন তুমি ঠিকই বলেছ। আমাদের একবার সিফাত এর সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত।’

‘ চাই না আমি বিয়ে করতে তাও আবার আপনাকে।কথাটা ভালো করে বুঝে নিন,আর প্লীজ দয়া করে আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করুন।’

সিফাত সকালে আরুহীর বাড়িতে যায় সেখানে বিয়ের কথা বলে রোশনা বেগম কে কিন্তু আরুহী এসে না করে দেয়।

‘ আরু মা একটু শান্ত হও?’

‘ না মা ওনাকে বুঝতে হবে না হলে কখনোই উনি বোঝার চেষ্টা করবেন না,আর আমি চাই না তুমি এসবের মধ্যে থাকো।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে তোরা দু’জনে কথা বলে নে আমি বরং নাস্তার ব্যবস্থা করছি।’

রোশনা বেগম রান্না ঘরে যায়, সিফাত এতক্ষণ রোশনা বেগম ছিলেন বলে চুপ করে ছিল এখন বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।

‘ সমস্যা কী আমাকে বিয়ে করলে?’

কথাটা শান্ত ভাবেই জিগ্গেস করে সিফাত,ওর কথায় স্মিত হাসে আরুহী।

‘ এখনও জিজ্ঞেস করছেন কেন না করছি? আপনি কি একটুও বুঝতে পারছেন না? আরে আমি বিয়েই করতে চাই না সেটা আপনি হন বা অন্য কেউ।’

এবার সিফাত ভীষণ রেগে যায়, নাকের পাটাতন ফুলে উঠে।

‘ বিয়ে তো করতেই হবে সেটা নিজের ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়।’

আরুহী বুকে হাত গুজে বলে।

‘ ঠিক আছে নিয়ে আসুন নিজের ফ্যামেলি কে আমিও দেখবো ওরা আমাকে মেনে নেয় কী না?’

‘‌নেবে অবশ্যই, আমার পছন্দ মানেই ওদের পছন্দ।’

রোশনা বেগম খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হন,তখন আরুহী ওনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন।

‘ মা আয়োজন করো ওনার ফ্যামিলি আসবেন আমিও দেখতে চাই আমাকে মেনে নেয় কী না?কাল ওরা আসবে তুমি ওদের জন্য সবথেকে ভালো ব্যবস্থা করবে যাতে কোনো ত্রু’টি না থাকে।’

আরুহী নিজের রুমে চলে গেলো, সিফাত মনে মনে ভীষণ খুশি অবশেষে হয়তো ওর আর আরুহীর বিয়েটা হবে।আজকেই বাড়িতে গিয়ে সবাই কে আরুহীর কথাটা বলবে ভাবছে সিফাত,রোশনা বেগম কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাড়ির পথে।

___________

ভার্সিটিতে যাচ্ছে নিশা চৈতি আর তুফা,চৈতি তুফা হাসাহাসি করছে কিন্তু নিশা একদম চুপচাপ আছে। হঠাৎ নিশা কে এত্ত চুপ থাকতে দেখে চৈতি জিজ্ঞেস করে।

‘ কী রে নিশা?তোর কী মন খারাপ?’

নিশা ইশান এর কাল বলা কথা গুলো নিয়ে ভাবছিল, একদমই মন ভালো নেই তার।ইশান কে খুব ভালোবাসে নিশা কিন্তু তবুও তা বুঝাতে পারছে না ওকে, হয়তো বা বুঝেও না বোঝার ভান করছে ইশান। চৈতির কথায় ঘোর কে’টে যায় নিশার।

‘ হ্যা বল কী যেন বলছিলি?’

চৈতি আর তুফা একে অপরের দিকে তাকায়,ওরা যে জিগ্যেস করল তা হয়ত নিশার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

তুফা নিশা কে হাতের কুনুই দিয়ে হালকা ধা’ক্কা দিয়ে বলে।

‘ এই পা গ লী তোকে যে চৈতি প্রশ্ন করল সেটা তুই শুনিস নি?’

‘‌না আসলে আমি,,,,।’

‘ কী হয়েছে তোর নিশা? হঠাৎ চুপচাপ কেন? আমি যতটা বুঝতে পারছি তুই মন খারাপ না থাকলে চুপ করে থাকিস না, এখন বল হয়েছে টা কী?’

চৈতির প্রশ্নের কী উত্তর দেবে তা জানা নেই নিশার, এখন যদি সে ইশান এর কথা বলে তাহলে যদি চৈতি রাগ করে তখন কী হবে? না না এসব বলা যাবে না।

‘ না রে চৈতি সত্যি কিছু হয়নি এমনি ভালো লাগছে না তাই আর কী?’

চৈতি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে যে কিছু তো হয়েছে যা নিশা একদমই বলতে চাইছে না।

নিহা আর আরিফের সম্পর্ক দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে কিন্তু বাড়ির সবার সামনে হাসি মুখে থাকার চেষ্টা করে নিহা ওদিকে ভেতরে ভেতরে কষ্ট হচ্ছে ওর। আজকাল আরিফ সবসময় বিজি থাকে একটুও সময় দেয় না তাকে আগে কত ভালোবাসত কিন্তু এখন? হয়ত সময়ের সাথে সাথে মানুষও বদলে যায় তেমনি আরিফও বদলে গেছে।এই তো সেদিন আরিফ কে ফোন করে বাড়িতে ডেকেছিল চৈতি আর ইশান এর কথা বলার জন্য যা শুনে প্রচন্ড রকম রেগে যায় আরিফ।ওর কাছে মনে হয় শুধু টাইম পাস করেছে নিহা,কথা গুলো ভাবতেই ভেতর থেকে এক রাশ দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।সেই সকালে আরিফ অফিসে বেরিয়ে গেছে এখনও কল করেনি,ওর তো মনেও নেই হয়তো একজন অপেক্ষা করে বসে আছে। শেষমেশ আর না পেরে বিছানা থেকে ফোন নিয়ে নিহাই আরিফ কে কল করে কিন্তু বিজি দেখাচ্ছে।থামে না নিহা বার বার কল করে অবশেষে ফোন রিসিভ করে আরিফ, ভীষণ খুশি হয় নিহা কিন্তু তা মূহুর্তের মধ্যে উবে যায় আরিফের ক’র্ক’শ শব্দে বলা কথা গুলো।

‘ কী হয়েছে নিহা বার বার কল করছো কেন? অফিসে এসেছি কাজ করছি তা কি জানো না?’

নিহা সব গুলো কথা গিলে নিল ,হাসি মুখে বলে।

‘ আসলে আরিফ আমি তোমাকে ভীষণ মিস করছি প্লীজ আজকে বাড়ি চলে আসবে?’

‘ দেখো নিহা এসব বাচ্চাদের মত আচরণ বন্ধ করো বুঝলে?কাজ আছে অফিসে অনেক এখন এসব ফেলে আমি তোমার সাথে গল্প করতে পারবো বাড়িতে গিয়ে।’

কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় আরিফ কিছু বলার সুযোগই দিল না নিহা কে। চুপ হয়ে যায় নিহা,কি করবে? কিছু করার নেই ভালোবাসে আরিফ কে তার এই ক’টু কথা গুলো স’হ্য হচ্ছে না।চোখ দুটো ভরে আসে নিহার, হয়তো ভালোবাসা এমনি প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আর গুরুত্ব থাকে না

চলবে ……..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *