তোমার নামে সন্ধ্যা নামুক [পর্ব-২০]

মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে ফিহাদ,তার সাথে যে কয়টা লোক ছিল তাঁরাও পড়ে আছে। ওদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে সিফাত, হিমেল ও মাহমুদ। তিনজনের মুখেই ডেবিল মা’র্কা হাসি।

ফিহাদ কিছুটা ভীত স্বরে বলে।

‘‌দেখ‌ সিফাত আমি তো ভিডিও দিয়ে দিছি তাহলে এখন কেন মা’রছিস?’

সিফাত তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে।

‘ ভিডিও দিয়েছিস বলেই এখনও বেঁচে আছিস না হলে কী হত তোর সত্যি কল্পনা করতে পারবি না।’

হিমেল এগিয়ে এসে বলে।

‘ চল চল এখন আরুহীর কাছে গিয়ে ওর পা ধরে ক্ষমা চাইবি।’

ফিহাদ চিৎকার করে উঠল।

‘ না ওর কাছে আমি কেন ক্ষমা চাইব?’

পিছন থেকে মাহমুদ হুঁ হুঁ করে হেসে উঠে।

‘ ভাই ওর মনে হয় এই মা’রে শিক্ষা হয়নি আরো কিছু ডোজ দিতেই হবে।’

হিমেলও মাহমুদ এর সাথে বলে।

‘ ঠিক বলেছিস,লাথ কী ভূত ভাতছে নাহি মানতে।’

সিফাত হিমেল আরো দু তিনটে লাথি মা’রতেই চেঁচিয়ে উঠল ফিহাদ।

‘ ভাই ভাই ছেড়ে দে আমি চাইব ক্ষমা।’

___________

উইলচেয়ারে বসে আছে চৈতি, ভীষণ মন খারাপ তার। না কোথাও যেতে পারছে, না হাঁটতে পারছে। সারাদিন ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে তাকে।কাল বিকেলে হিমেল ওকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করিয়ে এনেছে,ডক্টর বলেছেন কিছু দিন সময় লাগবে ঠিক হবার। ততদিন সারাক্ষণ বাড়িতে বসে থাকো নয়ত পড়াশোনা করো।

কথা গুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চৈতি।আসিফা রহমান খাবার নিয়ে আসেন, মেয়ে কে এভাবে মনম’রা দেখে বুঝতে বাকি নেই ওর সমস্যা হচ্ছে।

‘ চৈতি।’

পিছন ঘুরে নিজের মা দেখে খুশি হয় চৈতি।আসিফা রহমান এগিয়ে আসে ওর কাছে।

‘ সকাল থেকে কিছুই খেলি না, এখন খেয়ে নে মা।’

‘ ভালো লাগছে না মা, ভীষণ খারাপ লাগছে।’

‘ জানি তো, কিন্তু পা ভালো করতে হলে একটু তো সহ্য করতেই হবে। আচ্ছা আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।’

আসিফা রহমান নিজের হাতে চৈতি কে খাইয়ে দেয়।

‘ এক কাজ করিস, বিকেলে হিমেলের সাথে তোর ফুপির বাসায় ঘুরে আসিস তাহলে মন ভালো হবে,আর ওখানে তো তুফাও আছে।’

‘ না আন্টি আমি তো এখানেই।’

চৈতি আসিফা পিছনে তাকিয়ে দেখে তুফা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

‘ তুফা তুই এখানে?’

‘ ইয়েস মাই ডিয়ার বেস্টি,তোর মন ভালো করতে চলে এলাম।একে বারে বিকেলে তোকে নিয়ে বাসায় যাব।’

আসিফা রহমান বেশ খুশি হয় তুফা কে দেখে।

‘ হ্যা তুফা মা ভালো করেছিস এখানে এসে সত্যি তুই থাকলে চৈতির মনটা ভালো করতে পারবি।’

‘ ওর মন খারাপ ছট করে দূর করে দেব, এখন তুমি যাও আমি আছি ওর সাথে।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে।’

আসিফা রহমান রুম থেকে বেরিয়ে যান,তুফা চৈতির পাশে বসে গল্প শুরু করে।চৈতিও বেশ উ’পভো’গ করছে সময়টা।

‘ এসব কী হ্যা?’

বিছানায় শুয়ে ছিল নিহা, সকাল থেকে শরীর টা কেমন করছে,মাঝে মাঝে বমিও হচ্ছে তার মধ্যে আরিফ রুমে ঢুকে আসে।ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে ট্রাউজার নিয়ে বাথরুমে চলে যায়, চু’মু দেওয়ার বিষয়টি বেশ ভালো লাগে নিহার। একদম আগের মত হয়ে গেছে আরিফ,আগেও ওকে রোজ দুবেলা করে চু’মু দিত। অফিসে যাওয়ার সময় আর ফিরার পরে, তাহলে সব কিছু আগের মতো হচ্ছে। ভেবে ভীষণ খুশি হয় নিহা, কিন্তু সেই খুশী বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। বিছানায় পড়ে থাকা আরিফের ফোন হাতে নিল নিহা, মনে মনে ভাবল পুরো ছবি গুলো দেখার কথা। আরিফের ফোনের পাসওয়ার্ড জানা আছে নিহার তাই কোনো বাধা ছাড়াই ফোন অন করে গ্যালারিতে প্রবেশ করে যা দেখল তাতে ওর পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে মনে হলো।

চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে,হাত দুটো থর থর করে কাঁপছে।শরীরে শক্তি পাচ্ছে না সে মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রাণপাখি টা বেরিয়ে যাবে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিহা কে এমন অবস্থায় দেখে অবাক হয় আরিফ কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘ নিহা কী হয়েছে?কী হয়েছে তোমার?’

হাতে থাকা ফোন এগিয়ে দেয় আরিফের দিকে আর ছুড়ে দেয় এক গাধা প্রশ্ন।

‘ কেন করলেন আপনি এমন? এগুলো কী?’

আরিফ নিহা কে বোঝানোর চেষ্টা করে বলে।

‘ নিহা আমি তোমাকে বলতেই চেয়েছিলাম তার আগেই তুমি, আচ্ছা যাই হোক আমি তোমাকে সব কিছু বলব।’

‘ না না আমি আপনার এই প্রেম কাহিনী শুনতে চাই না,কেন করলেন এমন? আমার ভালোবাসার কী কমতি ছিল?’

নিহা কেঁদে কেঁদে প্রশ্ন করে,আরিফ নিজেকে ভীষণ অপরা’ধী মনে।

‘ আমি সত্যি ভুল করেছি প্লীজ আমাকে মাফ করে দাও, বিশ্বাস করো আর কখনও এমন ভুল করব না।’

সরে যান আমার কাছ থেকে আমি চাই না আপনাকে,থাকব না আমি এখানে।’

নিহা যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় কিন্তু শরীরে একটু শক্তি নেই ফলস্বরূপ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে ধরে ফেলে আরিফ।

‘‌নিহা কী হয়েছে?নিহা? মা কোথায় তুমি?নিহা অজ্ঞান হয়ে গেছে।মাআআআ।

‘ কবে যে বিয়েএএএএ হবেএএএএ।’

ইশানের এমনতর কথা শুনে মুখ টিপে হেসে দেয় নিশা,অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশান।নিশা যখন হাসে তখন ইশান খুব মনোযোগ সহকারে ওর দিকে তাকায়, বার বার খেয়াল করে নিশা হাসলে গালের মধ্যে খানে টোল পড়ে।

‘ কী হলো?কী দেখছেন?’

‘ আপনাকে দেখছি ম্যাডাম।’

‘ ওমা আমাকেও দেখেন আপনি?’

‘ বিয়ে করব, এরপর আপনি আমার তার পর সব বলব কী দেখতে হয় আর কী দেখতে হয় না।’

‘ নির্ল’জ্জ মানুষ।’

‘ আপনি দায়ী ম্যাডাম আমাকে এমন করার পেছনে।’

‘ উঁহু।’

‘ আই লাভ ইউ।’

‘ আমি ভালোবাসি দুই।’

‘ আমার জান।’

‘ এবার জান কে ঘরে নিয়ে নিন।’

‘নেব আর কিছু দিন পর,চৈতি আর সিফাতের বিয়ে হয়ে যাক এরপর তুমি আর আমি।’

হাতের ফোন বেজে উঠে,নিহা অজ্ঞান হয়ে গেছে শুনে ভয় পেয়ে যায় নিশা,ইশান তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে ওদের বাড়িতে ড্রপ করতে যায়।

আবছা আলো পড়ছে রুমে,তার মধ্যে সিফাতের মুখের দিকে আদো আদো চোখে তাকিয়ে আছে আরুহী।ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগেই ফিহাদ কে নিয়ে এসে ওর পায়ে ধরায়,ওর সামনেই কয়েক বার লা’থি ঘু’ষি মা’রে।

ভয়ে হাত পা কাঁপছে ওর।

রুমে হিমেল এসে বলে।

‘ চল ভাই সব রেডি আছে আরুহী কে নিয়ে যাই।’

ওদের কথার মধ্যে আরুহী বলে উঠে।

‘ আমি কোথাও যাবো না। আপনারা সবাই যান এখান থেকে।’

হিমেল সিফাত কে ইশারায় বলে আরুহীর সাথে কথা বলতে। সিফাত এগিয়ে যায়, হিমেল আর মাহমুদ বাইরে অপেক্ষা করে।

‘ একটু পরেই আমাদের বিয়ে,সো এই নাও শাড়ি আর তৈরি হয়ে এসো।’

সিফাত আরুহীর দিকে লাল রঙের একটা শাড়ি এগিয়ে দেয় কিন্তু আরুহী নেয় না, উল্টো দু পা পিছিয়ে যায়।

‘ না, আমি বিয়ে করব না।’

সিফাত ফুস করে শ্বাস টেনে নিয়ে হঠাৎ স-জোরে থা’প্প’ড় বসায় আরুহীর নরম গালে। মৃদু স্বরে আ’র্ত’না’দ করে উঠে আরুহী, চেঁচিয়ে বলে সিফাত।

‘ সমস্যা কী তোর?বিয়ে করব ভালোবাসি তবুও এত কিছু এত নাটক কেন করছিস?দেখ হয়ত তৈরি হয়ে আয় নয়ত আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’

সিফাতের চেঁচামেচি শুনে রুমে আসে হিমেল মাহমুদ।

‘ কী হয়েছে? সিফাত কী করছিস এসব?’

হিমেল সিফাতের ঘাড়ে হাত রেখে বলে। সিফাত রেগে বলে।

‘ ভাই কী বলব ওকে? বোঝার চেষ্টাই তো করে না।’

‘ কুল কুল।’

‘‌এই মাহমুদ এখন মেজাজ খারাপ করিস না।’

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হিমেল ও মাহমুদ। সিফাত রাগে বাইরে চলে যায়,আরুহীর চোখ দুটো ভরে উঠে।গালে ছুঁয়ে দেখে ক্ষী’ণ ব্য’থা অনু’ভব হচ্ছে।

ডক্টর চেকআপ করে গেছে , বাড়িতে আনন্দের মিছিল শুরু হয়েছে প্রায়।নিহা প্রেগন্যান্ট শুনে শান্তা রহমান প্রতিবেশী সবাই কে মিষ্টি বিতরণ করতে বলে আনোয়ার রহমান কে, আফতাব রহমান ও আনোয়ার রহমান বাজারে সবচেয়ে ভালো মিষ্টির দোকানে মিষ্টি নিতে যায়।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখের পানি ফেলছে নিহা, নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু,,,,। এখন যে সে আর একা নয়,তার সাথে আরেকজন আছে।যার জন্য এত দিন অপেক্ষা করেছে,বুকটা ফেটে যাচ্ছে,তিথি আর আরিফের এক সাথে ক্লোজ ছবি গুলোর কথা বার বার মনে পড়ছে।চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।

‘ প্লীজ নিহা, আমাদের মধ্যে নতুন কেউ আসছে আমরা কী আগের মত হতে পারি না?’

রুমে এসে বিছানায় বসে আরিফ,নিহার হাত দুটো নিজের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় নিয়ে কথাটা বলে।’

নিহা তি’ক্ত দৃষ্টি নিক্ষে’প করে তার দিকে।নিহা পাশে থাকা গ্লাসটি ছু’ড়ে ফ্লো’রে ফেলে দেয়। ঝং’কার শব্দ তুলে টু’করো টু’করো আকার ধারণ করে গ্লাসটি,গ্লাসের দিকে ইশারা করে বলে।

‘ এই যে গ্লাস ভেঙ্গে গেছে এক প্রকার টুকরো হয়ে গেছে আপনি কী জোরে দিতে পারবেন? বলুন?’

‘ জোরে দেব?’

নিহা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে

‘ পারবেন না, ঠিক তেমনি আমার বিশ্বাস গুলো কে আপনি গ্লাসের মত ভে’ঙে টু’করো টু’করো করে দিয়েছেন। কিন্তু আফসোস আমি পারছি না চলে যেতে বাড়ির সবাই খুশি,কি করে সবাই কে এভাবে ছেড়ে দেই?কেন করলেন এমন?’

‘‌ মাফ করে দে আমায়, আমি সত্যি ভুল করেছি। আমাদের বাচ্চার কসম আর কখনও এমন হবে না বিশ্বাস কর?’

নিহা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে,কী করবে এখন? ভালোবেসে বিয়ে করেছিল কিন্তু এখন সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে।

চলবে……..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *