রহমান বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসেছে বড় সড় সমাবেশ তাও সেটা নিশা আর ইশান কে নিয়ে। তানিয়া এসে নিজের মায়ের সাথে নিশা আর ইশানের বিয়ের কথা বলে, আসিফা রহমান বেশ খুশি হন এবং তা শান্তা রহমান এর নিকট পেশ করে, শান্তা রহমান কী বলবে বুঝতে পারে না।তাই আনোয়ার রহমান কে সব বলেন, প্রথমে আনোয়ার রহমানের বেশ রাগ হয় নিশা আর ইশানের সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু তা খানিকক্ষণ এর জন্য। আফতাব রহমান আনোয়ার রহমানের সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলে।
‘ দেখ আনোয়ার, আমার মনে হয় আমাদের নিশার জন্য ইশানের চেয়ে ভালো ছেলে তুই আর পাবি না।’
‘ কিন্তু ভাইয়া ইশানের সাথে আগে থেকেই ওর সম্পর্ক এটা আমার একদম ভালো লাগে নি, ওরা যদি আগে কথা বলত তাহলে কী আমি না করতাম?’
‘ আরেহ ওরা তো ছোট, বোঝাতে পারেনি হয়ত। এখন এসব না ভেবে চল নিচে, সবাই কে গিয়ে বল তুই বিয়েতে রাজি আছিস।’
‘ ঠিক আছে ভাইয়া, তুমি যখন ওকে ভালো বলছ তাহলে আমিও রাজী।’
নিচে এসে বিয়ের কথা পাকা হয়,নিশা খুব খুশি হয় তার একটা মজার জন্য যে এভাবে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি।নিশা ইশানের দিকে তাকায়,ইশান চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে স্পষ্ট রাগের চাপ।নিশা বুঝতে পেরেছে তার মজার জন্য ইশান রেগে আছে কিন্তু এটাতে তো তাদের ভালোই হয়েছে।
আনোয়ার রহমান বলেন।
‘ ঠিক আছে আমার তাহলে আর কোনো অমত নেই বিয়েতে।’
আসিফা রহমান খুশীতে বলেন।
‘ তাহলে আমাদের চৈতি আর নিশার বিয়ে যদি এক সঙ্গে হয় তাহলে কেমন হয়?কী গোঁ তুমি কিছু বলো?’
আফতাব রহমানও এটাই ভাবছিলেন।
‘ হ্যা হ্যা এখন যদি আনোয়ার আর শান্তা রাজী হয় তাহলে ঠিক আছে।’
শান্তা নিশার মাথায় হাত রেখে বলে।
‘ আরে ভাইয়া আপা কী বলো তোমরা এসব?এক সাথে বিয়ে হলে তো আরও ভালো হয়।’
সবাই রাজী, রুম্পা সিদ্দিক মাঝ খান থেকে বলে উঠেন।
‘ আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমি চাই ইশান আমাদের ওখানে বিয়ে পর্যন্ত থাকুক যাতে দুই জামাই এক সাথে বউ নিয়ে যেতে পারে।’
তানিয়া গিয়ে রুম্পা কে জড়িয়ে ধরে বলে ।
‘ এটা ঠিক বলেছো ফুপি, আমার দুই ভাই এক সাথে বিয়ে করে বউ নিয়ে যাবে।’
_______________
স্কুল ছুটি হয়েছে চারটের দিকে, সিফাত আরুহী কে ফোন করে বলেছে অপেক্ষা করতে।প্রায় আধঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে সে, কিছু দূর তাকিয়ে দেখে সিফাত গাড়ি নিয়ে এসেছে। এরপর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
‘ হ্যলো মিসেস সিফাত রহমান।’
আরুহী ভেং’চি কে’টে হাঁটতে লাগল,সিফাতও ওর পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে। কিছু দূরে ফুচকা ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে, সিফাত ছট করে বলে।
‘ এই যে মিসেস সিফাত রহমান, ফুচকা খাবেন?’
আরুহী মুচকি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়ে, সিফাত আঙ্গুল দেখিয়ে বলে।
‘ মনে আছে আপনার সাথে কিন্তু ফুচকা খাওয়ার সময়ই দেখা হয়েছিল।’
আরুহীর ঠিক মনে আছে,স্কুল থেকে ফেরার পথে ফুচকাওয়ালা কে দেখে খেতে চলে যায় সে, সেদিনই সিফাতের সাথে দেখা হয় তার। পলকহীন চোখে তাকিয়ে ছিল তার দিকে তখন বেশ অস্বস্তি লেগেছিল তার। ঠিক পরের দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে আবারও সিফাত কে দেখে তখন ততটাও গুরুত্ব দেয় না তাকে এরপর যখন বিকেলে ফেরার সময় ওর সামনে চলে এসে এক নিঃশ্বাসে বলে।
‘ এই যে মিস আরুহী, আমি তোমাকে ভালোবাসি তাও নিজের থেকে বেশী এর মানে এটা নয় তুমি আমাকে পাত্তাই দেবে না। তোমাকে প্রথম দেখায় পছন্দ হয়েছে দ্বিতীয় দেখায় মন কে’ড়েছ,আর আজ তৃতীয় দিন তোমাকে ভালোবাসি।’
সেদিন বেশ চমকে গেছিল সে কিন্তু আজ সেই মানুষটি তার স্বামী , ভালোবাসে তাকে।
‘ হুম মনে আছে আমার,পা গ ল ছিলেন আপনি।’
সিফাত মাথা চুলকে বলে।
‘ ইয়েস আপনার জন্য, তাহলে আজকেও নিবেদন করি?’
‘ কী?’
‘ ভালোবাসা, সেদিন তো চমকে গেলে আজ তো বলে নিবেদন করব।’
‘ ইশ্ শখ কত?’
‘ ওয়েট আসছি আমি।’
‘ আরেহ,,,।’
সিফাত দৌড়ে চলে যায়,আরুহী একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু সময় পর কেউ একজন ওর সামনে বড়সড় ফুলের তোড়া ধরে,ভ্রু কুঁ’চকে তাকায় আরুহী। ফুলের পিছন থেকে বেরিয়ে আসে সিফাত, মুখে তার প্রশান্তির হাসি।
‘ এই যে মিস আরুহী, তুমি কী আমার মিসেস হবে?’
‘ কিন্তু আমি তো অলরেডি আরেকজনের মিসেস।’
‘ কার?’
‘ মিস্টার সিফাত রহমানের।’
‘ হায় মা’রগায়ি।’
‘ এবার চলুন দেরী হচ্ছে তো।’
‘ না আগে ফুচকা খাবো এরপর শপিং এরপর বাড়ি।’
‘ কিন্তু,,,।’
‘ উঁহু কোনো কিন্তু না, চলুন দিদি মনি।’
‘ পা গ ল।’
_____________
চৈতি আর হিমেল পার্কে বসে আছে, আজকের দিনটা অন্য রকম। হিমশীতল হাওয়া বইছে ,হাতে হাত রেখে আকাশ দেখছে দু’জনে।
‘ ভালোবাস আমাকে চড়ুই পাখি।’
চৈতি আড় চোখে তাকায় হিমেলের দিকে , আর বলে।
‘ জানি না।’
বিস্মিত হয়ে যায় হিমেল, আমারও চৈতি কে শুধায়।
‘ তাহলে বিয়ে কেন করছো? আমার সাথে কথা কেন বলো?’
স্মিত হাসে চৈতি, দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আকাশ পানে।
‘ ভালোবাসি কী না জানি না,তবে আপনাকে আমার লাগবে। আপনাকে ছাড়া এক মূহূর্তের জন্য থাকতে পারব না,এটা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে হ্যা ভালোবাসি।’
চোখ বন্ধ করে নেয় হিমেল,প্রাণ ভরে শ্বাস টেনে নেয় ভেতরে। শক্ত করে ধরে চৈতির হাত দুখানি।
সকাল থেকে নিশা ইশানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, অনেক বার কল করা সত্ত্বেও ইশান রিসিভ করছে না। শেষমেষ আর কিছু না পেয়ে ওদের বাড়িতে চলে যায়,ইশান আজকে অফিসে যায়নি। বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে,তার মধ্যে আগমন ঘটে নিশার।
‘ ও মা নিশা তুই,আয় আয় ভেতরে।’
তানিয়া নিশা কে দেই বেশ খুশি হয়,রিতে খেলে করছে ।রিতে কে কোলে নিয়ে ইশানের ঘরের দিকে যায় নিশা,রুমে কারো প্রবেশ টের পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখে নিশা রিতু কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইশান খুব একটা রিয়্যাক্ট করে না, নিজের মত শুয়ে থাকে। নিশা তপ্ত শ্বাস ফেলে জিগ্গেস করে।
‘ কী হয়েছে আপনার?কত বার কল করেছি রিসিভ করেননি কেন?’
ইশান ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
‘ ভালো লাগে নি তাই।’
নিশার রাগ হয় তবুও তা কন্ট্রোল করে আবারো জিজ্ঞেস করে।
‘ হঠাৎ কী হলো? এমন কেনো করছেন?’
রিতু ছটফট করে নিশার কোল থেকে নামার জন্য,নিশা রিতু কে নামিয়ে দেয়।রিতু দৌড়ে তানিয়ার কাছে চলে যায়। ওদিকে ইশানের কোনো হেলদুলই নেই, নিশা বুকে হাত গুজে দাঁড়ায়।
‘ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি? আপনি তো কোনো রেসপন্স করছেনই না?’
ইশান নিশা কে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে, বিছানায় পড়ে যায় নিশা,ওর উপর জট করে উঠে পড়ে ইশান। হাত দুটো তার শক্ত করে চেপে ধরে।
‘ এইইইইইইইইইইইইইইইইই আপনি কী করছেন?’
‘ হুস একদম চুপ, এখন আমি বলব তুমি শুধু শুনবে আর উত্তর দেবে।’
‘ কিন্তু,,।’
‘ চুপ বললাম না? বিয়ে ঠিক হয়েছিল?’
নিশা ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে ইশানের দিকে,ইশান ধমক দিয়ে বলে।
‘ বিয়ে ঠিক হয়েছিল?’
নিশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
‘ না, আমি তো শুধু মজা করেছিলাম।’
ইশান ফুস করে শ্বাস টেনে নিয়ে,নিশার ঘাড়ে কামড়ে দেয়, মৃদু স্বরে আ’র্ত’না’দ করে উঠে নিশা।
‘ ও মা,কী করলেন এটা ব্যথা পেলাম আমি।’
ইশান চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে।
‘ ব্যথা লেগেছে কষ্ট হচ্ছে, ঠিক তেমনি আমারও ওই তোমার বলা কথা গুলো থেকে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল, পাগল পাগল লাগছিল নিজেকে।’
‘ সরি।’
ইশান উঠে বিছানায় বসে,নিশাও ওর পাশে উঠে বসে।
‘ প্লীজ রাগ করবেন না সরি, কিন্তু একটা জিনিস তো ভালো হয়েছে।’
‘ কী?’
‘ এই যে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।’
‘ পে’ত্নি কে বিয়ে করব না।’
‘ না করলে র’ক্ত চুষে খাবো।’
ইশান নিশার ঘাড়ে হাত রেখে বলে।
‘ বেশী ব্যথা লেগেছে?’
‘ উঁহু চলে গেছে,এই যে আপনি ছুঁয়ে দিলেন।’
ইশান নিশা কে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।
_________________
দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে এসেছে তুফা চৈতি আর নিশার, পরীক্ষার দু দিন পরেই ওদের বিয়ে।কাল থেকে পরীক্ষা শুরু পড়াশোনা করছে তিনজন,এই কয়েক দিন হিমেল ইশান আর মাহমুদ ওদের কে একদমই বিরক্ত করেনি।ওই মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়।
আজ পরীক্ষার শেষ দিন, বিকেলে এসে সবাই বিয়ের শপিং করতে যাবে।
চলবে……