হঠাৎ কারও স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায় চৈতির,উঠে রিতিমত চমকে উঠে সে।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিমেল, তাও এত রাতে।
চৈতি আমতা আমতা করে বলল।
‘ আপনি এখানে কী করছেন?তাও আবার এত রাতে?’
হিমেল হাতে থাকা অনেক খানি হলুদ চৈতির মুখে লাগিয়ে দেয়,চোখ বন্ধ করে নেয় চৈতি। অনুভব করার চেষ্টা করে হিমেলের অনুভূতি গুলো, হিমেল চৈতির কাছে এসে ফিসফিস করে বলে।
‘ বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও চড়ুই পাখি,কাল বিকেলের পর থেকে তুমি শুধুই আমার।’
চৈতির গালে লজ্জার আভা ছড়িয়ে যায়, হিমেল ওর হাত ধরে টেনে জানালার পাশে নিয়ে যায়। আকাশ দেখিয়ে বলে।
‘ ওই দেখো চাঁদ, আকাশের বুকে চাঁদ। আকাশ নিশ্চয়ই বলে চাঁদ শুধু আমার, ঠিক তেমনি কাল বিকেলের পর আমিও এটা বলব তুমি শুধু আমার।’
‘হায় রোমিও আমার, এত উ’ন্মা’দ হলে হবে?’
‘ জানি না তবে ভালোবাসি ভীষণ।’
এটা বলে হিমেল চৈতি কে জড়িয়ে ধরে,চৈতির হঠাৎ মনে পড়ে,নিশা তো ওর সাথেই ছিল তাহলে কোথায় গেলো?
‘ এই নিশা কোথায়?’
হিমেল চৈতি কে আরও শক্ত করে ধরে বলে।
‘ ও ওর হবু স্বামীর কাছে।’
‘ তার মানে ইশানও এসেছে?’
‘ হুমমমমম।’
ছাদের কাছে দাঁড়িয়ে আছে নিশা, সাথে আছে ইশান।ওকে জড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে আছে দুজনে।
সিফাত আলতো করে নিশার গালে হলুদ ছোঁয়া দিয়ে দেয়।
‘ কাল বিয়ে,আজ প্রেম করব। বিয়ের পর তো বউ হবে, এখন না হয় রাতটা প্রেমিকা হয়ে থাকো।’
নিশা নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল রাখে সিফাতের হৃৎপিণ্ড বরাবর, অনুভব করার চেষ্টা করে।
‘ আপনার হৃদয় স্পন্দন এত তীব্র গতিতে বেড়ে চলেছে।’
সিফাত টান দিয়ে নিজের বুকের কাছে নিশার কান চেপে ধরে বলে।
‘ তোমার স্পর্শে হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেছে।’
‘ আমার প্রেমিক পুরুষ, প্রেমিক স্বামী হয়ে যান।’
______
‘ মন খারাপ করে না তো, আমাদেরও বিয়ে হবে।’
তুফা মন খারাপ করে বিছানায় শুয়ে ছিল,তার মধ্যে ফোন আসে মাহমুদের তাতে যেন মন খারাপ তীব্র হয় তুফার।
‘ হুম বলুন।’
মাহমুদ বালিশে হেলান দিয়ে বলে।
‘ কী হলো মন খারাপ?’
‘ ভীষণ মন খারাপ আপনার আর আমার বিয়ে হলো না কিন্তু ইশান ভাইয়া আর নিশার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো?’
ওর মন খারাপ তাই ওর মন ভালো করার জন্য কথাটা বলে মাহমুদ, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না তুফা অভিমানী মেয়ে হয়ে বলে।
‘ তুমিও মায়ের সাথে কথা বলতে পারতে তাহলে আমাদের বিয়েটাও হয়ে যেতো।’
‘ উঁহু বুঝো না কেন? ওদের এক সাথে বিয়ে হবে তাই ওদের আনন্দ কম, আমাদের একা বিয়ে হবে তখন আরও বেশী আনন্দ হবে।’
‘ হুম।’
‘ এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’
‘ তুমিও খেয়ে নিও।’
_____________
সকাল থেকে আয়োজন শুরু হয়েছে, একদিনেই বিয়ে হবে, ওদিকে ইশান আর হিমেল এক সাথে বর যাত্রী নিয়ে আসবে।আগে গায়ে হলুদ এরপর মেহেদী এবং বিকেলে বিয়ে।
স্ট্যাজে বসে আছে চৈতি ও নিশা, দু’জনে এক রকম হলুদ শাড়ি পড়েছে,সাথে ফুলের তৈরি গয়না। নাচে গানে মে’তে আছে রহমান বাড়ি।
আনোয়ারা রহমান সবার আগে দুই নাতনি কে হলুদ ছোঁয়া দেয়, দু’জনে আনোয়ারা রহমানের পা ধরে সালাম করে নেয়।
‘ দুই নাতনির বিয়ে দেইখা যামু ভাবি নাই রে আফতাব।’
আফতাব রহমান এগিয়ে এসে মায়ের হাত ধরে,আনোয়ারা রহমান আবার বলেন।
‘ ওরা সুখে থাকলেই আমার শান্তি।’
আফতাব রহমান বলে।
‘ চলো আম্মা বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকো না, বসবে চলো।’
‘কী হইছে তোর? তুই আইতে চাইলি না কেন?’
আফিদা বেগম রেগে আছেন হিমানির উপর,কত বার করে বলা হয়েছে তাকে আসার কথা কিন্তু আসেনি। এখন ফোন করে সবার খবর নিচ্ছে সে,তার মধ্যে আফিদা রহমান জিগ্গেস করেন ওর হয়েছে কী?
হিমানি আমতা আমতা করে বলে।
‘ কই কিছুই তো হয় নাই আম্মা, আচ্ছা আমি রাখি পরে কথা কমু নে।’
হিমানি ফোন রেখে দেয়,সে ওখানে যাওয়ার সাহস পায়নি।বার বার হিমেলের হাতে খাওয়া থা’প্প’ড়ের কথা মনে পড়ে যেতেই আ’তকে উঠে সে।
‘ শুনো শুনো।’
সকাল থেকে সিফাত আরুহীর পিছু পিছু ঘুরছে,বার বার লজ্জা দিচ্ছে সবার সামনে।ভাবী হিসেবে আরুহী দুই ননদের জন্য হলুদ বে’টে ফেলে, তখন থেকেই সিফাতের একটাই কথা।তাকে একটু হলুদ লাগাবে, এখন রুমের মধ্যেও আসার পর থেকে তাকে ডেকেই চলেছে।
‘ এমন কেন করছেন আপনি? আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে আর কী?’
সিফাত ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।
‘ কিন্তু আমার ইচ্ছে হচ্ছে লাগানোর,প্লীজ লাগিয়ে দেই।’
লোকটির বাচ্চামো দেখে মুখ টিপে হাসে অরুহী, এরপর ইশারা করে বলে লাগানোর কথা। সিফাত খানিকটা হলুদ নিয়ে ওর গালে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়, মৃদু কেঁপে উঠে আরুহী।মুচকি হেসে নিজের গালের সাথে সিফাতের খোঁ’চা খোঁ’চা দাড়ি ওয়ালা গালে ঘ’ষে দেয়।
‘ ইশ্ আমার বউ টা রোমান্টিক হয়ে গেছে।’
‘ পা গ ল একটা, এখন যান আমি রেডি হই।’
‘ আচ্ছা।’
________
মেহেদী দেওয়া হচ্ছে,নিশা ইশানের প্রথম অক্ষর হাতের মধ্যে লিখেছে, ওদিকে ফিমেল বলেছে ওর হাত খালি রাখতে হিমেল আসছে।ভয় পেয়ে যায় চৈতি,এত মানুষের মধ্যে ফিমেল এখানে আসবে?কেউ যদি দেখে কী ভাববে?একটু সহ্য হয় না ওনার,আর কিছু সময় পরেই তো ওদের বিয়ে তাহলে আরেকটু অপেক্ষা করতে পারছে না?
হিমেল চৈতি কে ফোন করে বলেছে ছাদে যাওয়ার জন্য,চৈতি সবার থেকে লুকিয়ে ছাদে চলে যায়। হিমেল অলরেডি ওখানে ওর জন্য অপেক্ষা করে অপেক্ষা করছে, হিমেল কে দেখে চোখ সরাতে পারছে না চৈতি। আজকে যেন লোকটি আরো বেশি সুদর্শন দেখতে হয়ে গেছে।
হিমেল ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে এগিয়ে যায় চৈতির দিকে,কাছে গিয়ে নাকে নাক ঘ’ষে দেয়।
‘ হাত এগিয়ে দাও চড়ুই পাখি।’
চৈতি নিজের নরম হাত গুলো এগিয়ে দেয় তার দিকে, ঠোঁ’ট ছুঁ’ইয়ে দেয় হাতের তালুতে, আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় চৈতি।বড় বড় অক্ষর দিয়ে নিজের নাম লিখে দেয় হিমেল।
‘ এত পা গ লামী কেন?’
হিমেল স্মিত হেসে বলে।
‘ ভালোবাসি বলে।’
‘ এত ভালোবাসা স’হ্য হবে না।’
‘ হবে ।’
দেখতে দেখতে বিয়ের সময় এগিয়ে আসতে লাগল,লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে চৈতি আর নিশা,আরুহী আর তুফা মিলে দু’জন কে সাজিয়ে দেয়। দু’জনেই নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে, মনের মধ্যে একটু ভয় কাজ করছিল কিন্তু তা দূর করে দিলেন শান্তা রহমান ও আসিফা রহমান।দুই মেয়ে কে বিয়ে নিয়ে সম্পর্ক নিয়ে বুঝিয়ে বলেছে, দুজনেরই মন কিছুটা খারাপ,সবসময়ের জন্য চলে যাচ্ছে।
বিয়ের বাজানা বাজিয়ে বরযাত্রী নিয়ে আসে ইশান ও হিমেল, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে। আফতাব রহমান নিজের আদরের মেয়ে কে হঠাৎ এভাবে বিদায় দেবে আশা করেননি। ভেতরে কষ্ট অনুভব হচ্ছে কিন্তু তা কাউকে প্রকাশ করে নি।
‘ কী গোঁ কষ্ট হচ্ছে?’
আসিফা রহমান প্রশ্ন করে আলতো চোখের পানি ফেলে আফতাব রহমান বলেন।
‘ মেয়েটা চলে যাবে ভাবতে পারছি না।’
‘ উঁহু কোথায় যাচ্ছে? তোমার বোনের কাছেই তো যাচ্ছে।যখন তখন দেখতে পারবে আসতে পারবে সে, তোমাকে এভাবে দেখলে তো চৈতি কষ্ট পাবে।’
‘ হ্যা আসিফা তাই তো নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে মেয়ে কে হাসি মুখে বিদায় দিচ্ছি।’
‘ হুম এবার চলো বিয়ের সময় তো চলে এলো।’
‘ হ্যা চলো।’
দেখতে দেখতে বিয়ে হয়ে গেলো চৈতি ও নিশার,হরেক রকম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ঘর। বিছানায় বসে আছে চৈতি, লজ্জা ভ’য় দুটো তাকে একে বারে চে’পে ধরেছে।রুমে প্রবেশ করে হিমেল,চৈতির কাছে এসে বসে। ঘোমটা সরিয়ে চৈতির মুখ দর্শন করে সে।
‘ মাশআল্লাহ বউ।’
মুচকি হাসি দেয় চৈতি, হিমেল কোনো কিছু না বলে তার হাতে চু’মু খায়। কপালে ঠোঁ’ট ছুঁ’ইয়ে বলে, চৈতি জড়িয়ে ধরে হিমেল কে।ধীর কন্ঠে বলে।
‘ আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি রোমিও।’
‘ ভালো তো বাসতেই হবে,কারণ তুমি আমার জুলিয়েট।#তোমার_নামে_সন্ধ্যা_নামুক যে সন্ধ্যা শুধু তুমি আর আমি থাকব।’
‘ আর ভালোবাসব।’
ইশান আর নিশা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, ইশান নিশার কোমড় জ’ড়িয়ে আছে।
‘ আমার আমার আমার আমার।’
রুমে আসার পর থেকে ইশান হাজার বার নিশা কে বলেছে সে তার,প্রতি বারই নিশা হেসে দেয়।
ইশান ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁ’ট ছুঁইয়ে দেয় নিশার ঠোঁ’টে, বারংবার কেঁ’পে উঠে সে।
‘ ভালোবাসি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।’
ইশানের জড়ানো গলায় কথা গুলো পা গ ল করে দিচ্ছে নিশা কে,ব্যাকুল হচ্ছে তার মন।
‘ আমিও ভালোবাসি,বুকে নিন আমায়।’
ইশান নিশা কে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় এরপর বুকে নেয় তাকে আর বলে।
‘ এমন একটা সন্ধ্যা নামুক সে সন্ধ্যায় আমি তুমি এক সাথে ডুবে থাকব।’
‘ চাই চাই চাই, আপনাকে চাই।’
নিশার কথা শুনে হাসে ইশান।
_____
‘ চলো বাসর করি।’
সিফাতের এমন কথা শুনে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠে আরুহী।
‘ আপনি জানেন আপনি আসলেই একটা পাগল?’
‘ হুঁ জানি ,পা গ ল পাগলামি করবে এটাই স্বাভাবিক।’
আরুহী সিফাতের হাতের মুঠোয় হাত রেখে বলে।
‘ আপনার নামে একটা সন্ধ্যা নামুক সে সন্ধ্যায় আপনি আমি হাতে হাত রেখে হাঁটব, গল্প করব।’
সিফাত স্মিত হেসে বলে।
‘ সে সন্ধ্যায় আদরে আদরে ভরিয়ে দেব আমার জান কে।’
পেটে মুখ গুজে দেয় সিফাত,দুহাতে শক্ত করে ধরে আরুহী সিফাত কে।
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে তুফা আর মাহমুদ,তুফা মাহমুদের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে।
‘ মাহমুদ।’
‘ হুম।’
‘ তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি।’
‘ আমিও তো অনেক ভালোবাসি,আর সবসময় চাই এভাবে তুমি আমার ঘাড়ে মাথা রাখবে। দু’জন মিলে আকাশ দেখব, জোৎস্না স্নাত রাত্রিতে এক সঙ্গে থাকব।’
‘ আই লাভ ইউ।’
‘ আই লাভ ইউ টু।’
______
‘ ভালোবাসি তো আমি আপনাকে, কেন এমন করেন?’
নিহার কান্নারত কন্ঠে কথা গুলো শুনে বুকের ভেতর ভারি হয়ে আসছে আরিফের, দুহাতে আগলে নেয় নিহা কে।
‘ সরি জান,আই প্রমিজ আর কখনও এমন হবে না। আমি ভালোবাসা পেয়েও ভুল পথে হেঁটেছি।’
‘ আর কখনও এমন করলে আমি কিন্তু ম’রে যাব।’
‘ হুস, এসব বলতে নেই, অনেক ভালোবাসি।’
ভালোবাসা ভীষণ সুন্দর অনেক সময় তা প্রকাশ করাই ভালো আবার কখনো কখনো অপ্রকাশিত সত্য।প্রিয় মানুষ কে আপন করে পাওয়ার মধ্যে যতটা সুখ শান্তি পাওয়া যায়,তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনুভূতির তৈরি হয় তা ভালোবাসা ছাড়া প্রকাশ করা অসম্ভব।
***সমাপ্ত***