নবোঢ়া [পর্ব-২৯]

রাইহার ঘুম ভাঙল একটা অদ্ভুত স্বপ্নের মাঝখানে। বিছানায় উঠে বসে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে রইল। মনের পর্দায় তখনও নাচছে স্বপ্নের টুকরো টুকরো ছবি।

সকালের মিষ্টি রোদ্দুর বারান্দার রেলিং টপকে ঘরে ঢুকেছে। রাইহা তাড়াতাড়ি একটা বই তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাগানের দিকে। দূরে খামারবাড়ির সামনে লোকজনের ভিড় চোখে পড়ল। কিছু একটা ঘটেছে নিশ্চয়ই, মনে মনে ভাবল সে।

বাগানের পথ ধরে হেঁটে পুকুরঘাটের সিঁড়িতে গিয়ে বসল। হাতে একটি ইংরেজি প্রেমের উপন্যাস। গতকাল থেকে এই বইয়ের পাতায় ডুবে আছে সে। মধ্যরাত অবধি চোখ রেখেছিল পাতার পর পাতায়। এক তরুণীর অসামান্য প্রেমের গল্প, একজন পরিণত বয়সী পুরুষের প্রতি। ভোরের স্বপ্নেও দেখল নিজেকে এমনই এক মধ্যবয়স্ক মানুষের সান্নিধ্যে, যদিও তার মুখটা এখন আর মনে করতে পারছে না। সকাল হতেই জলখাবার না খেয়েই ছুটে এসেছে পুকুরঘাটে, বইটার শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলার তাগিদে। নিজের এই আচরণে মনে মনে হাসল রাইহা।

পরনে তার ললিতার দেওয়া কমলা রঙের সালোয়ার-কামিজ। কত যত্ন করেন তিনি রাইহাকে। নিজের মা-ও কখনো এতটা স্নেহ দেখাননি। শুধু বাবার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তাকে নিজের কাছে টেনে রাখার চেষ্টা করেছেন সারাজীবন।

সকালের নরম রোদে রাইহা উপন্যাসের পাতা খুলল। ঠিক যখন গল্পের দুই নায়ক-নায়িকা পরস্পরের কাছাকাছি আসছে, হঠাৎ পেছন থেকে জাওয়াদের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “এখানে আমি বসি।”

রাইহা চমকে উঠে বলল, “তো?”

জাওয়াদ রাইহার থেকে তিন ধাপ উপরে বসে কপট গাম্ভীর্যে বলল, “তুমি বসেছ কেন?”

রাইহা বিস্ময়ে চোখ বড় করে বলল, “বসলে কী হয়েছে?”

জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর নিজের সঙ্গেই কথা বলার মতো বলল, “থাক, বাদ দাও।”

তারপর খামারবাড়ির দিকে তাকাল সে। দূর থেকে সবাইকে পিঁপড়ের মতো দেখাচ্ছে। দুই জমিদারই সেখানে উপস্থিত, তাই সে যাচ্ছে না। কী করে যে এতগুলো গরু একসঙ্গে মারা গেল!

জাওয়াদ কিছুক্ষণ নীরবতা ভেঙে বলল, “নাভেদ পাটোয়ারীর কী খবর? কবে তোমাকে নিয়ে যাবে?”

রাইহা এমনভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল যেন বিদ্যুৎ খেয়েছে। তার চোখে-মুখে বিস্ময়ের ছাপ, “আমি কী করে জানব?”

“তুমিই তো জানবে।” জাওয়াদের কণ্ঠে ব্যঙ্গাত্মক, “তোমরা কী প্রেম করছ না?”

রাইহা পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে গেল। তার চোখদুটো বড় বড় হয়ে উঠল বিস্ময়ে। কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল নীরবতায়। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “কে বলল আমরা প্রেম করছি?”

জাওয়াদের চোখে-মুখেও এবার বিস্ময়ের ছোঁয়া। রাইহা আর নাভেদের নিত্যদিনের কথোপকথন, হাসি-ঠাট্টা, একসাথে বেড়ানো দেখে সে ভেবে নিয়েছিল, দুজনের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। কিন্তু রাইহার প্রতিক্রিয়া তাকে হতভম্ব করে দিল।

“প্রেম করছ না?” তার কণ্ঠে এবার বিশ্বাস করতে না পারার সুর।

“আশ্চর্য!” রাইহার ঠোঁটের কোণে একটা ছোট্ট হাসি। “না।”

জাওয়াদ নিজের ধারণাকে যাচাই করার চেষ্টা করল, “অহ্, নাভেদ পাটোয়ারী তো ভীষণ সুদর্শন। তাই ভেবেছিলাম…” কথাটা শেষ না করেই থেমে গেল সে।

“উঁহু, বরং বেশি ভালো। আমার এতো ভালো মানুষ ভালো লাগে না।”

“অদ্ভুত!”

“সত্যি বলছি। আসলে বড্ড সহজ লাগে নাভেদকে। আমি চাই জীবনে একটু জটিলতা, একটু চ্যালেঞ্জ। সব কিছু যখন একদম পারফেক্ট থাকে, তখন কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মানুষের মধ্যে কিছু দোষ থাকবে, কিছু অসুবিধা থাকবে এইসব নিয়েই তো জীবন। লন্ডনে থাকতে দেখেছি, ওখানে সব কিছু এতো অর্গানাইজড, এতো পারফেক্ট তবুও কোথায় যেন প্রাণ নেই।”

একটু হেসে বলল, “আমি চাই, খুঁত থাকুক, কিছু বাধা থাকুক, কিছু মিলবে কিছু মিলবে না, এই যে একটা টানাপোড়েন, এটাই তো আসল জীবন। নাভেদের মধ্যে সেই জটিলতাটা কোথায়?”

জাওয়াদ অবাক হয়ে শুনছিল। বিলেত ফেরত এই মেয়েটা যে এতো গভীর ভাবে ভাবতে পারে, তা আগে টের পায়নি। ঠোঁট উল্টে হাতের তালু দিয়ে তালির মতো আলতো করে একটা শব্দ তুলে বলল, “এই প্রথম তোমার কোনো কথা আমার ভালো লাগল। “

“কেন? আমি কি সবসময় খারাপ কথা বলি?”

রাইহা ঘুরে বসতে গেলে হঠাৎ করেই কোলের উপর থেকে উপন্যাসটা গড়িয়ে পড়ল সিঁড়িতে। জাওয়াদের চোখ পড়ল বইটির ওপর।

“এটা কি আমার বই না?”

রাইহা একটু উদ্ধত ভঙ্গিতেই বলল, “তাতে কী হয়েছে?”

“আমাকে না জানিয়ে আমার বই নিয়ে এলে কেন?”

“তুমি তো কাউকে তোমার বই ধার দাও না।”

“তাই বলে লুকিয়ে নিয়ে আসবে?”

রাইহা চুপ করে রইল। তারপর বইটা কুড়িয়ে নিয়ে, প্রায় ফিসফিস করে বলল, “সরি।”

দুপুরবেলা। জমিদারবাড়ির খানার ঘরে নিস্তব্ধতা। প্রাচীন সেগুন কাঠের দীর্ঘ টেবিলটা মাঝখানে রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলের ওপর সাজানো খাবারগুলো চোখ জুড়োয়– ইলিশ মাছের ঝোল থেকে উড়ে আসা মশলার গরম সুবাস, লালচে-বাদামি রঙের ভুনা মাংসের থালা, সেইসাথে বেগুন ভর্তার মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। সোনালি রঙের টক-ঝাল লেবুর আচার কাঁচের পাত্রে ঝলমল করছে।

টেবিলের চারপাশে জমিদার পরিবারের সদস্যরা নীরব। ঘরের বাতাস ভারী। দাসীরা পা টিপে টিপে খাবার পরিবেশন করছে, তাদের পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না।

সুফিয়ানের পিছনে দাঁড়িয়ে গুলনূর তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করছিল। তার চোখে-মুখে নির্লিপ্ততা। সেই চিরচেনা লাজুক মেয়েটি কোথাও হারিয়ে গেছে। জাওয়াদ চামচ দিয়ে শুধু ভাতের দানাগুলো এদিক-ওদিক করছে। মাঝে মাঝে চোখ তুলে তাকাচ্ছে গুলনূরের দিকে। কিন্তু গুলনূর তার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। তার হাতে তালপাতার পাখা একই ছন্দে দোল খাচ্ছে, চোখ স্থির, মুখে কোনো ভাব নেই।

“গুলনূর…” জাওয়াদ গলা পরিষ্কার করে ডাকল, “মাছের ঝোল দাও তো একটু।”

গুলনূরের হাতের পাখা একই তালে চলছে। সে শুধু পাশের দাসী রাশেদার দিকে তাকিয়ে ঈষৎ মাথা নাড়ল। রাশেদা তৎপর হয়ে মাছের ঝোল এগিয়ে দিল।

জাওয়াদ আবার বলল, “গুলনূর, একটু পানি দাও।”

গুলনূর এবারও নীরব। আরেক দাসী এগিয়ে এল পানির গ্লাস নিয়ে।

“গুলনূর!” জাওয়াদের গলায় এবার স্পষ্ট ধমক, “আমার জন্য তাজা লেবুপাতা আনো।”

গুলনূরের মুখে তখনও সেই একই অভিব্যক্তি। শুধু চোখের ইশারায় আমিনাকে পাঠিয়ে দিল লেবুপাতা আনতে।

“কালো মরিচ দাও!” জাওয়াদ এবার প্রায় চিৎকার করে উঠল।

গুলনূর পাখা নাড়া থামাল না, শুধু রাশেদাকে ইশারা করল।

“লঙ্কার বাটা!” জাওয়াদের গলায় এখন আগুন।

গুলনূর পাথরের মূর্তি। সামান্য একটু মাথা নেড়ে আরেকজনকে পাঠাল।

ঘরের বাতাস আরও ভারী হয়ে উঠল। জাওয়াদ হঠাৎ উঠে দাঁড়াল, নকশা করা চেয়ারটা এমন জোরে ঠেলল যে টেবিলের কাচের গ্লাস কেঁপে উঠল।

“কথা শোনার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছ নাকি?” তার গলা কাঁপছে রাগে, “কী হয়েছে তোমার? জবাব দাও!”

ললিতা তার স্বামী সুফিয়ানের পাশে বসে মৃদু হাসছেন। রাইহা আর জুলফার চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক। “গুলনূর…” রাইহা ফিসফিস করে ডাকল, “এমন করছ কেন তুমি?”

সুফিয়ান এতক্ষণ নীরবে খাচ্ছিলেন। এবার শান্তভাবে বললেন, “জাওয়াদ, একটু ধৈর্য ধরো। দেখছ না মেয়েটা বাতাস করছে? এক সঙ্গে কতগুলো কাজ করবে?” একটু থেমে আবার বললেন, “তাছাড়া আমাদের এমনিতেই অনেক সমস্যা চলছে। এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা গরম করার কী দরকার?”

জাওয়াদ গজগজ করতে করতে হাত ধুয়ে বেরিয়ে গেল। গুলনূর তখনও দাঁড়িয়ে। তার হাতের পাখা থেমে গেছে। চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে বুক।

গ্রীষ্মের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। দিনভর তপ্ত বাতাস বয়ে গেছে জমিদারবাড়ির বাগান জুড়ে। এখন সন্ধ্যার আগমনে সেই দাবদাহ একটু কমেছে। কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল ঝরে পড়েছে পাথরের পথে, শুকনো পাতার মতোই খসখস শব্দ তুলছে পায়ের নীচে।

জাওয়াদ সেই পথ ধরে পায়চারি করছিল। হাত দুটো পিছনে বাঁধা, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। গুলনূরের নীরবতা তাকে গ্রাস করে রেখেছে। নিজের আচরণও তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কেন সে এমন করে চেঁচিয়ে উঠেছিল? হয়তো গুলনূরের অন্তরে কোনো কারণে আঘাত লেগেছে তাই চুপ হয়ে গেছে!

বাগানের দূর কোণে গোলাপ ঝাড়ের পাশে গুলনূর শুকনো পাতা জড়ো করছিল। জাওয়াদের পা নিজে থেকেই এগিয়ে চলল সেদিকে।

গুলনূরের কাছাকাছি এসে থামল সে। কয়েক মুহূর্ত নীরবতা। গরম হাওয়ায় ভেসে আসছে পাকা আমের গন্ধ।

“গুলনূর…” জাওয়াদের কণ্ঠস্বর এবার অনেক নরম, “দুপুরে কেন এমন করলে? কী হয়েছে তোমার? আমাকে বলো।”

গুলনূর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার ওরনার প্রান্ত থেকে খসে পড়ল কয়েকটা শুকনো পাতা। গরমে তার মুখ লাল হয়ে উঠেছে। একবার মাত্র চোখ তুলল সে জাওয়াদের দিকে। সেই চোখে কী যে ছিল – বেদনা, অভিমান, নাকি শুধুই শূন্যতা? বোঝার আগেই সে কুর্নিশ করল বিনীতভাবে৷ যেন একটা যন্ত্র, যার মধ্যে প্রাণের কোনো স্পন্দন নেই। তারপর পিছন ফিরল।

“গুলনূর!” জাওয়াদের কণ্ঠে এবার ব্যাকুলতা ফুটে উঠল।

গুলনূর এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। গরম হাওয়ায় তার কালো ওড়না উড়ল একটু। কিন্তু ফিরে তাকাল না। সে এগিয়ে চলল সামনের দিকে। তার পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেল ধীরে ধীরে।

জাওয়াদ দাঁড়িয়ে রইল নিশ্চল হয়ে। সূর্যের শেষ আলোয় তার ছায়া লম্বা হয়ে পড়েছে তপ্ত মাটিতে। গ্রীষ্মের সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। বাগানের গাছপালা থেকে টুনটুনি পাখির ক্লান্ত ডাক শোনা যাচ্ছে।

রাত নামতেই হাতে প্রদীপ নিয়ে জাওয়াদ যখন গুলনূরের ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল, তখন তার বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখল, গুলনূর হতচকিত হয়ে পড়েছে। চাঁদের আলোয় ভেজা তার মুখখানা আরও সুন্দর দেখাচ্ছিল। আথালি-পাথালি চোখ ঘুরিয়ে ওড়না খুঁজে গায়ে জড়িয়ে নিল।

জাওয়াদ ভেতরে পা রাখতেই গুলনূর দ্রুত কুর্নিশ করল। তার চোখে আগের মতো স্নিগ্ধতা নেই, বরং অচেনা শীতলতা। জাওয়াদের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।

“গুলনূর,” জাওয়াদের কণ্ঠস্বর নরম, প্রায় মিনতির সুরে, “কেন আমাকে এড়িয়ে চলছো? কী করেছি আমি?”

গুলনূর নীরব। তার ওড়নাটা মাথা থেকে পড়ে গেল। জাওয়াদ এগিয়ে এল, তার চোখে একাকিত্বের ছায়া।

“গুলনূর, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি। একবার তাকাও আমার দিকে।”

জাওয়াদ হাতের খাতা-কলমটি গুলনূরের দিকে বাড়িয়ে দিল। গুলনূর নিল না। সে একটা কাপড় ভাঁজ করতে লাগল, যেন জাওয়াদ সেখানে নেই। অথচ তার আঙ্গুলগুলো কাঁপছিল।

জাওয়াদ আর থাকতে পারল না। প্রদীপ ও খাতা-কলম পাশে রেখে সে গুলনূরের হাত ধরল। তার স্পর্শে গুলনূরের সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।

“তুমি কি বুঝতে পারছো না, আমি এখানে তোমার জন্যই এসেছি?”

গুলনূর জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিল। তার এই তেজ দেখে জাওয়াদ একটু থমকে গেল। পরক্ষণেই আবার তার হাত ধরল, এবার আরও শক্ত করে।

“গুলনূর, তোমাকে বোঝাতে পারছি না। তুমি যদি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও, তাহলে এই বাড়িতে আমার শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। এই বিশাল বাড়ি আমার কাছে কারাগারের চেয়েও ভয়ংকর মনে হবে।”

গুলনূর আবার হাত ছাড়াতে চেষ্টা করল, কিন্তু জাওয়াদ এবার ছাড়ল না।

গুলনূর মাথা তুলে তাকাল। জাওয়াদের চোখে যে আকুলতা দেখল, তা তাকে চমকে দিল। এই মানুষটা কেন এত ব্যাকুল হয়ে তার কাছে এসেছে? কেন তার একদিনের দূরত্ব সহ্য করতে পারছে না? তার বুকের ভেতর কেমন করে উঠল।

“তুমি যদি না বলো, আমি বুঝব কী করে?” জাওয়াদের কণ্ঠে কাতরতা, “তুমি ছাড়া আমাকে বোঝার মতো কেউ নেই গুলনূর।”

গুলনূর তখনো তাকিয়ে আছে। তার চোখে বিস্ময়। এই প্রথম কেউ তার জন্য এতটা ব্যাকুল হল। এই প্রথম কারও চোখে তার জন্য এতটা আকুলতা দেখল।

গুলনূরের চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুবিন্দুটি তখনও গড়িয়ে পড়েনি। জাওয়াদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সেটি ধরে ফেলল। নিমেষের মধ্যে তার আঙুল উঠে এল গুলনূরের চোখের কোণে। সেই কোমল স্পর্শে গুলনূরের সারা শরীর শিহরিত হয়ে উঠল। বুকের ভেতর যেন হাজার প্রজাপতি ডানা ঝাপটাচ্ছে।

এমন অনুভূতি সে আগে কখনও অনুভব করেনি।

কাঁপা হাতে খাতা-কলমটি টেনে নিল। প্রদীপের আলোয় তার আঙুলগুলো নাচতে লাগল কাগজের ওপর। ধীরে ধীরে সে লিখল – “আমি নিরুপায়! বড় বেগম আপনার থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।”

জাওয়াদ যখন সেই লেখা পড়ল, তার কপাল কুঁচকে গেল। চোখের তারায় জ্বলে উঠল আগুন। “তোমাকে বকেছে?” তার কণ্ঠে ক্রোধ। গুলনূর নীরবে মাথা নিচু করে রইল।

হঠাৎ জাওয়াদ ঘুরে দাঁড়াল ললিতার ঘরের দিকে। তার চোখের দৃষ্টি দেখে ভয়ে গুলনূরের বুক কেঁপে উঠল।

প্রদীপের শিখা নেচে উঠল একটা হাওয়ায়। গুলনূর দ্রুত তার পিছু নিল। রাতের অন্ধকারে তাদের দুটি ছায়ামূর্তি এগিয়ে চলল। একজন দৃঢ় পদক্ষেপে, অন্যজন লুকিয়ে ভীত, সংশয়াকুল পায়ে।

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *