‘‘ জার্মানীর সেরা একটি রিসার্চ কোম্পানির নাম হলো ‘সিএমসি’। এই রিসার্চ কোম্পানির বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এই কোম্পানি বেশ কয়েকবার এওয়ার্ডও পেয়েছে তাদের নিষ্ঠাবান কাজ এবং দারুণ সব রিসার্চের জন্য। বিভিন্ন বড় বড় বিজ্ঞানী এই কোম্পানির সাথে যুক্ত।
‘সিএমসি’ কোম্পানির অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা বাংলাদেশেও রয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানের হেড হলেন উরফান মহান।
এছাড়াও উরফান মহানের ‘আইও’ নামক একটি গ্রুপ রয়েছে। যেটার কিনা দেশের দুটি খাতে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণে বেশ বড়সড় ভূমিকা রাখে। ‘আইও’ কোম্পানির
ঔষধ শিল্পের ক্ষেত্রে বেশ নামকরা কোম্পানি রয়েছে এছাড়া খাদ্য এবং পানীয় শিল্পের একটি কোম্পানিও রয়েছে।
তবে তাদের সেসব কোম্পানিতে ঔষধ, খাদ্য-পানীয় এর তৈরি কম হয় আর ড্রাগসের উৎপাদন বেশি হয়।
এছাড়া একটি সরকারি হাসপাতালও রয়েছে। যেখানে চিকিৎসা কম মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারই বেশি হয়।
‘সিএমসি’ রিসার্চ কোম্পানির একজন সাইনটিস্ট হলো আশিন। ২০২০ সালের দিকে আশিন এই কোম্পানির বিডি শাখায় বিভিন্ন পশুপাখির ডিএনএ,মস্তিষ্ক, মানুষের মস্তিষ্কসহ আরও কিছু তথ্যদি নিয়ে বিশেষ এক এক্সপেরিমেন্ট করেছিলো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আশিনের এমন এক আবিষ্কার আছে যা শুধুমাত্র সিএমসি কোম্পানির বিজ্ঞানীরা, হেড কোয়ার্টারের সিইও, হেডরা, রিসার্চাররাই জানেন। তবে এক্সপেরিমেন্ট চলাকালীন সময়ে হুট করেই এই রিসার্চ বন্ধ করে দেয় আশিন। ’’
উৎসর পুরো কথাটা শুনলো নিহাল, বিশাল, শাওন। আর বিস্মিত নেত্রে একে অপরের দিকে কয়েকবার চাওয়া-চাওয়ি করলো। আশিন তো একজন ড.। তাহলে এ আবার বিজ্ঞানী হলো কিভাবে? উৎস আবারও গম্ভীর স্বরে বললো,“ তাদের অবৈধ সেই এক্সপেরিমেন্ট, ড্রাগস ব্যবসা সম্পর্কে কেউ জানে না এর কারণ তাদের হাত প্রচুর লম্বা। তার ওপর সরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেক এমপি মন্ত্রী নিজেরাই তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে। তাদের থেকেই ড্রাগস নেয়। উরফান মহান কালো বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি। কালো টাকার অর্ধেকাংশ এই ব্যাক্তিবর্গের পেছনেও দিয়ে থাকেন। পৃথিবীর অন্যতম এই রিসার্চ কোম্পানি থেকে বিভিন্ন কেমিক্যালের বাজারজাত রয়েছে। এসব কেমিক্যালে তারা বিভিন্ন প্রকার ড্রাগসসহ আরও ভয়ানক সব জৈব পদার্থ দিয়ে থাকে। আমাদের দেশের ‘আইও’ কোম্পানি এর অন্যতম নিদর্শন । এইসব কুকর্ম চলে আসছে আজ প্রায় বছর ছয়েক হলো। তাদের এই কুকর্মের ফলে দেশে গড়ে শতমানুষ মারা যায়। ’’
থামলো উৎস তারপর আবারও বললো,“ আমাকে সাবেক বিচারপতি এনামুল হক এসমস্ত কিছুই জানিয়েছেন। উনি নিজেও কোম্পানির বিরুদ্ধে কেইস তুলেছিলেন যেটা কিনা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একদম খালাস করে দেওয়া হয়। যার বিন্দুমাত্রটুকুও দেশের মানুষ জানে না। এমনকি এই কেইসটা সম্পর্কে কোনো ফাইলও পর্যন্ত নেই। আর সবচেয়ে নিষ্ঠুর কথা হলো এনামুল হককে তারা মেরে ফেলেছে। কিন্তু তারা এটা জানতো না, এনামুল হক মারা যাওয়ার আগে সমস্ত কথাই আমাকে জানিয়ে গেছেন। আমি গোপনে সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করলেও যখন বুঝলাম এদের আসলে ঠেকানো দায়। এদের অন্যরকম ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে হাজারও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের কিছুই করতে পারবো না। বাট বাট!’’
উৎস চোখের চশমা ঠিক করলো,“ তাদের কুকর্মের ভয়ানক শাস্তি কৌশলে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিতে পারি। ’’
এতকিছু শোনার পর শাওন, বিশাল আর নির্জন সোফাটায় বসে পড়লো। বিস্মিত ভাবটা এখনও কাটে নি। ওদের একপলক দেখে নিহাল উৎসর কাছে এগিয়ে গিয়ে নিজের বিস্ময়তা কাটিয়ে প্রশ্ন করলো,“ কিন্তু কিভাবে কি করবো? ওরাও তো আমাদের ব্যাপারে সব জেনে গিয়েছে।’’
“ জানুক। তো কি হয়েছে?’’
“ মারবি কি করে?ওরাই তো আমাদের মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আশিন তো মি. রবিনকে বাবা সাজিয়ে তোকেই মারতে গিয়েছিলো গ্রামে। হাসপাতালেরও যা নমুনা করলো।’’
উৎস রহস্যময় এক হাসি দিলো শুধু।
কপালের কাছে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে বললো,“ সে তো প্রতিশোধ নিতে গিয়েছিলো। বাবা মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ। প্রতিশোধের আগুনে দাও দাও করে জ্বলছে আশিন। হুশে নেই সে। এতবড় আবিষ্কার ছেড়ে দিয়েছে কোম্পানির হাতে।’’
নিহালের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে সব। উৎস হেসে বললো,“ একটা জিনিস কি জানিস? আমার বাপও ওই কোম্পানিরই একজন সদস্য ছিলেন।অথচ পরিবারের কেউই জানে না। শুধুমাত্র আমার মা আর মিসেস উষা বাদে। কল্পনা নিশিও মিসেস উষা আর আমার বাবার সন্তান নন। মেয়েটা তো সিএমসি কোম্পানির একজন এজেন্ট। যারা গ্রামের হাসপাতাল পরিচালনা করতো। মিসেস উষা বাবাকে বিয়ে করেছে গ্রামের হাসপাতালের অবৈধ ব্যবসার জন্য। তবে এরই মাঝে আবার হিরোইনের মতো এন্ট্রি নেয় আশিন। আর শান্তিপুর গ্রাম এবং তার পাশের গ্রামে থাকা কিছু মার্ক করা ব্যাক্তিকে মেরে দেয় যাদের কিনা অশোক তালুকদার খুব ভলোভাবেই চেনে।’’
হেসে উঠলো উৎস। গা কাঁপানো হাসি। এবার উৎস খুবই চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রদান করলো। আর তা হলো, “ উরফান মহান আমারই আপন মামা। আর মিসেস উষা! সে তো উরফান মহানের ছোট বোন। আর আমার মা উর্মিলা মহানই হলো উরফান মহানের বড় বোন।’’
চমকে উঠলো সবাই। উৎস এ কিসব কথা বলছে? শাওন চোখ বড় বড় করে বললো,“ উৎস তুই?’’
“ আমি! আমি তো আমার পরিবারের বিপক্ষে চলে গিয়েছি। মি. অশোক তালুকদার তখনও পর্যন্ত আমার পেশা সম্পর্কে জানতেন না যতক্ষণে উরফান মহান উনাকে এই বিষয়ে বলেছেন। বাবার সেই কুকর্ম সম্পর্কেও বাড়ির কেউ জানে না শুধু উচ্ছ, রূপক আর আমি বাদে।’’
বিশাল এক প্রকার হাসফাঁস করছে। বুকে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,“ তোর বাপ যে এমন আমি জীবনেও ভাবি নাই। এখন কি তুই তোর বাপরেও মাইরা ফালাইবি?’’
এবার উৎস নিরবতা পালন করলো কিয়ৎক্ষণ। উত্তরটা দিলো না। নিহাল বিষয়টা বুঝে উৎসকে প্রশ্ন করলো,“ যেহেতু এদের বিরুদ্ধে আমরাই কিছু করতে পারবো না, আর আমাদের ওপর নজর আছে তাদের তাহলে আমরা কিভাবে কি করবো? এতে তো পুরো দেশটাই শেষ করে দেবে এরা।’’
নিহালের কথা শুনে উৎস ইন্টারেস্ট পেলো কিছুটা। কপাল চুলকে বললো,“ সন্দেহ আমাদের ওপর তবে ওর ওপর তো আর না। ওই এক এক করে সবাইকেই মারবে। যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ’’
কথাটা বলে উৎস কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তর্জনী তুলে একজনের ছবি দেখালো। যা দেখে নিহাল, শাওন, বিশাল, নির্জন রীতিমতো অবাক। তাদের জ্ঞান যায় যায় অবস্থা।
________________________
“ তোর ১.৩৬ কেজি ওজনের মস্তিষ্ক দিয়ে আমি অনায়াসেই একটা ফুটবল বানিয়ে খেলতে পারবো। কি, দিবি না?’’
এমন কথা শুনে পিলে চমকে উঠলো লোকটির। পেছনে ফিরে তাকাতেই তার মুখ বরাবর একটা জুতো কেউ নিক্ষেপ করলো। হাত দিয়ে মুখ মুছে চেঁচিয়ে উঠলো,“ কোন শালীরে?’’
আশিন ডান দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যমা ভি আকৃতির করে একটা হাসি দিয়ে বললো,“ আমি আশিন।’’
লোকটি থতমত খেয়ে যায় আর সটান হয়ে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে কপালের ঘাম মুছে বিনম্রভাবে সালাম জানায় আশিনকে। আশিনও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে বলে,“ তা নাহয় বুঝলাম তবে একটু আগেই কি নামে সম্বোধন করলি আমায়?’’
লোকটা মাথা নিচু করে ফেলে। ভয়ে ঘাম ঝড়ছে অবিরত। চোখজোড়া এদিক ওদিক ঘুরছে। কতবড় ভুল সে করেছে। এখন কি আশিন তাকে মেরে ফেলবে? লোকটার হাটু কাঁপছে। আশিন পকেট থেকে ছুড়িটা বের করতেই পেছন থেকে প্রশান্ত দৌঁড়ে এসে অনুনয় করে বলে,“ ম্যাম, আজ অন্তত খুন খারাবি করবেন না প্লিজ।’’
“ তুমি কি আমার হাতেই নিজের প্রাণ দিতে চাইছো নাকি প্রশান্ত?’’
প্রশান্ত দমে যায়। আশিন ছুড়িটা হাতে তুলে লোকটার দিকে এগিয়ে যায়। লোকটার চারপাশে গোলাকার ভাবে ঘুরতে ঘুরতে জিজ্ঞাসা করে,“কোথায় রেখেছিস? ’’
লোকটা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশিনকে দেখতে থাকে। কাঁপাকাঁপা গলায় বলতে চাইলো,“ জানি না।’’ তবে গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। আশিন আবারও ধমকে বললো,“ কোথায় রেখেছিস?’’
লোকটা কেঁদে দিলো। হাটু গেড়ে আশিনের পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত দিয়ে কান্নারত অবস্থায় বলে,“আমি সত্যিই জানি না ম্যাম। আমি সত্যিই জানি না। পালিয়ে গেছে ও। পালিয়ে গেছে।’’
“ ওহ আচ্ছা।’’ বলেই লোকটার গলায় ছুড়িটা বসিয়ে দিলো নির্মমভাবে। রক্ত গলগল করে বের হলো। লোকটা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লো। প্রশান্ত চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো।
ঠিক সেমুহুর্তে আশিনের ফোন বেজে উঠলো। বিরক্ত আশিন প্যান্টের পকেট হতে ফোনটা বের করতেই আরও বেশি বিরক্ত হলো। কল রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত হতে কেউ বললো,“ কাকে মারলে শিনজান? ’’
আশিন দাতে দাত চেঁপে ক্রুদ্ধস্বরে বললো,“ তোর বাপকে মেরেছি। তোকে পেলে তোকেও মারবো।’’
উৎস হো হো করে হেসে উঠলো। ওর এই হাসি শুনে আশিন ফোনটা মাটিতে ছুড়ে মারলো। না ভাঙলেও স্ক্রিনে ফাটল ধরবে আর ফোনটা বন্ধ হয়ে যাবে।
“ এত কিসের রাগ তোমার শিনজান?’’
আশিন চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। উৎস পকেটে দু-হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তারই দিকে। আজ চোখে চশমা লাগানো। অন্যরকম বেশভুষা। উকিল উকিল ভাব যেন ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে। মুখমণ্ডল স্নিগ্ধ, শুদ্ধ। আশিন ভাবতে পারে নি এই ছেলে এখানে চলে আসবে। আশিন উৎসর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গা জ্বালানো হাসি দিয়ে রসিকতা করে বললো,‘‘ এই বেশভুষা কি আমাকে দেখানোর জন্য নাকি উকিল সাহেব?’’
উৎস এবার দু-হাত পকেট থেকে বের করে বুকে ভাজ করে অদ্ভুত ভাবে বললো,‘‘ ক্রিমিনালদের নিজের আসল রূপ দেখাতে খুব একটা সাচ্ছন্দ্যবোধ না করলেও তোমার ক্ষেত্রে সেটা ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠে। এর কারণটা অজানাই রয়ে গেলো।’’
আশিন মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে উৎসর একদম কাছে এগিয়ে এলো। মুখ উৎসর দিকে এগিয়ে চোখ পিটপিট করতে লাগলো। হুট করেই উৎসর প্যান্টের পকেটে থাকা গান’টা বের করে উৎসর দিকেই ঠেকালো আশিন। উৎস ঘাবড়ালো না বরং স্থির দৃষ্টে চেয়ে রইলো আশিনের দিকে। আশিন গান’টা উৎসর বুকে ঠেসে ধরলো। এরপর ধীরে সুস্থে উপরে ওঠাতে লাগলো। একটা সময় গিয়ে কপালের ডান পাশে গিয়ে থেমে মুখের হাসি মিলিয়ে দিয়ে শান্ত আওয়াজে বললো,‘‘ শ্যুট করে দেই?’’
‘‘ এটা তুমি কখনোই করতে পারবে না শিনজান। কারণ এই কাজ করার মতো তোমার ক্ষমতাই নেই। আর না আছে শক্তি।’’
আশিন বাঁকা হেসে বললো,‘‘ আমার শক্তি,ক্ষমতার ব্যাপারে তো দেখছি তোমার এখনও কোনো ধারণাই নেই।’’
বলেই গুলি করার জন্য রেডি হলো। আশিনের পেছন থেকে প্রশান্ত আর উৎসর পেছন থেকে শাওন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো।
চলবে,….