বন্ধ দরজা [পর্ব-২০]

তানভীরের ফরমায়েশ অনুযায়ী রান্না করে সোয়া একটার দিকে ড্রাইভারকে দিয়ে অফিসে খাবার পাঠিয়ে দিলো সুহায়লা। তানভীর বলে গিয়েছিলো সুহায়লাকে খাবার নিয়ে যেতে অফিসে। দুজনে একসাথে খাবে। এর মাঝে দুবার ফোন করেও কথাটা বলেছে তানভীর।কিন্তু সুহায়লা যায়নি। যাওয়ার বিন্দুমাত্র শখ নেই তার। খাবার পাঠিয়ে গোসল করতে গেছে সুহায়লা।

কলেজ থেকে কিছুক্ষন আগেই ফিরেছে

সাবা। মায়ের রুমে আসলো সে। উনি নামাজ পড়ছিলেন। মাত্রই সালাম ফিরিয়েছেন। মেয়েকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন

-” কি রে কিছু বলবি?”

-” সুহা এত সহজে চলে গেলো যে?”

-” হুম তানভীর জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।”

-” জোর করলেই ও যাবে কেনো? উনাকে জন্মের শিক্ষা দেয়া উচিত ছিলো ওর।”

-” তানভীর পুরোপুরি বদলে গেছে। ও আর আগের মত নেই। তুই দেখিস না ওর মাঝে কত পরিবর্তন এসেছে?”

-” হ্যাঁ সেটা দেখেছি। কিন্তু সুহাকে অহেতুক যে শাস্তি দুলাভাই দিয়েছে সেটার জন্য উনাকে কিছুদিন নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরানো দরকার। উনিও বুঝুক আমার বোনটা কত কষ্ট পাচ্ছে।”

-” ও মনে মনে ঠিক উপলব্ধি করতে পারছে ও অন্যায় করেছিলো।”

– হ্যাঁ করতে পারছে। সময় হারিয়ে। সুহার মাথা বিগড়ে দিয়ে এতদিনে বুঝেছে। উনার কি ধারনা জোর করলেই সুহার মনে ঢুকতে পারবে? কখনোই না। উনি যা করেছে এই জীবনে সুহা উনাকে মাফ করবে কিনা সন্দেহ আছে। এই যে উনার এই পরিবর্তন এসবের কিছুই সুহার নজরে পড়েনি। পড়বেও না। কারন সুহার নজরে ঘৃনার পর্দা পড়েছে।”

-” ছেলেটাকে একটা সুযোগ দেয়া উচিত।”

-” হ্যাঁ উচিত। কিন্তু উনাকে আগে টের পাওয়াতে হবে সুহা কতটুক কষ্ট করেছে। তাহলেই আমার বোনের মর্ম উনি বুঝবে।”

-” হয়েছে আগুনে আর ঘি ঢালিস না। যা গিয়ে গোসল কর।”

মায়ের কাছে খুব বেশি পাত্তা পেলো না সাবা। মায়ের মনটা খুব নরম। তানভীরের অতীত নিয়ে মা একটু বেশিই সিরিয়াস। সেসব ঘটনা জানার পর থেকে তার মনে ব্যাপক সিম্প্যাথি জন্মেছে তানভীরের জন্য। মেয়ের বাপের বাড়ি ফেরত আসাটাকে সমর্থন করেছেন শুধুমাত্র মেয়েটাকে ঘরে আনার জন্য। আর নয়তো এই মেয়ের যা রাগ, যদি তখন উনি নিষেধ করতেন তুই এ বাড়িতে আসবি না শ্বশুড়বাড়িতেই পড়ে থাকবি তাহলে ও অন্য কোথাও চলে যেতো। তাছাড়া তানভীর তার মেয়ের সাথে যা করেছে সেগুলো নিয়েও তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন। বলতে গেলে দোটানার মধ্যে ছিলেন উনি। তাই মেয়েকে তখন বলেছিলেন চলে আয়। কিন্তু এখন উনার তানভীরের জন্য কষ্ট হচ্ছে আবার দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। ছেলেটার জন্য কোন তুফান অপেক্ষা করছে সামনে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।

কিছুক্ষন আগেই তানভীরের অফিসে ড্রাইভার এসেছে খাবার নিয়ে। তানভীর ভিডিও কলে কোনোএক ক্লাইন্টের সাথে কথা বলছে। ফোনটা কেটেই ড্রাইভারকে বললো,

-” তুমি নিয়ে এসেছো কেনো? সুহায়লা কোথায়?”

-” ম্যাডাম আমার হাতে খাবার পাঠিয়েছে।”

-” ও আসেনি কেনো?”

-” আমি তো জানিনা স্যার।”

তানভীর সুহায়লাকে ফোন করছে কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছেনা। তিনবার ফোন বাজার পর রিসিভ করলো সুহায়লা।

-” হ্যালো”

-” ফোন রিসিভ করছো না কেনো?”

-” আমি উপরে ছিলাম। ফোন নিচের তলায় ছিলো।তাই দেখিনি।”

-” তোমাকে আসতে বলেছিলাম আমি। আসোনি কেনো?”

-” ড্রাইভারকে দিয়ে তো তোমার ফরমায়েশ মতই খাবার পাঠালাম।”

-” তো আমাকে খাইয়ে দিবে কে? ড্রাইভার?”

-” কেনো তোমার হাত নেই?”

-” না নেই। এক্ষুনি অফিসে আসো। আমি তোমার হাতে খাবো।”

-” তোমার লজ্জা করেনা এই কথা বলতে? গত দেড় বছর তোমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। দিয়েছো তুমি আমাকে? খাওয়াতে দাও নি। কি পরিমান রাফ বিহেভ করেছিলে তুমি। এমনও সম গেছে তুমি ভাতের প্লেট ছুঁড়ে মেরেছো। এখন সেই তুমি কোন মুখে বলছো তোমাকে খাইয়ে দিতে?”

-” এক্সিডেন্ট করার পর তো পুরো একমাস তোমার হাতেই খেয়েছি।”

-” হ্যাঁ খেয়েছো। অচল হয়ে পড়েছিলে। নিজের হাতে খাওয়ার ক্ষমতা ছিলো না। ঠেকায় পড়ে আমার হাতে খেয়েছো।”

-” এখন তো আমি অচল না। তবু আমি তোমার হাতে খেতে চাচ্ছি। কেনো খেতে চাচ্ছি বুঝো না?”

-” এত বুঝাবুঝির প্রয়োজন নেই আমার। রান্না পাঠিয়েছি, মন চাইলে খাও না মন চাইলে ফেলে দাও। রাখি।”

ফোনটা কেটে দিলো সুহায়লা। তানভীর মুখ কালো করে বসে আছে।

-” স্যার আমি কি চলে যাবো?”

-” হুম।”

হাত মুখ ধুয়ে এসে খাবার খাচ্ছে তানভীর। খতে খেতে ভাবছে ুহায়লাকে মনের কথাটাজানাতে হবে। ওকে সরি বলতে হবে। আজই বলতে হবে কথাগুলো। আর নয়তো সুহায়লা দূরে সরতেই থাকবে। খাওয়ার মাঝেই নিশাতকে ফোন করলো তানভীর।

-” জ্বি ভাইয়া…”

-” কেমন আছো?”

-” এইতো ভালো। আপনি?”

-” এই আছি আরকি। একটা কাজ করে দিবা?”

-” কি?”

-” চারটার দিকে সুহায়লাকে নিয়ে শপিং করে এসো।”

-” ওহ! এই কথা তো সুহায়লা নিজে ফোন করেই আমাকে বললেই হতো।”

-” না, তুমি যেমন ভাবছো ব্যাপারটা তেমন না।”

-” তাহলে?”

-” সুহায়লাকে আজ সারপ্রাইজ দিবো। বাসায় এসে ঘর সাজাবো। ততক্ষন তুমি ওকে নিয়ে বাহিরে ঘুরবে।”

-” আমি কি ঠিক শুনছি? আপনি সারপ্রাইজ দিবেন সুহাকে?”

-” প্লিজ এভাবে বলে লজ্জা দিও না তো নিশাত।”

-” আপনি পরিবর্তন হলেন তো ঠিকই কিন্তু সময় হারিয়ে। যাই হোক, আপনারপরিবর্তন দেখে ভালো লাগছে। কতক্ষন বাহিরে রাখতে হবে ওকে?”

-” সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। ঠিক সাড়ে ছয়টায় ওকে পাঠিয়ে দিও। আর বেশি দুরের মার্কেটে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কাছাকাছি থেকো। যাতে ও জলদি বাসায় ফিরতে পারে।”

-” ঠিকাছে। আমি ওকে ফোন করে বলছি।”

অফিসের কাজ শেষ করে তিনটার দিকে অফিস থেকে বেরোলো তানভীর। অফিস থেকে সোজা চলে গেলো শাহবাগ। সেখান থেকে পছন্দমতো অনেক ফুল কিনেছে ও। বাসায় এসে নিজের রুমে নিজ হাতে সব সাজিয়েছে। একটা আংটিও কিনে এনেছে। পুরো ঘরে আর পাশের ছাদটাতে নীল সাদা রঙের মরিচা বাতি লাগিয়েছে। রুমের চারপাশে, বেডরুম সাইডের ছাদটাতে আর সিড়িগুলোতে পারফিউমড ক্যান্ডেল রেখেছে। বাসার সব কাজের লোকদের টাকা দিয়ে বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছে দু তিনঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে। ছয়টা বিশ নাগাদ সমস্ত গোছগাছ শেষ করে রেডি হয়ে বসে আছে তানভীর। নিশাতকে কিছুক্ষন আগে ফোন করে বলেছে সুহায়লাকে পাঠিয়ে দিতে।

চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *