দুহাতে মাথার দুপাশে ধরে বসে আছে তানভীর। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলটা ফ্লোরে গোল করে ঘুরাচ্ছে। মুখোমুখি বসে আছেন মিতা এবং তার মেয়ে সাবা। মাথা নিচু করেই তানভীর জিজ্ঞেস করলো,
-” আচ্ছা আন্টি আমার দোষটা কোথায় একটু বলবেন প্লিজ?”
-” আমি তো দোষ দেখতে পাচ্ছি না।”
-” তাহলে আপনার মেয়ে আমার সামনে কেনো আসবে না? আমার সাথে কেনো কথা বলবে না? আমি কি ঐ মহিলাকে বলেছি এখানে আসতে?”
-” তোমার ভুল হয়েছে রাহাতের কাছে নিজেদের পারসোনাল কথাগুলো শেয়ার করে।”
-” সেটার জন্য আমি লজ্জিত। আমি সুহাকে সরিও বলেছি। তবু কেনো ও আমাকে ভুল বুঝছে?”
-” সেটা বাবা তুমি ওকেই জিজ্ঞেস করো।”
-” আপনার মেয়ে তো আমার ফোনটাই রিসিভ করছে না। তারউপর আপনি সোনিয়ার এড্রেসও দিচ্ছেন না।”
-” সুহা নিষেধ করে গেছে।”
-” আপনি চান না ওর সাথে আমার ঝামেলার একটা ইতি হোক?”
-” অবশ্যই চাই।”
-” তাহলে আপনি ওর কথা কেনো শুনছেন? এভাবে দূরে থাকলে কি সমস্যার সমাধান হবে?”
-” এই মূহূর্তে ওর কাছে গেলে হীতে বিপরীত হবে। ও রেগে আগুন হয়ে আছে।”
-” আমি তো চাচ্ছিই ও রাগটা ঝাড়ুক। যতক্ষন না ও রাগ ঝাড়বে ততক্ষন ওর ভিতরে রাগটা রয়ে যাবে।”
-” একটু সবুর করো। সব বিষয়ে তাড়াহুড়া করলে চলে না। ও গেছে, কিছুদিন ঘুরে আসুক। মাথাটা ঠান্ডা হোক। এরপর ওর সাথে কথা বলো।”
-” আচ্ছা ঠিকাছে আমি যাবো না ওর সামনে। আপনি ওকে একটু বলে দিন না আমার ফোনটা যেনো রিসিভ করে। “
-” ঠিকাছে বলে দেখি।”
সুহায়লার মা মোবাইল হাতে নিয়ে মেয়েকে ফোন করলেন। ফোনে উনি মেয়েকে বুঝাচ্ছেন যাতে তানভীরের ফোনটা রিসিভ করে। কথা বলার এক পর্যায়ে মিতার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো তানভীর,
-” সুহা আমার দোষটা কোথায়?”
-” তোমার কাছে কি মনে হয়? তুমি নির্দোষ?”
-” আমি তো উনাদের এই বাসায় আসতে বলিনি।”
-” তুমি এমন ঘটনা ঘটিয়েছো যেকারনে উনারা আমার ঘর পর্যন্ত এসে হাজির হয়েছে।”
-” তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? যত খুশি রাগ ঝাড়তে ইচ্ছে হয় ঝাড়তে পারো কিন্তু আমাকে ফেলে যাওয়া যাবে না। কেনো গেলে?”
-” তানভীর আমি কোনো তর্কে যেতে চাচ্ছি না। তিন চারদিন পর বাসায় ব্যাক করবো। ডিভোর্স পেপার সহ। যা কথা হওয়ার তখনই হবে।”
-” কিহ? ডিভোর্স? এখানে ডিভোর্স দেয়ার কি হলো? সম্পর্কটাকে ভাঙার জন্য এভাবে উঠেপড়ে লেগেছো কেনো?”
-” এটা শুরু থেকেই ভাঙা। নতুন করে আর কি ভাঙবো?”
-” তোমার কি ধারনা তুমি পেপার সমেত আমার সামনে আসবে আর আমি সাইন করে দিবো? আগুনে পুড়বো তোমার কাগজ আমি। এত্ত সহজে তোমার পিছু ছাড়ছি না। আর তিন চারদিন না, তুমি এক্ষুনি বাসায় ব্যাক করবে। বাসার এড্রেস দাও। আমি তোমাকে নিতে আসছি।”
সুহায়লা বেশ বুঝতে পারছে তানভীর কথা প্যাচাতেই থাকবে। এই মূহূর্তে কথা প্যাচানোর কোনো ইচ্ছাই তার নেই। ফোনটা কেটে দিয়েছে সুহায়লা। তানভীর আবার ফোন করছে। কিন্তু সুহায়লা ফোন রিসিভ করছে না। তানভীরও দমে যাওয়ার পাত্র না। একের পর এক ফোন দিয়েই চলছে। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিলো সুহায়লা।
-” সুহা একটা কথা বলি?”
-” হুম।”
-” তোর সিম্পটমস শুনে কেনো যেনো মনে হচ্ছে তুই প্রেগনেন্ট। আমি বলি কি ডিভোর্সের ডিসিশনটা নেয়ার আগে তুই টেস্ট টা করিয়ে দেখ।”
-” হুম।”
-” হুম হুম করিস না তো। এটা একটা সিরিয়াস ম্যাটার। ডিভোর্স হয়ে গেলে তোর বাচ্চার কি হবে? বাবার আদর ছাড়া বড় হবে। তানভীর ভাই মায়ের আদর ছাড়া বড় হয়েছে আর তোরটা বাবার আদর ছাড়া বড় হবে। ব্রোকেন ফ্যামিলির বাচ্চাদের অনেক সাফার করতে হয়। তুই কি চাস তোর বাচ্চাটা বাবা থাকা সত্ত্বেও কষ্ট পাক?”
-” ওর সোসাইটিতে আমার বাচ্চা উঠতে বসতে কথা শুনবে। কারন ওর মা মিডেল ক্লাস।”
-” সেসব হিসেব পরে হবে সুহা। সোসাইটি কি বললো না বললো সেগুলো পরের কথা। আগে তোর আর তানভীর ভাইয়ার রিলেশনটা নিয়ে ভাব। টেস্টের রেজাল্ট যদি পজিটিভ আসে তাহলে তুই কি করবি সেটা নিয়ে আপাতত চিন্তা কর। অহেতুক নিজেদের দ্বন্দের জন্য বাচ্চার জীবনটা কেনো নষ্ট করবি?”
-” দেখি কি করা যায়?”
-” টেস্টের রিপোর্ট পসিটিভ আসলে ডিভোর্সের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবি। তাছাড়া উনার কিছু মিসটেকের জন্য তোর এতবড় ডিসিশনটা নেয়া ঠিক হচ্ছে না। বেচারা শুধরে গেছে। শুধরে যাওয়া মানুষটাকে এভাবে শাস্তি দেয়ার কোনো মানেই হয় না। একবার ভেবে দেখ তো তুই উনাকে ছেড়ে দেয়ার পর উনার হাল কি হবে? উনি আবার খারাপ হয়ে যাবে। মেয়ে মানুষ সম্পর্কে উনার ধারনা আজীবনই খারাপ থেকেই যাবে।”
-” উফফ, সোনিয়া থাম তো। এমনভাবে বলছিস মনে হচ্ছে আমি ট্রাই করিনি ওর সংসার করার।”
-” এত চেষ্টা যেহেতু করেছিস তাহলে কেনো এখন ভাঙতে চাচ্ছিস? উনি তো চাচ্ছেই তোকে নিয়ে সংসার করতে।”
-” সোনিয়া, কাল যাবি আমার সাথে হসপিটালে?”
-” টেস্ট করাবি?”
-” হুম।”
-” অবশ্যই যাবো।”
-” চল ঘুমাই। রাত হয়েছে বেশ।”
-” তুই হাত মুখ ধুয়ে আয়। আমি মশারী টানিয়ে দিচ্ছি।”
পরদিন সকালে…….
হসপিটালে রিপোর্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে সোনিয়া। সুহায়লা থম মেরে বসে আছে।
-” এত বড় গুড নিউজ আর তুই এমন মুখ কালো করে রেখেছিস? তানভীর ভাইকে ফোন কর। জানা উনাকে খবর টা।”
-“তুই এখন কাউকে কিছু বলবি না। সময় মতো আমিই জানাবো। তুই বাসায় যা।”
-” এখন জানালে কি সমস্যা? আর তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
-” উকিলের বাসায়।”
-“কেনো? ডিভোর্স কি তাহলে সত্যিই দিবি নাকি?”
-” বাসায় এসে কথা বলবো।”
-” দেখ সুহা, এরকম বাজে সিদ্ধান্ত নিস না।”
-” বললাম তো বাসায় এসে কথা বলবো।”
দুদিন পর,,,,,
তানভীরের ফোন বাজছে। সুহায়লা ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করলো তানভীর।
-” ফাইনালি তোমার ইচ্ছা হয়েছে এই কুকুরটার সাথে একটু কথা বলতে।”
-” এভাবে বলছো কেনো?”
-” তুমি তো আমাকে কুকুরই ভাবো। মানুষ ভাবলে তো আমার ফোন রিসিভই করতে। গত দুদিনে তোমাকে ২০০ বারের উপর ফোন করেছি। রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করো নি। ৬৫ টা এস এম এস করেছি। একটারও রিপ্লাই দাওনি। আমি কুকুর বলেই তো দাওনি।”
-” অফিসে নাকি বাসায়?”
-” অফিসে।”
-” বনশ্রীরবাসায় আসো। কথা আছে।”
-” ডিভোর্স নিয়ে?”
-” না।”
-” তাহলে?”
-” তুমি কি আসবে? নাকি আমি আবার সোনিয়ার বাসায় ব্যাক করবো?
-‘ তুমি কোথায়?”
-” রাস্তায় আছি।”
-” ঠিকাছে আসছি আমি।”
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তানভীর সুহায়লা। বিছানার উপর ডিভোর্স পেপার রাখা।
-” আমি তো সাইন দিবো না।’
-” যদি তোমাকে বলি আমি প্রেগনেন্ট?”
হুট করে কথাটা শুনে খানিকটা চমকে গেলো তানভীর। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-” তাহলে তো আরো আগে দিবো না। সিরিয়াসলি বলো? তুমি প্রেগনেন্ট?”
পার্সের ভিতর থেকে রিপোর্টের কাগজটা বের করলো সুহায়লা। তানভীর কাগজটা হাতে নিয়ে দেখছে। ঠোঁটের কোনের হাসিটা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে। সুহায়লার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে। তার চোখে আজ পূর্নতা দেখা যাচ্ছে। তানভীরের অারেক হাতে ডিভোর্স পেপারটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-” আমি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির। তোমার সোসাইটিতে আমি একজন নগন্য মানুষ। নূন্যতম রেসপেক্ট আমি তোমার সোসাইটিতে ডিজার্ভ করি না। এখানে যদি আমি থাকি তাহলে পদে পদে কথা শুনতে হবে। আমার বাচ্চাও শুনবে। তার সামনে তারই মাকে মিডেল ক্লাস বলে বলে ইনসাল্ট করা হবে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ওর জন্য ভালো হবে না। তোমার সোসাইটি আমার বাচ্চার বেড়ে উঠার জন্য কোনোদিক দিয়েই পারফেক্ট না। আমি চাই না ও এখানে থাকুক। এখন চয়েজ তোমার। যদি বউ বাচ্চা সহ থাকতে চাও তাহলে অন্য কোথাও সেটেলড হও আর নয়তো ডিভোর্স পেপারে সাইন দাও। আমার বাচ্চা নিয়ে আমি দূরে কোথাও চলে যাবো। আমাদের মতো করে আমরা থাকবো।”
-” তোমরা কি আমার না?”
-” আমরা কতটুক তোমার, সেটা তোমার সিদ্ধান্তের উপর ডিপেন্ড করবে।”
-” তুমি না থাকলে আমি সোসাইটি দিয়ে কি করবো? মুড়ি খাবো সোসাইটি দিয়ে? বলো কোথায় যেতে চাও?”
-” বুঝে শুনে বলছো তো? এখানে তোমার সমস্ত বিজনেস পড়ে থাকবে।”
-” বুঝে শুনেই বলছি। বিজনেস কি করবো না করবো সেটা সম্পূর্ন আমার ব্যাপার।”
-” আমি দেশের বাইরে যেয়ে সেটেলড হতে চাচ্ছি।”
-” ঠিকাছে। কোথায় হতে চাও বলো?”
-” যেখানে তোমার সুবিধা হয়।”
-” অস্ট্রেলিয়া? কানাডা?”
-” বললাম তো যেখানে তোমার সুবিধা হয়।”
-” দু তিন মাস সময় দিতে হবে আমাকে।”
-” হুম দিলাম।”
-” আরেকটা কথা রাখতে হবে।”
-” কি?”
-” বাবার বাড়ি যেতে পারবা না। আমার এখানে থাকতে হবে।”
-” তোমার মা যদি ফের এখানে আসে?”
-” আসবে না। আর যদি আসেও তোমার সাথে মুখ নেই? কথা বলতে পারো না? উত্তর দিয়ে দিবা।”
-” তানভীর তুমি সিউর তো তুমি আমাকে নিয়ে দূরে সেটেলড হবে?”
-” অফকোর্স আই এ্যাম সিউর। তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো? তারউপর আমার বাচ্চাটা? নিজের সন্তানের কাছ থেকে কি দূরে থাকা সম্ভব? আমার দ্বারা কোনোভাবেই সম্ভব না। ওয়ার্ল্ডস বেস্ট পাপা হতে চাই আমি।”
-” নিজের বাচ্চারকথাটাই ভাবলে। আমার কথা তো ভাবলে না। কখনো তো বললে না ওয়ার্ল্ডস বেস্ট হাজবেন্ড হতে চাই।”
-“তুমি কি জেলাস সুহায়লা?”
-” কার উপর জেলাস?”
-” বেবির উপর।”
-” ধ্যাত কি যে বলো না।”
-” মাফ করেছো আমাকে?”
-” না। আরও কিছুদিন কাঠ খড় পোড়াও। এরপর মাফ পাবে।”
-“তো কি কি করতে হবে আমাকে?”
-” খুঁজে বের করো। সব তো আর আমি মুখে তুলে খাইয়ে দিবো না। যথেষ্ট রোমান্টিক তুমি। আমার চেয়েও বেশি। তোমাকে ভেঙে চুরে সব বলতে হবে বলে মনে হয় না।”
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সুহায়লা। দরজার কাছে যেয়ে থমকে দাঁড়ালো সে।
-” তোমাকে একটা কথা বলি?”
-” হুম বলো।”
-” যেদিন এ বাড়িতে বিয়ে করে এসেছিলাম সেদিন তোমার এই ছোট্ট ছাদটা দেখে মনে হয়েছিলো আমার পার্কে যেতে হবে না প্রেম করতে। এখানে বসেই তোমার সাথে দিব্যি প্রেম করতে পারবো। জায়গাটা পার্কের চেয়ে আরওবেশি সুন্দর। কখনো আশাটা পূরন হয়নি। পূরন করবে?”
-” এখান থেকে যাওয়ার আগেরদিন রাত পর্যন্ত তোমার সাথে এই ছাদে প্রতিদিন সময় কাটাবো। খুশি?”
কোনো উত্তর দিলো না সুহায়লা মুচকি হেসে চলে গেলো। কিছু কিছু সময় মানুষের মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না। চোখে মুখের আলোর ঝলকানি দেখেই আন্দাজ করে নেয়া যায় মানুষটা কতটুক খুশি হয়েছে। তানভীরও বুঝে নিয়েছে সুহায়লার খুশির পরিমানটুকু।
মাস দুয়েক সময় লেগেছে সুহায়লার পাসপোর্ট আর ওদের দুজনের ভিসা তৈরী হতে। কানাডা সেটেল হবে ওরা। আগামিকাল রাতের ফ্লাইট। ২০দিন হলো সাদমানের বিয়ে শেষ হয়েছে।জমিয়ে আনন্দ করেছে ওরা দুজন সাদমানের বিয়েতে। নিজের পরিবারকে , আত্মীয়দেরকে তো আর কাছে পাবে না। কবে নাগাদ তাদের সাথে দেখা হবে সেটারও ঠিক নেই। আজকাল সুহায়লার মনে হয় জীবনটা সুন্দর। যেমনটা ভেবেছিলো তার চেয়ে বেশি সুন্দর। রাজপুত্র এসেছে। জীবন বদলেছে। তবে রুপকথার মতো না এরচেয়ে আরো বেশি সুন্দর। ওর ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরন করছে তানভীর। সাধারনত এই খুটিনাটি ইচ্ছাগুলো পূরন করতে কাউকে কখনো দেখা যায় না। কিন্তু তানভীর করে। বাসর রাতে তানভীরের কথায় মনে হয়েছিলো সে ভিন্ন। অন্য সবার মতো না। সত্যিই সে ভিন্ন। একদম ভিন্ন। অন্য দশটা মানুষের সাথে কোনোদিক দিয়েই ম্যাচ হয় না। এই যে সুহায়লাকে খাটের মাঝখানে বসিয়ে রেখে নিজে একের পর এক লাগেজ গোছাচ্ছে। সুহায়লা ওর দিকে তাকিয়ে ওর কাজ দেখছে। কয়েকবার বলেছিলো ওকে হেল্প করার জন্য। তানভীর বেশ ঝাঁঝালো গলায় সুহায়লাকে না করে দিয়েছে। বলেছে, তুমি খাটে বসে অর্ডার দাও কিভাবে গুছাবো। সুহায়লাও তাইই করছে।
-” তানভীর, তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?”
-” কেনো?”
-” এতবছর এখানে থেকেছো, এ দেশে বড় হয়েছো, বন্ধুবান্ধব সব ফেলে চলে যাবে। কষ্ট হচ্ছে না?”-
-” কষ্ট তোমার হচ্ছে সুহা। আমার না। আমার তেমন কেউ নেই এখানে। কিন্তু তোমার অনেকেই আছে। ওদের ফেলে থাকতে তোমার কষ্ট হবে। অলরেডি তোমার কষ্ট শুরুও হয়ে গেছে।”
-” ঠিক বলেছো। তখন তো হুট করে বলে ফেলেছি দূরে চলে যাবো। এখন নিজেরই কষ্ট হচ্ছে।”
-” এখনও সময় আছে। ডিসিশন নাও। চাইলে এখানে থেকে যেতে পারো। প্ল্যান ক্যান্সেল করবো।”
-” নাহ, এখানে থাকার মতো অবস্থা নেই।”
-” তাহলে মন খারাপ করা বন্ধ করো। তোমাকে তিন চারদিন ধরে দেখছি সারাদিন মুড অফ করে বসে থাকো। আমার এসব মোটেই পছন্দ হচ্ছে না।”
-” তোমার ব্যবসা নিয়েও চিন্তায় আছি। সাদি পারবে তো সব ঠিকঠাকভাবে মেইনটেইন করতে।”
-” কি যে বলো না সুহা! পারবে না কেনো? অবশ্যই পারবে। ও যথেষ্ট ট্যালেন্ট ছেলে। আমি বুঝে শুনেই ওকে দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি।”
-” চলো না পুরো বাড়িটা একটু ঘুরে আসি। কবে না কবে বাড়িটাতে পা রাখবো তার তো ঠিক নেই। কাল তো চলেই যাবো। এরপর তো নতুন বাড়িতে আমাদের আনাগোনা হবে।”
-” চলো।”
পুরো বাড়ির প্রতিটা রুম খুটেখুটে দেখছে সুহায়লা। শ্বশুড়ের কথা খুব মনে পড়ছে। লোকটা বেঁচে থাকলে হয়তো এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়া হতো না। এ বাড়িতে তার অনেক স্মৃতি। বেশিরভাগই খারাপ। তবু এখানকার প্রতি একটা আলাদা মায়া কাজ করে। হতে পারে বিয়ের পর এই বাড়িতে প্রথম পা রেখেছিলো তাই।
একই লেপ গায়ে জড়িয়ে দুজনে বসে আছে ছাদে। আকাশের তারা দেখছে। আজ চাঁদ নেই। পুরো ফকফকে পরিষ্কার আকাশ। আকাশের তারাগুলোকে একদম জোনাকি পোকার মতো লাগছে। সুহায়লার হাত আলতো করে ধরলো তানভীর।
-” সুহা?”
-” হুম?”
-” মনের দরজা কি এখনো বন্ধ করে রেখেছো?”
-” কি মনে হয়?”
-” জানি না। খারাপ স্মৃতিগুলোকে এখানে ফেলে রেখে যাওয়া যায় না?”
-” স্মৃতি তো সেই কবেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি। মনের দরজাও খুলে দিয়েছি। পুরোনো স্মৃতিগুলো যাতে তাড়া না করতে পারে এজন্যই তো এখান থেকে সরে যাচ্ছি। নতুন করে সব শুরু করতে চাই তোমাকে নিয়ে। সমস্ত স্মৃতি এ বাড়ির আঙিনায় মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিতে চাই। নতুন বাড়ি, নতুন জায়গা,নতুন স্মৃতি হবে আমাদের। সেখানে পুরান স্মৃতির কোনো জায়গা থাকবে না।”
সুহায়লার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো তানভীর। নতুন করে ভালোবাসার শুরুটা বোধহয় এখান থেকেই।
…সমাপ্ত…