উলঙ্গ_মন

আচ্ছা বাবা, তোমরা যেইটা দিয়ে পিশাব করো, ঐটা মুখে নিলে কী হয়?

নিজের ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়েটার মুখে এই প্রশ্নটা শুনে “আরিফ পুরো থতমত খেয়ে গেল। রিতু এতক্ষন ধরে চিপস খাচ্ছিল আর টিভিতে কার্টুন দেখছিল। হঠাৎই টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে সে। প্রশ্নটা করেই সে আবার কার্টুন দেখায় মনোযোগী হয়ে পড়ে। নাঈম আম খাচ্ছিল। আরিফর হাত থেকে আমের প্লেট টা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। তার স্ত্রী শান্তা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে জানতে চায়, কী হয়েছে? আরিফ আমতা আমতা করে বলে, কিছু না। হাত থেকে ছুটে পড়ে গেছে। শান্তা মেঝে পরিস্কার করে চলে যায়। আরিফের চোখে-মুখে তখনও ভয়, বিস্ময় আর কৌতূহল। এইটা কী ধরনের প্রশ্ন? রিতুর মাথায় এই প্রশ্ন এল কীভাবে? রিতুর যেন প্রশ্নের উত্তর শোনার ভ্রূক্ষেপ নেই। সে স্বাভাবিক ভাবেই টিভি দেখছে।

.

মেয়েটার সাথে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলার সাহস হয় না আরিফের। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় এসেছিল সে। দ্রুতই আবার চলে যেতে হলো তাকে অফিসে। কিন্তু অফিসের কাজে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না সে। কয়েকজন কলিগ তার অন্যমনস্ক ভাব ধরতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করে, কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? সে মৃদু হেসে কাঁধ ঘুরিয়ে জানায়, তার কোনো সমস্যা নেই। অন্যদিনের মতো অফিস ছুটি হওয়ার সাথে সাথে বাড়িতে যায় না আরিফ। কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে বাড়িতে যাওয়ার উল্টো পথ ধরে একা একা হাঁটতে থাকে। তার মেয়ের বলা সেই এক লাইন প্রশ্নের তাৎপর্য সে কিছুতেই বের করতে পারছে না। মেয়েটার বয়স সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পড়েছে। এই বছরের শুরুতেই তাকে এলাকার একটা স্কুলের শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় এই ধরনের একটা উদ্ভট প্রশ্ন কী করে আসতে পারে তা কিছুতেই মাথায় আসে না আরিফের। এই ধরনের কিছু সামনাসামনি না দেখলে এমন একটা প্রশ্ন মেয়েটার মাথায় আসার কথা না। কিন্তু নাঈম ভাবে, রিতু যখন একটু একটু সব কিছু বুঝতে শুরু করেছে তখন থেকে রিতুর সামনে কখনই সহবাস করে নি তারা। আর তাদের সহবাসে অতিরিক্ত এই নোংরামি গুলো কখনই ছিল না, যেমনটা রিতুর মনে প্রশ্ন জেগেছে।

নাঈম বুঝেছিল, বিষয়টা মোটেও হালকে নয়। তাই বিষয়টাকে সে হালকা ভাবে উড়িয়ে দেয় নি। অনেকক্ষণ ধরে এই বিষয়টা নিয়ে একা একাই চিন্তা করে যায় সে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় এই বিষয়ে খোলাখুলি তার মেয়ের সঙ্গেই কথা বলবেন তিনি। একটা ছয় বছরের বাচ্চা শিশুকে আমরা যতটা অবুঝ ভাবি তারা মোটেও ততটা অবুঝ হয় না। এই বয়সে অনেকেরই মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হয়। আমরা যতটা ভাবি তারা তার চেয়ে অনেক বেশিই বুঝতে পারে। হয়তো তা তাদের মনের ভেতরেই আবদ্ধ করে রাখে। তাই আমরা ভাবি তারা অবুঝ।

.

আরিফ যতক্ষণে বাড়িতে ফিরে আসে ততক্ষণে রিতু ঘুমিয়ে গেছে। রাতে একই বিছানায় আরিফ , রিতু আর শান্তা ঘুমায়। রিতু মাঝখানে আর আরিফ এবং শান্তা তার দুইপাশে। ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে। সেই আলোতেই আরিফের চোখ হঠাৎ করে শান্তার মুখের ওপর আটকে যায়। কোনো এক অজানা কারণে তার বুকটা ধ্বক করে উঠে। একটা অজানা ভয় আরিফের মনে বাসা বাঁধে। সে শান্তাকে নিজের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করে। শান্তা কী কোনোভাবে তাকে ধোকা দিচ্ছে? তার অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে? রিতু মেয়েটা তো এর বাইরে আর কারও সাথে মিশে না! তার মনে এই উদ্ভট প্রশ্ন জাগার কারণ কী প্রত্যক্ষ ভাবে শান্তাই? হয়তো শান্তা কে এমন কিছু করতে দেখেছে রিতু, তাই তার মাথায় এই প্রশ্নটা এসেছে। শান্তা কী পরক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত! কিন্তু সে এমনটা কেন করবে? আরিফের মাথায় একের পর এক এমন উদ্ভট সব প্রশ্ন এসে তার মাথার ভেতর ভয়ংকর রকম জটলা বাঁধতে থাকে। অসংখ্য অজানা , অচেনা ভয়, সন্দেহ তার মনে চেপে বসে।

সকাল হতেই আরিফ বাড়ি থেকে রাস্তায় বেড়োয় একটু হাঁটাহাঁটি করতে। তার বাড়ির গেট বরাবর রাস্তার ওপাশেই একটা মুদির দোকান। মুদি পণ্যের পাশাপাশি চাও বিক্রি হয় এখানে। দোকানে বসে চা খেতে খেতে কথা প্রসঙ্গে আরিফ দোকানদারের কাছে জানতে চায় , সে এই বাড়িতে অচেনা কাউকে ঢুকতে দেখে কি না দিনের বেলায়। দোকানদার কিছুক্ষণ ভেবে বলে, সেদিকে তেমন খেয়াল করে না সে। তবে কয়েকদিন একটা কমবয়সী ছেলেকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছে সে। কথাটা শুনে আবার আরিফের বুকটা ধ্বক করে উঠে!

সে রাস্তায় বেশিক্ষণ না থেকে আবার বাড়িতে ফিরে যায়।

ফোন বন্ধ করে রেখেছে আরিফ। আজ সে অফিসে যাবে না। শান্তা অবাক হয়ে অফিস কামাই দেওয়ার কারণ জানতে চাইল তার কাছে। আরিফ বলল, এমনি টানা অফিস করতে ভালো লাগছে না। তাই অফিসে বলে একদিন ছুটি নিয়েছে। সকালে নাস্তা করার পর অন্যদিন শান্তা রিতুকে স্কুলে দিয়ে যায়। আজ যেহেতু আরিফ বাসায় তাই আরিফ গেল।

.

রিতু স্কুলের পোশাক পরে তৈরি হয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে এল। শান্তা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতরে যেতেই আরিফ রিতুকে নিয়ে স্কুলের পথের উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল। রিতু কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল, বাবা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? আরিফ মিষ্টি করে হেসে বলে, আমরা আজ সারাদিন অনেক ঘুরবো, আর মজা করবো। আজ তোমার স্কুল কামাই। রিতু আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। সত্যি সত্যিই আরিফ রিতুকে নিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক অনেক জায়গায় ঘুরলো। ওকে আইসক্রিম, চকোলেট কিনে দিল। তারপর কাছেরই একটা পার্কে ঢুকল তারা। পার্কের একটা বেঞ্চিতে দুজনেই গিয়ে বসে।

.

প্রচন্ড উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় আরিফের শরীর কাঁপছে। রিতু এক মনে আইসক্রিম খাচ্ছে, আর মুগ্ধ হয়ে চারপাশের মানুষ জন দেখছে। একসময়  আরিফ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করলঃ

—– আচ্ছা মা’মনি একটা কথা বলতো, যখন আমি অফিসে থাকি তখন কী এই বাড়িতে তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে কেউ আসে?

— [হা করে কিছুক্ষণ ভেবে] কে আসবে বাবা?

— [মৃদু হেসে] আরে কেউ না মা! এমনিই বলো কেউ আসে কিনা??

— ও হ্যা, মাঝেমধ্যে নয়ন ভাইয়া আসে।

কথাটা শুনে যেন, আরিফের বুকের ওপর থেকে একটা বড় পাথর সরে গেল। তাহলে মুদি দোকানদার নয়নের কথা বলেছিল! নয়ন হলো ওর বড় বোনের একমাত্র ছেলে। এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। রিতুর সাথে তাঁর ভারি ভাব।

নয়ন’রা থাকে এই এলাকার পাশের এলাকাতেই। আরিফের কাজের চাপে ওই বাড়িতে অনেক দিনই যাওয়া হয়নি। তবে নয়ন, তাঁর মামার বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসে এটাতে ওর অবাক হওয়ার কিছু নেই!

এবার আরিফ মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল;

—— আচ্ছা মা, তুমি সেদিন ঐরকম একটা প্রশ্ন আমায় কেন করেছিলে?

— [কৌতূহলী হয়ে] কোনদিন? কী প্রশ্ন বাবা?

—— [কাঁপা কণ্ঠে] ঐযে বলেছিলে, আমরা যেটা দিয়ে হিসু করি, সেইটা মুখে নিয়ে কী করে?

প্রশ্নটা শুনেই রিতু হাসতে শুরু করে। ও বুঝতে পারে কথাটা রিতুর কাছে মজার ঠেকেছে, তাই তাঁর হাসি।

মিশকাত আবার আদুরে স্বরে বলেঃ

——- তুমি কী কখনো তোমার আম্মু বা অন্য কাউকে অমন করতে দেখেছ?

— [না সূচক মাথা নাড়ে]

——- তাহলে ওমন একটা প্রশ্ন তোমার মাথায় এলো কী করে? কখনো কী তোমাকে কেউ ওমন করতে বলেছে?

কথাটা শুনতেই রিতুর মুখ কালো হয়ে চুপসে যায়। আর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরিফেরর গলার স্বর কিছুটা কঠিন হয়ে আসে। সে বলেঃ

——- বলো মা, ভয় পেও না। তোমায় ওমন কেউ বলেছে?

— [হ্যা সূচক মাথা নাড়ে]

——- কে বলেছে, নাম বলো??

— নয়ন ভাইয়া, আমাকে এইসব কথা কাউকে বলতে না করেছে। যদি আমি বলি, তাহলে সে আর আমাদের বাড়িতে আসবে না। আমার সঙ্গে খেলবে না।

আরিফের মাথা রাগে, ক্ষোভে প্রচন্ড গরমে হয়ে গেছে এর মধ্যেই। এবার কন্ঠে  বিস্ময় ফুটিয়ে বলল;

——- তোমার নয়ন ভাইয়া তোমাকে এই রকম করতে বলেছিলো?

— হু বাবা! কিন্তু আমি করিনি, ভাইয়াকে পঁচা বলে বকা দিয়েছি!

এই বিষয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে আর কোনো কথা বলার প্রয়োজন মনে করলো না। সে ভাবে, একটা ছেলের মস্তিস্ক কতটা বিকৃত হলে, একটা ৬ বছরের মেয়েকে এই কাজ করতে বলে! ৬ বছরের একটা মেয়ের মধ্যে যৌনতার আছেটা কী? তাঁর ওপর এইটা নাকি ওর আপন ভাগ্নে! প্রচন্ড রাগে ওর শরীরে আগুন জ্বলছে। নয়ন যতই আপন হোক না কেন , সে যা করেছে তা-ভয়ংকর অপরাধ। এর জন্য অকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে!

পরের দিনও  আরিফ অফিসে যায় না। সে দীর্ঘ একটা প্ল্যান করেছে, নয়নকে এই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। নয়ন যেই কলেজে পড়ে, ঠিক সেই কলেজের কাছাকাছি একটা পুরাতন জমিদার বাড়ি আছে। জায়গাটা সব সময়েই নির্জন থাকে। আরিফ, নয়নের কলেজের সামনে গিয়ে কলেজ ছুটির অপেক্ষা করে।

দুপুর ১টায় কলেজ ছুটি হলে নয়ন কলেজ থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে মামাকে দেখে বেশ অবাক হয়। আরিফ নয়নকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে বলল;

—— আরে তুই কলেজে এসেছিস? তোকে পেয়ে ভালোই হলো!

— কেন মামা??

——আর বলিস না, তোর মামী emergency ফোন দিচ্ছে তাই আমাকে একটু দ্রুত বাসায় যেতে হবে। কিন্তু ওদিকে “একটা emergency file-এর জন্য” আমার এক কলিক পুরোনো জমিদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে! তুই কি দিয়ে আসতে পারবি নাকি কোন তাড়া আছে?

— না মামা, তাড়া নেই! আমাকে দাও দিয়ে আসছি!!

——- Ok thanks..

[বলেই, নয়নের হাতে ফাইলটা দিয়ে দ্রুত চলে যায়]

নয়নও ফাইলটা নিয়ে জমিদার বাড়ির সামনে হাজির। পুরোই নির্জন জায়গা, আশেপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তবুও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। অবশেষে কাউকে না পেয়ে মোবাইল বের করে যেই মামাকে কল দিতে যাবে, তখনই দেখে দুজন লোক ওর দিকে এগিয়ে আসছে। লোক দুটোকে দেখেই নয়নের মন কেমন যেন করতে লাগল। এই ধরনের লোকদের নয়ন ভালো করেই চেনে। এদের দেখলে নয়নের কেন যেন বেশ ঘেন্না লাগে।

কারণ এরা পুরুষ হলেও টাইট প্যান্ট, টাইট টি শার্ট, কালার করা লম্বা চুল, লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট, এদের চেহারাতে মেকাপ, চলনে একটা মেয়েলি ভাব! এক কথায়, এরা পুরুষ হলেও সমকামী। যাদের বলে গে। এর জন্যই মূলত এদের প্রতি ঘেন্না নয়নের। এরা যে সমকামী, এদের চেহারা দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পারে নয়ন। তাঁরা ওর দিকে আসছে দেখেই ঘৃণায় অন্যদিকে মুখ করে রাখে নয়ন।

সমকামী দুজনের মধ্যে একজন নয়নের কাছে এসেই তার গাল টিপে বললঃ

——- কেমন আছো গো?

— [বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালো]

অপর একজন বললঃ

——– এতো দেখি পুরোই মাখন।

— [বিরক্ত ভরা কণ্ঠে] কী চাও তোমরা?

নয়নকে অবাক করে দিয়ে তাদের একজন বলে উঠলঃ

——— তোমার নাম নয়ন তো?

নয়ন শকড্ খেয়ে থ হয়ে যায়। আর হঠাৎ ই তাঁদের একজন পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে নয়নের মুখে চেপে ধরল। পরমুহূর্তেই একটা কার এসে ওদের পাশে দাঁড়ালো। নয়নের চোখ লেগে আসতে শুরু করলো। ওর আর কিছুই মনে নেই!

যখন নয়ন চোখ খুলল, তখন তার চোখ চড়কগাছ! কারণ ও সম্পূর্ণ উলঙ্গ এবং ওর দুটো হাত শক্ত করে খাটের দুই পাশের দুটি খুঁটির সঙ্গে বাঁধা! আর ওর সামনে চার-পাঁচ জন গে পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। নয়নকে চোখ খুলতে দেখেই তারা একসাথে আনন্দে হেসে উঠলো। তাদের কারও শরীরেও কাপড় নেই। এরাও যে সমকামী তা বুঝতে সময় লাগে না নয়নের।

তাঁদের একজন বলে উঠল, শালারে মেডিসিন টা খাওয়া। নাইলে পায়ুপথ পরিষ্কার হইব না। তাড়াতাড়ি কর, আমার তড় সইতাছে না! নয়নের অনিচ্ছায়ও জোর করে তাকে সেই মেডিসিন খাওয়ানো হলো। এতগুলো পুরুষের সঙ্গে সে কিছুতেই পেরে উঠছে না! সে করুনা মিশ্রিত, ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে রইল। তারপর করুন সুরে বলল..

—— আমাকে ছেড়ে দেন! আমি আপনাদের কী ক্ষতি করছি? আমার সাথে প্লিজ এমনটা করবেন না।

কথাগুলো শুনে তাঁরা যেন বেশ মজাই পেল। হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে পড়লো। নয়নের হাত বাঁধা অবস্থায়, একজন একজন করে ওর উপর “মায়া-দয়া হীন ভাবে” ঝাঁপিয়ে পড়ল। নয়নের আর্তনাদ, চিৎকার কেউ শুনলো না! তাঁদের কাজ শেষে নয়নকে জামা কাপড় পরিয়ে, হাত মুখ বেঁধে সেই জমিদার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে গেল।

তখন নয়ন ছটফট করছিল যন্ত্রনায়, আর ঠিক ঐ সময়ই কোথা থেকে দৌড়ে এলো মামা আরিফ। এসেই ওর বাঁধন খুলে দিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলতে লাগলঃ

—— তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ, তোর এই অবস্থা হলো কী করে? আমরা সবাই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।

নয়ন কেঁদেই যাচ্ছে, কোন কথা বলার অবস্থায় নাই। পরে অনেক কষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। নয়নকে একটা রিকশায় উঠিয়ে, ওদের বাড়িতে নিয়ে যায়। তার বাড়ির সবাই তাঁকে ঝেঁকে ধরে নানান প্রশ্ন ছুড়ে;

—– সে এতক্ষণ কইছিল, কী করছিল, তার এই অবস্থা হলো কী করে, সে খুঁড়িয়ে হাঁটছে কেন?

লজ্জায় নয়ন কোনো উত্তরই দিতে পারে না। শুধু চুপচাপ বসে থাকে। মামা আফসোসের সুরে বলেঃ

—– তোকে একা ভর দুপুরে, ঐ নির্জন জায়গায় পাঠানোই উচিত হয়নি। বোধহয় ছিনতাইকারী ধরেছিল।

তারপর অন্যান্যদের কে উদ্দেশ্য করে বলেঃ

—– নয়ন অনেক ভয় পেয়ে আছে। পরে ভয় কাটলে ওর কাছ থেকে সব জানা যাবে।

এইটুকু বলেই আরিফ বাড়ি ফিরে আসে এবং পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে। আর মনে মনে ভাবে.. এই ধরনের একটা সঙ্গী, রিতুর না হলেও চলবে।

এক সপ্তাহ কেঁটে যায়। নয়ন শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছে। আরিফের কাছে এই খবরটা এসেছে। নয়ন স্বাভাবিক ভাবে কলেজে যাতায়াত করলেও, সেইদিনের পর থেকেই মানসিক ভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সব সময় অন্যমনস্ক থাকে। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলে না।

তাই আরেকদিন, আরিফ অফিস কামাই করে নয়নের কলেজের সামনে দুপুর অব্দি দাঁড়িয়ে থাকে। আর নয়ন, মামাকে ঠিক সেই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আৎকে উঠে। ও ধীরে ধীরে নয়নের কাছে যায় আর ওর কাঁধে হাত রেখে বলেঃ

—– চল আমার সাথে। তোর মন ঠিক করে দিচ্ছি।

নয়ন কিছুই বলে না, তবে মামার সাথে সাথে হাঁটতে শুরু করে। তাঁরা সেই পুরনো জমিদার বাড়িটার দিকেই হাঁটছে। তখন নয়ন ভয়ে বলে উঠলঃ

— মামা, আমি ঐদিকে যাব না।

—– [অভয় দিয়ে] তোর ভয় নেই, কারণ যেখান থেকে তোর ভয়ের শুরু হয়েছে সেখানেই তা শেষ হবে।

তাঁরা দুজনেই হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। নয়ন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চারদিকে চোখ ভুলায়। কারণ সেই দিনের ঘটনার পর থেকে এই পর্যন্ত, কতবার যে স্বপ্নে এই জায়গা আর সেই মানুষ গুলোকে দেখেছে তার হিসাব নেই।

ওরা জমিদার বাড়ির সামনের একটা গাছের নিচে শিকড়ের ওপর বসলো। আরিফ, নয়নের দিকে মুখ করে স্পষ্ট স্বরে বলল;

——- সেইদিন ধ *র্ষণ হতে তোর কেমন লাগল’রে নয়ন?

কথাটা শুনে নয়ন পুরো আৎকে উঠল। ভয়মিশ্রিত দৃষ্টিতে মামার দিকে তাঁকাল। আরিফ আবার বলল;

——- তোর সাথে সেইদিন কী কী হয়েছিল, তা আমি জানি। আর জানবোই না কেন? সব কিছুর প্লানই তো ছিল আমার। আমি ইচ্ছে করেই সেই সমকামী লোকদের দিয়ে তোকে ধ *র্ষণ করিয়েছি।

নয়ন কথাটা শুনে পুরো বাকরুদ্ধ, হতভম্ব হয়ে যায়। বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায়! কিন্তু মামা আরিফ বলতেই থাকেঃ

—— তোর বয়স যতই কম হোক , আমার বিশ্বাস আমি যা করিয়েছি সেটা অন্যায় কিছু করিনি। যা কিছু করেছি তোর ভবিষ্যতের ভালোর জন্যই করেছি। তোর “উলঙ্গ মনে” বস্ত্র পড়ানোর জন্যই করিয়েছি। তুই কী জানিস তুই কী ভয়ংকর পাপী? যেদিন রিতুর মুখে তোর ঘটানো কর্মকাণ্ডের কথা শুনি, আমার যা রাগ হয়েছিল তা বলার মতো না! আমার ইচ্ছা করছিল তোকে খু *ন করে ফেলতে। [একটু ধম নিয়ে, আবার শুরু করলো]

দেখ তুই আমার আপন ভাগ্নে, আমার ছেলের মতো। আমার ৬ বছরের বাচ্চা মেয়েটা তোকে ভাইয়া বলে ডাকে, ভালোবাসে এবং সম্মানও করে। তোদের সম্পর্ক ভাই-বোনের। এখন তুইই বল, একজন বাবা যদি তাঁর মেয়েকে তাঁর ছেলের কোলেই নিরাপদে না রাখতে পারে, যে ভাই হয়ে বাচ্চা একটা বোন যাঁর এখনও দুনিয়া সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানই হয়নি তাঁকে দিয়ে নিজের যৌন লালসা মেটাতে চায় তখন এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো? তুই বল? বোন তাঁর ভাইয়ের কাছে নিরাপদ থাকবে না? বাচ্চা মেয়ে তাঁর কাকা-মামার কাছে নিরাপদ থাকবে না? [দীর্ঘশ্বাস]

এখন বলতো, বাবা-মা কাদেরকে বিশ্বাস করবে? কি ভরসায় নিজের মেয়েকে বড় করবে? আজ তোর মতো কিছু বিকৃত মন, মস্তিষ্কের মানুষের জন্যই এত ছোট ছোট বাচ্চারা ধ *র্ষণ হচ্ছে, বাবা-মায়েরা নিজেদের পরিবারের মানুষদেরই বিশ্বাস করতে পারছে না! হীনমন্যতায় ভূগতে হচ্ছে নিরপরাধ পুরুষদের। হ্যাঁ তুই রিতুকে ধ *র্ষণ করিসনি কিন্তু করতি না তার গ্যারান্টি কী? এখন বাচ্চা অবুঝ মেয়ে , নিজের পুরুষাঙ্গ মুখে নিতে বলিস, হয়তো এমন করতে করতে একদিন তোর কাছে ধর্ষণও একটি অতি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠবে আর তুই ধ *র্ষক হয়ে যাবি।

অতঃপর রিতু কে একা পেয়ে ধ *র্ষণ করতি না, তার গ্যারান্টি কী? তোদের একটা মেয়ের শরীর হলেই হয়! হোক সে ৬ মাসের শিশু, ৬ বছরের বাচ্চা, মানসিক রোগী বা ৭০ বছরের বুড়ি। তোদের কাছে কী শুধু শরীরটাই আসল, আর কিছু না? প্রতিটা মানুষের যে একটা মন আছে এটা তোরা কেন মনে রাখিস না? যৌনতা মন থেকে আসে শরীর থেকে না! আর তোরা সে **ক্সের সুন্দর একটা নাম দিয়ে দিয়েছিস, শারীরিক চাহিদা! হয়তো এইগুলো তোদের মাথায় ঢুকে প *র্ণ দেখে বা চ *টি গল্প পড়ে! যদিও তোরা জানিস ওইসবই মনগড়া। আসলেই কী এটা শুধু শরীরের চাহিদা? মনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই? একজন ধ *র্ষককে ধ *র্ষণ করার পর যখন পুলিশ ধরে জিজ্ঞেস করল, তুই এই জঘন্য অন্যায় কাজ কেন করছিস? সে বিকৃত হাসি দিয়ে বলেঃ

— এইটা কোনো অন্যায় না! মিষ্টি নিজে নিজে খাইলে যেমন মিষ্টি লাগে, জোর কইরা খাওয়াইলেও মিষ্টি লাগে। মজা সবাই পায়। এইটা কোন অপরাধ না!

এখন তুই বল, মিষ্টি আর এইটা কী এক ? তোরা মুখে কিছু না বললেও, “অন্তর থেকেই” ধ *র্ষকের মতো তোরাও এটা জানিস বা বিশ্বাস করিস।

এখন বলতে পারিস কী, যদি সে *ক্স কেবল শরীরে শরী *রের সম্পর্কই হয় তাহলে ধ* র্ষণের পর, কেন একটা মেয়ে এই এক ঘন্টার কথা ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে না?কেন একবার ধর্ষিত হওয়ার পর একটা মেয়ে মনে করে তার জীবন এখানেই শেষ? কেন ধর্ষিত হওয়ার পর এত মেয়ে প্রতি বছর আত্মহত্যা করে? মলেস্ট হওয়ার পর কেন সারাদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদে? এই জিনিসগুলো কী একটা বারও তোদের মাথায় আসে না? যখন তোরা বিকৃত যৌন ক্ষুধা মেটাতে একটা মেয়ের শরীর স্পর্শ করিস? যদি এগুলো তোরা এক মুহূর্তের জন্য ভাবতি তাহলেই বুঝতে পারতি সে *ক্স হচ্ছে মনের তৃপ্তি, এটা শুধু শরীর কেন্দ্রিক না। তাই জোর করে কারও অনুমতি ছাড়া তার গায়ে হাত দেওয়া , তার শরীর ভোগ করা সবই অন্যায়। হোক সে বুঝ বা অবুঝ। আর তুই একটা বাচ্চা মেয়ের শরীরের মধ্যে যৌ *নতা খুজিস? তাঁর মনের খবর কী কখনো তুই রেখেছিস? যদি একটাবার তার মনের ভেতরে তোর সম্পর্কে , পৃথিবীর সব পু *রুষ সম্পর্কে যে পবিত্র বিশ্বাস, ধারণা জন্ম নিছে তা জানতে পারতি তাহলে কখনই এই শরীরে যৌ *নতা খুঁজে পেতি না! কোনো মেয়ের শরীরের ভেতরেই যৌ *নতা খোঁজার অধিকার তোর নাই যদি তার মনের অবস্হা তুই না জানিস!

এই যে তোরে এতগুলো কথা বললাম। যদি এই কথাগুলো রিতুর কাছ থেকে তোর বিকৃত রুচি জানার পর পরই বলতাম। তখন তুই এসব কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝতি না। হয়তো মাথা নিচু করে আমার কথা শুনতি। তারপর কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে হয়তো আমাদের বাসায় আসাও বন্ধ করে দিতি। মনিকা মলেস্ট হওয়া থেকে বাঁচত কিন্তু তুই মানুষ হয়তি না। হয়তো আরেকটা মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করতি।

ভবিষ্যতে তোর মন প্রাণ এক সময় বিশ্বাস করতে শুরু করতো, যৌ* নতা হলো গিয়ে শরীরের ক্ষুধা। একটা শরীরের ক্ষুধা পেলে আরেকটা শরীর ছুঁবে। সেটা যার শরীরই হোক না কেন। বাচ্চা- বৃদ্ধা যেকোনো এক জনের শরীর হলেই হলো। আর এইসবের বিশ্বাস যাদের মনের ভেতর থাকে, তারাই তোর মতো মলেস্ট করে মেয়েদের, ধ, *র্ষণ করে মেয়েদের। আর মনে করে এটা কোনো অপরাধ না।

আর তোর মনেও এই মানসিক রোগটা ছিল। তাই সমকামীদের হাতে তোকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাঁরাও তো তোকে ধ *র্ষণ করে শা *রীরিক চাহিদাই মিটিয়েছে। এখন যদি যৌ *নতা কেবল শরীরের সাথে শরীরের সম্পর্কই হতো, তাহলে তাদের সাথে সঙ্গমে তুইও আনন্দ পেতি। কিন্তু তুই তা পাসনি! উল্টো পেয়েছিস মানসিক যন্ত্রণা। তুই এখন নিজেই ভালো করে বুঝতে পারছিস ধ *র্ষণ বা অন্যের অনিচ্ছায় তার গায়ে হাত দিলে সে মোটেও তা উপভোগ করে না। উল্টো তার মনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যা তার জীবনটা ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এই জিনিসটা যে শরীরের চাইতে মনে বেশি প্রভাব ফেলে , আর প্রভাবটা কত বেশি আশা করি এইটা এই মুহূর্তে তোর চাইতে ভালো আর কেউ জানে না। এইটাই ছিল তোর পাপ, যৌনতা সম্পর্কে বিকৃত ধারণার শিক্ষা।

আমার মতে যে সমস্ত পুরুষেরা মনে করে যৌনতা কেবল শরীর কেন্দ্রিক তাদের সকলকেই এভাবে সমকামীদের ধারা ধ *র্ষণ করানো উচিত। তাহলে নারীদের মতো পুরুষেরাও ধর্ষ *ণের কথা শুনলেই শিউরে উঠবে। কিছুদিন পরে পরেই পুরুষ ধর্ষণও প্রকোট আকার ধারণ করানো উচিৎ সমাজে। এছাড়া তো তোদের মতো পুরুষদের ধর্ষণ বা মলেস্টেশন যে নারীদের শরীরের চেয়ে মনে কী প্রভাব ফেলে তা বোঝানো সম্ভব না!

কথা গুলো শোনার পর নয়ন, মামার পা ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে আর ক্ষমা চায়। আরিফ অনেক আগেই নয়ন কে ক্ষমা করে দিয়েছিল। সে জানে নয়ন আর কখনো কারও সাথে এই ধরনের কোনো আচরণ করবে না বা করার চিন্তাও করবে না। কিন্তু বাবা হয়ে সে মাত্র একজন নয়নকে শোধরাতে পেরেছে, একজন নয়ন থেকে বাঁচাতে পেরেছেন তাঁর মেয়েকে।

নোট:- এই রকম হাজারো নয়ন আছে সমাজের অলিতে-গলিতে। তাদের শোধরাবে কে? তাদের থেকে নিজেদের মেয়েকে কীভাবে, কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন! জানি, উত্তর জানা নাই কারো। প্রতিটা পুরুষই তাঁদের “উলঙ্গ মন” নিয়ে চলাফেরা করে, যৌনতা তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয়, শারীরিক চাহিদা। মিশকাতের মতো মানুষেরা, সেই উলঙ্গ মন ধারী মানুষদের দিকে বস্ত্র এগিয়ে দিতে পারবে ঠিকই কিন্তু সেটা উলঙ্গমনা প্রতিটি মানুষকে পড়তে হবে নিজ দায়িত্বে।

………-: সমাপ্ত -:………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *