ছোলা খেতে খেতে মনে হলো গুলিস্তান থেকে সায়েদাবাদ যাওয়ার দরকার কি, ফুলবাড়িয়া থেকে বিআরটিসি বাসেও তো বরিশাল যাওয়া যায়।
পদ্মা সেতু হওয়ার পর গ্রীন লাইন, সাকুরার এসি বাস ছাড়া অন্য কোন বাসে চড়া হয় নাই। এসুযোগে নতুন একটা বাসের সার্ভিস সম্পর্কে জানা যাবে।
কাউন্টারে গিয়ে শুনি ৬টা বাজে বাস ছাড়বে। ঘড়িতে তখন সময় ৫.৩০। ভালো সিট পাওয়ার আশায় দ্রুত টিকেট নিয়ে দেখি, সিট নাম্বার ২৪।
জানালার পাশে সিট পেয়ে বেশ খুশি। টিকেট নেওয়ার সময় ১-২ সিট ফাঁকা ছিলো তবে সেগুলো না নেওয়ায় ভালো হয়েছে। কেনো তা পরে বলছি।
৫.৪০ এ বাসে উঠে বসলাম, সাথে সাথেই পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য ছায়াছবি শুরু হলো।
পানি, শশা, পেয়ারা, বুট, পপকর্ণ, রান্নার সরঞ্জামের সেট, বাচ্চাদের বই, চকলেট থেকে শুরু করে এহেন কোন হকার নেই যারা বাসে উঠে নাই। মনে হচ্ছিলো, মিরপুর-১০ নাম্বার গোল চত্বরে দাঁড়িয়ে আছি। দুই দফা ভিক্ষুক উঠে ষোলকলা পূর্ণ করলো।
৬টার বাস ছাড়লো ৬.১৪ মিনিটে। যাত্রীরা সব ক্ষুব্ধ।
“বাসের সার্ভিস এমন হলে কিভাবে হবে, এগুলো কি ধরনের সাভির্স” – পপকর্ণ না কেনায় খালি মুখেই সিনেমা দেখছিলাম। সিনেমার রেটিং সবার শেষে দিচ্ছ। আপাতত নায়ক (বাস ড্রাইভার) চলে এসেছে।
ইঞ্জিনের উপরে মানুষের ভীড়। পারে না ড্রাইভারের সিটে দুইজনকে বসায়। ১,২ সিটে না বসায় একারনেই ভালো হয়েছে।
এবারের দৃশ্যের নায়ক, আমার পাশের সিটের যাত্রী।
অনেকক্ষন ধরে এক মনে তার হাতের ব্যাগের লক খোলার চেষ্টা করতেছে। কোড দেওয়া যেসব ব্যাগ থাকে, সেরকম ব্যাগ। হাবভাবে মনে হলো, চুরির ব্যাগ। আমি তাকালে রেখে দেয়। অন্য দিকে তাকালে আবার চেষ্টা শুরু করে। বেশ ধৈর্য্যের সাথে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তার সাথে সাথে আমিও অপেক্ষায় আছি। ব্যাগ খোলা গেলে, কি কি পাওয়া যায় তা দেখার অপেক্ষায়।
ভালো কথা বরিশাল কেনো যাচ্ছি তা বলি। যাচ্ছি, সহধর্মিনীকে সারপ্রাইজ দিতে। আমি যে আসছি সে জানে না। ম্যাসেঞ্জারে টুকটাক কথা চলছে। কিন্তু এখনো বুঝতে পারে নাই।
বিআরটিসি বাসের গতির কারনে ভয়ে আছি। যেকোন সময় আম্মু যদি ওকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, হিমেল কি পৌঁছাইছে?
বাসের গতির কথা যখন উঠলো তখন তা কেমন ছিলো বলা যাক। এমন কোন বাস নাই যা এই বাসকে ওভারটেক করে নাই।
তাড়াহুড়া না থাকায় গতি নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। শুধু বউয়ের কাছে নিজে সারপ্রাইজড না হলেই হলো।
পদ্মা সেতুর উপরে উঠতেই হঠাৎ শুনি, ওয়াক। সামনে থেকে ওয়াক, পিছে থেকে ওয়াক। ওয়াক ওয়াক ধ্বনিতে পুরো বাস মুখরিত।
ওয়াক ওয়েভ শেষ হলে ইচ্ছে হচ্ছিলো ফেসবুকে স্ট্যাটস দেই, ‘মার্কড সেফ ফ্রম ওয়াক ওয়েভ!
গৌরনদীর ৫ মিনিট আগে বাস যাত্রা বিরতি দিলো। গৌরনদীর এক যাত্রী বললো, কপাল। কয়েক কিলো দূরে বাসা রেখে এখন বিরতিতে নামতে হবে।
মানুষের জীবনটাও তো এমনই,
জন্মেছি মানে মরতে হবে।
মাঝে কয়েক মিনিটের বিরতি।
বরিশাল থেকে ২০ মিনিট দূরে আছি, এমন সময় এক মেয়ে বিরক্তি নিয়ে তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘আর কত দূর? এমন এক দেশে বিয়া করছি। রাস্তাও শেষ হয় না!’
পিছে তাকিয়ে দেখি স্বামী বেচারা হাসে, আর বলতেছে মাত্র ১৫-২০ মিনিট বাকি। এই মেয়েও একজন ওয়াক যোদ্ধা। তার বিরক্তির কারন তাই সহজেই অনুমেয়।
অবশেষে ১০.০৪ মিনিটে নথুল্লাবাদ টার্মিনালে বাস পৌঁছালো। রিকশায় বসে মনে মনে ভাবছি, আমাকে দেখে বউ কি করবে? খুশিতে পাগল হয়ে যাবে? নাকি না বলে আসার কারনে হাতের কাছে যা পাবে ছুঁড়ে মারবে!
শীতের রাতে মানুষ কাঁপে হিম বাতাসে, আমি কাঁপছি উত্তেজনায়। একই সাথে ভয় ও খুশির উত্তেজনায়।
আজ বুঝতে পারছি,
একটু একটু বুঝতে পারছি।
কেনইবা বহুদিন পর দেখা হলে মানুষ এতটা আবেগ তাড়িত হয়।